ইন্নাল হামদালিল্লাহ, ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ।
মহান আল্লাহ তাঁর কালামে মাজিদে রাসুলুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদেশ করেছেন -
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
আর তুমি উপদেশ দিতে থাক, কেননা উপদেশ মু’মিনদের উপকার করবে। [সুরা যারিয়াতঃ৫৫]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন -
الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْناَ لِمَنْ؟ قَالَ: لِلَّهِ وَ لِكِتَابِهِ وَ لِرَسُوْلِهِ وَ لِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَ عَامَّتِهِمْ
‘‘দ্বীন হলো নসীহত বা নসীহত দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাহাবীগণ বলেনঃ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য নসীহত? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিমদের শাসক এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য’’। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং-৮২)
হামদ এবং সালাতের পর -
প্রিয় ভাই, মহান আল্লাহ আমাদের যে নিয়ামত দিয়েছেন তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের পক্ষ সম্ভব নয়। লক্ষ্য করুন তিনি সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের কত কী দিয়েছেন! তিনি আমাদের উপরে রব্ব, আমাদের প্রতি তিনি তাঁর রুবুবিয়াত জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রতি সর্ব শ্রেষ্ঠ রাসুল প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাদের হিদায়েত দিয়েছেন, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মতের অন্তর্ভুক্ত বানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চলমান সময়ে আমাদেরকে তিনি বরকতময় জিহাদের কাজে শামিল হবার তাউফিক দিয়েছেন। তিনি আমাদের জিহাদি জামাতের সাথে জুড়ে থাকার তাউফিক দিয়েছেন। এমন কত কত মুসলিম ভাই হন্য হয়ে আছেন, শুধু মাত্র হক্ক একটি জিহাদি জামাতের সাথে নিজেকে জুড়ে নিবেন এই অপেক্ষায়! নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের অবারিত দেন কিন্তু আমরা সে ব্যাপারে গাফিল থাকি।
নিশ্চয়ই আল্লাহ শুকরিয়া আদায়কারীকে আরো বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের সুস্থতা দিয়েছেন, যা ঈমানের পরে সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অতঃপর আজকের এই আলোচনা ৩ টি বিষয়ে যা আমদের সামগ্রিক ইসলাহ এর লক্ষ্যে, আল্লাহই তাউফিক্ব দাতা -
১। নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা
২। নেতৃত্বের লোভ, বা নেতৃত্ব উপভোগ করা
৩। শ্রবণ ও আনুগত্য
১। নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতাঃ
আল্লাহর দয়া এবং অনুগ্রহে আমাদের উপরে বিভিন্ন কাজের জিম্মা দেয়া হয়। যে কাজ আপনি ভালো পারেন আপনাকে সেই কাজটিই হয়ত দেয়া হয়। আরো লক্ষ্য করুন, আমরা যদি কোন কাজে দক্ষ হই, তা আমাদের যোগ্যতায় নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহে। যে কাজ আমাদের প্রতি আল্লাহর দ্বীনের খেদমতের সুযোগ হিসেবে আসে তাও আমাদের যোগ্যতার কারণে নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহেই তা হয়ে থাকে। কখনও এমন দেখা যায়, আমাদের মধ্যে নিজেদের কাজের ব্যাপারে অতি মুগ্ধতা চলে আসে। এরফলে আমরা ধরেই নেই, আমার কাজটি অতি উত্তম হয়েছে এবং এখনই এর মুল্যায়ন হওয়া জরুরী। যদি মুল্যায়ন না হয় তাহলে, আমরা হতাশ হই, আরও জঘন্য হচ্ছে আমরা অনেক সময়ে এর জন্য কারণ তলব করে বসি! আল্লাহর পানাহ।
প্রিয় ভাই, আমি বিনীত ভাবে স্মরন করিয়ে দিতে চাই, আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ন। তাই আমরা আজ নতুন করে এই দ্বীনের কোন অপূর্নতা পূরণ করতে পারবো সে সম্ভাবনা নেই। হ্যা, আল্লাহর দ্বীনকে নুসরাত করার সুযোগ আল্লাহ আমাদের জন্য অবারিত রেখেছেন।
প্রিয় ভাই, আপনি যদি কোন নেক আমল করার সুযোগ পান তবে আপনার উচিৎ হবে, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং কাজটির ফলাফল আল্লাহর জিম্মায় ছেড়ে দেয়া। কারণ আপনি অবগত আছেন, মুমিনের কাজের বিনিময় শুধুমাত্র আল্লাহর জিম্মায়। অন্য কারো জিম্মায় নয়। হ্যা, যদি আল্লাহ চান তো তাঁর অন্য কোন বান্দা দ্বারা আরেক বান্দাকে সম্মানিত করতেই পারেন। আল্লাহ যেমন চান তেমনই করেন।
কখনও আমরা মনে করি, আমার উমুক কাজটি, আমার উমুক মাশোয়ারাটি তো অনন্য হয়েছে, এগুলো কেন আমলে নেয়া হচ্ছেনা? আমার মাসুল কেন এগুলো বিবেচনায় আনছেন না? প্রিয় ভাই, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আপনি লক্ষ্য করুন, একবার ভেবে দেখুন, আপনি করছেন কী! আপনার কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা আপনাকে কিভাবে প্রতারিত করছে!
অস্বীকার করছিনা, হতেই পারে আপনার কাজটি অতি উত্তম, সর্বোচ্চ মানের। কিন্তু লক্ষ্য করুন, আপনার বর্তমান অবস্থান শুধু কাজটি সম্পাদন করার, সেটি বাস্তবায়ন করার নয়। তাহলে আপনি অনুগ্রহ করে বাড়াবাড়ি করবেন না। কারণ আপনি যদি নিজেকে এভাবে ছেড়ে দেন, তাহলে খুব সম্ভব এই ভুলটিও হয়ে যেতে পারে যে, -
আপনি ভুলে যাবেন আপনার কাজেও ভুল থাকা সম্ভব। নিজের কাজের মুগ্ধতা আপনাকে এই বিষয়টি ভুলিয়ে দিবে। এই ভুলের শুরু ছোট হলেও পরিণাম অনেক বড় হতে পারে। এই ভুল আপনাকে নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা থেকে, নিজের ব্যাপারে মুগ্ধতা এবং সেখান থেকে নিজের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠতা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যা একজন মুমিনের জন্য খাদের কিনারায় পা দিয়ে খেলা করার শামিল!
আপনার কাজটি যত উত্তমই হোকনা কেন, নিজেকে সংযত রাখুন। কাজটি সম্পাদন করতে পারার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং নিজেকে কষতে থাকুন, নিশ্চয়ই তোর কাজটি ভুলে ভরা, আল্লাহ দয়া না করলে এটি কোনদিনও সফলতার মুখ দেখবেনা। আল্লাহ সাহায্য না করলে তোর কাজ হয়ত কোন অকল্যানই নিয়ে চলে আসবে! ওরে নফস তুই যে ব্যাপারে মুগ্ধ হচ্ছিস, খুব সম্ভব আসমান এবং জমিনে তোর এই কাজের কোন মূল্যই নেই, যতক্ষন না আল্লাহ এই কাজের মূল্য দিচ্ছেন। আর তাই যদি হয় - এই কাজকে আল্লাহর কাছেই সঁপে দে।
আপনার কাজ যদি হয় সম্পাদন করা তবে অনুগ্রহ করে বাস্তবায়নের সীমারেখায় আপনি পা দিবেন না। ভরসা রাখুন, কল্যানের জন্য দুয়া করতে থাকুন। আল্লাহ মুমিনের কোন নেক আমল বিনষ্ট হতে দেন না। তাহলে আপনার পেরেশানির সুযোগ কোথায়!
কাজের ব্যাপারে অতিমুগ্ধতার কারণে যে সমস্যাটি প্রকট হয় তা আজকের ২ নং আলোচনা।
২। নেতৃত্বের লোভ, বা নেতৃত্ব উপভোগ করাঃ
উপরের সমস্যা থেকে অন্তরে নেতৃত্বের লোভ চলে আসে। আমি তো অনেক ভালো কাজ পারি, নেতৃত্ব আমার জন্যই। এটি ছাড়াও যে কারো মনে নেতৃত্বের লোভ আসতে পারে। আল্লাহর পানাহ। প্রিয় ভাই, নেতৃত্বের লোভ আমাকে, আপনাকে জাহান্নাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এটি এমন লোভ যে তা মানুষের অন্তরে অহংকার তৈরি করে। একজন মুমিন কখনোই নেতৃত্বের লোভী হতে পারেনা।
আল্লাহর প্রিয় রাসুলের শ্রেষ্ঠ খলিফা, ঈমানের দিক থেকে সকল মুসলিমদের থেকে উত্তম ঈমানের অধিকারী খলিফাতুল মুসলিমিন আবু বকর (রাঃ) কে যখন নেতৃত্ব গ্রহন করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো তখন তিনি বলেছিলেন, "লোক সকল, তোমাদের উপরে আমাকে শাসক নিযুক্ত করা হয়েছে, অথচ আমি তোমাদের থেকে উত্তম নই"
লক্ষ্য করুন, এই ছিলো আস সিদ্দিক (রাঃ) এর বুঝ, আমি তোমাদের থেকে উত্তম নই! তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের ব্যাপারে এমন ধারণাও করতে পারি আমি নেতৃত্বের জন্য উত্তম! আল্লাহর পানাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আল্লাহর কাছে সকল মুমিন শুধুমাত্র একটি মানদন্ডে সম্মানিত হয় আর তা হচ্ছে - আল্লাহ ভীতি, তাক্বওয়াহ।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন -
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
একই ভাবে, নেতৃত্ব উপভোগ করা, এটিও এক মারাত্মক একটি ব্যাধি। যদি আপনাকে নেতৃত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে তবে আপনিই আসলে বিপদে রয়েছেন! কারণ আপনাকে কঠিন ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। নেতৃত্ব উপভোগের বিষয় নয়, বরং নেতৃত্ব আমানত-দারীর বিষয়! আল্লাহর পানাহ! কী হবে সেদিন, যদি আমাদের নেতৃত্ব এবং এটির আমানতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়!
নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন এক পরীক্ষা। আল্লাহর সাহায্য ব্যাতিত এই পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব নয়। তাই নেতৃত্ব কীভাবে উপভোগ্য হতে পারে! যদি নেতৃত্ব চলেই আসে ফিরিয়ে দিবেন না, কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই। সতর্ক চিত্তে, কম্পিত ভাবে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তা গ্রহন করুন। আর যদি তা অন্য কারো জিম্মায় থাকে তবে নিশ্চিন্তে আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং তাঁর আনুগত্যের সাথেই নিজেকে বেঁধে রাখুন। দুয়া করুন নিজের এবং নিজেদের উমারাদের জন্য।
আর এই বিষয় থেকেই আসে আজকের আলোচনার ৩ নং পয়েন্ট
৩। শ্রবণ ও আনুগত্যঃ
এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে নতুন করে কিছু বলতে আমি লজ্জা বোধ করি। এ ব্যাপারে আপনারা আমার অপেক্ষা অধিক শুনেছেন, অধিক জেনেছেন। আমি বিনীত ভাবে বলতে চাই, শ্রবণ ও আনুগত্য ব্যাতিত কোন জামাত কীভাবে টিকে থাকতে পারে! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা আলা তাঁর কালামে আমাদের অনেকবার এই ব্যাপারে আদেশ করেছেন।
লক্ষ্য করুন, অবাধ্যতার জন্যই শয়তান বিতাড়িত হয়েছিল! অবাধ্যতা মুমিনের সিফাত হতে পারেনা। আল্লাহ আদেশ করেছেন, তাঁর আনুগত্য করতে, তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে এবং আমাদের মধ্যে নির্ধারিত নেতাদের। কোন জামাতের সফলতা, নিরাপত্তা নিহিত আছে শ্রবণ ও আনুগত্য বাস্তবায়নের মধ্যে। শ্রবণ ও আনুগত্যকে নিজের উপরে আবশ্যিক করে নিন, যতক্ষন তা কিতাব এবং সুন্নাহ'র উপরে থাকে। আজ আপনাকে মাসুল করা হলে মেনে নিন। কাল আপনাকে সাথী করা হলে শুকরিয়া আদায় সহ মেনে নিন।
মনে রাখুন আপনার অপেক্ষা বহুগুনে উত্তম, আল্লাহর তরবারি, খালিদ ইবনুল ওয়ালিদঃ (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে আমীর থেকে সাধারণ সৈনিকে পরিণত হয়েছিলেন! তিনি কি অবাধ্য হয়েছিলেন? মনে কষ্ট পেয়েছিলেন? জিহাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন? হাত গুটিয়ে বসে তাঁবুতে ফিরে গিয়েছিলেন?
প্রিয় ভাই, আপনার জিম্মা যত বিশাল হোক কিংবা যত নগন্য হোক, আমাদের লক্ষ্য একটাই আর তা হচ্ছে - আল্লাহর সন্তুষ্টি! এই দ্বীনকে সাহায্য করা হবে, এটি আল্লাহর ওয়াদা। কিন্তু আমাকে কিংবা আপনাকে সাহায্য করা হবেই এমন কোন ওয়াদা করা হয়নি। বরং যারা এই দ্বীনের সাহায্য করবে তাদের আল্লাহর সাহায্য করবেন সেই ওয়াদা করা হয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য যেন শুধু তাইই হয়। আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর অন্য কিছুই নয়। যে কেউ আল্লাহ এবং আল্লাহর দ্বীনের কল্যান চায়, কল্যান বাস্তবায়ন করে, আল্লাহও তাঁর কল্যান করেন। আল্লাহ অপেক্ষা প্রতিদান প্রদানে আর উত্তম কেই বা হতে পারে!
ইয়া রব্ব, আমার কথার ভুল থেকে আমাকে এবং আমাদের সকলকে হেফাযত করুন। আমাদের সকলের জন্য আপনার সন্তুস্টি অর্জনের তাউফিক্ব নসিব করে দিন।
মহান আল্লাহ তাঁর কালামে মাজিদে রাসুলুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদেশ করেছেন -
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
আর তুমি উপদেশ দিতে থাক, কেননা উপদেশ মু’মিনদের উপকার করবে। [সুরা যারিয়াতঃ৫৫]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন -
الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْناَ لِمَنْ؟ قَالَ: لِلَّهِ وَ لِكِتَابِهِ وَ لِرَسُوْلِهِ وَ لِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَ عَامَّتِهِمْ
‘‘দ্বীন হলো নসীহত বা নসীহত দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাহাবীগণ বলেনঃ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য নসীহত? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিমদের শাসক এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য’’। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং-৮২)
হামদ এবং সালাতের পর -
প্রিয় ভাই, মহান আল্লাহ আমাদের যে নিয়ামত দিয়েছেন তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের পক্ষ সম্ভব নয়। লক্ষ্য করুন তিনি সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের কত কী দিয়েছেন! তিনি আমাদের উপরে রব্ব, আমাদের প্রতি তিনি তাঁর রুবুবিয়াত জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রতি সর্ব শ্রেষ্ঠ রাসুল প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাদের হিদায়েত দিয়েছেন, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মতের অন্তর্ভুক্ত বানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চলমান সময়ে আমাদেরকে তিনি বরকতময় জিহাদের কাজে শামিল হবার তাউফিক দিয়েছেন। তিনি আমাদের জিহাদি জামাতের সাথে জুড়ে থাকার তাউফিক দিয়েছেন। এমন কত কত মুসলিম ভাই হন্য হয়ে আছেন, শুধু মাত্র হক্ক একটি জিহাদি জামাতের সাথে নিজেকে জুড়ে নিবেন এই অপেক্ষায়! নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের অবারিত দেন কিন্তু আমরা সে ব্যাপারে গাফিল থাকি।
নিশ্চয়ই আল্লাহ শুকরিয়া আদায়কারীকে আরো বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের সুস্থতা দিয়েছেন, যা ঈমানের পরে সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অতঃপর আজকের এই আলোচনা ৩ টি বিষয়ে যা আমদের সামগ্রিক ইসলাহ এর লক্ষ্যে, আল্লাহই তাউফিক্ব দাতা -
১। নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা
২। নেতৃত্বের লোভ, বা নেতৃত্ব উপভোগ করা
৩। শ্রবণ ও আনুগত্য
১। নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতাঃ
আল্লাহর দয়া এবং অনুগ্রহে আমাদের উপরে বিভিন্ন কাজের জিম্মা দেয়া হয়। যে কাজ আপনি ভালো পারেন আপনাকে সেই কাজটিই হয়ত দেয়া হয়। আরো লক্ষ্য করুন, আমরা যদি কোন কাজে দক্ষ হই, তা আমাদের যোগ্যতায় নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহে। যে কাজ আমাদের প্রতি আল্লাহর দ্বীনের খেদমতের সুযোগ হিসেবে আসে তাও আমাদের যোগ্যতার কারণে নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহেই তা হয়ে থাকে। কখনও এমন দেখা যায়, আমাদের মধ্যে নিজেদের কাজের ব্যাপারে অতি মুগ্ধতা চলে আসে। এরফলে আমরা ধরেই নেই, আমার কাজটি অতি উত্তম হয়েছে এবং এখনই এর মুল্যায়ন হওয়া জরুরী। যদি মুল্যায়ন না হয় তাহলে, আমরা হতাশ হই, আরও জঘন্য হচ্ছে আমরা অনেক সময়ে এর জন্য কারণ তলব করে বসি! আল্লাহর পানাহ।
প্রিয় ভাই, আমি বিনীত ভাবে স্মরন করিয়ে দিতে চাই, আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ন। তাই আমরা আজ নতুন করে এই দ্বীনের কোন অপূর্নতা পূরণ করতে পারবো সে সম্ভাবনা নেই। হ্যা, আল্লাহর দ্বীনকে নুসরাত করার সুযোগ আল্লাহ আমাদের জন্য অবারিত রেখেছেন।
প্রিয় ভাই, আপনি যদি কোন নেক আমল করার সুযোগ পান তবে আপনার উচিৎ হবে, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং কাজটির ফলাফল আল্লাহর জিম্মায় ছেড়ে দেয়া। কারণ আপনি অবগত আছেন, মুমিনের কাজের বিনিময় শুধুমাত্র আল্লাহর জিম্মায়। অন্য কারো জিম্মায় নয়। হ্যা, যদি আল্লাহ চান তো তাঁর অন্য কোন বান্দা দ্বারা আরেক বান্দাকে সম্মানিত করতেই পারেন। আল্লাহ যেমন চান তেমনই করেন।
কখনও আমরা মনে করি, আমার উমুক কাজটি, আমার উমুক মাশোয়ারাটি তো অনন্য হয়েছে, এগুলো কেন আমলে নেয়া হচ্ছেনা? আমার মাসুল কেন এগুলো বিবেচনায় আনছেন না? প্রিয় ভাই, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আপনি লক্ষ্য করুন, একবার ভেবে দেখুন, আপনি করছেন কী! আপনার কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা আপনাকে কিভাবে প্রতারিত করছে!
অস্বীকার করছিনা, হতেই পারে আপনার কাজটি অতি উত্তম, সর্বোচ্চ মানের। কিন্তু লক্ষ্য করুন, আপনার বর্তমান অবস্থান শুধু কাজটি সম্পাদন করার, সেটি বাস্তবায়ন করার নয়। তাহলে আপনি অনুগ্রহ করে বাড়াবাড়ি করবেন না। কারণ আপনি যদি নিজেকে এভাবে ছেড়ে দেন, তাহলে খুব সম্ভব এই ভুলটিও হয়ে যেতে পারে যে, -
আপনি ভুলে যাবেন আপনার কাজেও ভুল থাকা সম্ভব। নিজের কাজের মুগ্ধতা আপনাকে এই বিষয়টি ভুলিয়ে দিবে। এই ভুলের শুরু ছোট হলেও পরিণাম অনেক বড় হতে পারে। এই ভুল আপনাকে নিজের কাজের ব্যাপারে মুগ্ধতা থেকে, নিজের ব্যাপারে মুগ্ধতা এবং সেখান থেকে নিজের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠতা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যা একজন মুমিনের জন্য খাদের কিনারায় পা দিয়ে খেলা করার শামিল!
আপনার কাজটি যত উত্তমই হোকনা কেন, নিজেকে সংযত রাখুন। কাজটি সম্পাদন করতে পারার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং নিজেকে কষতে থাকুন, নিশ্চয়ই তোর কাজটি ভুলে ভরা, আল্লাহ দয়া না করলে এটি কোনদিনও সফলতার মুখ দেখবেনা। আল্লাহ সাহায্য না করলে তোর কাজ হয়ত কোন অকল্যানই নিয়ে চলে আসবে! ওরে নফস তুই যে ব্যাপারে মুগ্ধ হচ্ছিস, খুব সম্ভব আসমান এবং জমিনে তোর এই কাজের কোন মূল্যই নেই, যতক্ষন না আল্লাহ এই কাজের মূল্য দিচ্ছেন। আর তাই যদি হয় - এই কাজকে আল্লাহর কাছেই সঁপে দে।
আপনার কাজ যদি হয় সম্পাদন করা তবে অনুগ্রহ করে বাস্তবায়নের সীমারেখায় আপনি পা দিবেন না। ভরসা রাখুন, কল্যানের জন্য দুয়া করতে থাকুন। আল্লাহ মুমিনের কোন নেক আমল বিনষ্ট হতে দেন না। তাহলে আপনার পেরেশানির সুযোগ কোথায়!
কাজের ব্যাপারে অতিমুগ্ধতার কারণে যে সমস্যাটি প্রকট হয় তা আজকের ২ নং আলোচনা।
২। নেতৃত্বের লোভ, বা নেতৃত্ব উপভোগ করাঃ
উপরের সমস্যা থেকে অন্তরে নেতৃত্বের লোভ চলে আসে। আমি তো অনেক ভালো কাজ পারি, নেতৃত্ব আমার জন্যই। এটি ছাড়াও যে কারো মনে নেতৃত্বের লোভ আসতে পারে। আল্লাহর পানাহ। প্রিয় ভাই, নেতৃত্বের লোভ আমাকে, আপনাকে জাহান্নাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এটি এমন লোভ যে তা মানুষের অন্তরে অহংকার তৈরি করে। একজন মুমিন কখনোই নেতৃত্বের লোভী হতে পারেনা।
আল্লাহর প্রিয় রাসুলের শ্রেষ্ঠ খলিফা, ঈমানের দিক থেকে সকল মুসলিমদের থেকে উত্তম ঈমানের অধিকারী খলিফাতুল মুসলিমিন আবু বকর (রাঃ) কে যখন নেতৃত্ব গ্রহন করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো তখন তিনি বলেছিলেন, "লোক সকল, তোমাদের উপরে আমাকে শাসক নিযুক্ত করা হয়েছে, অথচ আমি তোমাদের থেকে উত্তম নই"
লক্ষ্য করুন, এই ছিলো আস সিদ্দিক (রাঃ) এর বুঝ, আমি তোমাদের থেকে উত্তম নই! তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের ব্যাপারে এমন ধারণাও করতে পারি আমি নেতৃত্বের জন্য উত্তম! আল্লাহর পানাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আল্লাহর কাছে সকল মুমিন শুধুমাত্র একটি মানদন্ডে সম্মানিত হয় আর তা হচ্ছে - আল্লাহ ভীতি, তাক্বওয়াহ।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন -
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
একই ভাবে, নেতৃত্ব উপভোগ করা, এটিও এক মারাত্মক একটি ব্যাধি। যদি আপনাকে নেতৃত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে তবে আপনিই আসলে বিপদে রয়েছেন! কারণ আপনাকে কঠিন ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। নেতৃত্ব উপভোগের বিষয় নয়, বরং নেতৃত্ব আমানত-দারীর বিষয়! আল্লাহর পানাহ! কী হবে সেদিন, যদি আমাদের নেতৃত্ব এবং এটির আমানতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়!
নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন এক পরীক্ষা। আল্লাহর সাহায্য ব্যাতিত এই পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব নয়। তাই নেতৃত্ব কীভাবে উপভোগ্য হতে পারে! যদি নেতৃত্ব চলেই আসে ফিরিয়ে দিবেন না, কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই। সতর্ক চিত্তে, কম্পিত ভাবে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তা গ্রহন করুন। আর যদি তা অন্য কারো জিম্মায় থাকে তবে নিশ্চিন্তে আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং তাঁর আনুগত্যের সাথেই নিজেকে বেঁধে রাখুন। দুয়া করুন নিজের এবং নিজেদের উমারাদের জন্য।
আর এই বিষয় থেকেই আসে আজকের আলোচনার ৩ নং পয়েন্ট
৩। শ্রবণ ও আনুগত্যঃ
এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে নতুন করে কিছু বলতে আমি লজ্জা বোধ করি। এ ব্যাপারে আপনারা আমার অপেক্ষা অধিক শুনেছেন, অধিক জেনেছেন। আমি বিনীত ভাবে বলতে চাই, শ্রবণ ও আনুগত্য ব্যাতিত কোন জামাত কীভাবে টিকে থাকতে পারে! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা আলা তাঁর কালামে আমাদের অনেকবার এই ব্যাপারে আদেশ করেছেন।
লক্ষ্য করুন, অবাধ্যতার জন্যই শয়তান বিতাড়িত হয়েছিল! অবাধ্যতা মুমিনের সিফাত হতে পারেনা। আল্লাহ আদেশ করেছেন, তাঁর আনুগত্য করতে, তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে এবং আমাদের মধ্যে নির্ধারিত নেতাদের। কোন জামাতের সফলতা, নিরাপত্তা নিহিত আছে শ্রবণ ও আনুগত্য বাস্তবায়নের মধ্যে। শ্রবণ ও আনুগত্যকে নিজের উপরে আবশ্যিক করে নিন, যতক্ষন তা কিতাব এবং সুন্নাহ'র উপরে থাকে। আজ আপনাকে মাসুল করা হলে মেনে নিন। কাল আপনাকে সাথী করা হলে শুকরিয়া আদায় সহ মেনে নিন।
মনে রাখুন আপনার অপেক্ষা বহুগুনে উত্তম, আল্লাহর তরবারি, খালিদ ইবনুল ওয়ালিদঃ (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে আমীর থেকে সাধারণ সৈনিকে পরিণত হয়েছিলেন! তিনি কি অবাধ্য হয়েছিলেন? মনে কষ্ট পেয়েছিলেন? জিহাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন? হাত গুটিয়ে বসে তাঁবুতে ফিরে গিয়েছিলেন?
প্রিয় ভাই, আপনার জিম্মা যত বিশাল হোক কিংবা যত নগন্য হোক, আমাদের লক্ষ্য একটাই আর তা হচ্ছে - আল্লাহর সন্তুষ্টি! এই দ্বীনকে সাহায্য করা হবে, এটি আল্লাহর ওয়াদা। কিন্তু আমাকে কিংবা আপনাকে সাহায্য করা হবেই এমন কোন ওয়াদা করা হয়নি। বরং যারা এই দ্বীনের সাহায্য করবে তাদের আল্লাহর সাহায্য করবেন সেই ওয়াদা করা হয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য যেন শুধু তাইই হয়। আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর অন্য কিছুই নয়। যে কেউ আল্লাহ এবং আল্লাহর দ্বীনের কল্যান চায়, কল্যান বাস্তবায়ন করে, আল্লাহও তাঁর কল্যান করেন। আল্লাহ অপেক্ষা প্রতিদান প্রদানে আর উত্তম কেই বা হতে পারে!
ইয়া রব্ব, আমার কথার ভুল থেকে আমাকে এবং আমাদের সকলকে হেফাযত করুন। আমাদের সকলের জন্য আপনার সন্তুস্টি অর্জনের তাউফিক্ব নসিব করে দিন।
Comment