Announcement

Collapse
No announcement yet.

রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চিকিৎসা । পর্বঃ ২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চিকিৎসা । পর্বঃ ২

    জ্বরের চিকিৎসাঃ
    ১৮ । ইবনু ’উমার (রাঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও।
    নাফি’ (রহ.) বলেন, ’আবদুল্লাহ তখন বলতেনঃ আমাদের উপর থেকে শাস্তিকে হালকা কর।
    তাহক্বীকঃ সহীহ বুখারীঃ ৫৭২৩
    ১৯ । ফাতিমাহ বিনতে মুনযির (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট যখন কোন জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীলোকদেরকে দু’আর জন্য নিয়ে আসা হত , তখন তিনি পানি হাতে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটির জামার ফাঁক দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি।
    তাহক্বীকঃ সহীহ বুখারীঃ ৫৭২৪
    ২০ । আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে জ্বরের বিষয় উল্লিখিত হলে এক ব্যক্তি জ্বরকে গালি দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জ্বরকে গালি দিও না। কেননা তা পাপসমূহ দূর করে, যেমন আগুন লোহার ময়লা দূর করে।
    তাহক্বীকঃ সহীহ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৬৯
    ২১ । আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে সাথে নিয়ে জ্বরাক্রান্ত এক রোগীকে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীকে বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, এটা আমার আগুন যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার উপর চাপিয়ে দেই, যাতে আখেরাতে তার প্রাপ্য আগুনের বিকল্প হয়ে যায়।
    তাহক্বীকঃ সহীহ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭০

    ক্ষতস্থানের চিকিৎসাঃ
    ২২ । সাহল ইবনু সা’দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ চূর্ণ করে দেয়া হল, আর তাঁর মুখমন্ডল রক্তাক্ত হয়ে গেল এবং তাঁর রুবাঈ দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন ’আলী ঢাল ভর্তি করে পানি দিতে থাকলেন এবং ফাতিমাহ এসে তাঁর চেহারা থেকে রক্ত ধুয়ে দিতে লাগলেন। ফাতিমাহ যখন দেখলেন যে, পানি ঢালার পরেও অনেক রক্ত ঝরে চলছে, তখন তিনি একটি চাটাই নিয়ে এসে তা পুড়ালেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যখমের উপর ছাই লাগিয়ে দিলেন। ফলে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
    তাহক্বীকঃ সহীহ বুখারীঃ ৫৭২২
    ২৩ । আলী ইবনু উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার দাদীর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদিমা (সেবিকা) ছিলেন। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে কোন তলোয়ার বা দা-এর আঘাতে ক্ষত হতো, তিনি তাতে মেহেদী লাগানোর জন্য আমাকে নির্দেশ দিতেন।
    তাহক্বীকঃ সহীহ তিরমিযিঃ ২০৫৪

    বিচ্ছু দংশনের চিকিৎসাঃ
    ২৪ । আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আাদয় করছিলেন, এ অবস্থায় তিনি জমিনে তাঁর হাত রাখতেই একটি বিচ্ছু তাঁকে দংশন করল। তৎক্ষণাৎ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুতা দ্বারা বিচ্ছুটিকে মেরে ফেললেন। অতঃপর সালাত শেষ করে বললেনঃ বিচ্ছুটির ওপর আল্লাহর লা’নাত হোক। সে সালাত আদায়কারী-অনাদায়কারী অথবা বলেছেনঃ নবী কিংবা অন্য কাউকেও ছাড়ে না। অতঃপর তিনি কিছু লবণ ও পানি চেয়ে নিলেন এবং তা একটি পাত্রে মিশালেন, অতঃপর অঙ্গুলির দংশিত স্থানে পানি ঢালতে এবং উক্ত স্থান মুছতে লাগলেন এবং মু’আব্বাযাতায়ন (সূরাহ্ ফালাক ও নাস) দ্বারা ঝাড়তে লাগলেন।
    তাহক্বীকঃ সহীহ মিশকাতঃ ৪৫৬৭

    কোমড়ের বাত ব্যাথার চিকিৎসাঃ
    ২৫ । আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ পাছার বাতরোগের চিকিৎসায় দুম্বার নিতম্ব গলিয়ে নিয়ে তা তিন ভাগ করতে হবে, অতঃপর প্রতি দিন এক ভাগ পান করতে হবে।
    তাহক্বীকঃ সহীহ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৬৩

    নিউমোনিয়ার চিকিৎসাঃ
    ২৫ । যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কুসতে বাহরী (চন্দন কাঠ) ও যাইতুনের তৈল দিয়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করার নির্দেশ (পরামর্শ) দিয়েছেন।
    তাহক্বীকঃ যঈফ তিরমিযিঃ ২০৭৯

    কুষ্ঠুরোগঃ
    ২৬ । ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুষ্ঠ রোগীদের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকো না।
    তাহক্বীকঃ হাসান ইবনে মাজাহঃ ৩৫৪৩
    ২৭ । শারীদ গোত্রের আমর (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে এক কুষ্ঠরোগী ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও, আমি তোমার বাইয়াত করেছি।
    তাহক্বীকঃ সহিহ ইবনে মাজাহঃ ৩৫৪৪

    প্লেগরোগঃ
    ২৮ । উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে, তিনি সা’দ (রাঃ)-এর কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন্ অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। বর্ণনাকারী (হাবীব ইবনু আবূ সাবিত বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি উসামাহ (রাঃ)-কে এ হাদীস সা’দ (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, তিনি (সা’দ) তাতে কোন অসম্মতি জ্ঞাপন করেননি? ইবরাহীম ইবনু সা’দ বলেনঃ হাঁ।
    তাহক্বীকঃ সহীহ বুখারীঃ ৫৭২৮
    ২৯ । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জানান যে, এটি হচ্ছে এক রকমের আযাব। আল্লাহ যার উপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে, এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোন বিপদ তার উপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব। দাঊদ থেকে নাযরও এ রকম বর্ণনা করেছেন।
    তাহক্বীকঃ সহীহ বুখারীঃ ৫৭৩৪

    জিনে ধরলে বা আছর করলেঃ
    ৩০ । আবূ লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বসে থাকা অবস্থায় এক বেদুইন তাঁর নিকট এসে বললো, আমার এক অসুস্থ ভাই আছে। তিনি বলেনঃ তোমার ভাই কি রোগে আক্রান্ত? সে বললো, (কোন কিছুর) কুপ্রভাব (আছর)। তিনি বলেনঃ তুমি যাও এবং তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। আবূ লায়লা (রাঃ) বলেন, সে গিয়ে তার ভাইকে নিয়ে আসলে তিনি তাকে নিজের সামনে বসান। আমি শুনতে পেলাম, তিনি সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত, মধ্যখানের দু’ আয়াত(১৬৩-১৬৪ নং আয়াত), আয়াতুল কুরসী (২৫৫ নং আয়াত) এবং বাকারার শেষ তিন আয়াত ( ২৮৪-৬ আয়াত) এবং আল ইমরানের একটি আয়াত, আমার মনে হয় তিনি ১৮ নং আয়াত পড়েছিলেন এবং সূরা আরাফের এক আয়াত (৫৪ নং আয়াত), সূরা মুমিনূনের এক আয়াত (১১৭ নং আয়াত), সূরা জিন-এর এক আয়াত (৩ নং আয়াত), সূরা সাফ্ফাত-এর প্রথম দশ আয়াত, সূরা হাশরের শেষ তিন (২২, ২৩ ও ২৪) আয়াত, সূরা ইখলাস এবং সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাকে ফুঁ দিলেন। তাতে বেদুইন এমনভাবে সুস্থ হয়ে দাঁড়ালো যে, তার কোন রোগই অবশিষ্ট নেই।
    তাহক্বীকঃ যঈফ ইবনে মাজাহঃ ৩৫৪৯

    যাদু করাঃ
    ৩১ । ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবনু আ’সাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাদু করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনে হতো যেন তিনি একটি কাজ করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। একদিন বা একরাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দু’আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ হে ’আয়িশাহ! তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু’পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি বলেনঃ যাদু করা হয়েছে।
    প্রথম জন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ বিন আ’সাম। প্রথম জন জিজ্ঞেস করেনঃ কিসের মধ্যে? দ্বিতীয় জন উত্তর দেনঃ চিরুনী, মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ’জুব’-এর মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবী সাথে নিয়ে সেখানে যান। পরে ফিরে এসে বলেনঃ হে ’আয়িশাহ! সে কূপের পানি মেহদীর পানির মত লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
    আবূ উসামাহ আবূ যামরাহ ও ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.) হিশাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও ইবনু ’উয়াইনাহ (রহ.) হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন, চিরুনী ও কাতানের টুকরায়।
    তাহক্বীকঃ সহিহ বুখারীঃ ৫৭৬৩

Working...
X