জিহাদকে যারা সন্ত্রাসবাদ বলে তারা হয় মূর্খ,না হয় মতলববাজ । আবু-আব্দুল্লাহ
সকল প্রকার অন্যায় –অবিচার, জুলুম –নিপীড়ন,ফেতনা ফাসাদ,সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদ,অগ্রাসন প্রতিরোধ ও দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামের জিহাদ পরিচালিত হয়। জিহাদ একটি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আমল । ইসলামের পূর্ণতা ও ও উৎকর্ষের সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ ।জিহাদ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য এক বিরাট রহমত । কিন্তু ইসলামের চিরশত্রু ইয়াহুদী ,নাসারা,মুশরিক,ও কাদিয়ানিরা চিরকালয় জিহাদকে হত্যা-সন্ত্রাস,নৈরাজ,দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর মানসিকতা বিরোধী কাজ বলে প্রপাগান্ডা চালিয়ে এসেছে এবং আজও চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরাইল , ভারত সহ তামাম ইসলামবিরোধী শক্তি আজ জিহাদকে সন্ত্রাস ও মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার ,আমাদের মুসলিম দেশসমূহের গাদ্দার ,মুনাফিক ,শাসকবর্গ, ও নিজ নিজ দেশে মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামবিরোধী অভিযানে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ।
এসব মুনাফিক তাবেদার সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই যে প্রভু যুক্তরাষ্ট্রের কথামত মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে দমনাভিযান চালাচ্ছে এ কথা স্পট ।কিন্তু একটি ব্যাপার খুবই অস্পষ্ট ,তাহলো কিছু মডারেট ওলামায়ে কিরাম ও ইসলামপন্থী নেতা ইদানিং জিহাদ ও মুজাহিদদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মতই আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করছেন ।
তারাও মুসলিম জাতির আযাদী ও দ্বীনকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে নিয়োজিত মুজাহিদদের সন্ত্রাসবাদী বলে অভিহিত করেছেন । আমার বুঝে আসে না ,তারা এখনে মূর্খতাবশতঃ এ ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন , না যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার জন্য এরুপ মনোভাব প্রকাশ করছেন? জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলার পেছনে প্রধানতঃ দুটি বিষয় কাজ করে ।
এক.মূর্খতা,দুই.কুমতলব । যারা মূর্খতা বশতঃ জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি জিহাদের সংজ্ঞা , প্রকৃতি তথা স্বরুপ এবং এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরতে জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো ,সাধনা করা,কষ্ট স্বীকার করা,অক্লান্ত পরিশ্রম করা,রণক্ষেত্রে পূর্ণশক্তি ঢেলে দেয়া ইত্যাদি ।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদ হলো –ইসলামের শত্রুদের দমন এবং মূলোৎপাটন করে দুনিয়ার বুকে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্টা ও তার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে স্বীয় জান-মাল দ্বারা সংগ্রাম করা। জিহাদের শারঈ পরিভাষা প্রসঙ্গে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার উমদাদুল কারী গ্রন্থে বলেছেনঃ আল জিহাদু বজলুল জুহদি ফী ক্বিতালী মাআল কুফফারি লি ইলাই কালিমাতিল্লাহি তাআলা । অর্থাৎ আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে কাফিরদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী জিহাদের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ আল জিহাদু বজলুল জুহদি ফী ক্বিতালি মা আল কুফফার । অর্থাৎ জিহাদ হলো কাফির গোষ্ঠীর মোকাবিলায় নিজের সবটুকু শক্তি সশস্ত্র যুদ্ধে ব্যয় করা । (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃঃ ২)
বিচারপতি তাকী উসমানী তাঁর তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম গ্রন্থে বলেছেনঃ জিহাদ হলো ইসলামের সাহায্য ও আল্লাহর দ্বীনকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিবেদিত যুদ্ধ।
জিহাদের সংজ্ঞা আলোচিত হলো । এসব সংজ্ঞাতেই জিহাদের স্বরুপ ফুটে উঠে। তারপরও আমাদের সমাজে জিহাদের বিভিন্ন রুপ ব্যাখ্যা চালু থাকায় এর আসল রুপ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
আল্লাহ তাআলা এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইবাদতকে যে নামে অভিহিত করেছে্ন, তাকে সে নামে অভিহিত করাই বাঞ্ছনীয়। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরীফে প্রতিটি ইবাদতের সুনির্দিষ্ট অর্থ, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে । যেমন নামায আরবীতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে সলাত। এর জন্য বিশেষ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করা আছে । তাছাড়াও ওযু করা ,কিবলামুখী হওয়া,এরপর তাকবীরে তাহরীমা্, কিরাত, রুকু, সাজদা, তাশাহহুদ, সালাম ফিরানো এভাবে তা আদায় করতে হবে। এটি একটিও বাদ দিয়ে নামাযকে কেউ ব্যাখ্যা করলে তা ইবাদত হবে না । যদিও আরবী অভীধানে সলাত শব্দের আরও অনেক অর্থ আছে ।
এভাবে আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট একটি আমলকে সিয়াম বা রোযা বলেছেন এবং সেই ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইবাদতটিকেই কেবল সিয়াম বলা হবে। এর ব্যত্যয় হলে তাকে সিয়াম বলা যাবে না । কেউ যদি বলে আমি অভিধানে দেখেছি সিয়াম অর্থ বিরত থাকা ।
সে যদি দিনের বেলা মাত্র দু-চার ঘন্টা খানাপিনা ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে । কুরআন ও হাদীসে সিয়ামের যত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, তা সেই পাবে, যে ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রোযা রাখবে। তেমনিভাবে যাকাত –কেউ যদি তাঁর নিজের সম্পদের একটা মনগড়া অংশ যাকে ইচ্ছা দিয়ে দেয়, তবে তা সদকা হতে পারে, হাদিয়া হতে , কিন্তু যাকাত হলো না ।
ঠিক তেমনিভাবে জিহাদ প্রসঙ্গ-যাকে কুরআন মজিদ ও হাদিস শরীফে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ ও ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে, তা একটি মহামান্বিত ইবাদত । যার বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তাআলা যে ইবাদতকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ বলে অভিহিত করেছেন, সে ইবাদত পালনে তীর্,ধনু্ক,তরবারি,ঘোড়া,বন্ধু্ক,গোলা-বারুদ,কামান,জঙ্গী বিমান,রকেট, মিসাইল ইত্যাদি যুগোপযোগী সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় এবং ইসলামবিরোধী কাফির ,মুশরিক,মুরতাদ প্রভৃতি তাগুতি শক্তির সাথে মুসলমানদের যুদ্ধে মোকাবিলা হয়।
এই যুদ্ধের পর যদি মুসলিম বাহিনীর কোন সদস্য জীবিত থাকে তবে তাকে গাজী আর মৃত্যু বরণ করলে তাকে শহীদ বলা হয়। এই নিয়ম পদ্ধতিতে যারা জিহাদ করবে , জিহাদের সকল ফজীলত শুধু তাদেরই ভাগ্যে । এর ব্যতিক্রম হলে নয় ।
অতএব কেউ যদি বলে,আরবী অভিধানে আমি দেখেছি ,জিহাদ অর্থ চেষ্টা –সাধনা করা,অক্লান্ত পরিশ্রম করা,কষ্ট বরণ করা সে চেষ্টা –সাধনা পরিশ্রম কষ্ট যে ধরনের হোকনা কেন । যেমন সত্য কথা বলার চেষ্টা করা ,হালাল রুজি কামাইয়ের জন্য পরিশ্রম করা জ্ঞান অর্জনের জন্য সাধনা করা ইত্যাদি সবই জিহাদ ।
তাহলে জিহাদ বলে আলাদা কোন বিধানের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকে না। অথচ এই আভিধানিক অর্থসমূহের আলোকেই বক্তা তার বক্তব্যকে ,লেখক তার লেখাকে, শ্রমিক তার মেহনতকে জিহাদ চালিয়ে দিচ্ছে । মিছিল মিটিং হরতাল ও ভোট প্রদান করাকে এ যুগের জিহাদ বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য যে , সলাত শব্দটি যেমন কুরআন হাদিসে নামায ছাড়াও অন্যান্য আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে , তেমনি জিহাদ শব্দটিও বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । কিন্তু সাধারণভাবে সলাত বলতে আমরা নামাযকেই বুঝে থাকি আকিমুস সলাত বলে যে কুরআনি নির্দেশ আমাদের প্রতি এসেছে নামায ছাড়া অন্য কোন আভিধানিক অর্থ থাকলেও কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল বলে যে জিহাদ ফরয করা হয়েছে।
ঈমান বিল্লাহর পর সর্বোত্তম আমল হিসেবে যে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে ঘোষণা করা হয়েছে তা কাফির মুশরিক মুরতাদদের মোকাবিলায় যুদ্ধ অর্থেই শুধু ব্যবহৃত হবে অন্য কোন অর্থে নয়।
এবার জিহাদের লক্ষ্য –উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে আসি । জিহাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর দ্বীনের বিজয় বিধান ও কুফরী শক্তিসমূহের পতন সাধন । এছাড়াও জিহাদের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ পবিত্র কুরআনের আলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
জিহাদের লক্ষ্যসমূহঃ
* ফিতনা নির্মূল করা। (সূরা আল বাকারা -১৯৩,সূরা আনফাল-৩৯)
* পৃথীবিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। (সূরা– বাকারা)
* দুনিয়ার বুকে ইবাদতের স্থানসমূহ টিকিয়ে রাখা । (সূরাতুল হজ্জ ৪০)
* অসহায় ,দুর্বল,নিপীড়িত, নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত মানবতার মুক্তি বিধান করা।(সূর– বাকারা ১৯০-১৯১)
* অগ্রাসন প্রতিরোধ করা।(সুরা-বাকারা ১৯০-১৯১)
* আল্লাহর সাথে নাফরমানির শাস্তি দেয়া ।(সূরা-তওবাহ২৯)
* ঈমানদারদের ক্ষোভ প্রশমন ও অন্তরে প্রশান্তি দান । (সূরা-তওবাহ ১৪-১৫)
* মুমিনদের ঈমান পরীক্ষা করা । (সূরা আল ইমরান ১৪২ )
এখন বলুন, জিহাদের উপরোক্ত সংজ্ঞা, স্বরূপ ও প্রকৃতি এবং লক্ষ্য –উদ্দেশ্য সম্পর্ক যারা জানে তারা কি জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলতে পারে? কখনই নয়। বর্তমান যামানার মুজাহিদগণ ফিতনা-ফাসাদ, নির্মূল,রাষ্টীয় সন্ত্রাসের প্রতিরোধ,অগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুসলিম জাতির আযাদির লক্ষ্যে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে । এতদসত্ত্বেও যারা না বুঝেই তাদের জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলছে,তাদেরকে মূর্খ না বলে উপায় কী?
অতঃপর জিহাদকে যারা জেনে বুঝেই সন্ত্রাসবাদ বলে তাদের কুমতলব আমাদের কাছে পরিস্কার থাকা দরকার । ইয়াহুদী, খৃষ্টান সহ ব্রাহ্মণবাদী ক্রুসেডরগণ কর্তৃক জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলার মতলব হলো-নিজেদের আগ্রাসী ও সন্ত্রাসবাদী অপকর্মগুলো আড়াল করা, আর তাদের আগ্রাসন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেসব মুজাহিদ প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে তাদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা। যাতে মুজাহিদদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধ সংগ্রাম কেউ সহযোগিতার হাত না বাড়ায় । বিশ্ব সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র আফগান , ইরাক সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের উপর আগ্রাসন ও সন্ত্রাস পরিচালনা করছে; ইসরাঈল ফিলিস্তিনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রাশিয়া চেচনিয়ায় আগ্রাসন পরিচালনা করছে ,ভারত কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর বৃটিশের তৈরী কুফরী সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছে।
উপরোক্ত আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেসব জানবাজ মুজাহিদ লড়াই করছে, উল্টো তাদেরকেই সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে । উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে যাকে বলে।
মুসলমানদের মধ্যে যারা জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলে এর বিরুদ্ধে প্রচার –প্রপাগন্ডা চালাচ্ছে, এদের এক গ্রুপ হলো ইসলাম বিচ্যুত শাসকবর্গ । এরা ইসলামের স্বার্থ বুঝে না বরং যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখাই এদের মূল লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার এসব মুসলিম শাসক ভাবছে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে, সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য –সহযোগিতা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ্যে থাকলে তাদেরকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবেনা । এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বহু অন্যায় –অযৌক্তিক আবদার তারা সবিনয়ে মেনে নিচ্ছে । যুক্তরাষ্ট্র এসব তাবেদার সরকারকে মুজাহিদদের দমন করতে বলায় এরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে দমনাভিযান চালাচ্ছে । মুজাহিদদের বিরুদ্ধে দমনাভিযানে সাধারণ মুসলমানরা ক্ষেপে উঠতে পারে ভেবে এসব মতলববাজ সরকার মুজাহিদদের গায়ে সন্ত্রাসীর লেবেল এঁটে দিচ্ছে । মুসলমানদের আরেকটি গ্রুপ যারা ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত; কিন্তু আপোষকামিতা ও সুবিধাকে গ্রহণ করার ফলে ইসলামী আন্দোলনের মূল তরিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে ।
এরাও যে জেনে বুঝে কেন জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলছে তা আমার কাছে সুস্পষ্ট নয় । তবে বহু ভেবে আমার এ ধারণাই হয়েছে যে ,এদেরও মতলব হলো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করা । এদের গায়ে ইসলাম মৌলবাদের সাইনবোর্ড থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সামনে নিজেদেরকে উদারপন্থি ,গণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসবিরোধী হিসেবে উপস্থাপনে তৎপর ।
আরেকটি মতলব আছে এসব ক্ষমতাকাঙ্ক্ষী দলের । তা হলো নিজেদের পতন ঠেকানো । মুজাহিদরা শক্তিশালী হয়ে হয়ে উঠলে আর জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়ে গেল ,এসব আদর্শ বিচ্যুত দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্বে চলে আসবে জিহাদপন্থীরা ।
ফলে এদের সকল স্বপ্ন –সাধনা ধুলায় মিশে যাবে মনে করে মুজাহিদদের সন্ত্রাসবাদী বলে এরা বিভান্তি ছড়াচ্ছে। আলোচনার পরিসমাপ্তিতে এসে আমি এ কথাই বলতে চাই, জিহাদ হলো –পৃথিবী হতে যাবতীয় অন্যায় –অপকর্ম, জুলুম-নিপীড়ন, ফিতনা- ফাসাদ, আগ্রাসন ও সন্ত্রাস নির্মূল করে শান্তি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। সুতরাং এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ তাআলার খাস রহমত স্বরুপ, সেই জিহাদকে সন্ত্রাস বলা কিংবা সরাসরি এর বিরোধিতা করা ইসলামের দুশমনদের কাজ হতে পারে, কিন্তু সেই দিনের মধ্যে জিহাদ ক্বিতালকে ফরয ঘোষণা করা হয়েছে , যেই দ্বীনের অনুসারীদের জন্য জিহাদকে সন্ত্রাস ভাবা কিংবা যে কোন প্রকারে এর বিরোধিতা করা কিংবা একে অস্বীকার করা সম্ভব নয় ।
কিন্তু হায়! আফসোস! জিহাদের মাধ্যমে শিরক ,কুফর ও বাতিলকে নিশ্চিহ্ন করে এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর কালেমাকে সর্বোচ্চ সমাসীন করাই ছিল যে মুসলমানদের কাজ, সেই মুসলমানদের মাঝেই আজ জিহাদের মহান দায়িত্ব ত্যাগ করে ক্ষণস্থায়ী লোভ লালসায় ডুবে গিয়ে শহীদী মৃত্যু তালাশের পরিবর্তে তাগুতের সাথে আপোষ করে ভীরু –কাপুরুষের মত জীবন –যাপনের মন-মানসিকতা প্রবল হয়ে উঠেছে । এই হীন মন-মানসিকতা আমাদের পরিত্যাগ করে আল্লাহর নিবেদিত প্রাণ বান্দা হিসেবে একমাত্র তারই সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে । আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন, (আমীন)।
লিখেছেন:
আব্দুল্লাহ
সকল প্রকার অন্যায় –অবিচার, জুলুম –নিপীড়ন,ফেতনা ফাসাদ,সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদ,অগ্রাসন প্রতিরোধ ও দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামের জিহাদ পরিচালিত হয়। জিহাদ একটি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আমল । ইসলামের পূর্ণতা ও ও উৎকর্ষের সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ ।জিহাদ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য এক বিরাট রহমত । কিন্তু ইসলামের চিরশত্রু ইয়াহুদী ,নাসারা,মুশরিক,ও কাদিয়ানিরা চিরকালয় জিহাদকে হত্যা-সন্ত্রাস,নৈরাজ,দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর মানসিকতা বিরোধী কাজ বলে প্রপাগান্ডা চালিয়ে এসেছে এবং আজও চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরাইল , ভারত সহ তামাম ইসলামবিরোধী শক্তি আজ জিহাদকে সন্ত্রাস ও মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার ,আমাদের মুসলিম দেশসমূহের গাদ্দার ,মুনাফিক ,শাসকবর্গ, ও নিজ নিজ দেশে মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামবিরোধী অভিযানে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ।
এসব মুনাফিক তাবেদার সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই যে প্রভু যুক্তরাষ্ট্রের কথামত মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে দমনাভিযান চালাচ্ছে এ কথা স্পট ।কিন্তু একটি ব্যাপার খুবই অস্পষ্ট ,তাহলো কিছু মডারেট ওলামায়ে কিরাম ও ইসলামপন্থী নেতা ইদানিং জিহাদ ও মুজাহিদদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মতই আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করছেন ।
তারাও মুসলিম জাতির আযাদী ও দ্বীনকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে নিয়োজিত মুজাহিদদের সন্ত্রাসবাদী বলে অভিহিত করেছেন । আমার বুঝে আসে না ,তারা এখনে মূর্খতাবশতঃ এ ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন , না যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার জন্য এরুপ মনোভাব প্রকাশ করছেন? জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলার পেছনে প্রধানতঃ দুটি বিষয় কাজ করে ।
এক.মূর্খতা,দুই.কুমতলব । যারা মূর্খতা বশতঃ জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি জিহাদের সংজ্ঞা , প্রকৃতি তথা স্বরুপ এবং এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরতে জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো ,সাধনা করা,কষ্ট স্বীকার করা,অক্লান্ত পরিশ্রম করা,রণক্ষেত্রে পূর্ণশক্তি ঢেলে দেয়া ইত্যাদি ।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদ হলো –ইসলামের শত্রুদের দমন এবং মূলোৎপাটন করে দুনিয়ার বুকে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্টা ও তার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে স্বীয় জান-মাল দ্বারা সংগ্রাম করা। জিহাদের শারঈ পরিভাষা প্রসঙ্গে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার উমদাদুল কারী গ্রন্থে বলেছেনঃ আল জিহাদু বজলুল জুহদি ফী ক্বিতালী মাআল কুফফারি লি ইলাই কালিমাতিল্লাহি তাআলা । অর্থাৎ আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে কাফিরদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী জিহাদের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ আল জিহাদু বজলুল জুহদি ফী ক্বিতালি মা আল কুফফার । অর্থাৎ জিহাদ হলো কাফির গোষ্ঠীর মোকাবিলায় নিজের সবটুকু শক্তি সশস্ত্র যুদ্ধে ব্যয় করা । (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃঃ ২)
বিচারপতি তাকী উসমানী তাঁর তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম গ্রন্থে বলেছেনঃ জিহাদ হলো ইসলামের সাহায্য ও আল্লাহর দ্বীনকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিবেদিত যুদ্ধ।
জিহাদের সংজ্ঞা আলোচিত হলো । এসব সংজ্ঞাতেই জিহাদের স্বরুপ ফুটে উঠে। তারপরও আমাদের সমাজে জিহাদের বিভিন্ন রুপ ব্যাখ্যা চালু থাকায় এর আসল রুপ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
আল্লাহ তাআলা এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইবাদতকে যে নামে অভিহিত করেছে্ন, তাকে সে নামে অভিহিত করাই বাঞ্ছনীয়। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরীফে প্রতিটি ইবাদতের সুনির্দিষ্ট অর্থ, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে । যেমন নামায আরবীতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে সলাত। এর জন্য বিশেষ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করা আছে । তাছাড়াও ওযু করা ,কিবলামুখী হওয়া,এরপর তাকবীরে তাহরীমা্, কিরাত, রুকু, সাজদা, তাশাহহুদ, সালাম ফিরানো এভাবে তা আদায় করতে হবে। এটি একটিও বাদ দিয়ে নামাযকে কেউ ব্যাখ্যা করলে তা ইবাদত হবে না । যদিও আরবী অভীধানে সলাত শব্দের আরও অনেক অর্থ আছে ।
এভাবে আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট একটি আমলকে সিয়াম বা রোযা বলেছেন এবং সেই ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইবাদতটিকেই কেবল সিয়াম বলা হবে। এর ব্যত্যয় হলে তাকে সিয়াম বলা যাবে না । কেউ যদি বলে আমি অভিধানে দেখেছি সিয়াম অর্থ বিরত থাকা ।
সে যদি দিনের বেলা মাত্র দু-চার ঘন্টা খানাপিনা ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে । কুরআন ও হাদীসে সিয়ামের যত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, তা সেই পাবে, যে ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রোযা রাখবে। তেমনিভাবে যাকাত –কেউ যদি তাঁর নিজের সম্পদের একটা মনগড়া অংশ যাকে ইচ্ছা দিয়ে দেয়, তবে তা সদকা হতে পারে, হাদিয়া হতে , কিন্তু যাকাত হলো না ।
ঠিক তেমনিভাবে জিহাদ প্রসঙ্গ-যাকে কুরআন মজিদ ও হাদিস শরীফে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ ও ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে, তা একটি মহামান্বিত ইবাদত । যার বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তাআলা যে ইবাদতকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ বলে অভিহিত করেছেন, সে ইবাদত পালনে তীর্,ধনু্ক,তরবারি,ঘোড়া,বন্ধু্ক,গোলা-বারুদ,কামান,জঙ্গী বিমান,রকেট, মিসাইল ইত্যাদি যুগোপযোগী সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় এবং ইসলামবিরোধী কাফির ,মুশরিক,মুরতাদ প্রভৃতি তাগুতি শক্তির সাথে মুসলমানদের যুদ্ধে মোকাবিলা হয়।
এই যুদ্ধের পর যদি মুসলিম বাহিনীর কোন সদস্য জীবিত থাকে তবে তাকে গাজী আর মৃত্যু বরণ করলে তাকে শহীদ বলা হয়। এই নিয়ম পদ্ধতিতে যারা জিহাদ করবে , জিহাদের সকল ফজীলত শুধু তাদেরই ভাগ্যে । এর ব্যতিক্রম হলে নয় ।
অতএব কেউ যদি বলে,আরবী অভিধানে আমি দেখেছি ,জিহাদ অর্থ চেষ্টা –সাধনা করা,অক্লান্ত পরিশ্রম করা,কষ্ট বরণ করা সে চেষ্টা –সাধনা পরিশ্রম কষ্ট যে ধরনের হোকনা কেন । যেমন সত্য কথা বলার চেষ্টা করা ,হালাল রুজি কামাইয়ের জন্য পরিশ্রম করা জ্ঞান অর্জনের জন্য সাধনা করা ইত্যাদি সবই জিহাদ ।
তাহলে জিহাদ বলে আলাদা কোন বিধানের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকে না। অথচ এই আভিধানিক অর্থসমূহের আলোকেই বক্তা তার বক্তব্যকে ,লেখক তার লেখাকে, শ্রমিক তার মেহনতকে জিহাদ চালিয়ে দিচ্ছে । মিছিল মিটিং হরতাল ও ভোট প্রদান করাকে এ যুগের জিহাদ বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য যে , সলাত শব্দটি যেমন কুরআন হাদিসে নামায ছাড়াও অন্যান্য আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে , তেমনি জিহাদ শব্দটিও বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । কিন্তু সাধারণভাবে সলাত বলতে আমরা নামাযকেই বুঝে থাকি আকিমুস সলাত বলে যে কুরআনি নির্দেশ আমাদের প্রতি এসেছে নামায ছাড়া অন্য কোন আভিধানিক অর্থ থাকলেও কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল বলে যে জিহাদ ফরয করা হয়েছে।
ঈমান বিল্লাহর পর সর্বোত্তম আমল হিসেবে যে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে ঘোষণা করা হয়েছে তা কাফির মুশরিক মুরতাদদের মোকাবিলায় যুদ্ধ অর্থেই শুধু ব্যবহৃত হবে অন্য কোন অর্থে নয়।
এবার জিহাদের লক্ষ্য –উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে আসি । জিহাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর দ্বীনের বিজয় বিধান ও কুফরী শক্তিসমূহের পতন সাধন । এছাড়াও জিহাদের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ পবিত্র কুরআনের আলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
জিহাদের লক্ষ্যসমূহঃ
* ফিতনা নির্মূল করা। (সূরা আল বাকারা -১৯৩,সূরা আনফাল-৩৯)
* পৃথীবিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। (সূরা– বাকারা)
* দুনিয়ার বুকে ইবাদতের স্থানসমূহ টিকিয়ে রাখা । (সূরাতুল হজ্জ ৪০)
* অসহায় ,দুর্বল,নিপীড়িত, নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত মানবতার মুক্তি বিধান করা।(সূর– বাকারা ১৯০-১৯১)
* অগ্রাসন প্রতিরোধ করা।(সুরা-বাকারা ১৯০-১৯১)
* আল্লাহর সাথে নাফরমানির শাস্তি দেয়া ।(সূরা-তওবাহ২৯)
* ঈমানদারদের ক্ষোভ প্রশমন ও অন্তরে প্রশান্তি দান । (সূরা-তওবাহ ১৪-১৫)
* মুমিনদের ঈমান পরীক্ষা করা । (সূরা আল ইমরান ১৪২ )
এখন বলুন, জিহাদের উপরোক্ত সংজ্ঞা, স্বরূপ ও প্রকৃতি এবং লক্ষ্য –উদ্দেশ্য সম্পর্ক যারা জানে তারা কি জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলতে পারে? কখনই নয়। বর্তমান যামানার মুজাহিদগণ ফিতনা-ফাসাদ, নির্মূল,রাষ্টীয় সন্ত্রাসের প্রতিরোধ,অগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুসলিম জাতির আযাদির লক্ষ্যে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে । এতদসত্ত্বেও যারা না বুঝেই তাদের জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলছে,তাদেরকে মূর্খ না বলে উপায় কী?
অতঃপর জিহাদকে যারা জেনে বুঝেই সন্ত্রাসবাদ বলে তাদের কুমতলব আমাদের কাছে পরিস্কার থাকা দরকার । ইয়াহুদী, খৃষ্টান সহ ব্রাহ্মণবাদী ক্রুসেডরগণ কর্তৃক জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলার মতলব হলো-নিজেদের আগ্রাসী ও সন্ত্রাসবাদী অপকর্মগুলো আড়াল করা, আর তাদের আগ্রাসন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেসব মুজাহিদ প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে তাদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা। যাতে মুজাহিদদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধ সংগ্রাম কেউ সহযোগিতার হাত না বাড়ায় । বিশ্ব সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র আফগান , ইরাক সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের উপর আগ্রাসন ও সন্ত্রাস পরিচালনা করছে; ইসরাঈল ফিলিস্তিনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রাশিয়া চেচনিয়ায় আগ্রাসন পরিচালনা করছে ,ভারত কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর বৃটিশের তৈরী কুফরী সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছে।
উপরোক্ত আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেসব জানবাজ মুজাহিদ লড়াই করছে, উল্টো তাদেরকেই সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে । উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে যাকে বলে।
মুসলমানদের মধ্যে যারা জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলে এর বিরুদ্ধে প্রচার –প্রপাগন্ডা চালাচ্ছে, এদের এক গ্রুপ হলো ইসলাম বিচ্যুত শাসকবর্গ । এরা ইসলামের স্বার্থ বুঝে না বরং যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখাই এদের মূল লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার এসব মুসলিম শাসক ভাবছে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে, সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য –সহযোগিতা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ্যে থাকলে তাদেরকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবেনা । এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বহু অন্যায় –অযৌক্তিক আবদার তারা সবিনয়ে মেনে নিচ্ছে । যুক্তরাষ্ট্র এসব তাবেদার সরকারকে মুজাহিদদের দমন করতে বলায় এরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে দমনাভিযান চালাচ্ছে । মুজাহিদদের বিরুদ্ধে দমনাভিযানে সাধারণ মুসলমানরা ক্ষেপে উঠতে পারে ভেবে এসব মতলববাজ সরকার মুজাহিদদের গায়ে সন্ত্রাসীর লেবেল এঁটে দিচ্ছে । মুসলমানদের আরেকটি গ্রুপ যারা ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত; কিন্তু আপোষকামিতা ও সুবিধাকে গ্রহণ করার ফলে ইসলামী আন্দোলনের মূল তরিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে ।
এরাও যে জেনে বুঝে কেন জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলছে তা আমার কাছে সুস্পষ্ট নয় । তবে বহু ভেবে আমার এ ধারণাই হয়েছে যে ,এদেরও মতলব হলো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করা । এদের গায়ে ইসলাম মৌলবাদের সাইনবোর্ড থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সামনে নিজেদেরকে উদারপন্থি ,গণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসবিরোধী হিসেবে উপস্থাপনে তৎপর ।
আরেকটি মতলব আছে এসব ক্ষমতাকাঙ্ক্ষী দলের । তা হলো নিজেদের পতন ঠেকানো । মুজাহিদরা শক্তিশালী হয়ে হয়ে উঠলে আর জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়ে গেল ,এসব আদর্শ বিচ্যুত দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্বে চলে আসবে জিহাদপন্থীরা ।
ফলে এদের সকল স্বপ্ন –সাধনা ধুলায় মিশে যাবে মনে করে মুজাহিদদের সন্ত্রাসবাদী বলে এরা বিভান্তি ছড়াচ্ছে। আলোচনার পরিসমাপ্তিতে এসে আমি এ কথাই বলতে চাই, জিহাদ হলো –পৃথিবী হতে যাবতীয় অন্যায় –অপকর্ম, জুলুম-নিপীড়ন, ফিতনা- ফাসাদ, আগ্রাসন ও সন্ত্রাস নির্মূল করে শান্তি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। সুতরাং এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ তাআলার খাস রহমত স্বরুপ, সেই জিহাদকে সন্ত্রাস বলা কিংবা সরাসরি এর বিরোধিতা করা ইসলামের দুশমনদের কাজ হতে পারে, কিন্তু সেই দিনের মধ্যে জিহাদ ক্বিতালকে ফরয ঘোষণা করা হয়েছে , যেই দ্বীনের অনুসারীদের জন্য জিহাদকে সন্ত্রাস ভাবা কিংবা যে কোন প্রকারে এর বিরোধিতা করা কিংবা একে অস্বীকার করা সম্ভব নয় ।
কিন্তু হায়! আফসোস! জিহাদের মাধ্যমে শিরক ,কুফর ও বাতিলকে নিশ্চিহ্ন করে এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর কালেমাকে সর্বোচ্চ সমাসীন করাই ছিল যে মুসলমানদের কাজ, সেই মুসলমানদের মাঝেই আজ জিহাদের মহান দায়িত্ব ত্যাগ করে ক্ষণস্থায়ী লোভ লালসায় ডুবে গিয়ে শহীদী মৃত্যু তালাশের পরিবর্তে তাগুতের সাথে আপোষ করে ভীরু –কাপুরুষের মত জীবন –যাপনের মন-মানসিকতা প্রবল হয়ে উঠেছে । এই হীন মন-মানসিকতা আমাদের পরিত্যাগ করে আল্লাহর নিবেদিত প্রাণ বান্দা হিসেবে একমাত্র তারই সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে । আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন, (আমীন)।
লিখেছেন:
আব্দুল্লাহ