জান্নাত হচ্ছে তরবারির ছায়াতলে:
আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ বিন কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত,
হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. (১০১৪ হি.) বলেন,
‘মাসাবীহুস সুন্নাহ’ এর প্রশিদ্ধ ব্যাখ্যাকার মুজহিরী হানাফী রহ. (৭২৭ হি.) বলেন,
ফাযালা বিন উবায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত,
উল্লেখ্য: এখানে আরবী শব্দ أو তথা “অথবা” অর্থ এ নয় যে, সে যেকোন একটি পাবে; একটি পেলে অপরটি পাবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, উল্লেখিত বিষয়সমূহ থেকে একেবারে খালি হবে না। মানতিকের ভাষায় বললে, “মানিআতুল খুলুও” উদ্ধেশ্য; “মানিআতুল জমা’” উদ্ধেশ্য নয়।
তাই হাদীসের উদ্ধেশ্য হচ্ছে, একেবারে খালি হাতে ফেরাকে নাকচ করা; একাধিক পাওয়াকে নাকচ করা নয়। তাই গনিমত পাওয়ার সাথে সওয়াব পেতে কোন সমস্যা নেই।
[1] সহীহ মুসলিম: ১৯০২। হাদীসের মূল অংশ বুখারীতেও এসেছে। সহীহ বুখারী: ২৮১৮
[2] মিরকাতুল মাফাতীহ: ৭/৩৭৯
[3] মাফাতীহ শরহে মাসাবীহ: ৪/৩৯৭
[4] সুনানে নাসায়ী: ৩১৩৩, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/৮১, সহীহ ইবনে হিব্বান: ১০/৪৮০, সুনানে বায়হাকী: ১১/৫৫০। হাকিম রহ. মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী রহ. বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন।
[5] সহীহ বুখারী: ৭৪৬৩, সহীহ মুসলিম: ১৮৭৬
আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ বিন কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، وَهُوَ بِحَضْرَةِ الْعَدُوِّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ»، فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُوسَى، آنْتَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ هَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: " فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلَامَ، ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ، ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى الْعَدُوِّ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ
“তিনি তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ বিন কায়স; যিনি আবু মূসা আশআরী নামে প্রশিদ্ধ) থেকে বর্ণনা করেন, আবু বকর বলেন, আমি আমার পিতাকে শত্রুদের সামনে অবস্থানরত মূহুর্তে বলতে শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় জান্নাতের দরজাসমহূ হচ্ছে, তরবারির ছায়াতলে। তখন জীর্ণশীর্ণ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আবু মূসা, আপনি সত্যি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী (আবু বকর) বলেন, তখন উক্ত ব্যক্তি তার সাথিদের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে বিদায়ের সালাম জানাচ্ছি। অতঃপর তার তরবারির খাপ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে উন্মোক্ত তরবারি নিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় অগ্রসর হলেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যান।”[1]হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. (১০১৪ হি.) বলেন,
«إن أبواب الجنة تحت ظلال السيوف» : يعني كون المجاهد في القتال بحيث يعلوه سيوف الأعداء سبب الجنة حتى كأن أبوابها حاضرة معه، أو المراد بالسيوف سيوف المجاهدين، وهذا كناية عن الدنو من العدو في الحرب ; لأنها أكثر سلاح الجهاد.
“নিশ্চয় জান্নাতের দরজাসমহূ হচ্ছে, তরবারির ছায়াতলে” অর্থাৎ, মুজাহিদ যুদ্ধে এমন অবস্থায় থাকা যে, শত্রুদের তরবারি তার উপর দিয়ে ঘোরপাক খাবে, এটা তার জান্নাতে প্রবেশের কারণ। যেন জান্নাতের দরজাসমূহ তার সামনে উপস্থিত। অথবা “তরবারিসমূহ” দ্বারা উদ্ধেশ্য হচ্ছে, মুজাহিদদের তরবারি। তখন তা দ্বারা যুদ্ধে শত্রুদের নিকটবর্তী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হবে। কেননা তরবারি জিহাদের অধিক ব্যবহৃত অস্ত্র।”[2]‘মাসাবীহুস সুন্নাহ’ এর প্রশিদ্ধ ব্যাখ্যাকার মুজহিরী হানাফী রহ. (৭২৭ হি.) বলেন,
يعني: الجنة تحصل للرجل عند استعمال السيوف في قتال الكفار، وإنما ذكر السيوف من بين آلات الحرب؛ لأن أكثر سلاح العرب السيوف، ولأن استعمال السيوف أشد من استعمال السهم؛ لأن استعمال السيوف إنما يكون بمقاربة العدو، ومقاربةُ العدو أشدُّ خوفًا من مباعدته.
“অর্থাৎ, কাফেরদের সাথে যুদ্ধে তরবারি ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যক্তির জান্নাত অর্জিত হবে। যুদ্ধের অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে তরবারির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, তরবারি হচ্ছে, আরবের অধিক ব্যবহৃত অস্ত্র। আরেকটি কারণ হচ্ছে, তীর ব্যবহারের চেয়ে তরবারি ব্যবহার কঠিন। কেননা একমাত্র শত্রুর নিকটবর্তী হয়ে তরবারি ব্যবহার করা সম্ভব। আর শত্রুর নিকটবর্তী হয়ে যুদ্ধ করা দূরবর্তী থেকে যুদ্ধ করার চেয়ে বেশি ভয়জনক।”[3]ফাযালা বিন উবায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَنَا زَعِيمٌ، وَالزَّعِيمُ الْحَمِيلُ، لِمَنْ آمَنَ بِي وَأَسْلَمَ وَهَاجَرَ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ، وَأَنَا زَعِيمٌ لِمَنْ آمَنَ بِي، وَأَسْلَمَ، وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى غُرَفِ الْجَنَّةِ، مَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَلَمْ يَدَعْ لِلْخَيْرِ مَطْلَبًا، وَلَا مِنَ الشَّرِّ مَهْرَبًا، يَمُوتُ حَيْثُ شَاءَ أَنْ يَمُوتَ»
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর ঈমান আনলো, (পূর্ণভাবে) ইসলামে প্রবেশ করলো এবং হিজরত করলো, আমি তার জন্য জান্নাতের পাশে একটি ঘর ও জান্নাতের মধ্যভাগে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে আমার উপর ঈমান আনলো, আত্মসমর্পন করলো এবং জিহাদ করলো, আমি তার জন্য জান্নাতের পাশে একটি ঘর, মধ্যভাগে একটি ঘর এবং জান্নাতের উঁচু ঘরসমূহের একটি ঘরের জিম্মাদার। যে উক্ত কাজ (ঈমান, ইসলাম ও জিহাদ) করলো, সে যেন অর্জন করার মত কোন ভালো কাজ এবং ছাড়ার মত কোন মন্দ কাজ ছাড়েনি। (অর্থাৎ, সেসকল ভালো কাজ করেছে এবং সকল মন্দ কাজ থেকে বিরত থেকেছে।) সে যেখানে ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করুক (উক্ত আমলের দরুন তার জন্য জান্নাত অবধারিত)।”[4]আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَكَفَّلَ اللَّهُ لِمَنْ جَاهَدَ فِي سَبِيلِهِ، لاَ يُخْرِجُهُ مِنْ بَيْتِهِ إِلَّا الجِهَادُ فِي سَبِيلِهِ وَتَصْدِيقُ كَلِمَتِهِ، أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، أَوْ يَرُدَّهُ إِلَى مَسْكَنِهِ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর রাস্তায় জিহাদ কারীদের জন্য জিম্মাদারী নিয়েছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উদ্ধেশ্যে এবং তার বাণী সত্যায়ণ করঃত ঘর থেকে বের হয়েছে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা তার অর্জিত সওয়াব বা গনিমতসহ তার ঘরে ফিরাবেন।”[5]উল্লেখ্য: এখানে আরবী শব্দ أو তথা “অথবা” অর্থ এ নয় যে, সে যেকোন একটি পাবে; একটি পেলে অপরটি পাবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, উল্লেখিত বিষয়সমূহ থেকে একেবারে খালি হবে না। মানতিকের ভাষায় বললে, “মানিআতুল খুলুও” উদ্ধেশ্য; “মানিআতুল জমা’” উদ্ধেশ্য নয়।
তাই হাদীসের উদ্ধেশ্য হচ্ছে, একেবারে খালি হাতে ফেরাকে নাকচ করা; একাধিক পাওয়াকে নাকচ করা নয়। তাই গনিমত পাওয়ার সাথে সওয়াব পেতে কোন সমস্যা নেই।
[1] সহীহ মুসলিম: ১৯০২। হাদীসের মূল অংশ বুখারীতেও এসেছে। সহীহ বুখারী: ২৮১৮
[2] মিরকাতুল মাফাতীহ: ৭/৩৭৯
[3] মাফাতীহ শরহে মাসাবীহ: ৪/৩৯৭
[4] সুনানে নাসায়ী: ৩১৩৩, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/৮১, সহীহ ইবনে হিব্বান: ১০/৪৮০, সুনানে বায়হাকী: ১১/৫৫০। হাকিম রহ. মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী রহ. বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন।
[5] সহীহ বুখারী: ৭৪৬৩, সহীহ মুসলিম: ১৮৭৬