Announcement

Collapse
No announcement yet.

খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কার?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কার?

    আমাদের তাবলিগ ভাইয়েরা একথা বলেন এবং তারা ঠিকই বলেন যে, 'যেহেতু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র মানব জাতির জন্য নবী ও রসূল হিসেবে প্রেরিত, তাই তাঁর দাওয়াত প্রতিটি উম্মতের কাছে পৌঁছানো জরুরি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হওয়ার কারণে এই দায়িত্ব সমগ্র উম্মাহর উপর হস্তান্তরিত হয়েছে। কারণ এখন আর কোনো নবী আসবেন না এবং ফেরেশতারাও এ কাজ করবেন না। এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাতশ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় পাঁচশ কোটি 'অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, তাদের নিকট কোর'আনের বাণী পৌঁছানো ও তাদের কাছে মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া বাকী দুই কোটি মুসলমানের সামষ্টিক দায়িত্ব।' তবে এটাও বিবেচনা করা জরুরী যে,যেমনিভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব উম্মতের উপর ন্যাস্ত, তেমনিভাবে একজন নবী ও রাসুল হিসেবে মহানবী (সা.)-এর অন্যান্য দায়িত্বও উম্মাহর উপরই ন্যাস্ত।সেসব দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো-' মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত নেতৃত্ব এবং মুসলিম সমাজে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর শেষ রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা ও আহকামের ব্যাবহারিক বাস্তবায়ন। নবী (সা.) শুধু মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতই দেননি, বরং এই দাওয়াতের মাধ্যমে কালিমা পাঠকারীদের মধ্যে পারস্পরিক শৃঙ্খলাও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের উপর আল্লাহর আইন ও হুকুমের বাস্তবায়ন এবং তাদের সামাজিক ও জাতীয় স্বার্থও রক্ষা করেছেন। অতএব, এই সমস্ত কাজই হল নববী কাজ যা নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হওয়ার পর উম্মতের উপর ন্যাস্ত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজরত মুসা (আ.) ও হজরত হারুন (আ.) যখন বনী ইসরাঈলের কাছে রসূল ও নবী হিসেবে প্রেরিত হন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ফেরাউনের কাছে পাঠানো হয়।তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের মাধ্যমে ফেরাউনের কাছে বার্তা দিলেন যে,সে যেন বনী ইসরাঈলদেরকে গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তি দেয় যাতে তারা তাদের মাতৃভূমি ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে। তাই হজরত মুসা (আ.) যখন ফেরাউনের কাছে বনী ইসরাঈলের স্বাধীনতা দাবি করলেন, তখন সে হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর অনুগ্রহ খোয়াতে লাগল যে, আপনি তো সেই, যে আমাদের ঘরে লালিত-পালিত হয়েছে এবং আমরাই তো আপনাকে লালন-পালন করেছি। জবাবে মূসা (আঃ) ফেরাউনকে বললেন, তুমি আমার জাতি বনী ইসরাঈলকে দাস বানীয়ে রেখেছ, বলো- এটাই কি তোমার দয়া? এভাবে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁর দুই নবীর নেতৃত্বে বনী ইসরাঈলের মুক্তির সংগ্রাম পরিচালিত হয় এবং তাদের নেতৃত্বে ফেরাউন ও তার বাহিনী ডুবে মরার পর বনি ইসরাইল স্বাধীনতা লাভ করে। ফেরাউনের কাছ থেকে মুক্তি লাভের পর বনী ইসরাঈলদের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল তাদের বায়তুল মাকদিস ও ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন, যার জন্য হজরত মুসা (আ.) তাদেরকে জিহাদের প্রতি আহবান জানান। কিন্তু তারা এর জন্য প্রস্তুত হয় নি।ফলে আল্লাহর শাস্তিস্বরূপ বনি ইসরাঈলদেরকে চল্লিশ বছর যাবৎ সিনাই মরুভূমিতে ঘুরপাক খেতে হয়।। অতঃপর জিহাদের মাধ্যমে বাইতুল মাকদিসে বনী ইসরাঈলের পুনর্বাসনও আল্লাহর নবী ইশুশা ইবনে নুন (আঃ)-এর নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়। এর কিছুকাল পর যখন যালূত নামে এক অত্যাচারী শাসক ইসরাঈলদের উপর চড়াও হয় এবং তার অত্যাচার ও নিপীড়নে ইসরাঈলরা নিষ্পেষিত হয় তখন তারা আল্লাহর নবী হজরত শামুয়েল (আ.)-কে বাদশাহ নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করে। যাতে তারা তার নেতৃত্বে অত্যাচারী রাজা যালূতের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারে। আল্লাহর নবী হজরত তালুতকে আল্লাহর নির্দেশে বাদশাহ নিযুক্ত করেন- যার নেতৃত্বে বনী ইসরাঈলরা যালূতের বিরুদ্ধে জিহাদ করে তাকে পরাজিত করে এবং এর ফলে ইসরাইলী রিয়াসত প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর একই অবস্থায় যখন হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম, যিনি যুদ্ধের ময়দানে রাজা যালূতকে হত্যা করেছিলেন, বাদশাহ হলেন, তখন মহান আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন: হে দাউদ! আমি তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, সুতরাং তুমি আদল ও ইনসাফের ভিত্তিতে জনগণকে শাসন করো। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে- স্বাধীনতা, জিহাদ, খিলাফত, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই সমস্ত কাজও 'নবীওয়ালা' কাজ এবং নবীবী দায়িত্বের অংশ। বুখারী শরীফের রেওয়ায়েত অনুযায়ী, মহানবী (সা.) এ অবস্থা বর্ণনা করেছেন এভাবে: বনী ইসরাঈলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকার ছিল নবীদের (সা.)- হাতে। . একজন নবী মারা গেলে অন্য একজন তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু যেহেতু আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না, সেহেতু এই কাজটি আমার পরে আমার খলিফাদের দায়িত্ব এবং এই খলিফাদের আনুগত্য করা উম্মতের দায়িত্ব হবে। তাই উম্মাহর নেতৃত্বের দায়িত্ব হল খলিফাদের এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব হলো পুরো উম্মতের। সারকথা হলো- যেমনিভাবে নবুওয়াত সমাপ্তির কারণে নবীওয়ালা কাজ 'দাওয়াত ও তাবলীগ' এর যিম্মাদারী উম্মতের উপর অর্পিত হয়েছে। তেমনিভাবে নবুওয়ত সমাপ্তির কারণে নবিওয়ালা কাজ 'সামগ্রীক শৃঙ্খলা,খিলাফাহ ও জিহাদ' বাস্তবায়নের জিম্মাদারিও উম্মাহর উপর অর্পিত হয়েছে। আর অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর মাঝে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং মুসলিম সমাজে কুরআন ও সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা উম্মাহর সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই আমাদের এই দায়িত্বের প্রতিও নজর দিতে হবে এবং তা পালনে উম্মাহকে জাগ্রত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। {ম্যাগাজিন 'রোজনামা ইসলাম' থেকে অনূদিত} [অনুবাদ- Omair Al Hindi]
Working...
X