Announcement

Collapse
No announcement yet.

বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? ১৭তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? ১৭তম পর্ব

    বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
    ১৭তম পর্ব


    প্রিয় বোন আমার!
    ছলনার এই বাহারি আয়োজনের সমাপ্তি একদিন ঘটবে। সব আকর্ষণ ঠুকনো হয়ে যাবে। সব ভালোবাসা তার রং হারাবে। প্রীতি আর আত্মার বন্ধন মিছে বলে প্রমাণিত হবে। সম্মান আর পদমর্যাদার চেয়ারগুলো অনর্থক ছিলো বলে আখ্যায়িত করবে। কি হারিয়ে, কি পেয়েছি এর হিসেব কষতে কষতে ঘাম ঝরে পড়বে! মাশুল আমাকে আজ দিতেই হবে এই পেরেশানে একাকার হয়ে যাবে। শেষ অব্দি কি মুক্তির মিছিলে শামিল হতে পারবে? এর জবাবটুকুন চাই-

    জীবনটা বড় ক্ষুদ্র! রহস্যের জালে আবদ্ধ! ক্ষুদ্র এই জীবনের বড় একটা অংশ যদি মরীচিকার আসক্তির পিছনে খরচ হয়ে যায় তবে কতোটাই বা সময় পাবে আবদ্ধের দুয়ার উন্মোচন করতে! একবার যদি মোহের চোরাবালিতে ফেঁসে যাও তখন তাল তিলের স্বাধ হারিয়ে ফেলবে। কেটে যাবে অন্তরাত্মা থেকে ইমানি মুগ্ধতার দাগ। অতৃপ্তি ও না-শোকরির আগুনে জ্বলেই প্রাণে বেঁচে থাকবে। ধীরে ধীরে পপ কালচারের নষ্টামিতে ঝুঁকে পড়বে। কদরদানির মিষ্ট পেয়ালা থেকে নিজের হাত গুটিয়ে নিবে। সুতরাং যে সুঁতোয় গাঁথা জীবন তা নিয়ে কামিয়াব হতে হলে সকল মর্মযাতনা সন্তুষ্টিচিত্তে মেনে নিতে হবে। এতেই প্রভূত অভ্যন্তরীণ কল্যাণ নিহিত রয়েছে।[১]

    প্রিয় বোন আমার!
    বিগত পর্বের শেষ লাইনের শুরুটা হয়ে যাক এ পর্বে। মারিয়া শাতজাকি। ধনী ঘরের এক আদরের দুলালনী। রং ঢং সবই ছিলো তার মাঝারি দেহখানাতে। হাসি কষ্ট তার হৃদয়েও ভরপুর ছিলো। সুখী মানুষের মত তার ঠোঁটের কিনারায়ও লেগে থাকতো মুচকি হাসি তবে তার আড়ালে যে লুকিয়ে আছে শতসহস্র অশ্রুর ফোঁটা, না দেখানোর মত কিছু বেদনার দৃশ্য, না শুনানোর মত ব্যথাতুর কিছু গল্প যা মানুষের আয়নাবাদি জোড়াচোখ টের পেতো না। অবয়বের নাটকতা তাদের চোঁখগুলো ফাঁকি দিয়ে ঠিক ঠিক ধরতে পেরেছিলো সত্যের মশালকে।

    বোখারার অলিগলি তার পদচারণায় মুখরিত হতো। নিঝুম আঁধারের সাথে সঙ্গতা করে ঘুরে বেড়াতো দ্বীনের ফেরিওয়ালী হয়ে। প্রায় দিনের ক্ষুধাই নিবারণ হয়ে যেতো গলির শেষে পর্দাবৃত ছোট্ট ছাউনিতে। সেকি স্রষ্টার কুদরতের সচ্ছ পানি! কখনোবা ভুলে তাও কপালে জুটতো না।
    কখনো রাতের শেষে দেখা মিলতো ফজরের ফরসার। পাখিদের জয়গান না শুনে কখনো তার বেলা ফুরাতো না। সূর্য তার লাল আভা ছড়ানোর আগেই নিমিষ হয়ে যায় পল্লীর অজানা এক গলিতে। ইমাম শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ এর একটি উক্তির কথা মনে পড়ে গেলো-তোমার যাত্রা যদি হয় আল্লাহর পথে, তবে দৌঁড়াও, থেমো না। কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়লে হেঁটে চলো। যদি তাও না পারো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এগিয়ে যাও। তবুও কখনো ফিরে যেয়ো না; তোমার এই যাত্রা থামিয়ে দিওনা।[২]

    হয়তো বোন আমার এমন মানশা নিয়েই এগোচ্ছিলেন। নববী মানহাযের আলোর পরশ স্পর্শ করাতে হাদিসের পাঠদান ছিলো তার রোজবেলার সাথী। শুনলে অবশ্যই মনে হতো-ইলমী মালঞ্চ সাজানোই হয়েছে মারিয়া শাতজাকির ঘোর যবনিকা দ্বারা। বিশ্ব চরাচরে মানুষ যখন রোমাঞ্চ আর নাদ-নিনাদে উচ্ছ্বাসিত ঠিক ঐ মুহূর্তেই সে তার পাপড়িদ্বয় রাঙিয়েছে হায়াতুস সিনান দ্বারা। তার অন্বেষণের এই স্বর্ণাভায় একদিকে মোরা যেমন গর্বিত অন্যদিকে হতবিহ্বল হয়ে তারচে বেশি দুঃখিত। কারণ কালচক্রের সময়োচিত পদক্ষেপে আমরা কালক্ষেপণ করে ফেলেছি।

    প্রিয় বোন আমার!
    সুতীব্র বাসনা ছিলো তোমাদের অনবদ্য আরচণ উম্মাহর হৃদয়ে নিকশ অনামিশায় সত্যের প্রদীপ্ত দ্বীপশিখা জ্বালিয়ে তুলবে। তোমাদের কর্তব্যনিষ্ঠা জাতিকে আত্মশুদ্ধির আলা তবকায় পৌঁছে দিবে। শিষ্টাচারের নমুনা হবে প্রথম সারির দীক্ষিত প্রতিযোগিদের। যারা আশারায়ে মুবাশ্বিরার সহধর্মিণী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ছিলেন।
    যাদের অদম্য প্রচেষ্টা ইমান আনয়নে, তাকওয়া বৃদ্ধিতে, তাওয়াক্কুলকে আঁকড়ে ধরতে হীনমন্যতা রোগ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো। সুতরাং তুমি কি তাঁদের নির্ঝরণী এই ঝর্ণার বহমান থেকে নিজেকে আলাদা করতে চাচ্ছো?

    অথচ জীবন তার মাঝে আছে নিগূঢ় ভেদ। যে জীবন উম্মাহকে কিছু দিতে পারে না সে পায় না সঞ্জীবনি জীবন, সেই পারে স্বগর্বে, স্বপদে জীবনের অনিবার্য মোহ-সুখ ভোগ করতে। কিন্তু উম্মাহর স্বার্থপ্রশ্নে যে জীবন যতটুকু উদার সে জীবন শরীয়ার কাছে ততটুকু স্বীকৃত। যে জীবন সমৃদ্ধ থাকে অপবাদশূন্যে, থাকে অনিন্দ্য গ্লানিহীনে, তার প্রতি উম্মাহর আশাও থাকে অফুরন্ত। সে জীবন পূণরায় জীবিত হওয়ার পূর্বেই পায় আশান্বিত কুহকী প্রহর ও সুখময় প্রতীক্ষা। উদাসী আর নির্মোহ তার ব্যক্তিত্বের সামনে বিলীন হয়ে যায়। তুমি কি তাঁদের এই ঐশ্বরিক প্রশান্তির পথ থেকে ছিটকে পড়ে যেতে চাচ্ছো?[৩]

    প্রিয় বোন আমার!
    বিষময় শূন্য পারাপারে, ধূ ধূ মরুচরে, কল্পনার রঙিন ফ্রেমে নিজেকে আটকিয়ে বস্তুবাদী জীবন প্রবাহে আর কতকাল জ্বলে পুড়বে! সুস্থ চিন্তাজগতকে বিকৃত করে আর কত সময় অসুস্থ হয়ে থাকবে! নববী আদর্শ চেতনাধারী কোন ইনসান কল্পনাতে সুখী হয়না বরং বাস্তব খোঁজে খোঁজে বের করে তাকে বানায় স্বপ্ন। পূরণ হলে তো হলোই, না হলে বিষাক্ত ছোবলে নিজ ফিতরাত আর গায়রাত ধ্বংস হতে দেয় না। এ তো হলো তোমাদের সালাফী বোনদের রত্নখনি, তত্ত্বভান্ডার। যার প্রশ্নে অধিকাংশ বোনই লা জবাব হয়ে পড়ে। আর তুমি কিনা তাদের দলে ভিড়তে চাচ্ছো?

    তাহলে শোন ইরশাদ হয়েছে-[৪]
    وَلاَ تَكُوْنُوْا كَلَّتِيْ نَقَضَتْ غَزْلهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ اَنْكاَثاَ....

    তোমরা ঐ মহিলার মতো হয়ো না যে পরিশ্রমের পর কাটা সূতো টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে।

    প্রিয় বোন আমার!
    সোনালী যুগের মহীয়সী নারীদের নির্মল জীবনের দিনলিপিগুলো আমরা সমাজের হাওয়ায় ভাসতে দিতে পারি না। আয়াতের অনুসরণ করণে এর আসল হাকিকাত অন্তহীন ফাঁকা বিরানভূমিতেও যেন পূণরায় না ঘটে। এটাই হবে আয়াত ও আমার মধ্যকার নিগূঢ়-গাঢ় সম্পর্ক। এ ভিতগুলোই আমাদের আগাম প্রজন্মদের উৎসাহিত করবে তাগুতি শক্তির বদ্ধ কপাটে আঘাত হানতে। সহায়ক হবে কন্ঠকমুক্ত শিক্ষানবিশির এক নয়া পল্লবী গড়তে। যার মাধ্যমে উম্মাহর মাঝে গড়ে উঠবে মমত্ববোধের অনন্য এক নীড়। সমভাগের সমবেদনায় ককিয়ে উঠবে অন্যান্য দানবীর।

    তথ্যসূত্র-
    ________________________
    ১.বাচ্চু কা ইসলাম, ৩য় খন্ড
    ২.মনীষিদের বাণী সমাহার
    ৩.নির্মল জীবন-সুখতথ্য পৃষ্ঠা নং ৪৪
    ৪.সূরা নাহল, আয়াত নং ৯২



    বিঃদ্রঃ-
    ১৭ এর শেষের লাইনটা কততম পর্ব পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়, আমি অধম এখনো তা স্থির করতে পারিনি।


  • #2
    মুহতারাম! লিখাটা অনেক অনেক অনেক ভালো লেগেছে। খুবই উপকারী লিখা। আমাদের সকলেরই এখান থেকে উপকৃত হওয়া উচিত।

    মুহতারাম! এখানে অনেক শব্দই এমন আছে যেগুলো অপরিচিত। আমার মনে হয় এরকম অপরিচিত শব্দদানায় গাঁথা বাক্যমালা গুলো সকল মগজে ফুটে উঠবেনা, বোধগম্য হবেনা। তাই আশা রাখব, অপরিচিত শব্দদানাগুলোর অর্থ গুলোও টিকা, নোট, বা ব্রেকেট এ উল্লেখ করা হবে। এতে করে সকল ব্রেইনেই বাক্য মালাগুলো চকচকে ফকফকে হয়ে জ্বলে উঠবে।

    আল্লাহ তা'য়ালা আপনার কাজকে সহজ করুন বরকতময় ও ক্ববুল করুন আমিন!
    হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

    Comment


    • #3
      জি মুহতারাম! গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। শুকরান লাকা।

      Comment


      • #4
        আপনার লিখার সহিত্যিকতা আমার কাছে অতীব মুগ্ধ কর। আপনার উত্তম প্রতিদানে অপেক্ষমান।
        পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তা'য়ালা ভাইকে সাহায্য করুন, আমিন।

          Comment


          • #6
            "বোন তোমার নারীত্বের আচল এতো সুন্দর কেন"
            এই সিরিজের ১ থেকে ১৭ নাম্বার পর্ব পর্যন্ত সবগুলো কোনো ভাই কষ্ট করে দিতে পারেন ।
            দিলে অনেক উপকৃত হতাম ।

            Comment

            Working...
            X