আব্দুল আজিজ রহঃ এর ঐতিহাসিক ফতোয়ার প্রেক্ষাপট
বিঃদ্রঃ: এখানে পাক সরকারের সাথে লাল মসজিদ সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের যে সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে তা কেমন সম্পর্ক সে বিষয়ে ভূমিকায় আলোচনা করা হয়েছে।
হিমেল রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী:
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ সরকারের এজেন্ডা গুলো একের পর এক বাস্তবায়িত হতে লাগলো। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি একদা ইসলামের কালিমা"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একথা সর্বজন স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত। কিন্তু এসময় এসে চারদিকে স্রোতের মত ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা হতে দেখা গেল। আইনের অনেক ধারার মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনা হলো। সুকৌশলে ইসলামপন্থীদের কোনঠাসা করে রাখা হলো। খোদাদ্রোহ,দ্বীন বিরোধীতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা এবং পুঁজিবাদী লুন্ঠন পুরো দেশকে ছেয়ে ফেললো। মিডিয়াকে এতটাই বাক স্বাধীনতা দেয়া হল যে,তারা ঠুনকো সব অজুহাতে ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানকে রীতিমতো তাচ্ছিল্য করতে লাগলো।(রক্তাক্ত লাল মসজিদ: পৃষ্ঠা নং ৪)
হিমেল রহমানের ভাষ্য মতে
চলবে ইনশাআল্লাহ.....
- ২০০১ সাল বিশ্ব রাজনীতি এবং ইসলাম ও কুফরের মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত চলমান লড়াইয়ের পট পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণ ছিল।যে বছরে ঘটেছিল ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া যুগান্তকারী এক অবিস্মরণীয় আক্রমণ। যাকে আমরা ৯/১১ নামে আজো অত্যন্ত আনন্দের সাথে স্বরণ করে থাকি। মাত্র ১৯ জন সিংহ পুরুষের গর্জন সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো পৃথিবীর তাগুত শক্তিকে।জালিম আমেরিকার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে এই আক্রমণ।যুগের হুবাল আমেরিকার পতন এই আক্রমণ পরবর্তী সময়ে শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। একটি বিষয় এখানে বলা জরুরি ৯/১১ নিয়ে নানা সন্দেহ সংশয় আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।তাই ৯/১১ এর সুস্পষ্ট ও সঠিক ইতিহাস জানার প্রয়োজনীয়তা বিশেষত বর্তমান সময়ে এর গুরুত্ব অত্যধিক।তাই আমার প্রিয় সম্মানিত ভাইদের কাছে কামনা করছি যে,যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্টভাবে জানেন না তারা জেনে নিন ইনশাআল্লাহ।আর জানার জন্য আপনার জন্য রয়েছে gazwah.net এ পর্যাপ্ত রিসোর্স।
২০০১ সালে যুগান্তকারী এই আক্রমণের পর আমেরিকা মুজাহিদগনের কৌশলের ফাঁদে পড়ে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হয় ।তারা সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তানে আক্রমণ করার। তখন পাকিস্তানের নাপাক সরকার তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সহযোগিতা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে মুফতী নিযামুদ্দিন শামযাই শহীদ (রহঃ) এবং লাল মসজিদ সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ।
- মুফতী নিযামুদ্দিন শামযাই শহীদ (রহঃ) এর সেই বিখ্যাত ফতোয়া তো অনেকেরই জানা থাকার কথা।জানা না থাকলে "নেদায়ে তাওহীদ" বই থেকে আমরা জেনে নিতে পারি ইনশাআল্লাহ।আর লাল মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিষয়টি
- "২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং পাকিস্তানি সামরিক সরকার এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। লাল মসজিদের নেতারা এই আক্রমণ ও আক্রমণের প্রতি পাকিস্তানি সমর্থনের তীব্র নিন্দা জানান। কিন্তু তা সত্ত্বেও লাল মসজিদ ও পাকিস্তানি সরকারের মধ্যে একধরনের সূক্ষ্ম সম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক অভিযান এই সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটায়।"
বিঃদ্রঃ: এখানে পাক সরকারের সাথে লাল মসজিদ সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের যে সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে তা কেমন সম্পর্ক সে বিষয়ে ভূমিকায় আলোচনা করা হয়েছে।
এই আক্রমণের পর আত্মরক্ষার তাগিদে এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজানো ও বাস্তবায়নের ফিকির নিয়ে মুজাহিদগন পাড়ি জমান পাকিস্তানের কাবায়েলি/গোত্রীয় অঞ্চলে। তখন আমেরিকার গোলাম, ডলার খোর, দালাল, বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে মুজাহিদদের আক্রমণ চালায়।
হিমেল রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী:
- "উল্লেখ্য, ওয়াজিরিস্তান পাকিস্তানের পশতুন জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত, এবং আফগানিস্তানে মার্কিন আক্রমণের পর তালিবান ও আল–কায়েদা যোদ্ধারা এই অঞ্চলে পালিয়ে এসেছিল। এর ফলে অঞ্চলটি মিলিট্যান্টদের একটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে মিলিট্যান্টদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে।"
- (আস সাহাব মিডিয়ার ভাইদের এক প্রশ্নের জবাবে জামাআত কায়েদাতুল জিহাদের বর্তমান আমীরে হিন্দ উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিঃ তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান সরকারের কর্মকাণ্ড ও কাবায়েলি আনসার ভাইদের বিষয়ে বর্ননা করেন:
"যখন আমেরিকা ২০০১ সালে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমেরিকার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং আমেরিকার পা চেটে আফগান থেকে কাশ্মীর অবধি জিহাদ ও ইসলামকে ধূলিসাৎ করার শপথ নেয়। এই গাদ্দাররা আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে ইসলামী ইমারতকে সে সময় শেষ করে দেয়। অধিকন্তু তারা এ অপচেষ্টাও চালিয়েছে যে, মুজাহিদরা যেন কোনোভাবেই সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ না পায়।
মুজাহিদগণের আমেরিকা ও বৈশ্বিক কুফরী জোটের বিরদ্ধে জিহাদ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত স্থান যেন না থাকে। এ অবস্থায় আরব ও আজমের মুহাজির ও বিভিন্ন গোত্রের মুজাহিদগণ পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্রে সমবেত হন। গোত্রের জনসাধারণ মুজাহিদদের সততা ও উত্তম আখলাকে মুগ্ধ হয়ে তাঁদের সঙ্গ দেন এবং মন উজাড় করে মুজাহিদদের জন্য সব ধরনের কুরবানী পেশ করতে রাজি হয়ে যান। আল্লাহ এই মুজাহিদদের জন্য এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সকলের জন্য উভয় জাহানে কল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখুন। তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।"
(পাকিস্তানে জিহাদের প্রেক্ষাপট ও প্রকৃত বাস্তবতা)
- সেসময়ের পাকি নাপাক ফৌজ ও পারভেজ মোশাররফ একদিকে মুজাহিদগনের আক্রমণ অব্যাহত রাখা আর অন্যদিকে সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানোর কাজে ব্যাপকভাবে আত্মনিয়োগ করে। যে চিত্রটি উঠে এসেছে ‘রক্তাক্ত লাল মসজিদ’ নামক বইতে। সেখানে উল্লেখ আছে:
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ সরকারের এজেন্ডা গুলো একের পর এক বাস্তবায়িত হতে লাগলো। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি একদা ইসলামের কালিমা"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একথা সর্বজন স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত। কিন্তু এসময় এসে চারদিকে স্রোতের মত ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা হতে দেখা গেল। আইনের অনেক ধারার মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনা হলো। সুকৌশলে ইসলামপন্থীদের কোনঠাসা করে রাখা হলো। খোদাদ্রোহ,দ্বীন বিরোধীতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা এবং পুঁজিবাদী লুন্ঠন পুরো দেশকে ছেয়ে ফেললো। মিডিয়াকে এতটাই বাক স্বাধীনতা দেয়া হল যে,তারা ঠুনকো সব অজুহাতে ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানকে রীতিমতো তাচ্ছিল্য করতে লাগলো।(রক্তাক্ত লাল মসজিদ: পৃষ্ঠা নং ৪)
- অথচ মুজাহিদগনের পাকিস্তানের কাবায়েলি/ গোত্রীয় অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া পাকিস্তানের ক্ষতি করার কোন উদ্দেশ্যই ছিল না। বরং মুজাহিদগনের উদ্দেশ্য ছিল সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত। উদ্দেশ্যগুলো সম্পর্কে আস সাহাব মিডিয়ার ভাইদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীরে হিন্দ উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিঃ বলেন:
"আস-সাহাব উপমহাদেশ: ঐ জামাআতকে সামনে রেখে মূলত উদ্দেশ্য কী ছিল?(অর্থাৎ মুজাহিদদের এই গোত্রীয় অঞ্চলে কি উদ্দেশ্যে নিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন)।
- উস্তাদ উসামা মাহমুদ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উদ্দেশ্য তো ছিল ইসলামী ইমারাহর প্রতিরক্ষা করা, আমেরিকাকে সেখান থেকে বের করা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করা, মুসলমানদের রক্ষা করা এবং সর্বোপরি জিহাদি আন্দোলনকে রক্ষা করা। পাকিস্তানি বাহিনী আমেরিকার দাসত্ব করে বরকতপূর্ণ আন্দোলনকে সমূলে নিঃশেষ করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। এ উদ্দেশ্যে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়ে। "
- এমনি দুর্যোগময় সময়ে যখন মুজাহিদীনগন ওয়াজিরিস্তানের কাবায়েলি/ গোত্রীয় অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন তখন পাকিস্তানের নাপাক, ডলার খোর, দালাল, বিশ্বাসঘাতক ফৌজ আমেরিকার গোলামির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মুজাহিদদের উপর আক্রমণ শুরু করে। তখন হক্বের ঝান্ডাবাহি লাল মসজিদ কর্তৃপক্ষ গর্জে উঠেন। সেসময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে লাল মসজিদ কর্তৃপক্ষঐতিহাসিক ফতোয়া প্রদান করেন।
- "কিন্তু প্রকৃতপক্ষে "লাল মসজিদ সেই সময় আন্দোলনের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যখন পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাওহীদবাদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায় এবং যার কারণে মুজাহিদদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়।এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লাল মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আজিজ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তার সেই ঐতিহাসিক ফতোয়া দেন।"
(রক্তাক্ত লাল মসজিদ:৫)
হিমেল রহমানের ভাষ্য মতে
- " কিন্তু ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক অভিযান এই সম্পর্কের(লাল মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও পাকিস্তান সরকারের মাঝে থাকা কথিত সম্পর্ক) মারাত্মক অবনতি ঘটায়।"
- "ওয়াজিরিস্তানে যে বিদ্রোহ চলছিল, সেই বিদ্রোহের নেতাদের সঙ্গে লাল মসজিদের নেতা আব্দুল রাশিদ গাজীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এজন্য তিনি ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং এর বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারি করেন।"
সারকথা: আমেরিকা আফগানিস্তানে আক্রমণের পর পাকি সরকার তার গোলামী প্রকাশ করে কাশ্মীর থেকে আফগান পর্যন্ত জিহাদ ধুলিসাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।মুজাহিদগণের আমেরিকা ও বৈশ্বিক কুফরী জোটের বিরদ্ধে জিহাদ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত স্থান যেন না থাকে। এ অবস্থায় আরব ও আজমের মুহাজির ও বিভিন্ন গোত্রের মুজাহিদগণ পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্রে সমবেত হন। গোত্রীয় লোকজন প্রান উজাড় করে মুহাজিরদের সেবা করলেও পাকি সরকার তাদের উপর আক্রমণ চালায়। অথচ মুজাহিদগনের পাকিস্তানের সরকারের ক্ষতি করার কোন উদ্দেশ্যই ছিল না বরং মুজাহিদগনের উদ্দেশ্য ছিল সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত।অর্থাৎ মুজাহিদদের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট থাকার পরও পাক সরকার গোলামীর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা কাবায়েলি অঞ্চলে মুজাহিদদের উপর আক্রমণ করে। যার প্রেক্ষিতে সেসময় লাল মসজিদ থেকে মাওঃ আব্দুল আজিজ সেই ঘটনা কে কেন্দ্র করেই লাল মসজিদ থেকে ফতোয়া প্রদান করেছিলেন।এটা ছিল সেই ফতোয়া যা পাকিস্তানের প্রখ্যাত বড় বড় ওলামায়ে কেরাম যাতে সম্মতি দিয়েছেন যাদের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। যা "ওয়ানা অপারেশন কি বারে মে পাকিস্তান কি উলামা কা মুত্তাফেকা ফতোয়া" নামে সুপ্রসিদ্ধ।
চলবে ইনশাআল্লাহ.....