Announcement

Collapse
No announcement yet.

হে দুনিয়ার মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ানো যুবক! কখনো ভেবে দেখেছ জান্নাতে তোমার জন্য বরাদ্দ হুর-আল-আইন কতটা সুন্দরী?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হে দুনিয়ার মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ানো যুবক! কখনো ভেবে দেখেছ জান্নাতে তোমার জন্য বরাদ্দ হুর-আল-আইন কতটা সুন্দরী?

    হুরে "মারযিয়া" কতটা সুন্দর হবে একটু ধারনা দেওয়া যাক-

    হযরত ওয়াহিদ ইবনে যায়েদ রহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন মুজাহিদ সাথীদের নিয়ে বসেছিলাম। তখন আমরা জিহাদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমনকি সকল সাথীদের মাঝে সোমবার সকালে রওনা হওয়ার ঘোষণা করেছিলাম। ঐ মজলিসে জৈনক এক ব্যক্তি পাঠ করল-

    "নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদের কাছ থেকে তাঁদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তাঁরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ অব্যাহত রাখবে শত্রুকে বধ করা অথবা নিজে নিহত হওয়া পর্যন্ত।[সূরা আত তাওবা-১১১]

    তার বক্তব্য শুনে মাত্র ১৫ বছরের এক কিশোর দাঁড়িয়ে গেল। পিতার মৃত্যুর কারণে সে অঢেল সম্পদের অধিকারী।

    ছেলেটি বলল, হে আব্দুল ওয়াহিদ! আমি আমার জীবন ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিলাম। তার এ আবেগ দেখে আমি বললাম, তরবারির আঘাত অত্যন্ত কঠিন,ধার তৃক্ষ্ম আর তুমি সবেমাত্র কিশোর। আমার মনে হচ্ছে, তুমি এত বড় কঠিন পরীক্ষা ধৈর্যধারণ করতে পারবে না এবং এ বিক্রয়ের ব্যাপারে অক্ষম হয়ে পড়বে। কিশোর ছেলেটি আমাকে বলল, আবদুল ওয়াহিদ! আমি কি জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রয় করার পরও অক্ষম হয়ে যাব? আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি জান্নাতের বিনিময়ে আমার জীবন ও যাবতীয় সম্পদ বিক্রয় করে দিলাম।

    এবার তার দৃঢ়তা ও অবিচলতা দেখে আমরাই নিজেকে তুচ্ছ মনে করতে লাগলাম। মনে মনে বললাম, একজন কিশোর বালক যে কাজটি বাস্তবে করে দেখাতে পারে অথচ আমরা সেটি পারিনা।
    তারপর সে কিশোরটি নিজের ব্যবহৃত ঘোড়া, অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ছাড়া সবকিছু সদকা করে দিল। জিহাদে যাত্রার দিন সে সকলের আগে এসে উপস্থিত। বলল, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আবদুল ওয়াহিদ!'আমি বললাম, ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। অতঃপর আমরা জিহাদে রওনা হলাম।

    ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত কিশোরটি আমাদের সাথে চলল। সেখানে গিয়ে সে দিনের বেলায় রোজা রাখে আর রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। আমাদের সাধ্যমত খেদমত করে, মাঠে ঘোড়া চড়ায়। আমরা ঘুমিয়ে গেলে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। এভাবে চলতে চলতে আমরা এক পর্যায়ে রোম সাম্রাজ্য গিয়ে পৌঁছি।

    একদিন হঠাৎ ছেলেটি চিৎকার করতে করতে আমাদের নিকট ছুটে এসে বলছিল, হায়, 'মারযিয়া! তুমি কোথায়? হায়,'মারযিয়া তুমি কোথায়? তার অবস্থা দেখে আমাদের কয়েক সাথি বললো, হয়তো ছেলেটিকে জিনে আছর করেছে না হয় উন্মাদ হয়ে গেছে। অবিরত চিৎকার করতে করতে একপর্যায়ে সে আমার কাছে এসে আমাকে সম্মোধন করে বলল, হে আব্দুল ওয়াহিদ! আমি আর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারছি না। 'মারযিয়া' তুমি কোথায়?
    তখন আমি বললাম, স্নেহের বৎস আমার! 'মারযিয়া' কে?

    তদুত্তরে সে বলল, আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তখন দেখলাম, জৈনক আগন্তুক এসে আমাকে বলল, চলো! তোমাকে 'মারযিয়া'র নিকট নিয়ে যাব। আমি উঠে তার সাথে রওনা দিলাম। তখন তিনি আমাকে নিয়ে একটি উদ্যানে প্রবেশ করলেন, যেখানে অপরিবর্তনীয় পানির নহর প্রবাহিত। তার দু'তীরে ডাগর নয়না হুরগণ আকর্ষণীয় পোশাক ও নানা অলংকারে এমন অভাবনীয় সাজে সজ্জিত হয়ে আছে, যা আমি বর্ণনা করতে অক্ষম।
    তারা আমাকে দেখে নিতান্ত আনন্দিত ও বিমোহিত হয়ে বলল, ইনিই হচ্ছেন মারযিয়া'র স্বামী।

    আমি একটু সামনে অগ্রসর হয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মাঝে কি 'মারযিয়া' আছে? তারা বলল, না, আমরা তাঁর সেবিকা ও নগণ্য বান্দি মাত্র। আপনি আরো সম্মুখে অগ্রসর হোন। অতঃপর আমি আরো সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলাম, একটি উদ্যানের বুক চিরে নির্মল দুধের নহর প্রবাহিত। যার স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয় না। সেখানে সর্বপ্রকার শোভা বিদ্যমান। একদল হুর দেখতে পেলাম। যাদের সৌন্দর্যে আমি বিমুগ্ধ ও পাগল হয়ে গেলাম। তারা আমাকে দেখে নিতান্ত আনন্দিত ও বিমোহিত হয়ে বলল, আল্লাহর শপথ ইনিই 'মারযিয়া'র স্বামী। আমাদের নিকট এসেছে। আমি তখন সালাম দিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্যে কি 'মারযিয়া' আছে? তারা বলল, না বরং আমরা বান্দি ও সেবিকা। আপনি সামনে অগ্রসর হোন।
    অতঃপর আরো সামনে অগ্রসর হয়ে দেখতে পেলাম, একটি বিশুদ্ধ মধুর নহর ও তার দু'তীর ঘেঁষে নয়নাভিরাম একটি উদ্যান। সে উদ্যানে উজ্জ্বল আলোকিত ও অভাবনীয় রুপ ও নজরকাড়া সুন্দরী অসংখ্য হুর বসে আছে। যাদের দেখে আমি পশ্চাতে ফেলে আসা সকল হুরদের কথা ভুলে গেলাম। আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্যে কি 'মারযিয়া' আছে? তারা বলল, হে আল্লাহর বন্ধু! আমরা তাঁর সেবিকা। আপনি সামনে অগ্রসর হোন।

    অতঃপর আরো সামনে অগ্রসর হয়ে মুক্তা নির্মিত একটি সুদৃশ্য তাবু দেখতে পেলাম। দরজায় একটি হুর দাঁড়িয়ে আছে। তার পোষাক পরিচ্ছেদ ও অলংকারের বিবরণ প্রদান আমার সাধ্যাতীত ব্যাপার। আমাকে দেখা মাত্রই সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে লাগল, হে 'মারযিয়া' তোমার স্বামী এসে গেছে।
    অতঃপর আমি তাবুটির নিকটে গিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখলাম, 'মারযিয়া' তাঁর পালঙ্কে উপবিষ্ট। তাঁর পালঙ্কটি স্বর্ণ নির্মিত ও মূল্যবান ইয়াকুত ও মুক্তাদ্বারা কারুকার্য খচিত। আমি তাঁকে দেখে আত্মহারা হয়ে গেলাম। সে বলল, শাবাস! হে আল্লাহর বন্ধু!আমাদের নিকট তোমার পৌঁছার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তখন আমি তাঁকে আলিঙ্গন করতে অগ্রসর হলাম। সে বলল, দাঁড়াও, তোমার আলিঙ্গন করার সময় হয়নি। কারণ, তোমার মধ্যে দুনিয়ার রূহ বিদ্যমান। ইনশাআল্লাহ তুমি আজ রাতে আমাদের সাথে নৈশভোজে অংশ গ্রহণ করবে। এরপর আমি জাগ্রত হয়ে গেলাম।
    হে আব্দুল ওয়াহিদ! আমি আর ধৈর্য ধারণ করতে পারছিনা।

    আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে যায়েদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, তখনও আমাদের কথাবার্তা শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে শত্রুদের একটি বাহিনী আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমন করল। আমরাও তাদের উপর আক্রমন করলাম। কিশোর বালকটিও তাদের ওপর আক্রমণ করল। সে ৯ জন শত্রুকে হত্যা করে মাটিতে লুটিয়ে পরল। আমি তার নিকটে পৌঁছে দেখলাম সেই রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। আমাকে দেখে সে মুখ ভরে হাসলো এবং চিরবিদায় নিয়ে ইহকাল ত্যাগ করল।
Working...
X