পৃথিবীর সব দেশেই আল্লাহর! কিছু মুখলিস বান্দা থাকে যারা কৃর্তি ও কৃর্মের মাধ্যমে যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উম্মাহর মাঝে চিরঅমর হয়ে বেঁচে থাকেন। আর তাদের মধ্যে থেকে অন্যতম হলেন আমাদের শায়েখ শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. যার সম্পর্কে শুধু বলা যায়- হৃদয়ের উত্তাপ, চিন্তার প্রসারতা, চেতনার গভীরতা, চরিত্রের পবিত্রতা, দ্বীনের প্রতি দরদ-ব্যথা, উম্মতের প্রতি মায়া-মমতা, আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার নিরন্তর জিহাদ ও মুজাহাদা, প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যাকুলতা; এগুলো ছিলো তাঁর শুভ্র-সুন্দর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এখানে কলমের খোঁচায় কাগজের বুকে শায়েখ রহ.-এর আলোকিত জীবন সম্পর্কে আরো অনেক কিছু বর্ণনা করা যেত কিন্তু অছিয়তনামার পরিধি দীর্ঘ, আরো দীর্ঘ হলে পাঠকের ধৈর্যচ্যুত ঘটবে, এই আশাঙ্কায় সঙ্গত কারণেই এরিয়ে গেলাম। আর আমাদের এই বিশ্ববিখ্যাত মুজাহিদ শায়েখ ১৯৬৮ সালের ২০শে এপ্রিল সোমবার বাদ আছর আর এক আফগান জাতীয় মুজাহিদ কমান্ডার মাওলানা জালালুদ্দিন হক্কানি রহ.-এর বাড়িতে এই অছিয়তনামা লিখেছিলেন। তাঁর এই অনবদ্য অছিয়তনামার নিচে সরল বঙ্গানুবাদ উপস্থাপন করা হলো- আমার হৃদয়ানুভূতি ও সমগ্র জীবনজুড়ে রয়েছে 'জিহাদ' পবিত্র জিহাদপ্রেমের আধিপত্য!। এর কারণ সুরা 'তাওবা' যা জিহাদের সর্বশেষ চুড়ান্ত বিধান! যা অধ্যয়ন করে আমার হৃদয়ে হয় 'রক্তক্ষরণ, অনুভূত হয় অশেষ বেদনা ও আফসোস! কারণ আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে 'কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ'র ব্যাখার ব্যাপারে আমার উম্মাহর অমার্জনীয় উদাসীনতা। কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ! সম্পর্কিত আয়াত সমূহের বিকৃত ব্যাখা এবং তাঁর অকাট্য বিদানবলি থেকে অন্যত্র দৃষ্টি সরানোর 'দুঃসাহস' যারা প্রদর্শন করে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে সুরা তাওবার 'আয়াতুস সাইফ' যে আয়াতে আল্লাহ সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন-
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِيالْمُتَّقين
তরজমাঃ আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও যুদ্ধ করছে তোমাদের সাথে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে রয়েছেন। (তাওবা, ৯ঃ৩৬)
এই সেই আয়াত যা দ্বারা আগে অবতীর্ণ জিহাদ বিষয়ক বাইশ বা ততোধিক আয়াত রহিত হয়েছে, এবং রুদ্ধ হয়েছে কিতাল নিয়ে ভিন্ম ব্যাপারের আবকাশ। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে-
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيم
তরজমাঃ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা করো যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী করো এবং অবরোধ করো। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে থাকো কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ! আতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (তাওবা, ৯ঃ৫)
আল্লাহর পথে জিহাদে বের না হয়ে অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা করা আত্নপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়; বরং তা আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে বিদ্রূপ করার শামিল। এজাতীয় কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, তাদের থেকে দূরে থাকাই কুরআনের আদেশ। আল্লাহ তা'আলা স্পটভাষায় বলছেন-
وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِبًا وَلَهْوًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ
তরজমাঃ তাদের পরিত্যাগ করো, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীয়া ও কৌতুকরূপে গ্রহন করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদের ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। (আনআম, ৬ঃ৭০)
আমাদের মর্যাদার সুউচ্চ স্হানে আসীন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা অপরিহার্য। নিরেট আশা-আকাঙ্ক্ষা দ্বারা কখনো মর্যাদা অর্জিত হয়নি এবং হবেওনা। মর্যাদাশীল আত্নার অধিকারী হতে হলে আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে অবশ্যই। মনে রাখা উচিত, সবচে' বেশি মর্যাদাশীল ইবাদত হচ্ছে জিহাদ! অন্য কোনো ইবাদত এর সমান মর্যাদায় নয়, এমনকি মসজিদুল হারাম নির্মাণ ও তথায় নিয়মিত অবস্থানেও জিহাদের সমপরিমাণ পূর্ণের আশা করা যায় না!। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে- একদিন সাহাবিদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। একজন বললেন, ইসলাম ও ঈমানের পর আমার দৃষ্টিতে হাজিদের পানি সরবরাহের মতো আর মর্যাদাসম্পন্ন আমল নেই। অপরজন বলেন, মসজিদুল হারাম নির্মাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান আমল বলে দাবি করেন। তাঁর উক্তি খণ্ডন করে তৃতীয়জন বলেন, আমার দৃষ্টিতে আল্লাহর রাহে জিহাদই বড় আমল। অতঃপর সাহাবিদের এই ভিন্ন ভিন্ন মতামত অবসানের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় এই আয়াত-
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ ٱلْحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ كَمَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَجَٰهَدَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ لَا يَسْتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ (19) الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ (20) يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيم
তরজমাঃ তোমরা কি হাজিদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকোর সমান মনে করো, যে ঈমান রাখে আল্লাহ! ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়। যারা ঈমান এনেছে দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, তাঁদের বড়ো মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর তাঁরাই সফলকাম!। তাঁদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁদের পরওয়ারদিগার; দয়া সন্তোষ্ট ও জান্নাতের, সেখানে আছে তাঁদের জন্য স্হায়ী শান্তি। (তাওবা, ১৯-২১)
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের 'জবাই' করা হচ্ছে, আর আমরা দূর থেকে 'লা হাওলা'এবং 'ইন্না-লিল্লাহ' পাঠ করেই আপন দায়িত্ব পালন করছি বলে আত্মতৃপ্তি হচ্ছি। জুলুম প্রতিরোধে এক কদমও এগোতে আমরা প্রস্তত নই। এটি আল্লাহর বিধানর সঙ্গে বিদ্রূপ ছাড়া আর কি? এ আত্নপ্রঞ্চনা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব পালন থেকে যুগ যুগ ধরে গাফেল করে রেখেছে। কবির ভাষায়- পাপিষ্ঠ শত্রুর কবলে মুসলিম নারী আর্তচিৎকারে ধরণী প্রকম্পিত, আর মুসলমান নিদ্রার কোলে শায়িত। এটি কি করে সম্ভব আশ্চর্য!। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, ঈমানের পরে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব দায়িত্ব হচ্ছে আক্রমণকারী শত্রুকে প্রতিরোধ করা। যার হাতে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন স্বার্থ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইবনে তাইমিয়ার এ বক্তব্য আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি। আমি আমার 'আদদিফা আন আরাদিল মুসমিলিন' গ্রন্হে এ বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত হচ্ছে-
★ সালাত, জাকাত ও সিয়ামের পরিত্যাগকারী ও কিতাল পরিত্যাগকারীর মধ্যে পার্থক্য নেই।
★ জিহাদ থেকে বিরত থাকার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য; তালিম, তারবিয়াত,দাওয়াত ও গ্রন্হ রচনাসহ কোনো কাজেই জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেয় না!।
★দুনিয়ার সব মুসলিম আজ জিহাদ পরিত্যাগের অপরাধে অভিযুক্ত। তারা বন্দুক বহন না করার অপরাধে অপরাধী। নিতান্ত অক্ষম লোক ছাড়া, যারাই আজ বন্দুক বহন ছাড়া আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবে, তারা পাপী হিসেবেই আল্লাহর সম্মুখে উপনীত হবে। কারণ এরা কিতাল করেনি। কিতাল এখন 'ফরজে-আইন'। রোগাক্রান্ত ও অক্ষম ব্যক্তিরা ব্যতীতো সব মুসলিম এ ফরজ আদায়ে বাধ্য।
★ আমার 'বিশ্বাস' আল্লাহর কাছে জিহাদ হতে অব্যাহতি পাবে শুধু চার প্রকারের মানুষ যথাঃ- ১। অন্ধ, ২। বিকলাঙ্গ, ৩। অসুস্থ, ৪। যারা ব্যয় ভার বহনে অক্ষম, এছাড়া বাকি সব মুসলিমকে জিহাদ ত্যাগের কারনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। চাই এ জিহাদ আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনে হোক অথবা পৃথিবীর যেকোনো ভূমিতে হোক, যা কাফের দ্বারা অপবিত্র হচ্ছে।
★ আমি মনে করি, জিহাদে যোগদান করতে আজ পিতা, স্ত্রী কিংবা কর্জদাতার অনুমতির প্রয়োজন নেই। এমনি ভাবে কোনো উস্তাদ বা নেতার সম্মতি নেওয়া ওয়াজিব নয়। অতীত ইতিহাসের প্রতিটি ত্রুান্তিলগ্নে উপরিউক্ত বিষয়ে উলামায়ে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। আজ যদি এ বিষয়ে কেউ ভুল বোঝানোর অপচেষ্টায় মেতে ওঠে, তবে তা হবে জুলুম এবং তা হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছেড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একে গুরুত্বহীন মনে করা কিংবা ভুল ব্যাখা দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টির কোনো সুযোগ এখানে নেই।
★ আফগানিস্তানে নির্যাতিত প্রতিটি মুসলিমের রক্ত ও লাঞ্ছিতা নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনের জন্য আমরাই দায়ী। শক্তি-সার্মথ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের সাহায্যে অগ্রসর হয়নি। আমদের উচিত ছিলো, তাদের জন্য অস্ত্র, অন্ন ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ করা এবং যাবতীয় যুদ্ধোপকরণ সরবরাহ করা। 'দাসুকি-শরহুল কাবিরের টীকায় লিখিত হয়েছে যে', যদি কারো অতিরিক্ত খাদ্য থাকে এবং কোনো ভুখানাঙ্গা ব্যক্তিকে দেখা সত্ত্বেও সে তাকে খেতে না দেয় এবং সে যদি অনাহারে মৃত্যু বরণ করে তবে ওই ব্যক্তি শাস্তির যোগ্য হবে। যদি খাদ্যের মালিক একথা মনে করে যে, আমার এখাদ্য না দিলে ভুখা ব্যক্তি ক্ষুদার যন্ত্রণায় মৃত্যু বরণ করবে না, অতঃপর যদি অনাহারি ব্যক্তি একারণেই মৃত্যু বরণ করে, তবে কী তার কোনো শাস্তি হবে? এপ্রসঙ্গে আলেমরা দুটি অভিমত পেশ করেছেন- ১। ঐ ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে মৃত্যু ব্যক্তির 'দিয়াত' আদায় করতে বাধ্য থাকবে। ২। আর কারো মতে, ঐ ব্যক্তির শাস্তি 'কিসাস' তাকে হত্যা করা হবে। কারণ সে খাদ্য না দেওয়ায় লোকটি ক্ষুদার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছে। হায়! পরকালে কি পরিনাম হবে বিত্তবান ও সম্পদশালীদের। যারা নিজেদের মনোবৃত্তির জন্য অর্থের অপচয় করেছে, অথচ অনাহারী মুসলমানদের জন্য তারা সামান্য অনুদান দিতেও তারা কুণ্ঠিত। ওহে মুসলমান, তোমাদের জীবন মানেই জিহাদ!। তোমাদের সম্মান মানেই জিহাদ। জিহাদের সঙ্গে জরিত তোমাদের অস্তিত্ব। হে দাওয়াতের কর্মীগন, তোমাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। অত্যাচারী কাফের ও তাগুতের জনপদ বিরান করে দিতে হবে। নতুবা এ আকাশের নিচে তোমাদের কানাকড়িও মূল্য থাকবেনা!। যাদের ধারণা, কিতাল জিহাদ ও রক্ত দেওয়া ছাড়া ছাড়াই দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। দ্বীনের মর্ম ও প্রকৃতি সম্পর্কে তারা অবগত নয়। কিতাল ব্যতীতো দাওয়াতের কর্মীদের হৃদয়ের উত্তাপ, দাওয়াতের প্রভাব ও মুসলমানের গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ! শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের প্রভাব বের করে দিবেন। আর তোমাদের হৃদয়ে প্রবিষ্ট করে দিবেন 'ওয়াহান'। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ওয়াহান কী? তিনি বললেন দুনিয়া-প্রীতি ও মৃত্যু ঘৃনা। অন্য বর্ণাতমতে, ওয়াহান মানে কিতালের প্রতি অনীহা ও ঘৃনা পোষণ করাকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে ঘোষণা করেন-
فقاتلفَقَاتِلْ فِيسَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا
তরজমাঃ হে রাসূল, আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন। আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জিম্মাদার নন। আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করতে থাকুন, জলদি আল্লাহ! কাফিরের শক্তি-সামর্থ্য খর্ব করে দিবেন। আর আল্লাহ! শক্তি সার্মথ্যের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোরও কঠিন শাস্তিদাতা। (নিসা, ৫ঃ৮৪)
কিতালের অনুপস্হিতিতে শিরক ও ফিতনার বন্যা বয়ে যাবে, এবং প্রতিষ্ঠিত হবে শিরকের বিজয়ী পাতাকা। এজন্য আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِير তরজমাঃ আর তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষন না ফিতনা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহর সব হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (আনফাল, ৮ঃ৩৯) জিহাদই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায়। এপ্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
তরজমাঃ আল্লাহ যদি একে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত। (বাকারা, ২ঃ২৫১)
জিহাদই ইবাদতখানা ও পবিত্র স্থানসমূহের সম্মান নিশ্চিত করতে পারে এবং অবমাননা রোধ করতে পারে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
তরজমাঃ আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বরা প্রতিহত না করতেন, তবে নির্জণে গির্জা, ইবাদতখানা, উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। (হজ্ব, ২২ঃ৪০)
অতএব, হে মুসলিম মসজিদসমূহের পবিত্রা ও আপন অস্তিত্বের স্বার্থেই তোমাদের জিহাদ করতে হবে। হে ইসলামের মহান দাঈী! মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষী হও, পাবে তুমি অমর জীবন, আশা ও ভোগবিলাসে প্রতারণার শিকার হয়ো না, আর আল্লাহ! সম্পর্কে প্রতারক শয়তানের প্রবঞ্চনা হতে বেঁচে থাকো। নফল ইবাদত ও কিতাব অধ্যয়ন যেন কিতাল সম্পর্কে তোমাকে ধোকায় না ফেলে। সাবধান! বিলাসিতা যেন তোমাকে এ মহান দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে না পারে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَن يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِين
তরজমাঃ আর তোমরা কামনা করছিলে তা, যাতে কোনো রকম কন্টক নেই। (আনফাল, ৮ঃ৭)
জিহাদের ব্যাপারে কারো অন্যায়-অনুসরণ করো না। জিহাদের সার্বজনীন আহবানে সাড়া দিতে নেতার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিশ্চয়ই জিহাদ দাওয়াতি মিশনের স্তম্ভ। তোমার ধর্মের মজবুত আশ্রয় কেন্দ্র ও তোমার শরীয়তের অতন্দ্র প্রহরী। উলামায়ে ইসলামকে বলছি- আপন প্রভুর পানে ফিরে আসতে চায় এ প্রজন্ম! এদের নেতৃত্বদানে এগিয়ে আসুন। দুনিয়ার আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। সাবধান! তাগুত ও খোদাদ্রোহী শক্তির পৃষ্ঠপোষ্কতা করবেন না। তাহলে আপনার হৃদয়লোক ছোঁয়ে যাবে আমানিশায়, আপনার আত্নার ঘটবে অপমৃত্যু এবং জনগণ ও আপনার মাঝে সৃষ্টি হবে বিচ্ছিন্নতার বিশাল প্রাচীর। হে মুসলিম, অলসনিদ্রায় কেটেছে তোমার বহু যুগ। তোমাদের জন্মভূমিতে আজ পাপিষ্ঠদের পদচারণা, তারা আবৃত্তি করছে বিজয়ের গান। কবি কত সুন্দর উক্তি করেছেন- গ্লানির নিদ্রা খুবই দীর্ঘ হয়ে গেছে, কিন্তু কোথায় বাঘের হুংকার? খোদাদ্রোহী গোষ্ঠী গাইছে বিজয়ের সংগীত, আর আমরা করছি দাসত্ব। হায়! ভাঙব বন্দীশালা, কবে পাব মুক্তির পথ। আমি শুনতে পাই, মানবতার কারাগারে বন্দী নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ। কবির সাথে সুর মিলিয়ে বলছি, মক্তি চাই, মুক্তি চাই। হে মহীয়সী নারী সমাজ, তোমরা বিলাসপ্রিয় হবে না, যা একান্ত প্রয়োজন তাই করো। আল্পে তুষ্ট থাকো। তোমরা সন্তানকে নির্ভীক, দূর্জয়, সাহসী মুজাহিদরূপে গরে তোলো। তোমার ঘর যেন হয় হয় সিংহশাবকের লালন ভূমি। তাকে ভীরু মুরগীর চারণভূমিতে পরিনত করো না, যারা মোটাতাজা ও পরিতুষ্ট হয় অন্য জীবের উদরপূর্ণের জন্য। তোমার সন্তানের মাঝে সৃষ্টি করো জিহাদপ্রেম। তারুণ্যের তেজ ও দিগ্বিজয়ের দূরন্ত নেশা। মুসলমানদের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকো। তোমার জীবনে সপ্তাহের একটি দিন অন্তত এমনভাবে অতিবাহিত করো, যা মুহাজিরিন ও মুজাহিদীনের জীবনাচরের পরিচয় বহন করে। তাদের মতো শুকনো রুটি ও সামান্য তরকারি তুমি আহার করো। এভাবে ঘরে বসে ও তুমি লালন করতে পারো জিহাদী চিন্তা এবং বিজয়ের চেতনা। ওহে শিশু-কিশোরের দল! তোমরাই আগামীদিনের তরুণ, মিল্লাতের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আজ থেকে সামরিক প্রশিক্ষন নাও, রপ্ত করো যাবতীয় সমরকৌশল। ট্যাংক ও অস্ত্রই হোক তোমার খেলনা। বিলাসবহুল জীবন নয়, তোমার প্রয়োজন কষ্টসহিষ্ণু মুক্ত বিহঙ্গের জীবন। এড়িয়ে চলো ফুলশয্যা, বরণ করো কন্টকপূর্ণ গৃহাঙ্গান। সংগীতের সুরের চেয়ে তরবারির ঝংকার হোক তোমার প্রিয় বিষয়। তবেই ছুড়তে পারবে শত্রুর প্রতি চ্যালেঞ্জ। একদিন তোমার দ্বারা সূচিত হবে মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক বিজয়। সুপ্রিয়, হে আমার সহধর্মিণী! ১৯৬৯এর সে কষ্টকর সময়ের কথা। আমার আজও মনে পড়ে। আমাদের ঘরে ছিলো দুই কিশোর ও এক শিশুসন্তান। কাঁচা ইটের তৈরী ছিলো আমাদের আবাসঘর। ছিলো না কোনো আলাদা রান্নাঘর। তোমার উপরই ন্যস্ত করেছিলাম পুরো সংসার। একদিন সন্তানরা বড়ো হলো, আমাদের পরিচিতিও বৃদ্ধি পেলো, অতিথিতে সরগম হয়ে উঠলো আমাদের ঘর। আর তুমি ছিলে তখন সন্তান-সম্ভবা। তোমার কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্ত ছিলো না। তুমি সবকিছুই কিন্তু হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলে। তোমার উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং লক্ষ্য ছিলো আমাকে সহায়তা করা। আল্লাহ তোমাকে সর্বোউত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুক। 'সত্যিই আল্লাহর দয়া ও তোমার ধৈর্য না হলে আমার একার পক্ষে এবিরাট বোঝা উঠানো সম্ভব ছিলো না। হে আমার প্রিয়, এজীবনে তোমাকে দেখেছি দুনিয়াবিমুখ। পার্থিব বস্তুর প্রতি ছিলো না তোমার কোনো অনুরাগ, আর দারিদ্র্যতার ব্যাপারে ছিলো না কোনো অভিযোগ। আমার সচ্ছল সময়েও দেখেনি তোমাকে বিলাসিতায় ডুবে থাকাতে। দুনিয়াকে সবসময় তুমি রেখেছিলে হাতের মুঠোয়। হৃদয়ে ছিলো না দুনিয়ার কোনো স্হান। মনে রাখবে জিহাদী জীবনই আনন্দ ও সুখের জীবন। জীবনকে বিলাসিতার গড্ডালিকায় ভেসে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কষ্ট-ক্লেশে ধৈর্যধারণ করা মহত্ত্বের পরিচয়। তাই দুনিয়ার মোহ বর্জন করো। আল্লাহর! ভালোবাসা পাবে; মানুষের সম্পদ দেখে লোভ করবেনা, তারা তোমায় ভালোবাসবে। 'আলকোরআন' মানবজীবনের সেরা সঙ্গী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। রাতের নামাজ, নফল রোজা ও গভীর রাতের ইসতিগফার অন্তরে আনে স্বচ্ছতা, সৃষ্টি করে ইবাদতের অনুরাগ। পুন্যবানদের সৎসঙ্গ, স্বল্প সম্পদ, দুনিয়াদারদের থেকে দূরে থাকা এবং ভনিতা থেকে বিরত থাকলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভত হয়। হে প্রিয়া! আল্লাহর কাছে একান্ত কামনা, জান্নাতুল ফেরদাউসে আমাদের পুনঃ মিলন হোক। যেমনি ভাবে দুনিয়াতে মিলিত হয়েছিলাম আমরা দু'টি প্রাণ! হে আমার কলিজার টুকরো সন্তানেরা! মন ভরে কোনো দিন তোমাদের সঙ্গ দিতে পারিনি। আমার শিক্ষা ও তারবিয়াত তোমাদের ভাগ্যে কমই জুটেছে। অধিকাংশ সময় আমি তোমাদের কাছ থেকে বহু দূরে থেকেছি, কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। তোমরা জানো, মুসলমানদের উপর বিপদের কালো মেঘ ছেয়ে আছে। যার গর্জনে দুগ্ধ দানকারী মায়ের কোল থেকে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু ভয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে। উম্মতের সংকটের ব্যাপকতা চিন্তা করলে কিশোর ললাটেও ভাঁজ পড়ে বাধ্যকের। মুরগির মতো তোমাদের নিয়ে আমি খাঁচায় বাস করিনি। মুসলমানদের অন্তর বেদনায় জ্বলবে আর আমি আরামে বিশ্রাম নেবে, সংসার সুখ উপভোগ করব; দুর্দশায় মুসলমানদের হৃদয় বির্দীণ হবে, নির্যাতনে জ্ঞান হারাবে, আর আমি ঘরে বসে থাকব তা আমার পছন্দ নয়। কোনোদিন আমি কামনা করিনি বিলাসী জীবন, সুস্বাদু ভুনা-গোশত এবং স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সংসার সুখ উপভোগ।
তোমাদের প্রতি আমার অসিয়ত-
★ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা আঁকড়ে ধরবে। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও হেফজ করার চেষ্টা করবে।
★ জিহ্বার হেফাজত করবে এবং কথা সংযত রাখবে।
★ নিয়মিত সালাত ও সিয়াম পালনসহ সৎসঙ্গ গ্রহন করবে।
★ জিহাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে। মনে রাখবে, কোনো নেতার অধিকার নেই তোমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার বা দাওয়াত ও ইরশাদের সঙ্গে জড়িত রেখে তোমাকে ভীরু, কাপুরুষ এবং জিহাদবিমুখ করার। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে কারো অনুমতির অপেক্ষা করবে না। হাতে অস্ত্র তুলে নাও! ঘোড়সওয়ার হও। তবে আমার অধিক প্রিয় হলো ঘোড়সওয়ারির চেয়ে তীরন্দাজী।
★ শরিয়াতের উপকারী ইলম অর্জন করবে। তোমরা সদা তোমাদের বড়ো ভাই মুহাম্মাদকে মান্য করবে, তাকে সম্মান করবে, পরস্পর পোষণ করবে গভীর প্রীতি ও শ্রদ্ধা এবং ঐকান্তিক ভালোবাসা। তোমরা তোমাদের দাদা-দাদীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করবে। তোমাদের দুই ফুফু উম্মে ফাইজ ও উম্মে মুহাম্মাদকে শ্রদ্ধা করবে। আল্লাহর পরে তাদের অনুগ্রহ আমার উপর অনেক।
★ আমার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখবে। আমার পরিবারের সঙ্গে নেক আচরণ করবে এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায় করবে। আবার দেখা হবে বেহেশতের পুষ্পকাননে, ইনশাআল্লাহ!। আব্দুল্লাহ আযযাম (সংগৃহীত, শহীদ শায়েখ রহ.-এর স্বহস্তে রচিত যার বাংলায় অনুবাদ হলো আফগানিস্তানে আল্লাহর নিদর্শন। এই কিতাব থেকে নেয়া এবং মূল বাংলার সাথে মিল রেখে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে দেওয়া হলো।) ★ভাই, আমার সীমাবদ্ধতা! মোবাইলে টাইপিং-এর কারণে আয়াতগুলো সুন্দর করে লিখতে পারলাম না, যদি আপনারা একটু... আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِيالْمُتَّقين
তরজমাঃ আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও যুদ্ধ করছে তোমাদের সাথে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে রয়েছেন। (তাওবা, ৯ঃ৩৬)
এই সেই আয়াত যা দ্বারা আগে অবতীর্ণ জিহাদ বিষয়ক বাইশ বা ততোধিক আয়াত রহিত হয়েছে, এবং রুদ্ধ হয়েছে কিতাল নিয়ে ভিন্ম ব্যাপারের আবকাশ। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে-
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيم
তরজমাঃ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা করো যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী করো এবং অবরোধ করো। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে থাকো কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ! আতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (তাওবা, ৯ঃ৫)
আল্লাহর পথে জিহাদে বের না হয়ে অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা করা আত্নপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়; বরং তা আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে বিদ্রূপ করার শামিল। এজাতীয় কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, তাদের থেকে দূরে থাকাই কুরআনের আদেশ। আল্লাহ তা'আলা স্পটভাষায় বলছেন-
وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِبًا وَلَهْوًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ
তরজমাঃ তাদের পরিত্যাগ করো, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীয়া ও কৌতুকরূপে গ্রহন করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদের ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। (আনআম, ৬ঃ৭০)
আমাদের মর্যাদার সুউচ্চ স্হানে আসীন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা অপরিহার্য। নিরেট আশা-আকাঙ্ক্ষা দ্বারা কখনো মর্যাদা অর্জিত হয়নি এবং হবেওনা। মর্যাদাশীল আত্নার অধিকারী হতে হলে আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে অবশ্যই। মনে রাখা উচিত, সবচে' বেশি মর্যাদাশীল ইবাদত হচ্ছে জিহাদ! অন্য কোনো ইবাদত এর সমান মর্যাদায় নয়, এমনকি মসজিদুল হারাম নির্মাণ ও তথায় নিয়মিত অবস্থানেও জিহাদের সমপরিমাণ পূর্ণের আশা করা যায় না!। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে- একদিন সাহাবিদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। একজন বললেন, ইসলাম ও ঈমানের পর আমার দৃষ্টিতে হাজিদের পানি সরবরাহের মতো আর মর্যাদাসম্পন্ন আমল নেই। অপরজন বলেন, মসজিদুল হারাম নির্মাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান আমল বলে দাবি করেন। তাঁর উক্তি খণ্ডন করে তৃতীয়জন বলেন, আমার দৃষ্টিতে আল্লাহর রাহে জিহাদই বড় আমল। অতঃপর সাহাবিদের এই ভিন্ন ভিন্ন মতামত অবসানের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় এই আয়াত-
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ ٱلْحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ كَمَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَجَٰهَدَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ لَا يَسْتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ (19) الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ (20) يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيم
তরজমাঃ তোমরা কি হাজিদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকোর সমান মনে করো, যে ঈমান রাখে আল্লাহ! ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়। যারা ঈমান এনেছে দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, তাঁদের বড়ো মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর তাঁরাই সফলকাম!। তাঁদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁদের পরওয়ারদিগার; দয়া সন্তোষ্ট ও জান্নাতের, সেখানে আছে তাঁদের জন্য স্হায়ী শান্তি। (তাওবা, ১৯-২১)
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের 'জবাই' করা হচ্ছে, আর আমরা দূর থেকে 'লা হাওলা'এবং 'ইন্না-লিল্লাহ' পাঠ করেই আপন দায়িত্ব পালন করছি বলে আত্মতৃপ্তি হচ্ছি। জুলুম প্রতিরোধে এক কদমও এগোতে আমরা প্রস্তত নই। এটি আল্লাহর বিধানর সঙ্গে বিদ্রূপ ছাড়া আর কি? এ আত্নপ্রঞ্চনা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব পালন থেকে যুগ যুগ ধরে গাফেল করে রেখেছে। কবির ভাষায়- পাপিষ্ঠ শত্রুর কবলে মুসলিম নারী আর্তচিৎকারে ধরণী প্রকম্পিত, আর মুসলমান নিদ্রার কোলে শায়িত। এটি কি করে সম্ভব আশ্চর্য!। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, ঈমানের পরে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব দায়িত্ব হচ্ছে আক্রমণকারী শত্রুকে প্রতিরোধ করা। যার হাতে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন স্বার্থ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইবনে তাইমিয়ার এ বক্তব্য আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি। আমি আমার 'আদদিফা আন আরাদিল মুসমিলিন' গ্রন্হে এ বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত হচ্ছে-
★ সালাত, জাকাত ও সিয়ামের পরিত্যাগকারী ও কিতাল পরিত্যাগকারীর মধ্যে পার্থক্য নেই।
★ জিহাদ থেকে বিরত থাকার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য; তালিম, তারবিয়াত,দাওয়াত ও গ্রন্হ রচনাসহ কোনো কাজেই জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেয় না!।
★দুনিয়ার সব মুসলিম আজ জিহাদ পরিত্যাগের অপরাধে অভিযুক্ত। তারা বন্দুক বহন না করার অপরাধে অপরাধী। নিতান্ত অক্ষম লোক ছাড়া, যারাই আজ বন্দুক বহন ছাড়া আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবে, তারা পাপী হিসেবেই আল্লাহর সম্মুখে উপনীত হবে। কারণ এরা কিতাল করেনি। কিতাল এখন 'ফরজে-আইন'। রোগাক্রান্ত ও অক্ষম ব্যক্তিরা ব্যতীতো সব মুসলিম এ ফরজ আদায়ে বাধ্য।
★ আমার 'বিশ্বাস' আল্লাহর কাছে জিহাদ হতে অব্যাহতি পাবে শুধু চার প্রকারের মানুষ যথাঃ- ১। অন্ধ, ২। বিকলাঙ্গ, ৩। অসুস্থ, ৪। যারা ব্যয় ভার বহনে অক্ষম, এছাড়া বাকি সব মুসলিমকে জিহাদ ত্যাগের কারনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। চাই এ জিহাদ আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনে হোক অথবা পৃথিবীর যেকোনো ভূমিতে হোক, যা কাফের দ্বারা অপবিত্র হচ্ছে।
★ আমি মনে করি, জিহাদে যোগদান করতে আজ পিতা, স্ত্রী কিংবা কর্জদাতার অনুমতির প্রয়োজন নেই। এমনি ভাবে কোনো উস্তাদ বা নেতার সম্মতি নেওয়া ওয়াজিব নয়। অতীত ইতিহাসের প্রতিটি ত্রুান্তিলগ্নে উপরিউক্ত বিষয়ে উলামায়ে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। আজ যদি এ বিষয়ে কেউ ভুল বোঝানোর অপচেষ্টায় মেতে ওঠে, তবে তা হবে জুলুম এবং তা হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছেড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একে গুরুত্বহীন মনে করা কিংবা ভুল ব্যাখা দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টির কোনো সুযোগ এখানে নেই।
★ আফগানিস্তানে নির্যাতিত প্রতিটি মুসলিমের রক্ত ও লাঞ্ছিতা নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনের জন্য আমরাই দায়ী। শক্তি-সার্মথ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের সাহায্যে অগ্রসর হয়নি। আমদের উচিত ছিলো, তাদের জন্য অস্ত্র, অন্ন ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ করা এবং যাবতীয় যুদ্ধোপকরণ সরবরাহ করা। 'দাসুকি-শরহুল কাবিরের টীকায় লিখিত হয়েছে যে', যদি কারো অতিরিক্ত খাদ্য থাকে এবং কোনো ভুখানাঙ্গা ব্যক্তিকে দেখা সত্ত্বেও সে তাকে খেতে না দেয় এবং সে যদি অনাহারে মৃত্যু বরণ করে তবে ওই ব্যক্তি শাস্তির যোগ্য হবে। যদি খাদ্যের মালিক একথা মনে করে যে, আমার এখাদ্য না দিলে ভুখা ব্যক্তি ক্ষুদার যন্ত্রণায় মৃত্যু বরণ করবে না, অতঃপর যদি অনাহারি ব্যক্তি একারণেই মৃত্যু বরণ করে, তবে কী তার কোনো শাস্তি হবে? এপ্রসঙ্গে আলেমরা দুটি অভিমত পেশ করেছেন- ১। ঐ ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে মৃত্যু ব্যক্তির 'দিয়াত' আদায় করতে বাধ্য থাকবে। ২। আর কারো মতে, ঐ ব্যক্তির শাস্তি 'কিসাস' তাকে হত্যা করা হবে। কারণ সে খাদ্য না দেওয়ায় লোকটি ক্ষুদার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছে। হায়! পরকালে কি পরিনাম হবে বিত্তবান ও সম্পদশালীদের। যারা নিজেদের মনোবৃত্তির জন্য অর্থের অপচয় করেছে, অথচ অনাহারী মুসলমানদের জন্য তারা সামান্য অনুদান দিতেও তারা কুণ্ঠিত। ওহে মুসলমান, তোমাদের জীবন মানেই জিহাদ!। তোমাদের সম্মান মানেই জিহাদ। জিহাদের সঙ্গে জরিত তোমাদের অস্তিত্ব। হে দাওয়াতের কর্মীগন, তোমাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। অত্যাচারী কাফের ও তাগুতের জনপদ বিরান করে দিতে হবে। নতুবা এ আকাশের নিচে তোমাদের কানাকড়িও মূল্য থাকবেনা!। যাদের ধারণা, কিতাল জিহাদ ও রক্ত দেওয়া ছাড়া ছাড়াই দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। দ্বীনের মর্ম ও প্রকৃতি সম্পর্কে তারা অবগত নয়। কিতাল ব্যতীতো দাওয়াতের কর্মীদের হৃদয়ের উত্তাপ, দাওয়াতের প্রভাব ও মুসলমানের গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ! শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের প্রভাব বের করে দিবেন। আর তোমাদের হৃদয়ে প্রবিষ্ট করে দিবেন 'ওয়াহান'। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ওয়াহান কী? তিনি বললেন দুনিয়া-প্রীতি ও মৃত্যু ঘৃনা। অন্য বর্ণাতমতে, ওয়াহান মানে কিতালের প্রতি অনীহা ও ঘৃনা পোষণ করাকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে ঘোষণা করেন-
فقاتلفَقَاتِلْ فِيسَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا
তরজমাঃ হে রাসূল, আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন। আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জিম্মাদার নন। আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করতে থাকুন, জলদি আল্লাহ! কাফিরের শক্তি-সামর্থ্য খর্ব করে দিবেন। আর আল্লাহ! শক্তি সার্মথ্যের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোরও কঠিন শাস্তিদাতা। (নিসা, ৫ঃ৮৪)
কিতালের অনুপস্হিতিতে শিরক ও ফিতনার বন্যা বয়ে যাবে, এবং প্রতিষ্ঠিত হবে শিরকের বিজয়ী পাতাকা। এজন্য আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِير তরজমাঃ আর তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষন না ফিতনা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহর সব হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (আনফাল, ৮ঃ৩৯) জিহাদই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায়। এপ্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
তরজমাঃ আল্লাহ যদি একে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত। (বাকারা, ২ঃ২৫১)
জিহাদই ইবাদতখানা ও পবিত্র স্থানসমূহের সম্মান নিশ্চিত করতে পারে এবং অবমাননা রোধ করতে পারে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
তরজমাঃ আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বরা প্রতিহত না করতেন, তবে নির্জণে গির্জা, ইবাদতখানা, উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। (হজ্ব, ২২ঃ৪০)
অতএব, হে মুসলিম মসজিদসমূহের পবিত্রা ও আপন অস্তিত্বের স্বার্থেই তোমাদের জিহাদ করতে হবে। হে ইসলামের মহান দাঈী! মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষী হও, পাবে তুমি অমর জীবন, আশা ও ভোগবিলাসে প্রতারণার শিকার হয়ো না, আর আল্লাহ! সম্পর্কে প্রতারক শয়তানের প্রবঞ্চনা হতে বেঁচে থাকো। নফল ইবাদত ও কিতাব অধ্যয়ন যেন কিতাল সম্পর্কে তোমাকে ধোকায় না ফেলে। সাবধান! বিলাসিতা যেন তোমাকে এ মহান দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে না পারে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَن يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِين
তরজমাঃ আর তোমরা কামনা করছিলে তা, যাতে কোনো রকম কন্টক নেই। (আনফাল, ৮ঃ৭)
জিহাদের ব্যাপারে কারো অন্যায়-অনুসরণ করো না। জিহাদের সার্বজনীন আহবানে সাড়া দিতে নেতার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিশ্চয়ই জিহাদ দাওয়াতি মিশনের স্তম্ভ। তোমার ধর্মের মজবুত আশ্রয় কেন্দ্র ও তোমার শরীয়তের অতন্দ্র প্রহরী। উলামায়ে ইসলামকে বলছি- আপন প্রভুর পানে ফিরে আসতে চায় এ প্রজন্ম! এদের নেতৃত্বদানে এগিয়ে আসুন। দুনিয়ার আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। সাবধান! তাগুত ও খোদাদ্রোহী শক্তির পৃষ্ঠপোষ্কতা করবেন না। তাহলে আপনার হৃদয়লোক ছোঁয়ে যাবে আমানিশায়, আপনার আত্নার ঘটবে অপমৃত্যু এবং জনগণ ও আপনার মাঝে সৃষ্টি হবে বিচ্ছিন্নতার বিশাল প্রাচীর। হে মুসলিম, অলসনিদ্রায় কেটেছে তোমার বহু যুগ। তোমাদের জন্মভূমিতে আজ পাপিষ্ঠদের পদচারণা, তারা আবৃত্তি করছে বিজয়ের গান। কবি কত সুন্দর উক্তি করেছেন- গ্লানির নিদ্রা খুবই দীর্ঘ হয়ে গেছে, কিন্তু কোথায় বাঘের হুংকার? খোদাদ্রোহী গোষ্ঠী গাইছে বিজয়ের সংগীত, আর আমরা করছি দাসত্ব। হায়! ভাঙব বন্দীশালা, কবে পাব মুক্তির পথ। আমি শুনতে পাই, মানবতার কারাগারে বন্দী নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ। কবির সাথে সুর মিলিয়ে বলছি, মক্তি চাই, মুক্তি চাই। হে মহীয়সী নারী সমাজ, তোমরা বিলাসপ্রিয় হবে না, যা একান্ত প্রয়োজন তাই করো। আল্পে তুষ্ট থাকো। তোমরা সন্তানকে নির্ভীক, দূর্জয়, সাহসী মুজাহিদরূপে গরে তোলো। তোমার ঘর যেন হয় হয় সিংহশাবকের লালন ভূমি। তাকে ভীরু মুরগীর চারণভূমিতে পরিনত করো না, যারা মোটাতাজা ও পরিতুষ্ট হয় অন্য জীবের উদরপূর্ণের জন্য। তোমার সন্তানের মাঝে সৃষ্টি করো জিহাদপ্রেম। তারুণ্যের তেজ ও দিগ্বিজয়ের দূরন্ত নেশা। মুসলমানদের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকো। তোমার জীবনে সপ্তাহের একটি দিন অন্তত এমনভাবে অতিবাহিত করো, যা মুহাজিরিন ও মুজাহিদীনের জীবনাচরের পরিচয় বহন করে। তাদের মতো শুকনো রুটি ও সামান্য তরকারি তুমি আহার করো। এভাবে ঘরে বসে ও তুমি লালন করতে পারো জিহাদী চিন্তা এবং বিজয়ের চেতনা। ওহে শিশু-কিশোরের দল! তোমরাই আগামীদিনের তরুণ, মিল্লাতের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আজ থেকে সামরিক প্রশিক্ষন নাও, রপ্ত করো যাবতীয় সমরকৌশল। ট্যাংক ও অস্ত্রই হোক তোমার খেলনা। বিলাসবহুল জীবন নয়, তোমার প্রয়োজন কষ্টসহিষ্ণু মুক্ত বিহঙ্গের জীবন। এড়িয়ে চলো ফুলশয্যা, বরণ করো কন্টকপূর্ণ গৃহাঙ্গান। সংগীতের সুরের চেয়ে তরবারির ঝংকার হোক তোমার প্রিয় বিষয়। তবেই ছুড়তে পারবে শত্রুর প্রতি চ্যালেঞ্জ। একদিন তোমার দ্বারা সূচিত হবে মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক বিজয়। সুপ্রিয়, হে আমার সহধর্মিণী! ১৯৬৯এর সে কষ্টকর সময়ের কথা। আমার আজও মনে পড়ে। আমাদের ঘরে ছিলো দুই কিশোর ও এক শিশুসন্তান। কাঁচা ইটের তৈরী ছিলো আমাদের আবাসঘর। ছিলো না কোনো আলাদা রান্নাঘর। তোমার উপরই ন্যস্ত করেছিলাম পুরো সংসার। একদিন সন্তানরা বড়ো হলো, আমাদের পরিচিতিও বৃদ্ধি পেলো, অতিথিতে সরগম হয়ে উঠলো আমাদের ঘর। আর তুমি ছিলে তখন সন্তান-সম্ভবা। তোমার কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্ত ছিলো না। তুমি সবকিছুই কিন্তু হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলে। তোমার উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং লক্ষ্য ছিলো আমাকে সহায়তা করা। আল্লাহ তোমাকে সর্বোউত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুক। 'সত্যিই আল্লাহর দয়া ও তোমার ধৈর্য না হলে আমার একার পক্ষে এবিরাট বোঝা উঠানো সম্ভব ছিলো না। হে আমার প্রিয়, এজীবনে তোমাকে দেখেছি দুনিয়াবিমুখ। পার্থিব বস্তুর প্রতি ছিলো না তোমার কোনো অনুরাগ, আর দারিদ্র্যতার ব্যাপারে ছিলো না কোনো অভিযোগ। আমার সচ্ছল সময়েও দেখেনি তোমাকে বিলাসিতায় ডুবে থাকাতে। দুনিয়াকে সবসময় তুমি রেখেছিলে হাতের মুঠোয়। হৃদয়ে ছিলো না দুনিয়ার কোনো স্হান। মনে রাখবে জিহাদী জীবনই আনন্দ ও সুখের জীবন। জীবনকে বিলাসিতার গড্ডালিকায় ভেসে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কষ্ট-ক্লেশে ধৈর্যধারণ করা মহত্ত্বের পরিচয়। তাই দুনিয়ার মোহ বর্জন করো। আল্লাহর! ভালোবাসা পাবে; মানুষের সম্পদ দেখে লোভ করবেনা, তারা তোমায় ভালোবাসবে। 'আলকোরআন' মানবজীবনের সেরা সঙ্গী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। রাতের নামাজ, নফল রোজা ও গভীর রাতের ইসতিগফার অন্তরে আনে স্বচ্ছতা, সৃষ্টি করে ইবাদতের অনুরাগ। পুন্যবানদের সৎসঙ্গ, স্বল্প সম্পদ, দুনিয়াদারদের থেকে দূরে থাকা এবং ভনিতা থেকে বিরত থাকলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভত হয়। হে প্রিয়া! আল্লাহর কাছে একান্ত কামনা, জান্নাতুল ফেরদাউসে আমাদের পুনঃ মিলন হোক। যেমনি ভাবে দুনিয়াতে মিলিত হয়েছিলাম আমরা দু'টি প্রাণ! হে আমার কলিজার টুকরো সন্তানেরা! মন ভরে কোনো দিন তোমাদের সঙ্গ দিতে পারিনি। আমার শিক্ষা ও তারবিয়াত তোমাদের ভাগ্যে কমই জুটেছে। অধিকাংশ সময় আমি তোমাদের কাছ থেকে বহু দূরে থেকেছি, কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। তোমরা জানো, মুসলমানদের উপর বিপদের কালো মেঘ ছেয়ে আছে। যার গর্জনে দুগ্ধ দানকারী মায়ের কোল থেকে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু ভয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে। উম্মতের সংকটের ব্যাপকতা চিন্তা করলে কিশোর ললাটেও ভাঁজ পড়ে বাধ্যকের। মুরগির মতো তোমাদের নিয়ে আমি খাঁচায় বাস করিনি। মুসলমানদের অন্তর বেদনায় জ্বলবে আর আমি আরামে বিশ্রাম নেবে, সংসার সুখ উপভোগ করব; দুর্দশায় মুসলমানদের হৃদয় বির্দীণ হবে, নির্যাতনে জ্ঞান হারাবে, আর আমি ঘরে বসে থাকব তা আমার পছন্দ নয়। কোনোদিন আমি কামনা করিনি বিলাসী জীবন, সুস্বাদু ভুনা-গোশত এবং স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সংসার সুখ উপভোগ।
তোমাদের প্রতি আমার অসিয়ত-
★ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা আঁকড়ে ধরবে। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও হেফজ করার চেষ্টা করবে।
★ জিহ্বার হেফাজত করবে এবং কথা সংযত রাখবে।
★ নিয়মিত সালাত ও সিয়াম পালনসহ সৎসঙ্গ গ্রহন করবে।
★ জিহাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে। মনে রাখবে, কোনো নেতার অধিকার নেই তোমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার বা দাওয়াত ও ইরশাদের সঙ্গে জড়িত রেখে তোমাকে ভীরু, কাপুরুষ এবং জিহাদবিমুখ করার। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে কারো অনুমতির অপেক্ষা করবে না। হাতে অস্ত্র তুলে নাও! ঘোড়সওয়ার হও। তবে আমার অধিক প্রিয় হলো ঘোড়সওয়ারির চেয়ে তীরন্দাজী।
★ শরিয়াতের উপকারী ইলম অর্জন করবে। তোমরা সদা তোমাদের বড়ো ভাই মুহাম্মাদকে মান্য করবে, তাকে সম্মান করবে, পরস্পর পোষণ করবে গভীর প্রীতি ও শ্রদ্ধা এবং ঐকান্তিক ভালোবাসা। তোমরা তোমাদের দাদা-দাদীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করবে। তোমাদের দুই ফুফু উম্মে ফাইজ ও উম্মে মুহাম্মাদকে শ্রদ্ধা করবে। আল্লাহর পরে তাদের অনুগ্রহ আমার উপর অনেক।
★ আমার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখবে। আমার পরিবারের সঙ্গে নেক আচরণ করবে এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায় করবে। আবার দেখা হবে বেহেশতের পুষ্পকাননে, ইনশাআল্লাহ!। আব্দুল্লাহ আযযাম (সংগৃহীত, শহীদ শায়েখ রহ.-এর স্বহস্তে রচিত যার বাংলায় অনুবাদ হলো আফগানিস্তানে আল্লাহর নিদর্শন। এই কিতাব থেকে নেয়া এবং মূল বাংলার সাথে মিল রেখে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে দেওয়া হলো।) ★ভাই, আমার সীমাবদ্ধতা! মোবাইলে টাইপিং-এর কারণে আয়াতগুলো সুন্দর করে লিখতে পারলাম না, যদি আপনারা একটু... আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
মুহাম্মাদ আলী ১২রবিউল-আওয়াল, ১৪৪৩হি.