/==========>\শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধাণের বিরোধিতা বা প্রত্যাখ্যান করা দলের ব্যাপারে হুকুম।=======>\
শাইখ নাসির আল-ফাহাদ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল –
যারা বলে তাইফাহ মুমতানি’য়াহ ব্যাপারে দুটি মত আছে, তাদের জবাবে কী বলা উচিৎ? আর শাইখুল ইসলাম (ইবনু তাইমিয়া) এ ব্যাপারে যে ইজমার কথা বলছেন – এটা যে অস্বীকার করে এবং বলে, “আমি ইজমা থাকার ব্যাপারে দাবিটি খতিয়ে দেখলাম কিন্তু এমন কিছু খুঁজে পেলাম না” – তাদের ক্ষেত্রে জবাব কী হবে? তাছাড়া এটা কিভাবে সম্ভব যে তাইফাতুল মুমতানি’য়াহর ব্যাপারে সাহাবীদের রা. মধ্যে ইজমা থাকার পরও পরবর্তীতে ফকিহগণ এ ইজমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করলেন? এবং তাইফা মুমতানি’য়াহর কুফরের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করলেন?
উত্তর: তাইফাহ মুমতানি’য়াহর ব্যাপারে বক্তব্য দুইটি অংশে ভাগ করা যায়:
১. এই ব্যাপারে বর্ণনাগুলো একত্রীকরণ
২. তাইফাতুল মুমতা’নিয়াহর কুফরের মূল কারণ
প্রথম অংশ: শরীয়াতের সুস্পষ্ট বিধানকে প্রত্যাখ্যান করা বা এর বিরোধিতা করা দল বা তাইফাহ মুমতানি‘য়াহর ব্যাপারে দুইটি বিধান রয়েছে।
১. তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সকল মাজহাবের সকল ফুকাহাগণ একমত।
২. তবে তাদের কুফরে ব্যাপারে ফকিহদের দু’টি প্রসিদ্ধ মত আছে। সাহাবীদের রা. বুঝ থেকে বুঝা যায় যে, তাঁরা রা. সকলেই এধরণের দলের কুফরের ব্যাপারে একমত ছিলেন। তবে তাদের ইজমা তাদের বক্তব্য থেকে নয়, বরং তাদের কার্যক্রমের দ্বারা সব্যস্ত হয়। ফুকাহাগণ সাহাবীদের রা. কাজের বিশ্লেষণের মাধ্যমে একমত হয়েছেন যে তাইফাতুল মুমতা’নিয়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সাহাবিদের রা. ইজমা ছিল। তবে তাদের কোন শ্রেণীতে ফেলা হবে, কী নামে আখ্যায়িত করা হবে – এই নিয়ে ফকিহদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
আমরা কি তাদেরকে আহলুর রিদ্দা বা মুরতাদ গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো? নাকি বাগ্বি বা বিদ্রোহী গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে? শাইখুল ইসলামের বক্তব্যেও এই বিষয়টুকু উল্লেখ হয় নি যে কেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে -তারা মুরতাদ এই জন্য, নাকি তারা বিদ্রোহী এই জন্য? তবে ইমাম বুখারীর (রহ) কাছ থেকে তাদের মুরতাদ হবার বিষয়টা স্পষ্ট হয়। কারণ ইমাম বুখারি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনার ব্যাপারে আবু হুরায়রার রা. বর্ণনাগুলো এনেছেন “রিদ্দা এবং ফরয বিধান অস্বীকারকারীদের হত্যা বিষয়ক অধ্যায়”-এ। সুতরাং যাকাত অস্বীকার এবং না দেয়ার কারণে তাদেরকে মুরতাদ গণ্য করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, শাইখুল ইসলাম তাদের কুফরের ব্যাপারে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে ইজমা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের আহলুর রিদ্দা হবার ব্যাপারে সকল সাহাবির রা. একমত হবার বিষয়টি সাহাবিদের রা. কোন স্পষ্ট বক্তব্য থেকে সাব্যস্ত না, বরং তাঁদের ইজমার বিষয়টি তাঁদের কাজের ভিত্তিতে নিরূপণ করা হয়েছে।
সাহাবিদের রা. সুস্পষ্ট কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে তাইফাতুল মুমতানি’য়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে ইজমা আছে। এ ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যেও কোন মতপার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণ কি রিদ্দা নাকি বিদ্রোহ, তা সুস্পষ্ট না। মতপার্থক্য এই জায়গাতে। একারণে কেউ যদি তাদের কুফরের ব্যাপারে দ্বিমত করে, তবে সে ইজমাকে অস্বীকার করল, এবং ক্বাতি ইজমা অস্বীকার করার কারণে সে কাফির হয়ে গেল – এমন বলা যাবে না (ক্বাতি ইজমা অস্বীকার করা ৫ ওয়াক্ত সালাত অস্বীকার করার মত। যে একে অস্বীকার করবে সে কাফির)। বরং এ ইজমার বিষয়টি পরিষ্কার হয় সাহাবিদের রা. কাজের অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের মাধ্যম। সুতরাং এটি একটি যন্নি ইজমা (যন্নি ইজমা হল এমন ইজমা যেখানে সুস্পষ্ট বর্ণণা নেই, এবং বিশদ গবেষনার মাধ্যমে ইজমার বিষয়টি জানা যায়)।
দ্বিতীয় অংশ: তাইফা মুমতানি‘য়াহ ‘র উপর তাকফির করা হবে কিনা।
জেনে রেখো, ক্বলবের দরকার ক্বওল (বক্তব্য) এবং আমল (কাজ)। ক্বলবের ক্বওল হল তাসদিক্ব (স্বীকৃতি), আর ক্বলবের আমল হল ইসতিসলাম (আত্মসমর্পণ) এবং ইনক্বিয়াদ (সম্মতিসহকারে আনুগত্য)। যা ক্বলবের কওলের বিরুদ্ধে যায়, তা হল তাকসিব (মিথ্যা গণ্য করা) এবং যা ক্বলবের আমলের বিরুদ্ধে যায় তা হল বিদ্রোহ। যার মধ্যে এ দুটির যেকোন একটি আছে সে কুফর করেছে, এবং মিল্লাত হতে বেরিয়ে গিয়েছে।
যদি কারো মধ্যে তাসদিক্ব থাকার পরও সে অহংকার ও জেদের কারণে শরীয়াহর সুস্পষ্ট ও যাহির কোন বিধান গ্রহণ করার বিরোধিতা করে, তবে সে কুফর করল। এটা হল ঐ ব্যক্তির মত যে অলসতার কারণে কোন নামায ত্যাগ করলো (নামায অস্বীকারকার করলো না), আর যখন তাকে নামাযের দিকে আহবান করা হল, সে অস্ত্র নিয়ে আসলো এবং নামায পড়তে বিরোধিতা করলো। ইবনু তাইমিয়া এবং ইবনুল কাইয়্যিম উভয়ের মতে, এমন ব্যক্তি ইজমা অনুযায়ী কাফির।
সুতরাং যে শরীয়তের সুস্পষ্ট কোন বিষয়কে মিথ্যা গণ্য করে, অথবা অহংকারবশত তা প্রত্যাখ্যান করে (অথবা দুটিই করে)- এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কখনোই কোন মতপার্থক্যের সুযোগ নেই। ইবনু তাইমিয়া বলেছেন, এমন লোকেদের ব্যাপারে যারা বলে – “এরকম কাউকে হত্যা করা একজন মুসলিমকে হত্যা করার মত” – তারা মুরজিয়া ও হল নফসের অনুসারীদের ফিতনায় পড়েছে।
হয়তো কেউ হারামকে হারাম হিসেবে স্বীকার করতে এবং হারাম হবার বিধান মেনে চলতে অস্বীকার করতে পারে, যেমনটা অনেক তথাকথিত “ইন্টেলেকচুয়াল”দের (আক্বালিনিয়্যুন) মধ্যে দেখা যায়। যদিও তারা তার মধ্যে ঐ বস্তু নিষিদ্ধ হবার ব্যাপার তাসদিক্ব আছে। আপনারা দেখবেন এধরণের লোকেদের অনেকেই ঔদ্ধত্যভরে জিহাদ, আমর বিল-মারূফ ওয়া নাহী আনীল-মুনকারের মতো কাজ যে ফরয – এর বিরোধিতা করে। এছাড়া অনেক হারাম কাজ, যেমন – বাদ্যযন্ত্র, বেপর্দা হওয়া এবং এরকম আরো অনেক হারাম কাজকে হারাম হিসেবে মানতে চায় না। এমন ব্যক্তি হল একজন অবাধ্য অহংকারী কাফির। ব্যক্তিক্রম হল ওই ব্যক্তি যার উদ্ধত বিরোধিতা প্রকাশ্য নয় বরং গোপন, এবং একারনে তার বিষয়টা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে মূলনীতি অনুযায়ী তার এ কাজকে অবাধ্যতা (ফিসক্ব) গণ্য করা হবে, কুফর নয়।
তবে বিরোধিতার বিষয়টি প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত হতে পারে। যদি তাদের বিরোধিতার বিষয়টি যাহির হয়, তাহলে প্রমানের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবার পর যারাই তাদের সাথে একমত হবে, অথবা তাদের সাথে যোগদান করবে, তাদের উপরও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। যে ব্যক্তি তাদের সাথে একমত হবে অথবা যোগ দেবে, সেও শারীয়াহ ব্যাপারে তাদের উদ্ধত বিরোধিতা ও অস্বীকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে যাবে, এবং তাইফাতুল মুমতা’নিয়ার কুফরের যে কারণ সেটার সাথেও সে যুক্ত হয়ে যাবে।
যখন এটি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তারা শরীয়াহ থেকে কিছু গ্রহণের বিরোধিতা করছে, তখন ব্যাক্তি আর দলের হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না। যদি না ব্যক্তির অজ্ঞতার কোন ওজর থাকে। যদি তার অজ্ঞতার ওজর থাকে তাহলে তার ব্যাপারে মূলনীতি হল, ধরে নিতে হবে সে ইসলামের মধ্যেই আছে। এমন লোকের অবস্থা হল শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার আহ্বান করা এমন কোন দলের সদস্যের মত, যে জানে না তার দলের নেতারা কুফরে পতিত হয়েছে। তবে যে দল প্রকাশ্যে ফরয বিধান থেকে অন্যদের বিরত করার চেষ্টা করে, এবং তাদের উদ্ধত বিরোধিতার প্রমাণ প্রকাশ্য, এমন দলের সদস্যদের ক্ষেত্রে এই ওজর প্রযোজ্য না। ওয়াল্লাহু ‘আলাম।
শাইখ নাসির আল-ফাহাদ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল –
যারা বলে তাইফাহ মুমতানি’য়াহ ব্যাপারে দুটি মত আছে, তাদের জবাবে কী বলা উচিৎ? আর শাইখুল ইসলাম (ইবনু তাইমিয়া) এ ব্যাপারে যে ইজমার কথা বলছেন – এটা যে অস্বীকার করে এবং বলে, “আমি ইজমা থাকার ব্যাপারে দাবিটি খতিয়ে দেখলাম কিন্তু এমন কিছু খুঁজে পেলাম না” – তাদের ক্ষেত্রে জবাব কী হবে? তাছাড়া এটা কিভাবে সম্ভব যে তাইফাতুল মুমতানি’য়াহর ব্যাপারে সাহাবীদের রা. মধ্যে ইজমা থাকার পরও পরবর্তীতে ফকিহগণ এ ইজমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করলেন? এবং তাইফা মুমতানি’য়াহর কুফরের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করলেন?
উত্তর: তাইফাহ মুমতানি’য়াহর ব্যাপারে বক্তব্য দুইটি অংশে ভাগ করা যায়:
১. এই ব্যাপারে বর্ণনাগুলো একত্রীকরণ
২. তাইফাতুল মুমতা’নিয়াহর কুফরের মূল কারণ
প্রথম অংশ: শরীয়াতের সুস্পষ্ট বিধানকে প্রত্যাখ্যান করা বা এর বিরোধিতা করা দল বা তাইফাহ মুমতানি‘য়াহর ব্যাপারে দুইটি বিধান রয়েছে।
১. তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সকল মাজহাবের সকল ফুকাহাগণ একমত।
২. তবে তাদের কুফরে ব্যাপারে ফকিহদের দু’টি প্রসিদ্ধ মত আছে। সাহাবীদের রা. বুঝ থেকে বুঝা যায় যে, তাঁরা রা. সকলেই এধরণের দলের কুফরের ব্যাপারে একমত ছিলেন। তবে তাদের ইজমা তাদের বক্তব্য থেকে নয়, বরং তাদের কার্যক্রমের দ্বারা সব্যস্ত হয়। ফুকাহাগণ সাহাবীদের রা. কাজের বিশ্লেষণের মাধ্যমে একমত হয়েছেন যে তাইফাতুল মুমতা’নিয়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সাহাবিদের রা. ইজমা ছিল। তবে তাদের কোন শ্রেণীতে ফেলা হবে, কী নামে আখ্যায়িত করা হবে – এই নিয়ে ফকিহদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
আমরা কি তাদেরকে আহলুর রিদ্দা বা মুরতাদ গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো? নাকি বাগ্বি বা বিদ্রোহী গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে? শাইখুল ইসলামের বক্তব্যেও এই বিষয়টুকু উল্লেখ হয় নি যে কেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে -তারা মুরতাদ এই জন্য, নাকি তারা বিদ্রোহী এই জন্য? তবে ইমাম বুখারীর (রহ) কাছ থেকে তাদের মুরতাদ হবার বিষয়টা স্পষ্ট হয়। কারণ ইমাম বুখারি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনার ব্যাপারে আবু হুরায়রার রা. বর্ণনাগুলো এনেছেন “রিদ্দা এবং ফরয বিধান অস্বীকারকারীদের হত্যা বিষয়ক অধ্যায়”-এ। সুতরাং যাকাত অস্বীকার এবং না দেয়ার কারণে তাদেরকে মুরতাদ গণ্য করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, শাইখুল ইসলাম তাদের কুফরের ব্যাপারে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে ইজমা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের আহলুর রিদ্দা হবার ব্যাপারে সকল সাহাবির রা. একমত হবার বিষয়টি সাহাবিদের রা. কোন স্পষ্ট বক্তব্য থেকে সাব্যস্ত না, বরং তাঁদের ইজমার বিষয়টি তাঁদের কাজের ভিত্তিতে নিরূপণ করা হয়েছে।
সাহাবিদের রা. সুস্পষ্ট কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে তাইফাতুল মুমতানি’য়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে ইজমা আছে। এ ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যেও কোন মতপার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণ কি রিদ্দা নাকি বিদ্রোহ, তা সুস্পষ্ট না। মতপার্থক্য এই জায়গাতে। একারণে কেউ যদি তাদের কুফরের ব্যাপারে দ্বিমত করে, তবে সে ইজমাকে অস্বীকার করল, এবং ক্বাতি ইজমা অস্বীকার করার কারণে সে কাফির হয়ে গেল – এমন বলা যাবে না (ক্বাতি ইজমা অস্বীকার করা ৫ ওয়াক্ত সালাত অস্বীকার করার মত। যে একে অস্বীকার করবে সে কাফির)। বরং এ ইজমার বিষয়টি পরিষ্কার হয় সাহাবিদের রা. কাজের অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের মাধ্যম। সুতরাং এটি একটি যন্নি ইজমা (যন্নি ইজমা হল এমন ইজমা যেখানে সুস্পষ্ট বর্ণণা নেই, এবং বিশদ গবেষনার মাধ্যমে ইজমার বিষয়টি জানা যায়)।
দ্বিতীয় অংশ: তাইফা মুমতানি‘য়াহ ‘র উপর তাকফির করা হবে কিনা।
জেনে রেখো, ক্বলবের দরকার ক্বওল (বক্তব্য) এবং আমল (কাজ)। ক্বলবের ক্বওল হল তাসদিক্ব (স্বীকৃতি), আর ক্বলবের আমল হল ইসতিসলাম (আত্মসমর্পণ) এবং ইনক্বিয়াদ (সম্মতিসহকারে আনুগত্য)। যা ক্বলবের কওলের বিরুদ্ধে যায়, তা হল তাকসিব (মিথ্যা গণ্য করা) এবং যা ক্বলবের আমলের বিরুদ্ধে যায় তা হল বিদ্রোহ। যার মধ্যে এ দুটির যেকোন একটি আছে সে কুফর করেছে, এবং মিল্লাত হতে বেরিয়ে গিয়েছে।
যদি কারো মধ্যে তাসদিক্ব থাকার পরও সে অহংকার ও জেদের কারণে শরীয়াহর সুস্পষ্ট ও যাহির কোন বিধান গ্রহণ করার বিরোধিতা করে, তবে সে কুফর করল। এটা হল ঐ ব্যক্তির মত যে অলসতার কারণে কোন নামায ত্যাগ করলো (নামায অস্বীকারকার করলো না), আর যখন তাকে নামাযের দিকে আহবান করা হল, সে অস্ত্র নিয়ে আসলো এবং নামায পড়তে বিরোধিতা করলো। ইবনু তাইমিয়া এবং ইবনুল কাইয়্যিম উভয়ের মতে, এমন ব্যক্তি ইজমা অনুযায়ী কাফির।
সুতরাং যে শরীয়তের সুস্পষ্ট কোন বিষয়কে মিথ্যা গণ্য করে, অথবা অহংকারবশত তা প্রত্যাখ্যান করে (অথবা দুটিই করে)- এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কখনোই কোন মতপার্থক্যের সুযোগ নেই। ইবনু তাইমিয়া বলেছেন, এমন লোকেদের ব্যাপারে যারা বলে – “এরকম কাউকে হত্যা করা একজন মুসলিমকে হত্যা করার মত” – তারা মুরজিয়া ও হল নফসের অনুসারীদের ফিতনায় পড়েছে।
হয়তো কেউ হারামকে হারাম হিসেবে স্বীকার করতে এবং হারাম হবার বিধান মেনে চলতে অস্বীকার করতে পারে, যেমনটা অনেক তথাকথিত “ইন্টেলেকচুয়াল”দের (আক্বালিনিয়্যুন) মধ্যে দেখা যায়। যদিও তারা তার মধ্যে ঐ বস্তু নিষিদ্ধ হবার ব্যাপার তাসদিক্ব আছে। আপনারা দেখবেন এধরণের লোকেদের অনেকেই ঔদ্ধত্যভরে জিহাদ, আমর বিল-মারূফ ওয়া নাহী আনীল-মুনকারের মতো কাজ যে ফরয – এর বিরোধিতা করে। এছাড়া অনেক হারাম কাজ, যেমন – বাদ্যযন্ত্র, বেপর্দা হওয়া এবং এরকম আরো অনেক হারাম কাজকে হারাম হিসেবে মানতে চায় না। এমন ব্যক্তি হল একজন অবাধ্য অহংকারী কাফির। ব্যক্তিক্রম হল ওই ব্যক্তি যার উদ্ধত বিরোধিতা প্রকাশ্য নয় বরং গোপন, এবং একারনে তার বিষয়টা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে মূলনীতি অনুযায়ী তার এ কাজকে অবাধ্যতা (ফিসক্ব) গণ্য করা হবে, কুফর নয়।
তবে বিরোধিতার বিষয়টি প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত হতে পারে। যদি তাদের বিরোধিতার বিষয়টি যাহির হয়, তাহলে প্রমানের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবার পর যারাই তাদের সাথে একমত হবে, অথবা তাদের সাথে যোগদান করবে, তাদের উপরও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। যে ব্যক্তি তাদের সাথে একমত হবে অথবা যোগ দেবে, সেও শারীয়াহ ব্যাপারে তাদের উদ্ধত বিরোধিতা ও অস্বীকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে যাবে, এবং তাইফাতুল মুমতা’নিয়ার কুফরের যে কারণ সেটার সাথেও সে যুক্ত হয়ে যাবে।
যখন এটি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তারা শরীয়াহ থেকে কিছু গ্রহণের বিরোধিতা করছে, তখন ব্যাক্তি আর দলের হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না। যদি না ব্যক্তির অজ্ঞতার কোন ওজর থাকে। যদি তার অজ্ঞতার ওজর থাকে তাহলে তার ব্যাপারে মূলনীতি হল, ধরে নিতে হবে সে ইসলামের মধ্যেই আছে। এমন লোকের অবস্থা হল শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার আহ্বান করা এমন কোন দলের সদস্যের মত, যে জানে না তার দলের নেতারা কুফরে পতিত হয়েছে। তবে যে দল প্রকাশ্যে ফরয বিধান থেকে অন্যদের বিরত করার চেষ্টা করে, এবং তাদের উদ্ধত বিরোধিতার প্রমাণ প্রকাশ্য, এমন দলের সদস্যদের ক্ষেত্রে এই ওজর প্রযোজ্য না। ওয়াল্লাহু ‘আলাম।