মুসলিম-ইয়াহুদী চিরকালের দ্বন্দ্ব
(আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে একটা জাতি সৃজন করেছেন। যাদের প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে নিয়ে তারা আজ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলিমদেরকে নিয়ে সরযন্ত্র করে আসছে। এমনকি তারা ইসলামের রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করার হীনসরযন্ত্র করতে পিছপা হয়নি। শুধু ইসলামের যামানায় তাদের আচরণ এমনটি ছিলো তা কিন্তু নই, ইতিপূর্বেও নবী আলাইহিমুস সালামের সাথে তাদের আচরণ এমনই ছিলো। সরযন্ত্র করে বিপুলসংখ্যক নবী আলাইহিমুস সালামকে হত্যা করেছে। তারা যে নিকৃষ্ট একটা জাতি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিভাবে একজন মুসলিম তাদের সাথে গলা মিলিয়ে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। তারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্টি হবে এই আশা আমরা কিভাবে করতে পারি, যেখানে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি সন্তুষ্টি হতে পারেনি। আমাদেরকে তারা কি দিবে, আমরা তাদের থেকে কি আশা করতে পারি?!! তাদের থেকে আমাদের বাড়ি-ঘর এবং ভূমি-রাষ্ট্র দখল করা ছাড়া কিইবা পেয়েছি। পেয়েছি তাদেরকে রক্ত পিপাসু হায়নারুপে। মা-বোনদের ইজ্জতলুন্ঠনকারী হিসেবে।
পাঠক হয়ত এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আমি কাদের কথা বলতে চাচ্ছি, হ্যাঁ.....নিকৃষ্ট সেই ইয়াহুদী জাতির কথাই বলছি।)
(আসুন দেখি তাদের নিকৃষ্টতার কিছু নমুনাঃ-)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় আগমনের পর ইহুদীদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন তার ধারাসমূহ হলঃ-
১/বনু'আওফের ইহুদীগণ মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে একই উম্মতের মতো থাকবে, কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। এটা তাদের নিজেদের অধিকার হিসেবে যেমন গণ্য হবে, ঠিক তেমনিভাবে তাদের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তাদের এবং তাদের দাসদাসীদের বেলায়ও গণ্য হবে। বনু'আওফ ছাড়া অন্যান্য ইহুদীদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
২/মুসলিম এবং ইহুদী উভয় সম্প্রদায়ের লোকই নিজ নিজ আয়-উপার্জনের যিম্মাদার থাকবে।
৩/এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের সঙ্গে অন্য কোন শক্তি যুদ্ধে লিপ্ত হলে চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
৪/এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের লোকেরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে কাজ করে যাবে, কোন অন্যায়-অনাচার কিংবা পাপাচারের ভিত্তিতে নয়।
৫/মিত্র পক্ষের অন্যায়-অনাচারের জন্য সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
৬/কেউ কারো উপর জুলুম করলে মজলুমকে সাহায্য করা হবে।
৭/চুক্তিবদ্ধ কোন পক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যত দিন চলতে থাকবে ততদিন ইহুদীদেরকেও মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধের খরচ বহন করতে হবে।
৮/এ চুক্তিভুক্ত সকলের জন্যই মদীনায় কোন প্রকার হাঙ্গামা সৃষ্টি করা কিংবা রক্তপাত ঘটানো হারাম হবে। ৯/চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো কোন নতুন সমস্যা কিংবা ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ার উপক্রম হলে এর মীমাংসা করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। ১০/কুরাইশ ও তাদের সহায়তাকারীদের আশ্রয় দেয়া চলবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পূর্ণ চেষ্টা ও ইচ্ছে ছিল যে, এ চুক্তি পত্রে যে-সব শর্ত আরোপিত হয়েছে সেগুলো যেন পুরোপুরিভাবে পালিত হয়। সুতরাং মুসলিমরা এমন এক পদও অগ্রসর হননি যা এ চুক্তি নামার কোন একটি অক্ষরেরও বিপরীত হয়। কিন্তু ইহুদীদের ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতা, হঠকারিতা এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গে পরিপূর্ণ । তারা অতি তাড়াতাড়ি তাদের পূর্ব স্বভাবের দিকে ফিরে গেল। তারা মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং গণ্ডগোল বাঁধাবার চেষ্টায় লেগে পড়লো। এর একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে।
ইয়াহুদীদের প্রতারণার একটি নমুনাঃ-
ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, শাস ইবনু কায়স নামক একজন বৃদ্ধ ইয়াহুদী ছিল। তার পা যেন কবরে লটকানো ছিল (অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল)। সে মুসলিমদের প্রতি চরম শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে একদা সাহাবীগণের একটি মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করছিল, যে মজলিসে আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্রেরই লোকেরা পরস্পর কথোপকথন করছিলেন। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে তার অন্তর হিংসায় জ্বলে উঠল এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পথ সে অন্বেষণ করতে লাগল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ঐ দু'সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘকালব্যাপী বিরাজিত শত্রুতা ইসলাম পরবর্তীকালে প্রেম প্রীতিতে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল এবং এভাবে তাদের দীর্ঘকালের দুঃখ-দুর্দশার অবসান হয়েছিল। সমবেত জনতাকে দেখে সে বলতে লাগল এখানে বনু কাইলার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ একত্রিত হয়েছে। আল্লাহর কসম! এ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট দিয়ে আমার গমন সঙ্গত হবে না। তাই সে তার এক যুবক সঙ্গীকে নির্দেশ দিল যে, সে যেন তাদের মজলিসে যায় এবং তাদের সঙ্গে বসে গিয়ে বু'আস যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী অবস্থা আলোচনা করে এবং ঐ সময়ে উভয় পক্ষ হতে যে সকল কবিতা পাঠ করা হয়েছিল ওগুলোর কিছু কিছু পাঠ করে শুনিয়ে দেয়। ঐ যুবক ইহুদীকে যা যা বলা হয়েছিল ঠিক সে ঐ রূপই করল। ঐ কবিতাগুলো শোনা মাত্রই উভয় গোত্রের লোকেদের মধ্যে পুরনো হিংসা বিদ্বেষের আগুন দাউ দাউ করে উঠল এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অনেক বাক বিতণ্ডা হয়ে গেল। যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে উভয় পক্ষের যোদ্ধাগণ জ্বলে হার্রাহ নামক স্থানে সমবেত হলেন।
এ দুঃসংবাদ পাওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুহাজির সাহাবীগণ-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের মাঝে আগমন করে বললেন,
(يا معشر المسلمين، الله الله، أبدعوى الجاهلية وأنا بين أظهركم بعد أن هداكم الله للإسلام، وأكرمك به، وقطع به عنكم أمر الجاهلية، واستنقذكم به من الكفر وألف بين قلوبكم)
'হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ ক্ষমা করুন, এ কী হচ্ছে? আমার জীবদ্দশাতেই জাহেলিয়াতের চিৎকার? অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে মুসলিম করেছেন, ইসলামের দ্বারা জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করে তোমাদিগকে কুফর হতে মুক্ত করে তোমাদের পরস্পরের হৃদয়কে এক অপরের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছেন।' রাসূলুল্লাহ (স)-এর এ কথা শুনে নিজেরা নিজেদেরকে সামলিয়ে নিলেন এবং অনুধাবন করলেন যে, এটা শয়তানের প্ররোচনা এবং তাদের শত্রুদের কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তারপর তাঁরা পরস্পর গলায়-গলায় মিলে ক্রন্দন এবং তওবাহ করলেন। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে একান্ত অনুগত ও নত হয়ে ফিরে গেলেন। এভাবে শাস ইবনু কায়েসের প্রতিহিংসার আগুন নির্বাপিত হল। এটা হচ্ছে কুচক্রীপনা ও গণ্ডগোলের একটা নমুনা যা ইহুদীরা মুসলিমদের মধ্যে সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে থাকত। এ কাজের জন্যে তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করত এবং মিথ্যা রটনা রটাতে থাকত। তারা সকালে মুসলিম হয়ে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যেত এবং এভাবে সরল প্রাণ মুসলিমদের অন্তরে সন্দেহের বীজ বপন করার চেষ্টায় লেগে থাকত। কোন মুসলমানের সঙ্গে তাদের অর্থের সম্পর্ক থাকলে তারা তার জীবিকার পথ সংকীর্ণ করে দিত। আর তাদের উপর মুসলিমদের ঋণ থাকলে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করত না, বরং অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করত এবং বলত তোমাদের ঋণ তো আমাদের উপর ঐ সময় ছিল যখন তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মের উপর ছিলে। কিন্তু এখন তোমরা ঐ ধর্ম যখন পরিবর্তন করেছো তখন আমাদের নিকট হতে ঋণ আদায়ের তোমাদের কোন পথ নেই। প্রকাশ থাকে যে, ইহুদীরা এ সব কার্যকলাপ বদর যুদ্ধের পূর্বেই শুরু করেছিল এবং তাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করার সূচনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের অবস্থা এই ছিল যে, তারা ইহুদীদের হিদায়াত প্রাপ্তির আশা করে তাদের এ সব কার্যকলাপের উপর ধৈর্য ধারণ করে চলছিলেন। এছাড়া এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, যেন ঐ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তারপর তারা একের পর এক অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে লাগল। রাসূল (সাঃ) এর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিচলনা করলেন। তারা মুসলিম সৈন্য বাহিনী দেখামাত্র দূর্গে ঢুকে দূর্গের দ্বারগুলো খুবশক্ত করে বন্ধ করে দিলো। রাসূল (সাঃ) কঠিনভাবে ১৫দিন পর্যন্ত দূর্গ অবরোধ করে রাখলেন। অবশেষে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। রাসূল (সাঃ) এর ফায়সালা তাদের ব্যপারে কঠিন ছিলো। কিন্তু কিছু কারনে তাদেরকে লঘু শাস্তি স্বরুপ মদিনা থেকে বের করে দেয়া হয়। সিরিয়া গিয়ে তারা কিছুদিন অতিবাহিত হতে না হতে তাদের অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে যায় আর তাদের সকল মাল-সামান মুসলমানরা গনিমত হিসেবে পেয়ে যায়। (এটা তো রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা ও আদর্শ।
দুনিয়ার মোহ এমনভাবে আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে তাদের শক্তিশালী ফোর্স আর দক্ষ গোয়েন্দাবাহিনীর কথা শুনে আমাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবকিছু দিয়েছিলেন, কিন্তু আমার তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি, আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
সুতরাং এখন বসে থাকার সময় নেই ইয়াহুদীদের পুর্বকার্যকলাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা সাজাতে হবে এবং সামনে পথ চলতে হবে।)
(আর-রাহিকুল মাখতূম)