দিফায়ী জিহাদে ফরযে আইন:
ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে দিফায়ী জিহাদ ফরযে আইন। এ ব্যাপারে কারও কোনো মতভেদ নেই। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
“তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সাথে জিহাদ করো, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং সীমালঙ্ঘন করো না। অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” –সূরা বাকারা: ১৯০
আরো এরশাদ করেন,
“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং সেসকল অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের (উদ্ধার করার) পথে যুদ্ধ করছ না; যারা বলছে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এ জালিম অধিবাসীর জনপদ থেকে বের করে নিন। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক বানিয়ে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন।” –সূরা নিসা: ৭৫
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
“তুমি কি মূসার পরবর্তী বনী ইসরাঈলের সেই দলের ঘটনা জানো না, যখন তারা তাদের এক নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে (তার নেতৃত্বে) আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, এমন হওয়ার সম্ভাবনা কি আছে যে, যদি তোমাদের উপর জিহাদ ফরয করা হয়, তাহলে তোমরা জিহাদ করবে না? তারা বলল, আমাদের এমন কী কারণ আছে যে, আমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করব না; অথচ আমাদেরকে ঘর-বাড়ি ও সন্তান-সন্তনি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? কিন্তু যখন জিহাদ ফরয করা হলো, তাদের মধ্য হতে অল্প কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই বিমূখ হয়ে গেল। আল্লাহ জালিমদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।” –সূরা বাকারা: ২৪৬
ইমাম আবু বাকার জাসসাস রহ. (মৃত্যু: ৩৭০ হি.) বলেন,
“সকল মুসলমানের প্রসিদ্ধ আকীদা হল, যখন সীমান্তবর্তী মুসলমানরা শত্রুর (দ্বারা আক্রান্ত হবার) আশঙ্কা করে; আর তাদের মাঝে শত্রু প্রতিরোধের ক্ষমতা বিদ্যমান না থাকে; ফলে তারা নিজ পরিবার-পরিজন, দেশ ও জানের ব্যাপারে শঙ্কাগ্রস্ত হয়, তখন পুরো উম্মাহর উপর ফরজ হয়ে যায়— শত্রুর ক্ষতি থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে পরিমাণ লোক তাদের সাহায্যে জিহাদে বের হওয়া। এ বিষয়ে উম্মাহর মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। এমন কথা কোনো মুসলমানই বলেনি যে, শত্রুরা মুসলমানদের রক্ত প্রবাহিত করবে, তাদের পরিবার-পরিজনকে বন্দী করবে, আর অন্য মুসলমানদের জন্য তাদেরকে সাহায্য না করে বসে থাকা বৈধ হবে।” -আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৬ (ইলমিয়্যাহ)
ইমামুল হারামাইন জুআইনী রহ. (৪৭৮ হি.) বলেন,
“কিন্তু যখন কাফেররা দারুল ইসলামে (আক্রমণের উদ্দেশ্যে) অবতরণ করে, তখন ইসলামী শরীয়ার সকল ধারকবাহক একমত পোষণ করেছেন যে, সকল মুসলমানের উপর আবশ্যক হয়ে যায় যে, তারা দ্রুতবেগে, ক্ষিপ্র গতিতে একাকী বা দলবদ্ধভাবে শত্রু প্রতিরোধে বের হয়ে পড়বে।” -গিয়াসুল উমাম: ২৫৮ (মাকতাবাতু ইমামিল হারামাঈন)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
“যখন শত্রু আক্রমণ করে বসে, তখন আর মতানৈক্যর কোনো কারণ থাকে না। কেননা, দীন, জান ও সম্ভ্রব থেকে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। সম্ভ্রম ও দীনের প্রতিহতমূলক যুদ্ধ আগ্রাসী আক্রমণ প্রতিহত করার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। যে আগ্রাসী শত্রু দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংস করে, ঈমান আনার পরে এমন শত্রু প্রতিহত করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয দ্বিতীয় আরেকটি নেই। এই ক্ষেত্রে কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়, বরং সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিহত করতে হবে। আমাদের ও অন্যান্য (মাযহাবের) ফুকাহায়ে কেরাম তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।” -আল-ফাতাওয়াল কুবরা: ৫/৫৩৭-৫৩৮ (ইলমিয়্যাহ)
আরও দেখুন: মারাতিবুল ইজমা: ১১৯ (ইলমিয়্যাহ); আল-ইকনা’: ১/৩৩৪ (আল-ফারূকুল হাদীসিয়্যাহ); তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ১/২৮৯ (ইলমিয়্যাহ); ফাতহুল কাদীর: ৫/৪২৩ (ইলমিয়্যাহ); তাফসীরে কুরতুবী: ৮/১৫১ (দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ); মাওসূআতুল ইজমা ফিল ফিকহিল ইসলামী: ৬/৩১-৩৪ (দারুল ফাযীলাহ)
নফীরে আম এর অর্থ:
কোনো মুসলিম ভূখণ্ড কাফের কর্তৃক আক্রমান্ত হলে উক্ত অবস্থাকে ফিকহের ভাষায় ‘নফীরে আম’ বলা হয়। ‘নফীরে আ’ম’ হওয়ার জন্য ইমামের পক্ষ হতে জিহাদের আহ্বান করা আবশ্যক নয়।
ইমাম মাওসীলী রহ. (৬৮৩ হি.) বলেন,
“নাফিরে আম হচ্ছে এমন অবস্থা, যখন সকল মুসলমানের জিহাদে বের হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুতরাং তখন জিহাদের উদ্দেশ্য, দীনকে বিজয় করা এবং মুশরিকদের পরাস্থ করা, সকল মুসলিম ছাড়া সম্ভব নয়। তাই সবার উপর জিহাদ নামাযের মত ফরযে আইন হয়ে যায়।” –আল-ইখতিয়ার: ৪/১১৭ (ইলমিয়্যাহ)
বদরুদ্দীন আইনী রহ. (৮৫৫ হি.) বলেন,
“জিহাদ ফরজে কেফায়া। তবে নাফিরে আম হয়ে গেলে সকলের উপর ফরজ হয়ে যায়। নাফিরে আম হল, যখন কাফেররা আক্রমণ করে বসে এবং কিছু সংখ্যক মুসলমানের দ্বারা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা যায় না।… তখন সকলের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যায়।” –বেনায়া শরহে হেদায়া: ৭/৯৬ (ইলমিয়্যাহ)
ইবনে আবেদীন শামী রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
“যদি শত্রু আক্রমণ করে’ অর্থাৎ আকস্মিকভাবে কোনো এলাকায় (আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে) প্রবেশ করে। উক্ত অবস্থার নামই হচ্ছে নফীরে আম।” –রদ্দুল মুহতার: ৪/১২৭ (দারুল ফিকর)
ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া:
ইকদামী জিহাদ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির ঐক্যমত—ইতিপূর্বে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে তা ফরয না নফল এবং ফরয হলে ফরযে আইন না ফরযে কেফায়া, এ ব্যপারে সালাফের মাঝে মতভেদ ছিল। পরবর্তীতে ফুকাহায়ে কেরাম ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়ে যান।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
“আর তোমরা তাদের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। এতে যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তাহলে জালিম ছাড়া অন্য কারো প্রতি কোনো কঠোরতা নেই।” –সূরা বাকারা: ১৯৩
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
“তোমরা আহলে কিতাব (তথা ইহুদি ও নাসারা)-এর ঐ লোকদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে না; আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন, তারা তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করে না এবং সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা লাঞ্চিত হয়ে জিযিয়া প্রদান করে।” –সূরা তাওবা: ২৯
আরো এরশাদ হয়েছে,
“কোনো উজর ছাড়া ঘরে উপবিষ্টকারী মুসলিম এবং মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সমান নন। আল্লাহ মাল ও জান দ্বারা জিহাদকারীদেরকে উপবিষ্টদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। এবং আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদদেরকে উপবিষ্টকারীদের তুলনায় মহান প্রতিদান দিয়ে মর্যাদাবান করেছেন।” –সূরা নিসা: ৯৫, ৯৬
উপর্যুক্ত প্রথম দুই আয়াত থেকে ইকদামী জিহাদ ফরয প্রমাণীত হয়। এবং তৃতীয় আয়াত থেকে ফরযে কেফায়া প্রমাণীত হয়। কেননা, ইকদামী জিহাদ যদি ফরযে আইন হত, তাহলে জিহাদ তরককারীর ব্যাপারে জান্নাতের ওয়াদা নয়; বরং জাহান্নামের ধমকি দেওয়া হত। -আহকামুল কুরআন: ৩/১৫০ (ইলমিয়্যাহ); এ’নায়া শরহে হেদায়া (ফাতহুল কাদীরসহ): ৫/৪২৪ (ইলমিয়্যাহ)
আগের পর্ব:
ফিকহুল জিহাদ; সপ্তম পর্ব ➤জিহাদের প্রকার ও প্রত্যেক প্রকারের হুকুম:
ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে দিফায়ী জিহাদ ফরযে আইন। এ ব্যাপারে কারও কোনো মতভেদ নেই। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ -سورة البقرة: 190
“তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সাথে জিহাদ করো, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং সীমালঙ্ঘন করো না। অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” –সূরা বাকারা: ১৯০
আরো এরশাদ করেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا -سورة النساء: 75
“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং সেসকল অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের (উদ্ধার করার) পথে যুদ্ধ করছ না; যারা বলছে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এ জালিম অধিবাসীর জনপদ থেকে বের করে নিন। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক বানিয়ে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন।” –সূরা নিসা: ৭৫
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ -سورة البقرة: 246
“তুমি কি মূসার পরবর্তী বনী ইসরাঈলের সেই দলের ঘটনা জানো না, যখন তারা তাদের এক নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে (তার নেতৃত্বে) আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, এমন হওয়ার সম্ভাবনা কি আছে যে, যদি তোমাদের উপর জিহাদ ফরয করা হয়, তাহলে তোমরা জিহাদ করবে না? তারা বলল, আমাদের এমন কী কারণ আছে যে, আমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করব না; অথচ আমাদেরকে ঘর-বাড়ি ও সন্তান-সন্তনি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? কিন্তু যখন জিহাদ ফরয করা হলো, তাদের মধ্য হতে অল্প কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই বিমূখ হয়ে গেল। আল্লাহ জালিমদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।” –সূরা বাকারা: ২৪৬
ইমাম আবু বাকার জাসসাস রহ. (মৃত্যু: ৩৭০ হি.) বলেন,
ومعلوم في اعتقاد جميع المسلمين أنه إذا خاف أهل الثغور من العدو، ولم تكن فيهم مقاومة لهم فخافوا على بلادهم وأنفسهم وذراريهم أن الفرض على كافة الأمة أن ينفر إليهم من يكف عاديتهم عن المسلمين. وهذا لا خلاف فيه بين الأمة، إذ ليس من قول أحد من المسلمين إباحة القعود عنهم حتى يستبيحوا دماء المسلمين وسبي ذراريهم.اهــــ -أحكام القرآن للجصاص (3/ 146) ط. العلمية
“সকল মুসলমানের প্রসিদ্ধ আকীদা হল, যখন সীমান্তবর্তী মুসলমানরা শত্রুর (দ্বারা আক্রান্ত হবার) আশঙ্কা করে; আর তাদের মাঝে শত্রু প্রতিরোধের ক্ষমতা বিদ্যমান না থাকে; ফলে তারা নিজ পরিবার-পরিজন, দেশ ও জানের ব্যাপারে শঙ্কাগ্রস্ত হয়, তখন পুরো উম্মাহর উপর ফরজ হয়ে যায়— শত্রুর ক্ষতি থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে পরিমাণ লোক তাদের সাহায্যে জিহাদে বের হওয়া। এ বিষয়ে উম্মাহর মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। এমন কথা কোনো মুসলমানই বলেনি যে, শত্রুরা মুসলমানদের রক্ত প্রবাহিত করবে, তাদের পরিবার-পরিজনকে বন্দী করবে, আর অন্য মুসলমানদের জন্য তাদেরকে সাহায্য না করে বসে থাকা বৈধ হবে।” -আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৬ (ইলমিয়্যাহ)
ইমামুল হারামাইন জুআইনী রহ. (৪৭৮ হি.) বলেন,
فأما إذا وطئ الكفار ديار الإسلام، فقد اتفق حملة الشريعة قاطبة على أنه يتعين على المسلمين أن يخفوا ويطيروا إلى مدافعتهم زرافات ووحدانا.اهــــ -غياث الأمم في التياث الظلم (ص: 258) ط. مكتبة إمام الحرمين
“কিন্তু যখন কাফেররা দারুল ইসলামে (আক্রমণের উদ্দেশ্যে) অবতরণ করে, তখন ইসলামী শরীয়ার সকল ধারকবাহক একমত পোষণ করেছেন যে, সকল মুসলমানের উপর আবশ্যক হয়ে যায় যে, তারা দ্রুতবেগে, ক্ষিপ্র গতিতে একাকী বা দলবদ্ধভাবে শত্রু প্রতিরোধে বের হয়ে পড়বে।” -গিয়াসুল উমাম: ২৫৮ (মাকতাবাতু ইমামিল হারামাঈন)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
فأما إذا هجم العدو فلا يبقى للخلاف وجه فإن دفع ضررهم عن الدين والنفس والحرمة واجب إجماعا. ... وأما قتال الدفع فهو أشد أنواع دفع الصائل عن الحرمة والدين فواجب إجماعا فالعدو الصائل الذي يفسد الدين والدنيا لا شيء أوجب بعد الإيمان من دفعه فلا يشترط له شرط بل يدفع بحسب الإمكان. وقد نص على ذلك العلماء أصحابنا وغيرهم.اهـــ -الفتاوى الكبرى لابن تيمية (5/ 538-539) ط. العلمية
“যখন শত্রু আক্রমণ করে বসে, তখন আর মতানৈক্যর কোনো কারণ থাকে না। কেননা, দীন, জান ও সম্ভ্রব থেকে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। সম্ভ্রম ও দীনের প্রতিহতমূলক যুদ্ধ আগ্রাসী আক্রমণ প্রতিহত করার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। যে আগ্রাসী শত্রু দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংস করে, ঈমান আনার পরে এমন শত্রু প্রতিহত করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয দ্বিতীয় আরেকটি নেই। এই ক্ষেত্রে কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়, বরং সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিহত করতে হবে। আমাদের ও অন্যান্য (মাযহাবের) ফুকাহায়ে কেরাম তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।” -আল-ফাতাওয়াল কুবরা: ৫/৫৩৭-৫৩৮ (ইলমিয়্যাহ)
আরও দেখুন: মারাতিবুল ইজমা: ১১৯ (ইলমিয়্যাহ); আল-ইকনা’: ১/৩৩৪ (আল-ফারূকুল হাদীসিয়্যাহ); তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ১/২৮৯ (ইলমিয়্যাহ); ফাতহুল কাদীর: ৫/৪২৩ (ইলমিয়্যাহ); তাফসীরে কুরতুবী: ৮/১৫১ (দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ); মাওসূআতুল ইজমা ফিল ফিকহিল ইসলামী: ৬/৩১-৩৪ (দারুল ফাযীলাহ)
নফীরে আম এর অর্থ:
কোনো মুসলিম ভূখণ্ড কাফের কর্তৃক আক্রমান্ত হলে উক্ত অবস্থাকে ফিকহের ভাষায় ‘নফীরে আম’ বলা হয়। ‘নফীরে আ’ম’ হওয়ার জন্য ইমামের পক্ষ হতে জিহাদের আহ্বান করা আবশ্যক নয়।
ইমাম মাওসীলী রহ. (৬৮৩ হি.) বলেন,
والنفير العام: أن يحتاج إلى جميع المسلمين فلا يحصل المقصود وهو إعزاز الدين وقهر المشركين إلا بالجميع، فيصير عليهم فرض عين كالصلاة.اهــــ -الاختيار لتعليل المختار (4/ 117) ط. العلمية
“নাফিরে আম হচ্ছে এমন অবস্থা, যখন সকল মুসলমানের জিহাদে বের হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুতরাং তখন জিহাদের উদ্দেশ্য, দীনকে বিজয় করা এবং মুশরিকদের পরাস্থ করা, সকল মুসলিম ছাড়া সম্ভব নয়। তাই সবার উপর জিহাদ নামাযের মত ফরযে আইন হয়ে যায়।” –আল-ইখতিয়ার: ৪/১১৭ (ইলমিয়্যাহ)
বদরুদ্দীন আইনী রহ. (৮৫৫ হি.) বলেন,
يجب الجهاد على الكفاية إلا إذا كان النفير عاما بأن لا يندفع شر الكفارة إذا هجموا ببعض المسلمين ... فيفترض على كل واحد.اهــــ -البناية شرح الهداية (7/ 96) ط. العلمية
“জিহাদ ফরজে কেফায়া। তবে নাফিরে আম হয়ে গেলে সকলের উপর ফরজ হয়ে যায়। নাফিরে আম হল, যখন কাফেররা আক্রমণ করে বসে এবং কিছু সংখ্যক মুসলমানের দ্বারা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা যায় না।… তখন সকলের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যায়।” –বেনায়া শরহে হেদায়া: ৭/৯৬ (ইলমিয়্যাহ)
ইবনে আবেদীন শামী রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
(قوله إن هجم العدو) أي دخل بلدة بغتة، وهذه الحالة تسمى النفير العام.اهـــ -رد المحتار (4/ 127) ط. دار الفكر
“যদি শত্রু আক্রমণ করে’ অর্থাৎ আকস্মিকভাবে কোনো এলাকায় (আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে) প্রবেশ করে। উক্ত অবস্থার নামই হচ্ছে নফীরে আম।” –রদ্দুল মুহতার: ৪/১২৭ (দারুল ফিকর)
ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া:
ইকদামী জিহাদ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির ঐক্যমত—ইতিপূর্বে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে তা ফরয না নফল এবং ফরয হলে ফরযে আইন না ফরযে কেফায়া, এ ব্যপারে সালাফের মাঝে মতভেদ ছিল। পরবর্তীতে ফুকাহায়ে কেরাম ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়ে যান।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ -سورة البقرة: 193
“আর তোমরা তাদের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। এতে যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তাহলে জালিম ছাড়া অন্য কারো প্রতি কোনো কঠোরতা নেই।” –সূরা বাকারা: ১৯৩
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ -سورة التوبة: 29
“তোমরা আহলে কিতাব (তথা ইহুদি ও নাসারা)-এর ঐ লোকদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে না; আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন, তারা তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করে না এবং সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা লাঞ্চিত হয়ে জিযিয়া প্রদান করে।” –সূরা তাওবা: ২৯
আরো এরশাদ হয়েছে,
لَا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا -سورة النساء: 95
“কোনো উজর ছাড়া ঘরে উপবিষ্টকারী মুসলিম এবং মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সমান নন। আল্লাহ মাল ও জান দ্বারা জিহাদকারীদেরকে উপবিষ্টদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। এবং আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদদেরকে উপবিষ্টকারীদের তুলনায় মহান প্রতিদান দিয়ে মর্যাদাবান করেছেন।” –সূরা নিসা: ৯৫, ৯৬
উপর্যুক্ত প্রথম দুই আয়াত থেকে ইকদামী জিহাদ ফরয প্রমাণীত হয়। এবং তৃতীয় আয়াত থেকে ফরযে কেফায়া প্রমাণীত হয়। কেননা, ইকদামী জিহাদ যদি ফরযে আইন হত, তাহলে জিহাদ তরককারীর ব্যাপারে জান্নাতের ওয়াদা নয়; বরং জাহান্নামের ধমকি দেওয়া হত। -আহকামুল কুরআন: ৩/১৫০ (ইলমিয়্যাহ); এ’নায়া শরহে হেদায়া (ফাতহুল কাদীরসহ): ৫/৪২৪ (ইলমিয়্যাহ)
আগের পর্ব:
ফিকহুল জিহাদ; সপ্তম পর্ব ➤জিহাদের প্রকার ও প্রত্যেক প্রকারের হুকুম: