Announcement

Collapse
No announcement yet.

চলুন আমরাও আল্লাহর জন্য হয়ে যাই!

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • চলুন আমরাও আল্লাহর জন্য হয়ে যাই!

    বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ গত সাড়ে চৌদ্দশত বছরের সবচেয়ে নাজুকতম সময় পার করছে। উম্মাহর উপর সর্বগ্রাসী চতুর্মুখী এতো আগ্রাসন, নির্যাতন আর অপমান হয়ত আর অতীতে কখনও ছিল না। যুলুম-নির্যাতন, হত্যা, লুন্ঠন, অপমান, বঞ্চনা, গ্রেফতার ইত্যাদি এখন প্রকৃত দ্বীনের উপর অটল মুসলিমের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তো আমরা কি কখন অন্তর দিয়ে একান্তে ভেবে দেখেছি উম্মাহর এই কঠিন দুরবস্থা আমার আপনার কাছে কী দাবি করে?

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম হলেন আমাদের সর্বোত্তম অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাব যে, উম্মাহর সামান্য কোন বিপদে উনাদের তৎপরতা, অস্থিরতা ও কুরবানি কেমন ছিল। উনাদের যুগে উম্মাহর হালত কখনও বর্তমানের মত কঠিন ও নাজুক ছিল না। কিন্তু তাদের কুরবানি আর অস্থিরতার দাস্তান?? একটু ভাবা যায়? তাবুক যুদ্ধের সময় মদীনা থেকে অনেক দূরে কাফেররা সৈন্য জমায়েত করছিল শুধু মদীনা আক্রমণের জন্য। তখনো মুসলিমদের জান-মান, ঈমান-ইজ্জত সব নিরাপদ। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?? যুবক-বৃদ্ধ, ধনী-গরীব, প্রভাবশালী-সাধারণ শ্রেণি, আলেম-গাইরে আলেম সবাই একযোগে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। কারো পিছনে বসে থাকার অনুমতি ছিল না। জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যাওয়ার পর অন্যান্য দায়িত্বে মশগুল হয়ে ফরজ জিহাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির কোন সূরত ছিল না। তীব্র গরম, দুনিয়াবি অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির আশংখা ইত্যাদি সব মাথায় রেখে সবাই বের হয়ে যান। শরয়ী উজর ছাড়া বহু মুনাফিক এই যুদ্ধে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে শরয়ী উজর ছাড়াই তিনজন সাহাবী পিছনে থেকে যান। তাদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কেমন ছিল?? তাদেরকে সমাজ থেকে বয়কট করে দেওয়া হয়। অবশেষে অনুশোচনা-তাওবা করতে করতে চল্লিশ দিন তাদের তাওবা কবুল হয়।

    সুবহানাল্লাহ! কোন ধরনের আক্রমণ-আগ্রাসনের শিকার হওয়া ছাড়াই উম্মাহর সমূহ বিপদের আশংখায় যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের এই অস্থিরতা হয় এবং জিহাদে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে এই শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে আজকে উম্মাহর ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুকতম সময়ে আমাদের অস্থিরতা কেমন হওয়া চাই?? আর কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকলে তাকে কিভাবে বয়কট করতেন বলে ধারণা করা যায়?? আজকে কিভাবে দুনিয়াবি বিভিন্ন ব্যস্ততা ও অন্যান্য দ্বীনি খিদমাতের দোহাই দিয়ে ফরজে আইন জিহাদ থেকে পিছনে বসে থাকা যায়?? আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হিদায়াত দান করুন, সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

    আসলে মুখে অনেক সহজেই দাবি করা যায় আমি দ্বীনদার, আল্লাহকে ভয় করি, বিভিন্ন দ্বীনী কাজে আমি আমার সময় অতিবাহিত করছি। কিন্তু বাস্তবতা আসলে অনেক কঠিন। আসলে কেমন যেন এখন দ্বীনদার বা দ্বীনদার না, আলেম কিংবা গাইরে আলেম, জিহাদের বুঝ লালনকারী ভাই বা সাধারণ কোন দ্বীনী ভাই আমাদের সবার জীবনের প্রধান ফোকাস ও কেন্দ্রস্থল হয়ে গেছে দুনিয়া। দুনিয়াবি সফলতা, জীবন-জীবিকা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এগুলিকে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত দ্বীনের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলা, পূর্ণ দ্বীনের উপর আন্তরিকতার সাথে আমল করা এখন অনেকের কাছে কেমন যেন একটা শাস্ত্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-


    قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَاَبۡنَآؤُکُمۡ وَاِخۡوَانُکُمۡ وَاَزۡوَاجُکُمۡ وَعَشِیۡرَتُکُمۡ وَاَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡہَا وَتِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَہَا وَمَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَہَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَجِہَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰہُ بِاَمۡرِہٖ ؕ  وَاللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ

    বলুন, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর (আল্লাহর) পথে জিহাদ করারা চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানেরা, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আপনগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত । আর আল্লাহ্ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না । (সূরা তাওবা, ২৪)



    প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা সত্যিই নিজের দুনিয়াবি কাজকে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং জিহাদের ভালবাসা চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি না তো? একদিকে দুনিয়া আরেকদিকে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং জিহাদের ভালবাসার বিষয় আসলে আমরা দুনিয়াকে প্রধান্য দিচ্ছি না তো? আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। আমীন।

    এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সর্বযুগের মুখলিস মুজাহিদ আল্লাহ বান্দাদের জীবনীতে দেখা যায়, উনাদের দুনিয়ার সব ধরণের উঠাবাস, চলাফেরা, জীবনযাপন সবকিছু কেমন যেন আখিরাতকে কেন্দ্র করে হত। আখিরাতকেই উনারা সবক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতেন। আমরাও সত্যিকার অর্থেই নিজেদের আমলের দ্বারা আখিরাতকে প্রাধান্য দিচ্ছি তো? হায়! উনারাও আখিরাতে চিরকাল থাকবেন, আমরাও থাকব। আল্লাহর ইচ্ছায় উনারা নিজেদের আখিরাত গুছিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমরা কেন দুনিয়ার পিছনে পড়ে পিছে থেকে যাব? আমরা কি তাদের মত সফল হতে চাইনা? হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কবুল করুন।

    বর্তমান দ্বীনের ক্রান্তিলগ্নে আল্লাহর সাথে সততা রাখে, দ্বীনের জন্য নিজের জান-মাল-সময়-মেধা সবকিছু বিলিয়ে দিবে, দ্বীনের কাজকেই নিজের প্রধান পেশা নেশা বানাবে, জিহাদের ঝান্ডা হাতে নিয়ে উম্মাহর হাল ধরে এক বিল্পব তৈরি করবে এমন লোকের অনেক অভাব। আজ দ্বীনের জন্য এদের খুবই প্রয়োজন। আর তা শুধু মুখে দাবি করলেই হয়না, বাস্তবে এরজন্য অনেক কিছু করার আছে। তাই, চলুন ভাইয়েরা আমরাও এমন আল্লাহর জন্য হয়ে যাই।
    فَلۡيُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشۡرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا بِٱلۡأٓخِرَةِۚ وَمَن يُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقۡتَلۡ أَوۡ يَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا

    কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জিহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।(সূরা নিসা, আয়াত ৭৪)
Working...
X