উলামায়ে হক্কানি ও উলামায়ে সূ : পরিচিতি ও প্রকৃতি পর্ব- ৩ -মাওলানা আবদুল্লাহ রাশেদ (হাফিযাহুল্লাহ)
মাওলানা আবদুল্লাহ রাশেদ (হাফিযাহুল্লাহ)
বালআম বিন বাউরা: মুজাহিদ বিরোধী কূট-কৌশলের পথিকৃৎ
বালআম বিন বাউরার কথা আমরা সকলে জানি। উলামায়ে সূ-র আলোচনা আসলেই তার কথা সবার আগে আসে। উলামায়ে সূ-দেরকে তার মানস সন্তান মনে করা হয়। তার ব্যাপারেই এ আয়াতে কারীম নাযিল হয়,
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ (175) وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذَلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
“আপনি তাদের কাছে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনান যাকে আমি আমার নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, কিন্তু সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেল। পরে শয়তান তার পেছনে লাগল। এরপর সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
আমি চাইলে ওই আয়াতগুলোর বদৌলতে তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করতে পারতাম। কিন্তু সে ঝুঁকে পড়ল দুনিয়ার দিকে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। তার অবস্থা হল কুকুরের মতো; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে, যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ যারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে। আপনি তাদেরকে এসব ঘটনা শোনান যেন তারা কিছু চিন্তা-ফিকির করে।” –সূরা আ’রাফ (৭) : ১৭৫-১৭৬
অর্থাৎ কুকুর যেমন তাড়া করলেও হাঁপায়, না করলেও হাঁপায়, এসব দুনিয়াদারের অবস্থাও তেমনি। হকের দিকে ডাকুন, না ডাকুন সমান; হক তারা গ্রহণ করবে না।
বালআম বিন বাউরার ঘটনা ইমাম তাবারি রহ. তাবিয়ি সাইয়ার শামি রহ. থেকে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন। হাফেয ইবনে হাজার রহ. ‘বাযলুল মাউন’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ৮৬) সনদটিকে জায়্যিদ বলেছেন। তাবারি রহ. বর্ণনা করেন,
عن سيار أنه كان رجلا يقال له بلعام، … وكان مجاب الدعوة قال: وإن موسى أقبل في بني إسرائيل يريد الأرض التي فيها بلعام =أو قال الشأم= قال: فرُعب الناس منه رعْبًا شديدًا. قال: فأتوا بلعام، فقالوا: ادع الله على هذا الرجل وجيشه! قال: حتى أُوَامر ربّي =أو حتى أؤامر قال: فوامر في الدعاء عليهم، فقيل له: لا تدع عليهم، فإنهم عبادي، وفيهم نبيهم!
قال: فقال لقومه: إني قد وَامَرْتُ ربي في الدعاء عليهم، وإني قد نهيت. قال: فأهدوا إليه هدية فقبلها. ثم راجعوه، فقالوا: ادع عليهم! فقال: حتى أوامر! فوامر، فلم يَحُر إليه شيء. قال: فقال: قد وامرت فلم يَحُرْ إليَّ شيء! فقالوا: لو كره ربك أن تدعو عليهم، لنهاك كما نهاك المرةَ الأولى. قال: فأخذ يدعو عليهم، فإذا دعا عليهم جَرَى على لسانه الدُّعاء على قومه; وإذا أراد أن يدعو أن يُفْتَح لقومه، دعا أن يفتَح لموسى وجيشه =أو نحوا من ذلك إن شاء الله. فقال: فقالوا ما نراك تدعو إلا علينا! قال: ما يجري على لساني إلا هكذا، ولو دعوت عليه ما استجيب لي، ولكن سأدلّكم على أمرٍ عَسَى أن يكون فيه هلاكهم: إن الله يُبْغِض الزنا، وإنهم إن وقعوا بالزنا هلكوا، ورجوت أن يهلكهم الله، فأخرجوا النساء فليستقبلنهم، وإنهم قوم مسافرون، فعسى أن يزنُوا فيهلكوا. قال: ففعلوا، وأخرجوا النساء يستقبلنهم. قال: وكان للملك ابنة، فذكر من عِظَمها ما الله أعلم به! قال: فقال أبوها، أو بلعام: لا تُمْكِني نفسك إلا من موسى! قال: ووقعوا في الزنا.
قال: وأتاها رأس سبط من أسباط بني إسرائيل، فأرادها على نفسه قال: فقالت: ما أنا بممكنةِ نفسِي إلا من موسى! قال: فقال: إنّ من منزلتي كذا وكذا، وإن من حالي كذا وكذا! قال: فأرسلت إلى أبيها تستأمره، قال: فقال لها: فأمكنيه. قال: ويأتيهما رجل من بني هارون ومعه الرمح فيطعنهما قال: وأيَّده الله بقوة فانتظمهما جميعًا، ورفعهما على رمحه. قال: فرآهما الناس =أو كما حدَّث. قال: وسلط الله عليهم الطاعون. قال: فمات منهم سبعون ألفا. –جامع البيان في تأويل القرآن، ج: 13، ص: 261-262؛ ط. مؤسسة الرسالة، ت: أحمد شاكر. قال الحافظ ابن حجر رحمه الله تعالى: هذا حديث مرسل جيد الإسناد. اهـ بذل الماعون في فضل الطاعون، ص: 86، ط. دار العاصمة، الرياض
“সাইয়ার রহ. থেকে বর্ণিত যে, ঘটনার লোকটি ছিল বালআম। সে ছিল মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ (অর্থাৎ তার দোয়া বৃথা যেতো না)। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাঈলকে নিয়ে বালআম যে দেশে থাকত অর্থাৎ শামে জিহাদের জন্য এলেন। সে দেশের লোকজন অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেল। তারা বালআমের কাছে এসে আরজ করল, ‘এ লোক আর তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন’। সে উত্তর দিল, ‘ঠিক আছে, আমার রবের সাথে পরামর্শ করে নিই’।
তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়ার ব্যাপারে সে আল্লাহ তাআলার সাথে পরামর্শ করল। তাকে বলা হল, ‘তুই তাঁদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করিস না। তাঁরা আমার মুমিন বান্দা। তাঁদের সাথে আমার নবীও আছেন’।
বালআম কওমের লোকদের বলল, ‘আমি রবের সাথে বদদোয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করেছি। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে’।
তখন কওমের লোকেরা তাকে কিছু হাদিয়া-উপঢৌকন দিল। সেও তা গ্রহণ করে নিল। এরপর আবার তারা
বদদোয়ার আবদার জানাল, ‘আপনি তাঁদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন’। সে উত্তর দিল, ‘ঠিক আছে, রবের সাথে পরামর্শ করে নিই’।
সে পরামর্শ চাইল কিন্তু কোনো উত্তর এল না। কওমের কাছে গিয়ে বলল, ‘পরামর্শ চেয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি’। তারা বলল, ‘আপনার রব বদদোয়া অপছন্দ করলে প্রথমবার যেমন নিষেধ করেছিলেন এবারও নিষেধ করতেন’। তখন সে বদদোয়া শুরু করল।
তাঁদের বিরুদ্ধে যখন বালআম বদদোয়া করে তখন বদদোয়া হয়ে যায় কওমের বিরুদ্ধে। যখন তার কওমের বিজয়ের দোয়া করতে যায়, দোয়া চলে আসে মূসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বাহিনীর বিজয়ের। তারা বলতে লাগল, ‘কী ব্যাপার আপনাকে দেখছি আমাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করছেন’? সে উত্তর দিল, ‘আমার যবানে এছাড়া আর কিছু আসছে না। আর সে বদদোয়া করতে পারলেও কবুল হতো না।
তবে আমি তোমাদের একটা ফন্দি শিখাচ্ছি। হয়তো এতেই তাঁরা ধ্বংস হবে। আল্লাহ তাআলা যিনা বড়ই অপছন্দ করেন। যদি তাঁরা যিনায় লিপ্ত হয় তাহলেই ধ্বংস অনিবার্য, আশা করি আল্লাহ এতেই তাদের ধ্বংস করবেন। তোমরা (সাজিয়ে গুছিয়ে কিছু পণ্য দিয়ে বিক্রির বাহানায়) মেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে দাও। তারা তাঁদের কাছে যাক। এরা মুসাফির লোক (বিবি থেকে দূরে)। হয়তো যিনায় লিপ্ত হবে। আর তাতেই তাঁদের ধ্বংস’।
তারা তাই করল। মেয়েদের পাঠিয়ে দিল। (বলে দিল, কেউ হাত বাড়ালে কোনো মেয়ে যেন অসম্মতি না জানায়।)
বাদশার এক অনিন্দ্যসুন্দরী মেয়ে ছিল। বালআম কিংবা তার পিতা তাকে বলে দিল, ‘মূসা –আলাইহিস সালাম- ছাড়া অন্য কাউকে সুযোগ দিয়ো না’।
বনি ইসরাইল যিনায় লিপ্ত হল।
বনি ইসরাঈলের এক গোত্রপ্রধান ঐ মেয়ের কাছে এসে আবদার জানাল। সে অসম্মতি জানিয়ে বলল, মূসা ছাড়া আমি কাউকেই সুযোগ দেবো না।
তখন সে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলল, আমার এই এই মর্যাদা রয়েছে। আমার অবস্থা হল এই এই।
মেয়েটি তার পিতার কাছে পরামর্শ চেয়ে লোক পাঠাল। পিতা খবর পাঠাল, রাজি হয়ে যাও।
(উভয়ে যিনায় লিপ্ত হল। ফলে, আযাবরূপে তাউন (মহামারি) নাযিল হল। হযরত হারুন আলাইহিস সালামের বংশের এক লোক (শুনতে পেয়ে তাদের কাছে) এসে উভয়ের উপর বর্শা চালাল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সাহায্য করলেন। তিনি উভয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে বিদ্ধ করে ফেললেন। বর্শায় টানিয়ে উপরে তুলে ধরলেন এবং লোকজন উভয়কে (এ বিদ্ধ অবস্থায়) প্রত্যক্ষ করল।
(যিনার দরুন নারাজ হয়ে) আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাউন (মহামারি) চাপিয়ে দিলেন। (হত্যা করে তুলে ধরা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে) সত্তর হাজার বনি ইসরাঈল মারা গেল।” –তাফসিরে তাবারি : ১৩/২৬১-২৬২
চিন্তা করুন! এ খবিস জেনে বুঝে করেছে কি! আল্লাহ তাআলা তার উপর ইহসান করে তাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়ার মনযিলে উন্নীত করলেন। কিন্তু সে দুনিয়ার সামান্য মোহে পড়ে সব বরবাদ করল। নবীর বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে গেছে, অথচ সে জানে নবীর বিরুদ্ধে বদদোয়া কবুল হবে না। প্রথমে সে রাজি হয়নি। কিন্তু কওমের লোকেরা যখন দুনিয়ার সামান্য সম্পদ হাদিয়া পেশ করল, তখন ফাঁদে পড়ে গেল। অবশেষে যখন কাজ হল না, তখন সে এমন এক ফন্দি শিখিয়ে দিল যা ওই কাফেরদের অন্তরেও আসেনি।
আমাদের এ দেশীয় ‘বালআম বিন বাউরা’রা কি এমন ফন্দিই শেখাচ্ছে না তাগুত হাসিনাদের? নয়তো যে কি না আরবি এক দুটি হরফও ভালোভাবে উচ্চারণ করতে পারবে না সে আবার কুরআনের আয়াত দিয়ে দলীল দেয় কীভাবে?
শাসকের দরবার ফিতনার চারণভূমি
শাসকের দরবার ফিতনার চারণভূমি। সেখানে যাতায়াতের পর একজন মানুষের দ্বীনদারিতা আর তেমন বাকি থাকে না। ফিতনার শিকার না হয়ে পারে না। এজন্যই বহু হাদিসে এব্যাপারে সতর্কবাণী এসেছে। এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ومن أتى السلطان افتتن
–سنن ابي داود، رقم: 2859؛ ط. دار الرسالة العالمية، ت: شعَيب الأرنؤوط – محَمَّد كامِل قره بللي، قال الشيخ الأرنؤوط رحمه الله تعالى: حسن لغيره. اهـ
“যে ব্যক্তি শাসকের দরবারে গমন করবে সে ফিতনার শিকার হবে।” –সুনানে আবু দাউদ : ২৮৫৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
إن على أبواب السلطان فتنا كمبارك الإبل، والذي نفسي بيده لا تصيبوا من دنياهم شيئا إلا أصابوا من دينكم مثله أو قال مثليه -جامع بيان العلم وفضله- ابن عبد البر، ج: 1، ص: 639، رقم: 1104؛ ط. دار ابن الجوزي
“শাসকের দরবার হরেক রকম ফিতনার রঙ্গমঞ্চ; যেমন উটের বসতস্থল। ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার জান! তুমি তাদের দুনিয়া থেকে সামান্য কিছুও লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না এর বিপরীতে তারা এর সমপরিমাণ বা দ্বিগুণ তোমাদের দ্বীন নষ্ট করে।”-জামিউ বয়ানিল ইলম ১/৬৩৯, আসার নং : ১১০৪
উটের পাল একসাথে থাকলে বিশৃংখলা করে। একটা এদিকে চলে যায়, একটা অন্যদিকে। গুঁতোগুঁতি শুরু করে। পাশের লোকের উপরও অনেক সময় হামলে পড়ে। এজন্য এমন জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ এসেছে হাদিসে। শাসকের দরবারও এমন ফিতনার আখড়া।
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إنها ستكون أمراء يكذبون ويظلمون، فمن صدقهم بكذبهم، وأعانهم على ظلمهم، فليس مني، ولست منه، ولا يرد علي الحوض، ومن لم يصدقهم بكذبهم، ولم يعنهم على ظلمهم فهو مني، وأنا منه، وسيرد علي الحوض -مسند الإمام أحمد، رقم: 23260؛ ط. الرسالة، ت: شعيب الأرنؤوط، عادل مرشد، وآخرون. قال المحققون: إسناده صحيح على شرط الشيخين. اهـ
“অচিরেই এমনসব উমারা আসবে যারা মিথ্যা বলবে এবং জুলুম করবে। যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যায় সমর্থন দেবে এবং তাদের জুলুমে সহায়ক হবে, সে আমার নয়, আমিও তার নই। সে হাউজে কাউসারে আমার কাছে উপনীত হবে না। আর যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যায় সমর্থন দেবে না এবং তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না, সে আমার, আমি তার। অচিরেই সে হাউজে কাউসারে আমার কাছে উপনীত হবে।” –মুসনাদে আহমাদ : ২৩২৬০
যে ব্যক্তি শাসকের দরবারে গমন করবে, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে সে তাদের মিথ্যায় সমর্থন না দিয়ে পারবে না। তাদের জুলুমে সহায়ক না হয়ে পারবে না। হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু –যিনি ফিতানের হাদিস সবচেয়ে বেশি জানতেন- তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,
إياكم ومواقف الفتن» قيل: وما مواقف الفتن يا أبا عبد الله؟ قال: أبواب الأمراء. يدخل أحدكم على الأمير فيصدقه بالكذب ويقول له ما ليس فيه -جامع بيان العلم وفضله- ابن عبد البر، ج: 1، ص: 639، رقم: 1103؛ ط. دار ابن الجوزي
“সাবধান! ফিতনার চারণভূমি থেকে দূরে থাকবে। জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আবু আব্দুল্লাহ! ফিতনার চারণভূমি কোনটি’? তিনি উত্তর দেন, ‘উমারাদের দরবার। তোমাদের কেউ আমীরের দরবারে যাবে। গিয়ে তার মিথ্যায় সমর্থন দেবে কিংবা তার (প্রশংসায়) এমন কথা বলবে যা বাস্তবে তার মাঝে নেই।” –জামিউ বায়ানিল ইলম : ১/৬৩৯, আসার নং : ১১০৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
إن الرجل ليدخل على السلطان ومعه دينه فيخرج وما معه دينه فقال رجل كيف ذاك يا أبا عبد الرحمن قال يرضيه بما يسخط الله فيه –الطبقات لابن سعد، ج: 5، ص: 108؛ التاريخ الكبير للبخاري، ج: 1، ص: 443، ط. دائرة المعارف العثمانية، حيدر آباد – الدكن
“কোনো লোক দ্বীনদার অবস্থায় শাসকের দরবারে যায়, এরপর যখন বেরিয়ে আসে দ্বীনের কিছুই তার থাকে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘আবু আব্দুর রহমান! এটা কীভাবে’? তিনি উত্তর দেন, ‘এমন কিছুর মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করে আসে যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হয়ে যান।” –তাবাকাতে ইবনে সা’দ : ৫/১০৮, তারিখে কাবীর (ইমাম বুখারি) : ১/৪৪৩
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
كل من آثر الدنيا من أهل العلم واستحبها فلا بد أن يقول على الله غير الحق في فتواه وحكمه في خبره وإلزامه لأن أحكام الرب سبحانه كثيرا ما تأتي على خلاف أغراض الناس ولا سيما أهل الرياسة والذين يتبعون الشبهات فإنهم لا تتم لهم أغراضهم إلا بمخالفة الحق ودفعه كثيرا فإذا كان العالم والحاكم محبين للرياسة متبعين للشهوات لم يتم لما ذلك إلا بدفع ما يضاده من الحق ولا سيما إذا قامت له شبهة فتتفق الشبهة والشهوة ويثور الهوى فيخفى الصواب وينطمس وجه الحق وإن كان الحق ظاهرا لا خفاء به ولا شبة فيه أقدم على مخالفته وقال لي مخرج بالتوبة –الفوائد لابن القيم، ص: 100، ط. دار الكتب العلمية – بيروت
“আলেমদের মধ্যে যারাই দুনিয়ার যিন্দেগিকে প্রাধান্য দেয় এবং দুনিয়ার প্রেমে পড়ে যায়, তারা তাদের ফতোয়া, বিচারাচার ও বর্ণনায় আল্লাহর উপর কিছু না-হক কথা বলা বলবেই। এছাড়া গত্যন্তর নেই। কেননা, রব্বে কারীমের বিধান অনেক সময়ই মানুষের খাহেশের বিরুদ্ধে গিয়ে থাকে; বিশেষত ক্ষমতাশীলদের, যারা খাহেশাতের পেছনেই পড়ে থাকে। অনেক সময়ই হকের বিরুদ্ধে যাওয়া এবং হক প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া তাদের গরজ পূর্ণ হয় না। আলেম ও বিচারক যখন ক্ষমতালোভী হয়, খাহেশাতের অনুসারী হয়: তখন ক্ষমতার লোভ ও খাহেশাতের পথে প্রতিবন্ধকরূপে দাঁড়ানো হককে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করা সম্ভব হয় না …।” –আলফাওয়ায়িদ : ১০০
এজন্যই যেসব আলেম শাসকের দরবারে গমন করত সালাফগণ তাদেরকে অভিযুক্ত মনে করতেন। হেয় চোখে দেখতেন। দুনিয়াদার মনে করতেন। আবু হাযিম রহ. বলেন,
إن العلماء كانوا يفرون من السلطان ويطلبهم وإنهم اليوم يأتون أبواب السلطان، والسلطان يفر منهم -جامع بيان العلم وفضله- ابن عبد البر، ج: 1، ص: 635، رقم: 1093؛ ط. دار ابن الجوزي
“আগের যামানায় উলামারা শাসকদের থেকে পলায়ন করতেন আর শাসকরা তাদের খুঁজে বেড়াত। আর আজকাল উলামারা শাসকদের দরবারে গমন করছে আর শাসক তাদের থেকে পালাচ্ছে।” –জামিউ বায়ানিল ইলম : ১/৬৩৫, আসার নং : ১০৯৩
আমীর ইবনে হুবায়রার দরজার সামনে কতক আলেমকে বসে থাকতে দেখে হাসান বসরি রহ. তিরস্কার করে বলেছিলেন,
أما وَالله لَو زهدتم فِيمَا عِنْد الْمُلُوك لرغبوا فِيمَا عنْدكُمْ ولكنّكم رغبتم فِيمَا عِنْدهم فزهدوا فِيمَا عنْدكُمْ فضحتم الْقُرَّاء فضحكم اللَّه. –الأمالي لابى القاسم الزجاجي (ت: 337هـ)، ج: 1، ص: 13، ط. دار الجيل – بيروت
“ওহে! আল্লাহর কসম! শাসকদের দুনিয়ার প্রতি যদি তোমরা অনীহা দেখাতে তাহলে তারা তোমাদের ইলমের প্রতি আগ্রহ দেখাত। কিন্তু তোমরা তাদের দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছ ফলে তারা তোমাদের ইলমের প্রতি অনাসক্ত হয়ে পড়েছে। আলেমদের তোমরা বেইজ্জত করেছ, আল্লাহ তোমাদের বেইজ্জত করুন।” –আলআমালি লিআবিল কাসিম আযযুজাজি : ১/১৩
ইবনে আব্দুল বার রহ. (৪৬৩হি.) বলেন,
قالوا: «شر الأمراء أبعدهم من العلماء، وشر العلماء أقربهم من الأمراء» -جامع بيان العلم وفضله- ابن عبد البر، ج: 1، ص: 641، رقم: 1116؛ ط. دار ابن الجوزي
“পূর্ববর্তী উলামাগণ বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট উমারা তারা যারা আলেমদের থেকে অনেক দূরে; আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট উলামা তারা যারা উমারাদের খুব ঘনিষ্ঠ।” –জামিউ বায়ানিল ইলম : ১/৬৪১, আসার নং : ১১১৬
সুবহানাল্লাহ! এ ছিল খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান, ওয়ালিদ, হিশাম ও মানসুরের ব্যাপারে কথা; যারা তামাম দুনিয়ার কাফেরের গলায় দড়ি পরিয়ে ইসলামে টেনে এনেছেন, নয়তো দাস-দাসীতে পরিণত করেছেন। আজকালকার তাগুতের দরবারের আলেমদের দেখলে সালাফগণ কী বলতেন আল্লাহই ভালো জানেন।
উপরে দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা দুই ধরনের দরবারি আলেম দেখতে পেলাম:
এক. কা’ব বিন আশরাফ, যে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে স্বেচ্ছায় শাসকের পক্ষে যোগ দিয়েছে।
দুই. বালআম বিন বাউরা, শাসক যাকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়ে হাত করে নিয়েছে।
এভাবেই শাসকদের দরবারে দরবারি আলেমদের সমাগম হয়। কেউ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছায় যোগ দেয়। আর কাউকে শাসকরা নিজেরাই দুনিয়ার লোভ লালসা দেখিয়ে হাত করে নেয়। যাকে এভাবে কাজ না হয় হুমকি ধমকি দিয়ে দলে ভেড়ায়। এ উভয় শ্রেণী মিলে জনসাধারণের দ্বীন দুনিয়া বরবাদ করে। শাসক দ্বারা আলেম নষ্ট হয়, আলেম দ্বারা শাসক নষ্ট হয়। এরপর এদের দ্বারা জাতি নষ্ট হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
صنفان من أمتي إذا صلحا صلحت الأمة وإذا فسدا فسدت الأمة: السلطان والعلماء -جامع بيان العلم وفضله- ابن عبد البر، ج: 1، ص: 641، رقم: 1109؛ ط. دار ابن الجوزي
“আমার উম্মতের দু’টি শ্রেণী যদি ভাল হয়ে যায় তাহলে গোটা উম্মত ভাল হয়ে যাবে, আর এরা নষ্ট হয়ে গেলে গোটা উম্মত নষ্ট হয়ে যাবে: শাসক শ্রেণী আর উলামা শ্রেণী।” –জামিউ বয়ানিল ইলম ওয়া ফাদলিহি : ১/৬৪১, হাদিস নং : ১১০৯
ইবনুল মুবারক রহ. কত বাস্তব কথাই না বলেছেন,
وهل أفسد الدين إلا الملوك … وأحبار سوء ورهبانها
“শাসকরা আর মন্দ আলেম দরবেশরা ছাড়া দ্বীন আর কে নষ্ট করেছে!” –সিয়ারু আ’লামিন নুবালা : ১২/২১৩, মূদ্রণ: আররিসালা
বড়ত্ব জাহিরের জন্য ইলম শেখা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من طلب العلم ليجاري به العلماء أو ليماري به السفهاء أو يصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله النار -سنن الترمذي، رقم: 2654؛ ط. شركة مكتبة ومطبعة مصطفى البابي الحلبي – مصر، قال الترمذي رحمه الله تعالى: هذا حديث غريب، لا نعرفه إلا من هذا الوجه، وإسحاق بن يحيى بن طلحة ليس بذاك القوي عندهم، تكلم فيه من قبل حفظه. اهـ إلا أن الألباني حسنه.
“যে ব্যক্তি আলেমদের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য, নির্বোধদের সাথে বিতর্ক করার জন্য কিংবা লোকজনকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইলম শিখবে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।” –জামে তিরমিযি : ২৬৫৪
ইবনে রজব হাম্বলি রহ. (৭৯৫হি.) বলেন,
وعلامة هذا العِلْم الَّذِي لا ينفع أن يكسب صاحبه الزهو والفخر والخيلاء، وطلب العلو والرفعة في الدُّنْيَا والمنافسة فيها، وطلب مباهاة العُلَمَاء ومماراة السفهاء وصرف وجوه الناس إِلَيْهِ …
وربما ادعى بعض أصحاب هذه العلوم معرفة الله وطلبه والإعراض عما سواه، وليس غرضهم بذلك إلا طلب التقدم في قلوب الناس من الملوك وغيرهم، وإحسان ظنهم بهم، وكثرة أتباعهم، والتعظم بذلك عَلَى الناس، وعلامة ذلك إظهار دعوى الولاية كما كان يدعيه أهل الكتاب، وكما ادعاه القرامطة والباطنية ونحوهم، وهذا بخلاف ما كان عليه السَّلف من احتقار نفوسهم وازدرائها باطنًا وظاهرًا …
ومن علامات ذلك: عدم قبول الحق والانقياد إِلَيْهِ والتكبر عَلَى من يقول الحق، خصوصًا إن كان دونهم في أعين الناس، والإصرار عَلَى الباطل خشية تفرق قلوب الناس عنهم بإظهار الرجوع إِلَى الحق.
وربما أظهروا بألسنتهم ذم أنفسهم واحتقارها عَلَى رءوس الأشهاد؛ ليعتقد الناس فيهم أنهم عند أنفسهم متواضعون فَيُمدَحُون بذلك، وهو من دقائق أبواب الرياء، كما نبه عليه التابعون فمن بعدهم من العُلَمَاء.
ويظهر منهم من قبول المدح واستجلابه (مما) ينافي الصدق والإخلاص؛ فإن الصادق يخاف النفاق عَلَى نفسه ويخشى عَلَى نفسه من سوء الخاتمة، فهو في شغل شاغل عن قبول المدح واستحسانه. –مجموع رسائل ابن رجب الحنبلي، ج: 3، ص: 30-31، ط. الفاروق الحديثة للطباعة والنشر
“এই অনুপকারী ইলমের আলামত হলো, ইলমধারী ব্যক্তি এর দ্বারা দুনিয়ার চাকচিক্য ও গর্ব-অহংকার কামাই করে। দুনিয়াতে বড় হতে চায় এবং এজন্য প্রতিযোগিতা করে। আলেমদের সাথে পাল্লা দিতে চায়। নির্বোধদের সাথে বিতর্কে জড়ায়। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।
এধরণের ইলমধারী ব্যক্তি অনেক সময় দাবি করে, সে আরেফ বিল্লাহ। সে আল্লাহকেই চায়, আর কিছু চায় না। বাস্তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য শাসকসহ অন্যান্য লোকের অন্তরে জায়গা করে নেয়া, তার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করানো, অনুসারীর আধিক্য বাড়ানো এবং অন্যের উপর নিজেকে বড় প্রমাণ করা। …
অথচ সালাফগণ ছিলেন এর উল্টো। সবসময় নিজেকে ছোট মনে করতেন। ছোট বলেই প্রকাশ করতেন…
এর আলামাত: এরা হক কবুল করতে চায় না। হকের সামনে মাথা নত করে না। বরং হক যে বলে তার সাথে দাম্ভিক আচরণ করে- বিশেষত যদি জনগণের দৃষ্টিতে সে ব্যক্তি তার চেয়ে ছোট কেউ হয়। প্রকাশ্যে হক গ্রহণ করে নিলে জনগণের ভক্তি কমে যায় কিনা এ ভয়ে বাতিলের উপরই জিদ ধরে পড়ে থাকে।
এ ধরণের ইলমধারী ব্যক্তি অনেক সময় নিজেকে ছোট বলেও প্রকাশ করে। জনসম্মুখে নিজের সমালোচনা ও নিন্দাও করে। উদ্দেশ্য: জনগণ যেন মনে করে, তারা নিজেদেরকে বাস্তবেই ছোট মনে করে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য যাতে এর দ্বারাও প্রশংসা কুড়াতে পারে। এটা রিয়ার এক সূক্ষ্ম দরজা। তাবিয়িনে কেরাম এবং পরবর্তী উলামাগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। এদেরকে প্রশংসা গ্রহণ করতে ও কুড়াতেও দেখা যায়, যা সিদক ও ইখলাসের পরিপন্থী।” –রাসায়িলু ইবনি রজব আলহাম্বলি : ৩/৩০-৩১
সারকথাঃ
কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিন ও আইম্মায়ে দ্বীনের উক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উলামায়ে সূ-য়ের কিছু মৌলিক সিফাত আমরা আলোচনা করেছি। সিফাতগুলোর সারমর্ম যা দাঁড়াল:
এদের ইলম হয়ে থাকে বড়ত্ব জাহিরের জন্য। অনুসারী বাড়ানো ও দল ভারী করার জন্য। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ ও প্রশংসা কুড়ানোর জন্য। এরা ভুল করে কিন্তু ভুল স্বীকার করতে চায় না। হক কবুল করতে চায় না, পাছে আবার মান-সম্মান কমে যায় কিনা।
ইলম অনুযায়ী আমল করে না।
অন্যকে নসীহত করে ও ফতোয়া দেয় কিন্তু নিজে মেনে চলে না।
দুনিয়ার তুচ্ছ স্বার্থে হক গোপন করে এবং হক-বাতিল গুলিয়ে ফেলে।
স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দ্বীনের তাহরিফ-অপব্যাখ্যা করে এবং দ্বীনের নামে মিথ্যাচার করে।
কিছু বিষয়ে ইলম শিখে সব বিষয়ে কথা বলে। যে বিষয়ে ইলম নেই সে বিষয়ে যবান বন্ধ রাখে না, পাছে লোকে ছোট ভাবে কিনা।
কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট নস এবং আইম্মায়ে কেরামের সুস্পষ্ট বক্তব্য ও উক্তি বাদ দিয়ে কিছু অস্পষ্ট নস ও উক্তি নিয়ে টানাটানি করে, যেগুলোকে সহজে নিজেদের মতলবমত ঘুরানো যায়।
আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার থেকে দূরে থাকে, পাছে বিপদাপদ এসে পড়ে কিনা কিংবা স্বার্থ ছুটে যায় কিনা।
এরা শক্তের ভক্ত নরমের যম। আল্লাহর বিধান প্রয়োগে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়। সঠিক বিধান প্রয়োগ করতে গেলে যেখানে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কিংবা স্বার্থ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা সেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন একটা কিছু করে নেয় বা এমন ফতোয়া দেয় যেখানে তারা ‘শয়তানও খুশি থাকুক আল্লাহও নারাজ না হোক’- নীতি গ্রহণ করে।
দুনিয়ার স্বার্থ, পদ-মর্যাদা ও মান-সম্মান কামানো বা বহাল রাখার স্বার্থে শাসকের দরবারে যাতায়াত করে। তাদের সাথে সুস্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। শাসকদের মিথ্যাকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা করে। তাদের জুলুমে সহায়তা করে। তাদের জুলুমকে শরীয়তের আঙ্গিকে বৈধ প্রমাণ করার পায়তারা করে।
জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে জালিম ও তাগুতের পক্ষ নেয়। অনেক সময় তারা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে এমনসব কূট-কৌশল আবিষ্কার করে যা তাগুতরাও চিন্তা করতে পারে না। বিনিময়ে তারা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও ভোগ-বিলাস লাভ করে। এ কারণেই হাল যামানায় তাগুতের দরবার উলামায়ে সূ-দের সমাগমস্থলে পরিণত হয়েছে। এমন কোন তাগুত নেই যার দরবারে অসংখ্য উলামায়ে সূ-য়ের ভিড় নেই।
বি.দ্র.
এ ধরনের সব সিফাত সকলের মাঝে থাকা আবশ্যক নয়। কারো মাঝে কম, কারো মাঝে বেশি থাকতে পারে। কারো মাঝে দুয়েকটাও থাকতে পারে।