আনসারি সাহাবিদের বিস্ময়কর আত্মত্যাগ।
আনসার ইসলামের ইতিহাসে এক মহামান্বিত কাফেলার নাম। দ্বীনের জন্য তাঁদের কুরবানি ও আত্মত্যাগ, মুমিন ভাইদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা, যুগ যুগ ধরে প্রেরণা যোগাবে মুমিন মুসলিমদের, কিয়ামত পর্যন্ত যারা দ্বীনের নুসরতে নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করবে আনসাররা হলেন তাঁদের আদর্শ প্রেরণা। নিজের উপর অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দিয়ার যে নজির তাঁরা স্থাপন করেছেন তা সত্যই বিস্ময়কর, আনসারদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرِونَ عَلَٰی أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةُۚ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
" যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং ইমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে চাহিদা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও নিজেদের ওপর তাদেরকে প্রাধান্য দেয়। আর মনের কার্পণ্য থেকে যাদের মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।' (সূরা হাশর, ৫৯: ০৯)
সহিহ বুখারীতে এসেছে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযিআল্লাহু আনহু বলেন আমরা যখন মদিনায় আসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ও সা'দ বিন রবীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরি করে দেন, সা'দ বিন রবী আমাকে বললেন আমি আনসারদের মধ্যে অধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি, আমার সম্পত্তি ভাগকরে আপনাকে অর্ধেক দিয়ে দিচ্ছি, আর আমার দুই স্ত্রীরির মধ্যে কাকে আপনার বেশি পছন্দ হয় বলুন তাকে আমি আপনার জন্য তালাক দিয়ে দিব ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর আপনি তাকে শাদী করবেন, সা'দ বিন রবীর এমন প্রস্তাবের উত্তরে আমি বলি আপনার সম্পদ আপনার জন্য মোবারক হোক। আমার এসবের দরকার নেই, বরং আপনি বলুন এখানে ব্যবসা করার মত কোনো বাজার আছে কি?
সা'দ বিন রবী বললেন বনু কায়নুকার বাজার আছে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযিআল্লাহু আনহু এর পর থেকে ব্যবসায় লেগে যান।' ( সহিহুল বুখারী: ২০৪৮)
সহিহ বুখারীতে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে,
হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আনসাররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন আমাদের ও আমাদের মুহাজির ভাইদের মাঝে খেজুর বাগানগুলোকে ভাগ করে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - বললেন না তা করা হবেনা, তখন তাঁরা মুহাজির ভাইদের বললেন আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে ফলে অংশীদার করব।' ( সহিহুল বুখারী: ২৩২৫)
প্রিয় ভাই! আমাদের মাঝে কি নিজেদের সম্পদ এভাবে বিলিয়ে দেয়ার মন মানসিকতা আছে? দ্বীনের জন্য এমন অকাতরে দান করার মত মজবুত ঈমান কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি? আনসারদের মত মুমিন ভাইদের কি আমরা অতটা ভালোবাসতে পারি! আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান ও দ্বীনের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা ব্যতীত এমন কুরবানি কিভাবে সম্ভব?
মুমিন ভাইদের জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করার যে মহান শিক্ষা ইসলামে রয়েছে তা থেকে আজ আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। আমরা এখন কেবল নিজের স্বার্থটাই দেখি, মুমিন ভাইকে সাহায্য করা এবং তার জন্য স্বার্থত্যাগ করার যে আনন্দ তা আজ আমরা ভুলে গেছি।
আরাকানের মুহাজিররা যখন প্রিয়জন অর্থ সম্পদ ঘর-বাড়ি সব কিছু হারিয়ে একটু মাথা-গুজার ঠাই পাবার জন্য বাংলাদেশে পাড়ি-জমায়। অনেক বাঙ্গালী মুসলিম তাতে ভীষণ বিরক্ত হয়। অথচ আমাদের দরকার ছিল নির্যাতিত এই মুসলিম ভাই বোনদের পরিপূর্ণভাবে আশ্রয় দেয়া তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদ আজ আমাদের ঈমানের ভ্রাতৃত্বকে ভুলিয়ে দিয়েছে। সে আরাকানী, তারা ভারতীয়, ওরা পাকিস্তানী, আমি বাঙ্গালী। এ ধরনের শরিয়া বিরোধী গর্হিত চিন্তা আমাদের মনে বাসা বেধেছে। ওরা আরাকানী, আর আমরা বাঙ্গালী এই চিন্তা কোনো মুসলিম করতে পারেনা। সহিহ মুসলিমে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَی رَأْسُهُ ٭ اشْتَكَی كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَی عَيْنُهُ اشْتَكَی كُلُّهُ
" মুসলমানরা এক দেহের ন্যায়। যদি তার মাথায় ব্যথা হয়, তবে পুরো শরীর ব্যথিত হয়। আর যদি তার চোখে ব্যথা হয়, তবে পুরো শরীর ব্যথিত হয়।'' (সহিহুল মুসলিম: ৬৭)
আজ আরাকানী মুহাজির ভাইয়েরা কেম বন্দি হয়ে পড়ে আছে। আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা নয়, অভিশপ্ত খ্রিস্টান এনজিওরা তাদেরকে সাহায্য করছে টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে তাদের ঈমান হারা করছে। খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা এবং সুন্দর পরিবেশের অভাবে তারা আজ নানান অনৈতিক কাজে জরিয়ে পড়েছ। আমাদের ঈমানি দুর্বলতা ও বদ আমলের এর চেয়ে বড় নজির আর কি হতে পারে? আল্লাহ মুহাজির ভাইদের হিফাজত করুন।
প্রিয় ভাই! আমাদের মানসিকতা পাল্টাতে হবে, সীমান্তের এই কাঁটাতার আমাদের ঈমানী ভ্রাতৃত্বকে যেন বিনষ্ট করতে না পারে, মুহাজিরদের ব্যাপারে মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি হবে মদিনার আনসার সাহাবীদের মত তাঁরাই আমাদের আদর্শ। আল্লাহ তাআলা আনসারদের মত আমাদেরেও কবুল করুন, আমাদের অন্তরেও মুমিন ভাইদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন, দ্বীনের নুসরতে আমাদেরও কুরবানী পেশ করার তাওফিক দিন আমিন।
ইয়া রব্বাল আলামিন।
আনসার ইসলামের ইতিহাসে এক মহামান্বিত কাফেলার নাম। দ্বীনের জন্য তাঁদের কুরবানি ও আত্মত্যাগ, মুমিন ভাইদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা, যুগ যুগ ধরে প্রেরণা যোগাবে মুমিন মুসলিমদের, কিয়ামত পর্যন্ত যারা দ্বীনের নুসরতে নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করবে আনসাররা হলেন তাঁদের আদর্শ প্রেরণা। নিজের উপর অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দিয়ার যে নজির তাঁরা স্থাপন করেছেন তা সত্যই বিস্ময়কর, আনসারদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرِونَ عَلَٰی أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةُۚ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
" যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং ইমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে চাহিদা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও নিজেদের ওপর তাদেরকে প্রাধান্য দেয়। আর মনের কার্পণ্য থেকে যাদের মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।' (সূরা হাশর, ৫৯: ০৯)
সহিহ বুখারীতে এসেছে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযিআল্লাহু আনহু বলেন আমরা যখন মদিনায় আসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ও সা'দ বিন রবীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরি করে দেন, সা'দ বিন রবী আমাকে বললেন আমি আনসারদের মধ্যে অধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি, আমার সম্পত্তি ভাগকরে আপনাকে অর্ধেক দিয়ে দিচ্ছি, আর আমার দুই স্ত্রীরির মধ্যে কাকে আপনার বেশি পছন্দ হয় বলুন তাকে আমি আপনার জন্য তালাক দিয়ে দিব ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর আপনি তাকে শাদী করবেন, সা'দ বিন রবীর এমন প্রস্তাবের উত্তরে আমি বলি আপনার সম্পদ আপনার জন্য মোবারক হোক। আমার এসবের দরকার নেই, বরং আপনি বলুন এখানে ব্যবসা করার মত কোনো বাজার আছে কি?
সা'দ বিন রবী বললেন বনু কায়নুকার বাজার আছে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযিআল্লাহু আনহু এর পর থেকে ব্যবসায় লেগে যান।' ( সহিহুল বুখারী: ২০৪৮)
সহিহ বুখারীতে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে,
হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আনসাররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন আমাদের ও আমাদের মুহাজির ভাইদের মাঝে খেজুর বাগানগুলোকে ভাগ করে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - বললেন না তা করা হবেনা, তখন তাঁরা মুহাজির ভাইদের বললেন আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে ফলে অংশীদার করব।' ( সহিহুল বুখারী: ২৩২৫)
প্রিয় ভাই! আমাদের মাঝে কি নিজেদের সম্পদ এভাবে বিলিয়ে দেয়ার মন মানসিকতা আছে? দ্বীনের জন্য এমন অকাতরে দান করার মত মজবুত ঈমান কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি? আনসারদের মত মুমিন ভাইদের কি আমরা অতটা ভালোবাসতে পারি! আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান ও দ্বীনের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা ব্যতীত এমন কুরবানি কিভাবে সম্ভব?
মুমিন ভাইদের জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করার যে মহান শিক্ষা ইসলামে রয়েছে তা থেকে আজ আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। আমরা এখন কেবল নিজের স্বার্থটাই দেখি, মুমিন ভাইকে সাহায্য করা এবং তার জন্য স্বার্থত্যাগ করার যে আনন্দ তা আজ আমরা ভুলে গেছি।
আরাকানের মুহাজিররা যখন প্রিয়জন অর্থ সম্পদ ঘর-বাড়ি সব কিছু হারিয়ে একটু মাথা-গুজার ঠাই পাবার জন্য বাংলাদেশে পাড়ি-জমায়। অনেক বাঙ্গালী মুসলিম তাতে ভীষণ বিরক্ত হয়। অথচ আমাদের দরকার ছিল নির্যাতিত এই মুসলিম ভাই বোনদের পরিপূর্ণভাবে আশ্রয় দেয়া তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদ আজ আমাদের ঈমানের ভ্রাতৃত্বকে ভুলিয়ে দিয়েছে। সে আরাকানী, তারা ভারতীয়, ওরা পাকিস্তানী, আমি বাঙ্গালী। এ ধরনের শরিয়া বিরোধী গর্হিত চিন্তা আমাদের মনে বাসা বেধেছে। ওরা আরাকানী, আর আমরা বাঙ্গালী এই চিন্তা কোনো মুসলিম করতে পারেনা। সহিহ মুসলিমে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَی رَأْسُهُ ٭ اشْتَكَی كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَی عَيْنُهُ اشْتَكَی كُلُّهُ
" মুসলমানরা এক দেহের ন্যায়। যদি তার মাথায় ব্যথা হয়, তবে পুরো শরীর ব্যথিত হয়। আর যদি তার চোখে ব্যথা হয়, তবে পুরো শরীর ব্যথিত হয়।'' (সহিহুল মুসলিম: ৬৭)
আজ আরাকানী মুহাজির ভাইয়েরা কেম বন্দি হয়ে পড়ে আছে। আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা নয়, অভিশপ্ত খ্রিস্টান এনজিওরা তাদেরকে সাহায্য করছে টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে তাদের ঈমান হারা করছে। খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা এবং সুন্দর পরিবেশের অভাবে তারা আজ নানান অনৈতিক কাজে জরিয়ে পড়েছ। আমাদের ঈমানি দুর্বলতা ও বদ আমলের এর চেয়ে বড় নজির আর কি হতে পারে? আল্লাহ মুহাজির ভাইদের হিফাজত করুন।
প্রিয় ভাই! আমাদের মানসিকতা পাল্টাতে হবে, সীমান্তের এই কাঁটাতার আমাদের ঈমানী ভ্রাতৃত্বকে যেন বিনষ্ট করতে না পারে, মুহাজিরদের ব্যাপারে মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি হবে মদিনার আনসার সাহাবীদের মত তাঁরাই আমাদের আদর্শ। আল্লাহ তাআলা আনসারদের মত আমাদেরেও কবুল করুন, আমাদের অন্তরেও মুমিন ভাইদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন, দ্বীনের নুসরতে আমাদেরও কুরবানী পেশ করার তাওফিক দিন আমিন।
ইয়া রব্বাল আলামিন।