ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়ের সাথে শান্তি স্থাপন করা
প্রশ্ন: মুরতাদদের সাথে শান্তি চুক্তি বা সন্ধি করা কি (মুমিন মুজাহিদ বাহিনীর জন্য) শক্তি এবং দুর্বলতার শর্ত সাপেক্ষে.. নাকি মুরতাদদের সাথে সকল শান্তি চুক্তিই না জায়েজ?
যদি মুমিনদের দল (আল্লাহ হেফাজত করেন) ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মত্যাগী দলের সাথে যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হতে চলে তাহলে সন্ধি করা বা অন্ততপক্ষে যুদ্ধ বন্ধ করা কি জায়েজ হবে? এই ভেবে যে সন্ধির মধ্যে পরস্পর মত পার্থক্যের দ্বন্দ্ব অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন সংসদে অংশগ্রহণ ইত্যাদি।
আর কোন ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মত্যাগী দলের নিকট সাহায্য চাওয়া কি জায়েজ আছে? যদি সাহায্য টা কোন শর্ত বা চুক্তি বিহীন হয়??
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।
উপরোক্ত মাসআলাটি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। আমার নিকট প্রধান্য যোগ্য মত হল, মুজাহিদ সম্প্রদায় যদি নিজেদের ধ্বংসের ভয় করে এবং ক্ষমতার বিশাল বৈষম্যের কারণে মুরতাদ সম্প্রদায় কর্তৃক নির্মূলের আশঙ্কা করে তখন তারা চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ মুরতাদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে।
আর যদি সেই ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়ের সাথে সমঝোতা বা সন্ধি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে সেই ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নতুনভাবে যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা পুনরায় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য সেই শান্তি চুক্তি করা বৈধ রয়েছে।
আর তা দুই বিবেচনায়:
১. শরিয়তের সকল বিধানের জন্য সক্ষমতা শর্ত করা হয়েছে। আর অবাধ্য মুরতাদ সম্প্রদায়ের সাথে বল প্রয়োগের মাধ্যমে যুদ্ধ করা এরই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যখন সক্ষমতা না থাকে তখন অক্ষমতা প্রকাশ পায়। যার ফলে সক্ষমতা অর্জন করা পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করার হুকুম স্থগিত হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: "আল্লাহ কোন আত্মাকে তার সাধ্যের বাইরে বোঝা দেন না" আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: "আল্লাহকে সাধ্য অনুযায়ী ভয় করো"
ইবনে কাসীর রহ. ব্যাখ্যায় বলেছেন: কাউকে তার সাধ্যের বাইরে বাধ্য করা হয় না। এটা সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ।
সহীহ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইরশাদ করেন আমি তোমাদেরকে যা আদেশ করি তা তোমরা সাধ্য অনুযায়ী পুর্ন করো।
ইমাম শাফি রহ. বলেছেন: আল্লাহ তাআলা জানেন যে এই ব্যক্তি যা করতে সক্ষম তা পূর্ণ করেছে যার ফলে তিনি তাকে সাওয়াব দিবেন। আর এই ব্যক্তি যা করতে সক্ষম তা পূর্ণ করে নাই তাই তাকে শাস্তি দিবেন। সুতরাং সক্ষমতা সত্ত্বেও কাজ না করার কারণে তিনি তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।
আর যে সামর্থ্য রাখে না আল্লাহ তাকে আদেশ করেন না এবং শাস্তিও প্রদান করেন না।
এটা শরীয়তের সকল বিধানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
জিহাদ সহ কোন বিধানই এর থেকে বাদ পড়বে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, অক্ষমতার কারণে জিহাদ বন্ধের সময় ঘোড় সওয়ার ও শক্তি অর্জনের মাধ্যমে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। কেননা ওয়াজিব সম্পন্ন করতে যা কিছুর প্রয়োজন হয় তাও ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত হয়। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা গেল, অক্ষমতা জিহাদ সহ অন্যান্য শরীয়তের বিধান কে সক্ষমতা অর্জন পর্যন্ত স্থগিত রাখে। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
2. মুরতাদ কাফেরদের সাথে শান্তিচুক্তি করা প্রমাণিত রয়েছে।
যেমন ইমাম বুখারী ও অন্যান্যরা তারিক বিন শিহাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: বুযাখার আসাদ ও গাতফান গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল হযরত আবু বকর রাযি. এর নিকট আগমন করে শান্তি চুক্তির আবেদন করল। তিনি তাদেরকে ভয়ংকর যুদ্ধ বা অপমানকর চুক্তি এই দুটির মধ্য হতে একটিকে বেছে নিতে বললেন।
আল্লামা শাওকানী রহ. নাইলুল-আওতার গ্রন্থে বলেছেন: পূর্বোক্ত আসার দ্বারা এই কথার উপর দলীল পেশ করা হয় যে, কাফের মুরতাদদের সাথে তাদের অস্ত্র ও বাহন গ্রহণ করার উপর এবং মুসলিমদের থেকে আত্মসাৎকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার উপর সন্ধি করা জায়েয আছে।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর!
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এটাতো এমন একটি চুক্তি যেখানে মুসলমানরা শক্তিশালী ছিল। যার ফলে তারা চুক্তির শর্তাবলী নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিল, যা মুরতাদদের নিরস্ত্র করন এবং তাদের অপমান করনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
উত্তরে আমি বলবো, পূর্বোক্ত আসার ও আল্লামা শাওকানী রহ. এর কথা থেকে যা বুঝে আসে তা হলো, মুরতাদদের সাথে আগ বাড়িয়ে চুক্তি করা বৈধ আছে। এমনটি নয় যেমন কিছু লোক ধারণা করে যে, উদ্দেশ্য বা কারণ যাই হোক না কেন কোন অবস্থাতেই মুরতাদদের সাথে আগ বাড়িয়ে চুক্তি করা বৈধ নয়। এর ফলাফল যাই হোক না কেন।
সুতরাং যখন মুসলমানরা শক্তিশালী থাকা অবস্থায়ও মুরতাদদের সাথে সদ্ধি করার বৈধতা হযরত আবু বকর রাযি. ও অন্যান্য সাহাবীদের থেকে প্রমাণ হল। তখন দুর্বল অবস্থায় নিজেদের ধ্বংস ও মূল উৎপাটনকে প্রতিহত করার জন্য মুজাহিদ সম্প্রদায়ের জন্য সন্ধি করা অধিক উপযুক্ত বলে সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
এখন বাকি থাকল তোমাদের এই প্রশ্ন যে, ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মত্যাগী দলের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া জায়েজ আছে কিনা?
উত্তরে আমি বলবো: যদি এই সাহায্য চাওয়ার অর্থ হয় তাদের অস্ত্র বা এজাতীয় কিছুর সাহায্য চাওয়া তাহলে আমি আশা করি এতে কোন সমস্যা হবে না, ইনশাআল্লাহ। তবে যদি সাহায্য দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাদের বা তাদের সন্য বাহিনীর সাহায্য নেয়া। অথবা তাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা তাহলে এই ধরনের সাহায্য চাওয়া এবং অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: “আমি একজন মুশরিকের বিপক্ষে অন্য মুশরিক থেকে সাহায্য চাই না।
তাছাড়া ধর্মত্যাগী সম্পর্কে মূল নীতি হলো, তার রক্ত বৃথা যাবে। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।