ফিলিস্তিন এবং মসজিদে আকসার জন্য একটি ভালোবাসার গল্প
লাব্বাইক ইয়া আকসা!
মহিলাদের চিৎকারে পুরো এলাকায় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ কোথা থেকে এই আওয়াজ শোনা গেল কেউ কিছুই বুঝতে পারল না।
সালাহ ! সালাহ ! দেখ কারা চিৎকার করছে?" উম্মে সালাহ তার ঘর থেকে আতঙ্কিত হয়ে বেরিয়ে আসে।
সালাহ তখন মোবাইলে কিছু পড়ছিল। সে চিৎকারের শব্দও শুনেছিল, কিন্তু পাড়ার ছেলেমেয়েদের দুষ্টুমি বলে উপেক্ষা করেছিল। হঠাৎ বাতাসে গুলির শব্দ ও গোলাগুলির বিস্ফোরণ শোনা গেল।
"ইয়া আল্লাহ !" সালাহ তার মোবাইল ফোন রেখে উঠে দাঁড়াল, "মনে হচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা আবার ক্যাম্পে অভিযান চালাতে এসেছে"।
সালাহ তার পায়ে জুতা পরে এবং বাইরে যেতে লাগলো তখন উম্মে সালাহ তাকে পিছনে টেনে আনেন।
উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন উম্মে সালাহ।
সালাহ বাহিরে যাবে না! তোমাকে বিনা কারণে আক্রমণ করা হবে, তুমি জানো যে ইহুদিরা যখন আসে, তারা কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে তুলে নেয়!
কিন্তু মা! আবু ইকরামা এবং আবু দুজানা গতকাল রাতে বাড়িতে পৌঁছেছেন, নিশ্চয়ই একজন তথ্যদাতা ইসরায়েলি সৈন্যদের জানিয়েছিল যে আরিন আল-আসওয়াদের দুইজন মুজাহিদিন এই মহল্লায় এসেছে!”, সালাহ উদ্বিগ্নভাবে তার মায়ের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিল।
সে চলে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার মায়ের ভয়ও যৌক্তিক ছিল। ওই সময় বাইরে গেলেই গ্রেপ্তার করা হতো। হঠাৎ বাইরে থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসতে লাগল, যেন দুই দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে।
মা! সব যুবক বাহিরে বেরিয়েছে! আমাকেও যেতে দাও!” সে অধৈর্য হয়ে গেল। আবু যার ও হাসানের কণ্ঠ শুনি! তারা ইসরায়েলিদের দিকে পাথর ছুড়ছে!”
এবার তার মা তার হাত ছেড়ে দিল এবং সে দৌড়ে বাইরে গেল। বাইরের দৃশ্যটা ঠিক এমনই ছিলো যেমনটা সে কল্পনা করেছিল। ইসরায়েলি সেনারা আবু ইকরামা ও আবু দুজানার বাড়িতে হামলা চালায়। আবু ইকরামা ও আবু দুজানাকে ইসরায়েলি সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তার বাড়ির মহিলারা চিৎকার করছিল।
পাড়ার কিছু ছেলে পাথর ছুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছিল। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত তাদের সেনাবাহিনীর সামনে এই কয়েকটি পাথর বহনকারী ছেলেদের অবশ্যই হাস্যকর লাগছিল, কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্যরা এতটাই ভীরু ছিল যে পাথরের আঘাতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারপরে, ছেলেরা পিছু হটলে, তারা আবার তাদের দিকে বন্দুক তাক করে অগ্রসর হয়। ছেলেরা আবার পাথর ছুড়লে ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে এমনভাবে বিশৃংখলা বা আতংক সৃষ্টি হয়েছে যেনো সিংহ ছাগলের পালে ঢুকেছে।
আবু যার! হাসান! কী হচ্ছে!” সালাহ চিৎকার করে তার বন্ধুদের কাছে ছুটে গেল।
দুই ছেলের বয়স প্রায় ১৬ এবং ১৮ বছর।
আবু ইকরামা ও আবু দুজানার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে! তাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা , কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে! আবু যার মাটি থেকে একটা বড় ইট তুলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ইসরায়েলি সৈন্যেকে আঘাত করল।
সালাহও একের পর এক, দু-তিনটি ঢিল ছুড়েছে। এতে দুই-তিনজন ইসরায়েলিও আহত হয়েছেন। এসময় ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।
ফিরে যাও! ফিরে যাও! একটা ছেলে চিৎকার করে উঠল। এবং তারা সবাই চলে গেল। গুলির আঘাতে কেউ আহত হয়নি।
ইসরায়েলি সৈন্যরা দুই মুজাহিদিনকে সাঁজোয়া গাড়িতে টেনে নিয়ে যায়। মহিলাগণ তখনও চিৎকার করছিল। হঠাৎ একজন ইসরায়েলির মনে না জানি কী আসলো সে রেগে গেল এবং একজন মহিলার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তার মুখে দুবার চড় মারল। মহিলাটি চিৎকার করে পিছনে লাফ দিল। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরও দুইজন ইসরায়েলি মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর, কেউ কিছু বোঝার আগেই, ইসরায়েলি সৈন্যরা এই মহিলাকেও একটি সাঁজোয়া গাড়িতে তুলে নেয় এবং সে চিৎকার করে আশেপাশের লোকজনকে ডাকছিল।
আমাদের তাদেরকে বাঁচাতে হবে! ওরা আমাদের বোনকে নিয়ে যাচ্ছে! তা দেখে এগিয়ে যান সালাহ।
তা দেখে বাকি ছেলেরাও মাঠে ফিরে আসে এবং ইসরায়েলিদের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। ইসরায়েলি সেনারা ফের গুলি চালায়। এবার অনেক ছেলেই তাদের টার্গেটে পড়ে গেল। পাড়ার রাস্তার সর্বত্র রক্ত বইতে থাকে। ছেলেরা পাথর ফেলে আহত ও শহীদদের তুলে নেয়
অনুভূত বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যরা আরও গুলি ছুড়ে তাদের যানবাহন এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়।
তারা চলে গেল! তারা নিয়েছে! ওরা আমাদের মুসলিম ভাইদের নিয়ে গেল! তারা আমাদের বোনকে নিয়ে গেছে!' সালাহ,শোকে চিৎকার দিয়ে একজন আহত ব্যক্তিকে তুলছিল।
সালাহ ! তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে! তাড়াতাড়ি যাও নয়তো পথেই শহীদ হয়ে যাবে!
সালাহর মন ফেটে কান্না করতে চেয়েছিল, কিন্তু সে একজন পুরুষ । এভাবে কাঁদতে পারেনা। এরপর আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও ছিল তার। দ্রুত কাজে লেগে পড়ল। কিন্তু সেই সময়েও সেই চিৎকার আর আবু দুজানার বাড়ির ঐ ভদ্রমহিলার ডাক এক মুহূর্তের জন্যও মন থেকে সরেনি।
সালাহ ফিলিস্তিনের নাবলুসের বাসিন্দা ছিল। তার বাড়ি ছিল আল-আকসা মসজিদের পাশে অবস্থিত বালাতার তাঁবু বসতিতে। ১৯৪৮ সালে বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের এই শিবিরটি আর শিবির ছিল না। বরং এখন মানুষ কারসাজি করে তাতে বাড়ি তৈরি করেছে। এই এলাকাটি এখানকার মুসলমানদের অহংকার এবং ইসরায়েলি ইহুদিদের বিদ্বেষ ও শত্রুতার জন্য বিখ্যাত ছিল।
শৈশব থেকেই সে এই পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত ছিল। তার নিজ এলাকা থেকে মুজাহিদীনদের বারবার গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আজ তার হৃদয়-মন রাগে ফেটে পড়ছে। আল-আকসা মসজিদের আঙিনায় মুসলিম বোনদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসন সে চোখের সামনে কতবার দেখেছে। কয়েকবার সে তাদের আত্মরক্ষায় তাদের( ইসরাইলিদের) সাথে যুদ্ধও করেছিল, যার ফলস্বরূপ তাকে ছয় মাস কারাগারে থাকতে হয়েছিল। কারাগার থেকে ফেরার পর সে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে আরও নির্ভীক হয়ে ওঠে। সে তার মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতিটি মুহূর্তে আকুল ছিল। হাঁটতে হাঁটতে দেখে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের রাস্তায় চলছে, ক্ষোভে তার রক্ত ফুটে উঠে। সে কি করবে তাঁর বুঝে আসছেনা।
দিনশেষে কেন তারা এত অসহায় ছিল? সর্বোপরি, কোটি কোটি মুসলিম ভাই কেন তাদের পাত্তা দিচ্ছিলো না? কত মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের সীমানায় মিলিত হতো, অথচ সবাই শান্তি ও শান্তির বাঁশি বাজাচ্ছিল। যখন তার মুসলিম ভাইয়েরা আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছিলো।
রাতের বেলা সে এপাশ ওপাশ বদলাতে বদলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আর সে লাফিয়ে উঠে দাড়ালো।
তাঁদের জন্য কিছু প্রতিকার প্রয়োজন আছে। আবু যার দুঃখ ও রাগের ছবি হয়ে উঠেছিলো ।
পরের দিন, মুসল্লিরা ফজরের নামাজের পরেও মসজিদ থেকে বের হয়নি, যখন সালাহ আবু যার এবং হাসানের কাছে গিয়ে তাদের দুঃখ এবং মুসলমানদের অসহায়ত্বের কথা বলেছিলেন।
"আমি তাদের ছাড়বো না!" নিজেকে নিজে কি মনে করেন ? যখন ইচ্ছা ওরা আমাদের এলাকায় ঢুকে আমাদের মুজাহিদ ভাই ও পর্দানশীন বোনদের নিয়ে যাবে আর তাদের ফল ভোগ করতে হবে না?!' সালাহর কণ্ঠ কাঁপছিল তার রাগের তীব্রতায়।
তুমি কি কিছু ভেবেছ?” তার অভিব্যক্তি দেখে আবুযার জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ!" খুব সহজ সমাধান!” সালাহ হাসল।
সেটা কি ?" আবু যার এবং হাসান উভয়েই হতবাক, আমাদেরও বলুন!"
সালাহ তাদের পরিকল্পনার কথা জানাতে শুরু করে।
আল-আকসা মসজিদে তীর্থযাত্রীদের বসানো হয়েছিল। অনেক দিন পর, মসজিদটিতে আবার রওনক দেখা যাচ্ছিলো, এবং মুসলমানরা আল-আকসা মসজিদে যেতেও পারেনি গত কয়েকদিন ধরে ভয় ও নিপীড়নের কারণে। সালাহও দীর্ঘদিন পর প্রিয় মসজিদে বেড়াতে এসেছে। প্রত্যেক মুসলমানের মতো তার হৃদয়ও ছিল এই মসজিদের প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ।
এই ছিল তাদের মসজিদ! এটা ছিল মি'রাজের স্থান ! ইহা ছিল নবীদের নামাযের জায়গা ! এটাই ছিল প্রথম কিবলা! কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো মক্কা-মদিনায় সারা বিশ্বের মানুষ দেখা গেলেও এখানে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি ছাড়া আর কোনো জাতিকে দেখা যায়নি।
মুসলিমরা নস্টালজিয়া থেকে টিভি পর্দায় আল-আকসা মসজিদ এবং ছবি দেখে চোখের অশ্রু ফেলতে পারে।সংখ্যায় এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমরা অসহায় কেন?
এই ভেবে আল-আকসা মসজিদের গেট থেকে বেরিয়ে যায় সালাহ। সে একবার ঘুরে তার প্রিয় মসজিদের দিকে পরম মমতায় তাকালো।
হে প্রথম কেবলা ! সাক্ষী থাকো ! তুমি আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয়! আমরা কোনো সালাহউদ্দিনের জন্য অপেক্ষা না করে, নিজেরাই সালাহউদ্দিন হওয়ার ক্ষমতা রাখি, আমরা মানুষের পথের দিকে তাকিয়ে থাকি না বরং নিজেরাই পথ তৈরি করি!
সে ভেজা চোখে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিঃশব্দে বললো।
তারপর সেখান থেকে ফিরে হারাম সংলগ্ন বাজারে প্রবেশ করল। এই বাজারের দোকান এবং আশেপাশের লোকজনকে ফিলিস্তিনের হারাস আল-মদিনা বলা হয় এবং তারা এখনও ইহুদিদেরকে তাদের জায়গা দিতে প্রস্তুত নয় বলে অত্যন্ত সম্মানের সাথে দেখা হয়!
ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সালাহ বাজার সংলগ্ন একটি চেক পয়েন্টে পৌঁছে যায়, যেখানে সে পৌঁছাতে চেয়েছিল। দশজন ইসরায়েলি সৈন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সালাহও চুপচাপ ফিলিস্তিনিদের তল্লাশীর লাইনে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের লাইন ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই অনিচ্ছায় তার হাত তার পকেটে ঢুকে গেল এবং সে পকেটের ভেতরের জিনিসটা শক্ত করে চেপে ধরল।
হঠাৎ আবু যারকে দেখা গেল চেকপোস্টের ওপাশ থেকে আসা লোকজনের সারিতে। দুজনের চোখ মিলল এবং দুজনেই হাসি বিনিময় করল।
"হ্যাঁ!" তুমি কোথায় যেতে চাও?" এক ইহুদি জিজ্ঞেস করলো যখন তার পালা।
আমি? সালাহ অর্থপূর্ণ হাসলো, "আমি জান্নাতে যেতে চাই!"
তারপর, ইহুদি সৈন্য কিছু বোঝার আগেই সালাহ তার পকেট থেকে একটি বড় ছুরি বের করে এবং খুব দ্রুত তার গলা, বুকে এবং পেটে ছুরিকাঘাত করে। ইহুদি লুটিয়ে পড়লো। সেই মুহূর্তে আবু যারও সুযোগ পান। তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দুই সেনাকেও ছুরিকাঘাত করেন তিনি। প্রথম সৈনিক পড়ে যাওয়ার পর সালাহ দ্বিতীয় সৈনিককেও আক্রমণ করেছিলেন।
আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যদের পরিস্থিতি বুঝতে কয়েক মুহূর্ত লেগেছিল। বিষয়টি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সালাহ ও আবু যারকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। সালাহকে গুলি করা হলে সে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার মুখে একটি বড় হাসি ফুটে ওঠে। তার রক্ত থেকে একটা অসাধারণ ও মোহনীয় গন্ধ আসতে লাগল।
"হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন! আমরা বসে নেই! আমরা বাকি মুসলমানদের জন্য অপেক্ষা করছি না! আমরা আপনার প্রিয় মসজিদকে রক্ষা করেছি, যতক্ষণ আমাদের দেহে শেষ নিঃশ্বাস আছে, আমরা আপনার মসজিদকে রক্ষা করতে থাকব!
সে মনে মনে আল্লাহর সাথে কথা বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
দুই ছেলে জান্নাতে যাওয়ার আগে চারজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছিল এবং তিনজনকে আহত করেছিল।
পরদিন ইসরায়েলের সরকারি পত্রিকায় দুই সেনা নিহত ও এক সেনা আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।
সালাহ তার দায়িত্ব পালন করেছে, তবে সালাহ এবং তার মতো অগণিত ফিলিস্তিনি মুসলমান আমাদেরকে এই প্রশ্ন করা যথাযথ হবে!
আল-আকসা মসজিদ রক্ষার দায়িত্ব কি শুধু ফিলিস্তিনিদের?
আমরা কি তাদের মতো আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসি না?
তৃতীয় হেরেম শরীফের জিয়ারতে যাওয়া কি প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য নয়?
লাব্বাইক ইয়া আকসা!
মহিলাদের চিৎকারে পুরো এলাকায় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ কোথা থেকে এই আওয়াজ শোনা গেল কেউ কিছুই বুঝতে পারল না।
সালাহ ! সালাহ ! দেখ কারা চিৎকার করছে?" উম্মে সালাহ তার ঘর থেকে আতঙ্কিত হয়ে বেরিয়ে আসে।
সালাহ তখন মোবাইলে কিছু পড়ছিল। সে চিৎকারের শব্দও শুনেছিল, কিন্তু পাড়ার ছেলেমেয়েদের দুষ্টুমি বলে উপেক্ষা করেছিল। হঠাৎ বাতাসে গুলির শব্দ ও গোলাগুলির বিস্ফোরণ শোনা গেল।
"ইয়া আল্লাহ !" সালাহ তার মোবাইল ফোন রেখে উঠে দাঁড়াল, "মনে হচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা আবার ক্যাম্পে অভিযান চালাতে এসেছে"।
সালাহ তার পায়ে জুতা পরে এবং বাইরে যেতে লাগলো তখন উম্মে সালাহ তাকে পিছনে টেনে আনেন।
উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন উম্মে সালাহ।
সালাহ বাহিরে যাবে না! তোমাকে বিনা কারণে আক্রমণ করা হবে, তুমি জানো যে ইহুদিরা যখন আসে, তারা কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে তুলে নেয়!
কিন্তু মা! আবু ইকরামা এবং আবু দুজানা গতকাল রাতে বাড়িতে পৌঁছেছেন, নিশ্চয়ই একজন তথ্যদাতা ইসরায়েলি সৈন্যদের জানিয়েছিল যে আরিন আল-আসওয়াদের দুইজন মুজাহিদিন এই মহল্লায় এসেছে!”, সালাহ উদ্বিগ্নভাবে তার মায়ের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিল।
সে চলে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার মায়ের ভয়ও যৌক্তিক ছিল। ওই সময় বাইরে গেলেই গ্রেপ্তার করা হতো। হঠাৎ বাইরে থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসতে লাগল, যেন দুই দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে।
মা! সব যুবক বাহিরে বেরিয়েছে! আমাকেও যেতে দাও!” সে অধৈর্য হয়ে গেল। আবু যার ও হাসানের কণ্ঠ শুনি! তারা ইসরায়েলিদের দিকে পাথর ছুড়ছে!”
এবার তার মা তার হাত ছেড়ে দিল এবং সে দৌড়ে বাইরে গেল। বাইরের দৃশ্যটা ঠিক এমনই ছিলো যেমনটা সে কল্পনা করেছিল। ইসরায়েলি সেনারা আবু ইকরামা ও আবু দুজানার বাড়িতে হামলা চালায়। আবু ইকরামা ও আবু দুজানাকে ইসরায়েলি সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তার বাড়ির মহিলারা চিৎকার করছিল।
পাড়ার কিছু ছেলে পাথর ছুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছিল। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত তাদের সেনাবাহিনীর সামনে এই কয়েকটি পাথর বহনকারী ছেলেদের অবশ্যই হাস্যকর লাগছিল, কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্যরা এতটাই ভীরু ছিল যে পাথরের আঘাতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারপরে, ছেলেরা পিছু হটলে, তারা আবার তাদের দিকে বন্দুক তাক করে অগ্রসর হয়। ছেলেরা আবার পাথর ছুড়লে ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে এমনভাবে বিশৃংখলা বা আতংক সৃষ্টি হয়েছে যেনো সিংহ ছাগলের পালে ঢুকেছে।
আবু যার! হাসান! কী হচ্ছে!” সালাহ চিৎকার করে তার বন্ধুদের কাছে ছুটে গেল।
দুই ছেলের বয়স প্রায় ১৬ এবং ১৮ বছর।
আবু ইকরামা ও আবু দুজানার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে! তাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা , কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে! আবু যার মাটি থেকে একটা বড় ইট তুলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ইসরায়েলি সৈন্যেকে আঘাত করল।
সালাহও একের পর এক, দু-তিনটি ঢিল ছুড়েছে। এতে দুই-তিনজন ইসরায়েলিও আহত হয়েছেন। এসময় ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।
ফিরে যাও! ফিরে যাও! একটা ছেলে চিৎকার করে উঠল। এবং তারা সবাই চলে গেল। গুলির আঘাতে কেউ আহত হয়নি।
ইসরায়েলি সৈন্যরা দুই মুজাহিদিনকে সাঁজোয়া গাড়িতে টেনে নিয়ে যায়। মহিলাগণ তখনও চিৎকার করছিল। হঠাৎ একজন ইসরায়েলির মনে না জানি কী আসলো সে রেগে গেল এবং একজন মহিলার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তার মুখে দুবার চড় মারল। মহিলাটি চিৎকার করে পিছনে লাফ দিল। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরও দুইজন ইসরায়েলি মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর, কেউ কিছু বোঝার আগেই, ইসরায়েলি সৈন্যরা এই মহিলাকেও একটি সাঁজোয়া গাড়িতে তুলে নেয় এবং সে চিৎকার করে আশেপাশের লোকজনকে ডাকছিল।
আমাদের তাদেরকে বাঁচাতে হবে! ওরা আমাদের বোনকে নিয়ে যাচ্ছে! তা দেখে এগিয়ে যান সালাহ।
তা দেখে বাকি ছেলেরাও মাঠে ফিরে আসে এবং ইসরায়েলিদের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। ইসরায়েলি সেনারা ফের গুলি চালায়। এবার অনেক ছেলেই তাদের টার্গেটে পড়ে গেল। পাড়ার রাস্তার সর্বত্র রক্ত বইতে থাকে। ছেলেরা পাথর ফেলে আহত ও শহীদদের তুলে নেয়
অনুভূত বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যরা আরও গুলি ছুড়ে তাদের যানবাহন এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়।
তারা চলে গেল! তারা নিয়েছে! ওরা আমাদের মুসলিম ভাইদের নিয়ে গেল! তারা আমাদের বোনকে নিয়ে গেছে!' সালাহ,শোকে চিৎকার দিয়ে একজন আহত ব্যক্তিকে তুলছিল।
সালাহ ! তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে! তাড়াতাড়ি যাও নয়তো পথেই শহীদ হয়ে যাবে!
সালাহর মন ফেটে কান্না করতে চেয়েছিল, কিন্তু সে একজন পুরুষ । এভাবে কাঁদতে পারেনা। এরপর আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও ছিল তার। দ্রুত কাজে লেগে পড়ল। কিন্তু সেই সময়েও সেই চিৎকার আর আবু দুজানার বাড়ির ঐ ভদ্রমহিলার ডাক এক মুহূর্তের জন্যও মন থেকে সরেনি।
সালাহ ফিলিস্তিনের নাবলুসের বাসিন্দা ছিল। তার বাড়ি ছিল আল-আকসা মসজিদের পাশে অবস্থিত বালাতার তাঁবু বসতিতে। ১৯৪৮ সালে বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের এই শিবিরটি আর শিবির ছিল না। বরং এখন মানুষ কারসাজি করে তাতে বাড়ি তৈরি করেছে। এই এলাকাটি এখানকার মুসলমানদের অহংকার এবং ইসরায়েলি ইহুদিদের বিদ্বেষ ও শত্রুতার জন্য বিখ্যাত ছিল।
শৈশব থেকেই সে এই পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত ছিল। তার নিজ এলাকা থেকে মুজাহিদীনদের বারবার গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আজ তার হৃদয়-মন রাগে ফেটে পড়ছে। আল-আকসা মসজিদের আঙিনায় মুসলিম বোনদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসন সে চোখের সামনে কতবার দেখেছে। কয়েকবার সে তাদের আত্মরক্ষায় তাদের( ইসরাইলিদের) সাথে যুদ্ধও করেছিল, যার ফলস্বরূপ তাকে ছয় মাস কারাগারে থাকতে হয়েছিল। কারাগার থেকে ফেরার পর সে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে আরও নির্ভীক হয়ে ওঠে। সে তার মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতিটি মুহূর্তে আকুল ছিল। হাঁটতে হাঁটতে দেখে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের রাস্তায় চলছে, ক্ষোভে তার রক্ত ফুটে উঠে। সে কি করবে তাঁর বুঝে আসছেনা।
দিনশেষে কেন তারা এত অসহায় ছিল? সর্বোপরি, কোটি কোটি মুসলিম ভাই কেন তাদের পাত্তা দিচ্ছিলো না? কত মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের সীমানায় মিলিত হতো, অথচ সবাই শান্তি ও শান্তির বাঁশি বাজাচ্ছিল। যখন তার মুসলিম ভাইয়েরা আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছিলো।
রাতের বেলা সে এপাশ ওপাশ বদলাতে বদলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আর সে লাফিয়ে উঠে দাড়ালো।
তাঁদের জন্য কিছু প্রতিকার প্রয়োজন আছে। আবু যার দুঃখ ও রাগের ছবি হয়ে উঠেছিলো ।
পরের দিন, মুসল্লিরা ফজরের নামাজের পরেও মসজিদ থেকে বের হয়নি, যখন সালাহ আবু যার এবং হাসানের কাছে গিয়ে তাদের দুঃখ এবং মুসলমানদের অসহায়ত্বের কথা বলেছিলেন।
"আমি তাদের ছাড়বো না!" নিজেকে নিজে কি মনে করেন ? যখন ইচ্ছা ওরা আমাদের এলাকায় ঢুকে আমাদের মুজাহিদ ভাই ও পর্দানশীন বোনদের নিয়ে যাবে আর তাদের ফল ভোগ করতে হবে না?!' সালাহর কণ্ঠ কাঁপছিল তার রাগের তীব্রতায়।
তুমি কি কিছু ভেবেছ?” তার অভিব্যক্তি দেখে আবুযার জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ!" খুব সহজ সমাধান!” সালাহ হাসল।
সেটা কি ?" আবু যার এবং হাসান উভয়েই হতবাক, আমাদেরও বলুন!"
সালাহ তাদের পরিকল্পনার কথা জানাতে শুরু করে।
আল-আকসা মসজিদে তীর্থযাত্রীদের বসানো হয়েছিল। অনেক দিন পর, মসজিদটিতে আবার রওনক দেখা যাচ্ছিলো, এবং মুসলমানরা আল-আকসা মসজিদে যেতেও পারেনি গত কয়েকদিন ধরে ভয় ও নিপীড়নের কারণে। সালাহও দীর্ঘদিন পর প্রিয় মসজিদে বেড়াতে এসেছে। প্রত্যেক মুসলমানের মতো তার হৃদয়ও ছিল এই মসজিদের প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ।
এই ছিল তাদের মসজিদ! এটা ছিল মি'রাজের স্থান ! ইহা ছিল নবীদের নামাযের জায়গা ! এটাই ছিল প্রথম কিবলা! কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো মক্কা-মদিনায় সারা বিশ্বের মানুষ দেখা গেলেও এখানে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি ছাড়া আর কোনো জাতিকে দেখা যায়নি।
মুসলিমরা নস্টালজিয়া থেকে টিভি পর্দায় আল-আকসা মসজিদ এবং ছবি দেখে চোখের অশ্রু ফেলতে পারে।সংখ্যায় এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমরা অসহায় কেন?
এই ভেবে আল-আকসা মসজিদের গেট থেকে বেরিয়ে যায় সালাহ। সে একবার ঘুরে তার প্রিয় মসজিদের দিকে পরম মমতায় তাকালো।
হে প্রথম কেবলা ! সাক্ষী থাকো ! তুমি আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয়! আমরা কোনো সালাহউদ্দিনের জন্য অপেক্ষা না করে, নিজেরাই সালাহউদ্দিন হওয়ার ক্ষমতা রাখি, আমরা মানুষের পথের দিকে তাকিয়ে থাকি না বরং নিজেরাই পথ তৈরি করি!
সে ভেজা চোখে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিঃশব্দে বললো।
তারপর সেখান থেকে ফিরে হারাম সংলগ্ন বাজারে প্রবেশ করল। এই বাজারের দোকান এবং আশেপাশের লোকজনকে ফিলিস্তিনের হারাস আল-মদিনা বলা হয় এবং তারা এখনও ইহুদিদেরকে তাদের জায়গা দিতে প্রস্তুত নয় বলে অত্যন্ত সম্মানের সাথে দেখা হয়!
ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সালাহ বাজার সংলগ্ন একটি চেক পয়েন্টে পৌঁছে যায়, যেখানে সে পৌঁছাতে চেয়েছিল। দশজন ইসরায়েলি সৈন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সালাহও চুপচাপ ফিলিস্তিনিদের তল্লাশীর লাইনে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের লাইন ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই অনিচ্ছায় তার হাত তার পকেটে ঢুকে গেল এবং সে পকেটের ভেতরের জিনিসটা শক্ত করে চেপে ধরল।
হঠাৎ আবু যারকে দেখা গেল চেকপোস্টের ওপাশ থেকে আসা লোকজনের সারিতে। দুজনের চোখ মিলল এবং দুজনেই হাসি বিনিময় করল।
"হ্যাঁ!" তুমি কোথায় যেতে চাও?" এক ইহুদি জিজ্ঞেস করলো যখন তার পালা।
আমি? সালাহ অর্থপূর্ণ হাসলো, "আমি জান্নাতে যেতে চাই!"
তারপর, ইহুদি সৈন্য কিছু বোঝার আগেই সালাহ তার পকেট থেকে একটি বড় ছুরি বের করে এবং খুব দ্রুত তার গলা, বুকে এবং পেটে ছুরিকাঘাত করে। ইহুদি লুটিয়ে পড়লো। সেই মুহূর্তে আবু যারও সুযোগ পান। তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দুই সেনাকেও ছুরিকাঘাত করেন তিনি। প্রথম সৈনিক পড়ে যাওয়ার পর সালাহ দ্বিতীয় সৈনিককেও আক্রমণ করেছিলেন।
আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যদের পরিস্থিতি বুঝতে কয়েক মুহূর্ত লেগেছিল। বিষয়টি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সালাহ ও আবু যারকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। সালাহকে গুলি করা হলে সে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার মুখে একটি বড় হাসি ফুটে ওঠে। তার রক্ত থেকে একটা অসাধারণ ও মোহনীয় গন্ধ আসতে লাগল।
"হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন! আমরা বসে নেই! আমরা বাকি মুসলমানদের জন্য অপেক্ষা করছি না! আমরা আপনার প্রিয় মসজিদকে রক্ষা করেছি, যতক্ষণ আমাদের দেহে শেষ নিঃশ্বাস আছে, আমরা আপনার মসজিদকে রক্ষা করতে থাকব!
সে মনে মনে আল্লাহর সাথে কথা বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
দুই ছেলে জান্নাতে যাওয়ার আগে চারজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছিল এবং তিনজনকে আহত করেছিল।
পরদিন ইসরায়েলের সরকারি পত্রিকায় দুই সেনা নিহত ও এক সেনা আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।
সালাহ তার দায়িত্ব পালন করেছে, তবে সালাহ এবং তার মতো অগণিত ফিলিস্তিনি মুসলমান আমাদেরকে এই প্রশ্ন করা যথাযথ হবে!
আল-আকসা মসজিদ রক্ষার দায়িত্ব কি শুধু ফিলিস্তিনিদের?
আমরা কি তাদের মতো আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসি না?
তৃতীয় হেরেম শরীফের জিয়ারতে যাওয়া কি প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য নয়?