প্রথম পাঠ
আমদের আলোচনার প্রথম পাঠ মূলত তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত।
প্রথম অধ্যায়ঃ “গাযওয়াতুল হিন্দ” একটি মোবারকময় ঐশী ভবিষ্যতবাণী
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাপারে নববি ভবিষ্যতবাণী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গাযওয়াতুল হিন্দ এর হাদিস সমূহ থেকে লব্ধ শিক্ষা ও ইশারাসমূহ
প্রথম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়ে আমরা জিহাদের ফরজ হওয়ার কিছু আয়াত,হাদিস ও সাহাবা ও তাবেয়গিণের উক্তি বর্ণনা করেছি। অতপর আমরা জিহাদ কি ফরজে কেফায়া নাকি ফরজে আইন দলিল ভিক্তিক একটি পাঠ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অতপর আমরা রাসুল সা. এর গাযওয়া ও যুদ্ধাভিযান সমূহে প্রাথমিক দুই ভাগে আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে আমরা জিহাদ যুদ্ধ বুঝাবার জন্য কুরআন ও হাদিসে যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা উল্লেখ করত অন্যান্য শব্দ সমূহের প্রথমিক পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ সকল গাযওয়া পরিচালনার কারন এবং আরো কিছু বিষয়ে দলিল ভিক্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
“গাযওয়াতুল হিন্দ” একটি মোবারকময় ঐশী ভবিষ্যতবাণী
গাযওয়াতুল হিন্দ ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জল অধ্যায়। যার সূচনা খুলাফায়ে রাশেদিনগণের জামানা থেকেই হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত বিভিন্ন মারহালা এবং প্রেক্ষাপট পাড়ি দিয়ে একই ধারায় অব্যাহত রয়েছে। এবং ইনশাআল্লাহ কেয়ামত পূর্ব পর্যন্ত এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।এবং সব শেষে ঈসা অ. এর আগমনের পূর্বে কাঙ্খিত মোবারক ময় গাযওয়াতুল হিন্দ সমাপ্তি ঘটবে।
অপর দিকে দিনি বুনিয়াদ এবং শরিয়ী উসুল বা মুলনিতি সমূহের নিয়ে গভির চিন্তা ভাবনা করলে এবিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাস্তব পক্ষেই গাযওয়াতুল হিন্দএক দিক থেকে নববি গাযওয়াহ এবং সারিয়া সমূহেরও অন্তর্ভুক্ত।
গাযওয়া দুই প্রকার
আমাদের দৃষ্টিতে রাসূল সা. এর গাযওয়াহ সমূহ-সংগঠিত হওয়ার দিক থেকে- দুটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত।
১. غزوة واقعة “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ্”।
২.غزوة موعدة “গাযওয়ায়ে মাওইদাহ্”।
১. “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ বা অতিত সংঘটিত গাযওয়াহ সমূহ।
অর্থাৎ ঐ সমস্ত গাযওয়াহ সমূহ যেগুলো রাসুল সা. এর যামানায় তার হালাতে জিন্দেগিতেই সুসংগঠিত হয়েছে। সিরাত গবেষক এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসেনে কেরামের মতে এ সকল গাযওয়াহ সমূহ দু ভাগে বিভক্ত। ১. গাযঙওয়াহ।২.সারিয়্যাহ
নিচে এ দুই প্রকারের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা সবিস্তারে আলোচনা করা হল।
ক. গাযওয়াহ
معنى الغَزْوة لُغةً:
গাযওয়াহ এর আভিধানিক অর্থঃ
الغزوة في اللغة اسم،
“আল গাযওয়াহ্” –যুদ্ধাভিযান,আক্রমণ-এটি বিশেষ্য বাচক শব্দ।
وجمعها: غَزَوات، وغَزْوات،
এর বহু বচন গাযাওয়াহুন এবং গাযওয়াতুন।
الغَزْوُ: السيرُ إِلى قِتالِ العَدُو،
শত্রুদের হত্য করার জন্য সফর করা।
والغزوة مصدر مرّةٍ؛ فهي المرّة من الغَزْو،
আল গাযওয়াতু এটা একবার নির্দেষক ক্রিয়াবিশেষ্য। অর্থাৎ একবার আক্রমন করা কে গাযওয়াহ বলা হয়।
ويُقال: غزوة بدر؛ أي: معركة بدر،
যেমন বলা হয়, غزوة بدر অর্থাৎ বদর যুদ্ধ।
ويُقال: غَزَوات الرّسول صلّى الله عليه وسلّم؛ أي: معاركه،
যেমন বলা হয়, غَزَوات الرّسول صلّى الله عليه وسلّم؛অর্থাৎ রাসুল সা. এর যুদ্ধ সমূহ।
ويُقال: غَزَا الشيءَ غَزْواً؛ أي: أَراده وطلبَه،
যেমন বলা হয়, غَزَا الشيءَ غَزْواً তা ইচ্ছে করলো এবং দৃঢ় ভাবে কামনা করলো।
ويُقال: غَزَوْتُ فلاناً أغْزوهُ غَزْواً،
যেমন বলা হয়,আমি অমুককে ইচ্ছে করলাম অর্থাৎ ...............
والغَزْوة تُطلَق على ما يُغْزى ويُطلَب.
আল গাযওয়াতু শব্দটি কখনো কখনো যা ইচ্ছে করা করা হয় তা বুঝাতেও ব্যবহার কার হয়।
গাযওয়াহ এর পারিভাষিক অর্থঃ
গাযওয়াহ (غزوة) বলা হয় ঐ সকল যুদ্ধ সমূহকে যে যুদ্ধে সয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং যুদ্ধে মুজাহিদিনে সাহাবাগণের দেখভাল এবং নেত্রৃত্ব দিয়েছেন। সংখার দিক থেকে এ ব্যাপারে মতেভেদ আছে। মুসা ইবনে উকবা,মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সহ আরো অনেকে বলেন-২৭টি। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত ২১টি। এবং যায়েদ ইবনে আর কাম রা থেকে বর্ণিত ১৯টি।
গাযওয়াতুল হিন্দকে কেন গাযওয়া বলা হয় অথচ রাসুল সা. তো এই যুদ্ধ-অভিযান পরিচালনা করবেন না ? ইনশাআল্লাহ “গাযওয়াতুল হিন্দ এর হাদিস সমূহ থেকে লব্ধ হেদায়েত ও ইশারা” শিরোনামের অধিনে আমরা এ বিষয়ে স্ববিস্তার আলোচনা করবো।
খ.সারিয়াহ্
মুহাদ্দিসিনে কেরাম এবং সিরাত গবেষকগণের পরিভাষা অনুযায়ী ঐ সকল গুরত্বপূর্ণ জিহাদকে সারিয়া বলা হয় যে সকল যুদ্ধে রাসুল সা. স্বয়ং নিজে স্বশরিলে উপস্থিন হন নি কিন্তু,তিনি কোন না কোন সাহাবিকে সে যুদ্ধে নেত্রৃত্ব দিতে আদেশ দিয়েছেন।
ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত রাসুল সা. এর সারিয়া সংখ্যা ৪০টি। ইবনে আব্দুল বার থেকে বর্ণিত ৩৫টি। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক থেকে ৩৮টি। ওয়াকিদী থেকে ৪৮টি।এবং ইবনে জাওযী থেকে ৫৬টির বর্ণনা পাওয়া যায়।
কাস্সাফ ইসতিলাতুল ফুনুন ওয়াল উলুম গ্রন্থে মুহাম্মাদ আলি থনবী রহ. লিখেন,
هي الجيش الذي يخرج من بلاده أو موطنه؛ قاصداً قتال أهل الكفر ومواجهتهم، وقد كان النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- قائداً ومُشاركاً في العديد من الغزوات، أمّا المواجهة التي لا يكون فيها النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم-فيُطلَق عليها اسم السريّة.
অর্থাৎ এমন সেনা দল যে নিজ দেশ থেকে অথবা জন্মভূমি থেকে আহলে কুফরদের হত্য করার জন্য বের হয়েছে। আর রাসুল সা. সে যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। আর যে সকল যুদ্ধে রাসুল সা. উপস্থিত ছিলেন না সে গুলোর ক্ষেত্রে সারিয়া ব্যবহার করা হয়।
জিহাদ বুঝাতে অন্যান্য কিছু শব্দ
এছাড়াও কুরআনে এবং হাদিস যুদ্ধ বুঝাতে আরো বেশ কিছু শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। নিচে অতি সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হল।
1. আল-হারব(الحرب) এর অর্থ যুদ্ধ। শব্দটি ধ্বংস, অনিষ্ট, হত্যা, ও কৃতঘ্নতা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হারব এর প্রচলিত অর্থে সশস্ত্র সংগ্রামকে বুঝায়। আল-কুরআনে হারব শব্দটি ছ’টি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।
2. আস-সীয়ার-السير) সীয়ার হচ্ছে সীরাহ এর বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে পন্থা, জীবন চরিত ও পদ্ধতি। আসকালানী তাঁর ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জীবন চরিত্র বর্ণনার মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহের বর্ণনা আসার জন্য সীরাহকেও জিহাদের পর্যায়ভুক্ত করেছেন। অবশ্য কেউ কেউ (আইন বিশারদ) সীরাহকে মাগাযী (যুদ্ধ) হিসেবে ধরেছেন। অবশ্য কেউ কেউ সীয়ারকে মাগাযী বলেন নি, তবে মাগাযী (যুদ্ধ) ও সন্ধির বিধানগুলো মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন চরিত্র আলোচনার মধ্যে স্থান পেয়েছে।
3. নুফুর—(نفور) : শব্দটি نفر-থেকে নির্গত। এর অর্থ অভিযান। ঘৃণা, বিমুখতা, অনীহা, পালানো ,বিক্ষিপ্ত বা পৃথক পৃথক দল, হিজরত, সর্বোপরি এর এক অর্থ অভিযানে বের হওয়া। শব্দটি যুদ্ধ বা সশস্ত্র অভিযানের অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
4. খুরুজخروج) এর সাধারণ অর্থ বের হওয়া। তবে এটি বিশেষ করে যুদ্ধাভিযানে বের হওয়াকেই বুঝায়।
5. দরব আল- রিকাব-ضرب الرقاب) এর অর্থ আঘাত। আল-কুরআনে ব্যবহৃত শব্দদ্বয়ের অর্থ গর্দানের ওপর আঘাত করা।
6. আল- কুওয়াত القوة) এর অর্থ শক্তি। এ শব্দটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি অর্থে আল- কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
7. রিবাত আল-খায়িল-(رباط الخيل) : এর অর্থ সীমান্ত রক্ষার জন্য অশ্বারোহী সেনার চৌকি বা ছাউনির ব্যবস্থাকরণ। এ শব্দটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি অর্থে আল-কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
8. রাওউন—(روع) : এর অর্থ ভয় বা আতংক। প্রাক ইসলামী যুগ থেকে এ শব্দটি যুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
9. ওয়াগা— وغي) এর অর্থ শোরগোল গোলযোগ। এ শব্দটি দিয়েও যুদ্ধ বুঝানো হয়েছে।
10. হায়্যাজ—(هياج) : এর অর্থ ক্রোধ বা আক্রোশ। এ শব্দটিও যুদ্ধ অর্থে সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
11. কিতাল-(قتال) : কিতাল শব্দটির অর্থ মারা, হত্যা, যুদ্ধ, প্রতিশোধ, অভিশাপ, সর্বোপরি সশস্ত্র সংগ্রামকে কিতাল বলে। আল-কুরআনে আল্লাহর একত্ববাদকে অস্বীকারকারীর (কাফির) বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে বুঝানোর (যুদ্ধের অনুমতি বা নির্দেশের) ক্ষেত্রে সাধারণত: قتال - শব্দটির ব্যবহার হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম যুদ্ধের অনুমতি সংক্রান্ত এ আয়াতে: ‘তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, যারা আক্রান্ত হয়েছে, যাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম’ ব্যবহৃত হয়েছে। বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জবাবে নাযিলকৃত আয়াতেও কিতাল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিমদের দু‘বিরোধী দলের সংগ্রামের পর মীমাংসার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নির্দেশিত আয়াতেও কিতাল শব্দটি প্রয়োগ হতে দেখা গেছে। قتال শব্দটির মূল অর্থ সশস্ত্র যুদ্ধ। আল-কুরআনে সশস্ত্র যুদ্ধ সংক্রান্ত আয়াতগুলোতে جهاد শব্দটি একবারও ব্যবহার করা হয়নি। মূলত: এখানেই جهاد এবং قتال এর মধ্যে পার্থক্য। আর জিহাদ হচ্ছে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, আর কিতাল হচ্ছে নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশক শব্দ। জিহাদ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরযে আইন, আর কিতাল যুদ্ধক্ষম ব্যক্তির জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ফরয। কিন্তু যুদ্ধে অক্ষম মুসলিমদের জন্য তা ফরযে কিফায়া।
12. জিহাদ-(جهاد): শব্দটি جهد শব্দ থেকে নির্গত। ج- (জিম) বর্ণের ওপর পেশ হলে এর অর্থশক্তি ও সামর্থ্য, কঠিন, অতিরিক্ত, পরিশ্রম। আর জিমের ওপর ফাতাহ হলে এর অর্থ শক্তি সামর্থ্য ব্যয় করা, প্রচেষ্টা, লক্ষ্যে পৌঁছা পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালানো, পরীক্ষা করা, আগ্রহ প্রকাশ করা, ক্ষীণ বা দুর্বল করা, অধ্যবসায় সহকারে কাজ করা, এবং সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা। ইসলামী পরিভাষায়- জিহাদ হচ্ছে কাফির-আল্লাহদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধে অংশগ্রহন করা। অথবা কাফেরদের হাত থেকে আল্লাহর দ্বীনকে হিফাযত করার জন্য পরিচালিত যাবতীয় অভিযান সমূহই জিহাদ। ইমাম শাফেয়ী বলেন, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই জিহাদ।
ইমাম মালিক বলেন, আল্লাহর কালেমা প্রচারের লক্ষ্যে (চুক্তিবদ্ধ জাতি ছাড়া) কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নাম জিহাদ।
তবে আমদের আলোচনার প্রথম যে দুই প্রকার অর্থাৎ গাযওয়াহ ও সারিয়া তা “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ” এর অন্তর্ভুক্ত। আর বাকিগুলো যুদ্ধ ও সমর অভিযান বুঝানোর জন্য কুরআন হাাদিসে বর্ণিত অন্যান্য শদ্বাবলী।
এ সকল গাযওয়া পরিচালনার কারনঃ
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلاَّ أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
অর্থঃ
যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম।যাদেরকে তাদের নিজ বাড়ী-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ’। আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।
আমদের আলোচনার প্রথম পাঠ মূলত তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত।
প্রথম অধ্যায়ঃ “গাযওয়াতুল হিন্দ” একটি মোবারকময় ঐশী ভবিষ্যতবাণী
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাপারে নববি ভবিষ্যতবাণী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গাযওয়াতুল হিন্দ এর হাদিস সমূহ থেকে লব্ধ শিক্ষা ও ইশারাসমূহ
প্রথম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়ে আমরা জিহাদের ফরজ হওয়ার কিছু আয়াত,হাদিস ও সাহাবা ও তাবেয়গিণের উক্তি বর্ণনা করেছি। অতপর আমরা জিহাদ কি ফরজে কেফায়া নাকি ফরজে আইন দলিল ভিক্তিক একটি পাঠ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অতপর আমরা রাসুল সা. এর গাযওয়া ও যুদ্ধাভিযান সমূহে প্রাথমিক দুই ভাগে আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে আমরা জিহাদ যুদ্ধ বুঝাবার জন্য কুরআন ও হাদিসে যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা উল্লেখ করত অন্যান্য শব্দ সমূহের প্রথমিক পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ সকল গাযওয়া পরিচালনার কারন এবং আরো কিছু বিষয়ে দলিল ভিক্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
“গাযওয়াতুল হিন্দ” একটি মোবারকময় ঐশী ভবিষ্যতবাণী
গাযওয়াতুল হিন্দ ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জল অধ্যায়। যার সূচনা খুলাফায়ে রাশেদিনগণের জামানা থেকেই হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত বিভিন্ন মারহালা এবং প্রেক্ষাপট পাড়ি দিয়ে একই ধারায় অব্যাহত রয়েছে। এবং ইনশাআল্লাহ কেয়ামত পূর্ব পর্যন্ত এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।এবং সব শেষে ঈসা অ. এর আগমনের পূর্বে কাঙ্খিত মোবারক ময় গাযওয়াতুল হিন্দ সমাপ্তি ঘটবে।
অপর দিকে দিনি বুনিয়াদ এবং শরিয়ী উসুল বা মুলনিতি সমূহের নিয়ে গভির চিন্তা ভাবনা করলে এবিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাস্তব পক্ষেই গাযওয়াতুল হিন্দএক দিক থেকে নববি গাযওয়াহ এবং সারিয়া সমূহেরও অন্তর্ভুক্ত।
গাযওয়া দুই প্রকার
আমাদের দৃষ্টিতে রাসূল সা. এর গাযওয়াহ সমূহ-সংগঠিত হওয়ার দিক থেকে- দুটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত।
১. غزوة واقعة “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ্”।
২.غزوة موعدة “গাযওয়ায়ে মাওইদাহ্”।
১. “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ বা অতিত সংঘটিত গাযওয়াহ সমূহ।
অর্থাৎ ঐ সমস্ত গাযওয়াহ সমূহ যেগুলো রাসুল সা. এর যামানায় তার হালাতে জিন্দেগিতেই সুসংগঠিত হয়েছে। সিরাত গবেষক এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসেনে কেরামের মতে এ সকল গাযওয়াহ সমূহ দু ভাগে বিভক্ত। ১. গাযঙওয়াহ।২.সারিয়্যাহ
নিচে এ দুই প্রকারের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা সবিস্তারে আলোচনা করা হল।
ক. গাযওয়াহ
معنى الغَزْوة لُغةً:
গাযওয়াহ এর আভিধানিক অর্থঃ
الغزوة في اللغة اسم،
“আল গাযওয়াহ্” –যুদ্ধাভিযান,আক্রমণ-এটি বিশেষ্য বাচক শব্দ।
وجمعها: غَزَوات، وغَزْوات،
এর বহু বচন গাযাওয়াহুন এবং গাযওয়াতুন।
الغَزْوُ: السيرُ إِلى قِتالِ العَدُو،
শত্রুদের হত্য করার জন্য সফর করা।
والغزوة مصدر مرّةٍ؛ فهي المرّة من الغَزْو،
আল গাযওয়াতু এটা একবার নির্দেষক ক্রিয়াবিশেষ্য। অর্থাৎ একবার আক্রমন করা কে গাযওয়াহ বলা হয়।
ويُقال: غزوة بدر؛ أي: معركة بدر،
যেমন বলা হয়, غزوة بدر অর্থাৎ বদর যুদ্ধ।
ويُقال: غَزَوات الرّسول صلّى الله عليه وسلّم؛ أي: معاركه،
যেমন বলা হয়, غَزَوات الرّسول صلّى الله عليه وسلّم؛অর্থাৎ রাসুল সা. এর যুদ্ধ সমূহ।
ويُقال: غَزَا الشيءَ غَزْواً؛ أي: أَراده وطلبَه،
যেমন বলা হয়, غَزَا الشيءَ غَزْواً তা ইচ্ছে করলো এবং দৃঢ় ভাবে কামনা করলো।
ويُقال: غَزَوْتُ فلاناً أغْزوهُ غَزْواً،
যেমন বলা হয়,আমি অমুককে ইচ্ছে করলাম অর্থাৎ ...............
والغَزْوة تُطلَق على ما يُغْزى ويُطلَب.
আল গাযওয়াতু শব্দটি কখনো কখনো যা ইচ্ছে করা করা হয় তা বুঝাতেও ব্যবহার কার হয়।
গাযওয়াহ এর পারিভাষিক অর্থঃ
গাযওয়াহ (غزوة) বলা হয় ঐ সকল যুদ্ধ সমূহকে যে যুদ্ধে সয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং যুদ্ধে মুজাহিদিনে সাহাবাগণের দেখভাল এবং নেত্রৃত্ব দিয়েছেন। সংখার দিক থেকে এ ব্যাপারে মতেভেদ আছে। মুসা ইবনে উকবা,মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সহ আরো অনেকে বলেন-২৭টি। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত ২১টি। এবং যায়েদ ইবনে আর কাম রা থেকে বর্ণিত ১৯টি।
গাযওয়াতুল হিন্দকে কেন গাযওয়া বলা হয় অথচ রাসুল সা. তো এই যুদ্ধ-অভিযান পরিচালনা করবেন না ? ইনশাআল্লাহ “গাযওয়াতুল হিন্দ এর হাদিস সমূহ থেকে লব্ধ হেদায়েত ও ইশারা” শিরোনামের অধিনে আমরা এ বিষয়ে স্ববিস্তার আলোচনা করবো।
খ.সারিয়াহ্
মুহাদ্দিসিনে কেরাম এবং সিরাত গবেষকগণের পরিভাষা অনুযায়ী ঐ সকল গুরত্বপূর্ণ জিহাদকে সারিয়া বলা হয় যে সকল যুদ্ধে রাসুল সা. স্বয়ং নিজে স্বশরিলে উপস্থিন হন নি কিন্তু,তিনি কোন না কোন সাহাবিকে সে যুদ্ধে নেত্রৃত্ব দিতে আদেশ দিয়েছেন।
ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত রাসুল সা. এর সারিয়া সংখ্যা ৪০টি। ইবনে আব্দুল বার থেকে বর্ণিত ৩৫টি। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক থেকে ৩৮টি। ওয়াকিদী থেকে ৪৮টি।এবং ইবনে জাওযী থেকে ৫৬টির বর্ণনা পাওয়া যায়।
কাস্সাফ ইসতিলাতুল ফুনুন ওয়াল উলুম গ্রন্থে মুহাম্মাদ আলি থনবী রহ. লিখেন,
هي الجيش الذي يخرج من بلاده أو موطنه؛ قاصداً قتال أهل الكفر ومواجهتهم، وقد كان النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- قائداً ومُشاركاً في العديد من الغزوات، أمّا المواجهة التي لا يكون فيها النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم-فيُطلَق عليها اسم السريّة.
অর্থাৎ এমন সেনা দল যে নিজ দেশ থেকে অথবা জন্মভূমি থেকে আহলে কুফরদের হত্য করার জন্য বের হয়েছে। আর রাসুল সা. সে যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। আর যে সকল যুদ্ধে রাসুল সা. উপস্থিত ছিলেন না সে গুলোর ক্ষেত্রে সারিয়া ব্যবহার করা হয়।
জিহাদ বুঝাতে অন্যান্য কিছু শব্দ
এছাড়াও কুরআনে এবং হাদিস যুদ্ধ বুঝাতে আরো বেশ কিছু শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। নিচে অতি সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হল।
1. আল-হারব(الحرب) এর অর্থ যুদ্ধ। শব্দটি ধ্বংস, অনিষ্ট, হত্যা, ও কৃতঘ্নতা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হারব এর প্রচলিত অর্থে সশস্ত্র সংগ্রামকে বুঝায়। আল-কুরআনে হারব শব্দটি ছ’টি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।
2. আস-সীয়ার-السير) সীয়ার হচ্ছে সীরাহ এর বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে পন্থা, জীবন চরিত ও পদ্ধতি। আসকালানী তাঁর ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জীবন চরিত্র বর্ণনার মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহের বর্ণনা আসার জন্য সীরাহকেও জিহাদের পর্যায়ভুক্ত করেছেন। অবশ্য কেউ কেউ (আইন বিশারদ) সীরাহকে মাগাযী (যুদ্ধ) হিসেবে ধরেছেন। অবশ্য কেউ কেউ সীয়ারকে মাগাযী বলেন নি, তবে মাগাযী (যুদ্ধ) ও সন্ধির বিধানগুলো মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন চরিত্র আলোচনার মধ্যে স্থান পেয়েছে।
3. নুফুর—(نفور) : শব্দটি نفر-থেকে নির্গত। এর অর্থ অভিযান। ঘৃণা, বিমুখতা, অনীহা, পালানো ,বিক্ষিপ্ত বা পৃথক পৃথক দল, হিজরত, সর্বোপরি এর এক অর্থ অভিযানে বের হওয়া। শব্দটি যুদ্ধ বা সশস্ত্র অভিযানের অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
4. খুরুজخروج) এর সাধারণ অর্থ বের হওয়া। তবে এটি বিশেষ করে যুদ্ধাভিযানে বের হওয়াকেই বুঝায়।
5. দরব আল- রিকাব-ضرب الرقاب) এর অর্থ আঘাত। আল-কুরআনে ব্যবহৃত শব্দদ্বয়ের অর্থ গর্দানের ওপর আঘাত করা।
6. আল- কুওয়াত القوة) এর অর্থ শক্তি। এ শব্দটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি অর্থে আল- কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
7. রিবাত আল-খায়িল-(رباط الخيل) : এর অর্থ সীমান্ত রক্ষার জন্য অশ্বারোহী সেনার চৌকি বা ছাউনির ব্যবস্থাকরণ। এ শব্দটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি অর্থে আল-কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
8. রাওউন—(روع) : এর অর্থ ভয় বা আতংক। প্রাক ইসলামী যুগ থেকে এ শব্দটি যুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
9. ওয়াগা— وغي) এর অর্থ শোরগোল গোলযোগ। এ শব্দটি দিয়েও যুদ্ধ বুঝানো হয়েছে।
10. হায়্যাজ—(هياج) : এর অর্থ ক্রোধ বা আক্রোশ। এ শব্দটিও যুদ্ধ অর্থে সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
11. কিতাল-(قتال) : কিতাল শব্দটির অর্থ মারা, হত্যা, যুদ্ধ, প্রতিশোধ, অভিশাপ, সর্বোপরি সশস্ত্র সংগ্রামকে কিতাল বলে। আল-কুরআনে আল্লাহর একত্ববাদকে অস্বীকারকারীর (কাফির) বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে বুঝানোর (যুদ্ধের অনুমতি বা নির্দেশের) ক্ষেত্রে সাধারণত: قتال - শব্দটির ব্যবহার হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম যুদ্ধের অনুমতি সংক্রান্ত এ আয়াতে: ‘তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, যারা আক্রান্ত হয়েছে, যাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম’ ব্যবহৃত হয়েছে। বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জবাবে নাযিলকৃত আয়াতেও কিতাল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিমদের দু‘বিরোধী দলের সংগ্রামের পর মীমাংসার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নির্দেশিত আয়াতেও কিতাল শব্দটি প্রয়োগ হতে দেখা গেছে। قتال শব্দটির মূল অর্থ সশস্ত্র যুদ্ধ। আল-কুরআনে সশস্ত্র যুদ্ধ সংক্রান্ত আয়াতগুলোতে جهاد শব্দটি একবারও ব্যবহার করা হয়নি। মূলত: এখানেই جهاد এবং قتال এর মধ্যে পার্থক্য। আর জিহাদ হচ্ছে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, আর কিতাল হচ্ছে নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশক শব্দ। জিহাদ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরযে আইন, আর কিতাল যুদ্ধক্ষম ব্যক্তির জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ফরয। কিন্তু যুদ্ধে অক্ষম মুসলিমদের জন্য তা ফরযে কিফায়া।
12. জিহাদ-(جهاد): শব্দটি جهد শব্দ থেকে নির্গত। ج- (জিম) বর্ণের ওপর পেশ হলে এর অর্থশক্তি ও সামর্থ্য, কঠিন, অতিরিক্ত, পরিশ্রম। আর জিমের ওপর ফাতাহ হলে এর অর্থ শক্তি সামর্থ্য ব্যয় করা, প্রচেষ্টা, লক্ষ্যে পৌঁছা পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালানো, পরীক্ষা করা, আগ্রহ প্রকাশ করা, ক্ষীণ বা দুর্বল করা, অধ্যবসায় সহকারে কাজ করা, এবং সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা। ইসলামী পরিভাষায়- জিহাদ হচ্ছে কাফির-আল্লাহদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধে অংশগ্রহন করা। অথবা কাফেরদের হাত থেকে আল্লাহর দ্বীনকে হিফাযত করার জন্য পরিচালিত যাবতীয় অভিযান সমূহই জিহাদ। ইমাম শাফেয়ী বলেন, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই জিহাদ।
ইমাম মালিক বলেন, আল্লাহর কালেমা প্রচারের লক্ষ্যে (চুক্তিবদ্ধ জাতি ছাড়া) কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নাম জিহাদ।
তবে আমদের আলোচনার প্রথম যে দুই প্রকার অর্থাৎ গাযওয়াহ ও সারিয়া তা “গাযওয়ায়ে ওয়াকিআহ” এর অন্তর্ভুক্ত। আর বাকিগুলো যুদ্ধ ও সমর অভিযান বুঝানোর জন্য কুরআন হাাদিসে বর্ণিত অন্যান্য শদ্বাবলী।
এ সকল গাযওয়া পরিচালনার কারনঃ
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلاَّ أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
অর্থঃ
যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম।যাদেরকে তাদের নিজ বাড়ী-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ’। আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।