Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্রের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর তিনজন প্রানপ্রিয় নেতার মন্তব্য

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্রের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর তিনজন প্রানপ্রিয় নেতার মন্তব্য

    গণতন্ত্রের ব্যাপারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তিনজন প্রান প্রিয় নেতার মন্তব্য দেওয়া হলো। তিনজন নেতা হলেনঃ
    ১.সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রহঃ)

    ২.মুহতারাম মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী ( হাফিঃ)( যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একসময়ের নায়েবে আমীর ছিলেন, বর্তমানে তিনি একজন মাজলুম কারাবন্দী)

    ৩. মাওলানা আব্দুর রহীম (রহঃ)
    ( যিনি ১৯৫৫ সালে জামায়াত ইসলামের পূর্ব পাকিস্তানের আমির নির্বাচিত হন ও
    ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির (ভাইস চেয়ারম্যান বা ভাইস প্রেসিডেন্ট) হন।)



    🌹. গণতন্ত্রের ব্যাপারে সাইয়্যেদ কুতুব রহঃ বলেনঃ
    আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের রয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব কর্মপদ্ধতি। এ পদ্ধতি সকল দিক থেকে বাস্তবসম্মত, ফলপ্রসূ, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও চিরস্থায়ী। এ শাশ্বত দ্বীনের সুনির্ধারিত অন্যান্য বিধিবিধানের যেমন কোনো পরিবর্তন নেই, তেমনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কর্মপদ্ধতিরও কোনো পরিবর্তন নেই। এ কর্মপদ্ধতির মৌলিক দিকগুলো বিশেষ কোনো যুগ, দেশ বা পরিবেশের জন্য তৈরি করা হয়নি বরং সকল যুগ, দেশ ও পরিবেশে একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এ শুধু সাহাবায়ে কেরামের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত কোনো কর্মপন্থা নয়; বরং সাহাবিদের মাধ্যমে চিরকালের জন্য নির্ধারিত একটি মডেল। তাই যখন যে ভূখণ্ডে দুনিয়ায় কোনো মানবগোষ্ঠী দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করবে তাদেরকে এ নীতিই গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র নামে জাহেলি কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। অন্য কোনো ব্যাপারেও যেমন মানবরচিত মতবাদের সাথে ইসলামের কোনো সামঞ্জস্য নেই, তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অন্য কোনো জীবনব্যবস্থার পদ্ধতির সাথে ইসলামি পদ্ধতির জোড়াতালি ফলপ্রসূ নয় এবং তার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ, মানবরচিত মতবাদ সর্বদাই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মানুষকে পরিমাপ করে ।( আগামী বিপ্লবের ঘোষনাপত্র পৃষ্টা ৪৪)





    🌹.গণতন্ত্রের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী ( হাফিঃ) বলেনঃ
    অধিকাংশ মুসলিম দেশসমূহের শাসক গোষ্ঠী ও দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্রের অনুসারী। এসব নামধারী মুসলিম নেতৃবৃন্দ মৃত্তিকা পাথরে নির্মিত মূর্তির পূজা বাহ্যিকভাবে পরিহার করলেও এরা এদের হৃদয়ের কোণে স্বযত্নে এমন এক অদৃশ্য মূর্তির পূজা করে, যে মূর্তি কোথাও গণতন্ত্রের কোথাও বা রাজতন্ত্রের আবরণে আবৃত।
    মৃত্তিকা-পাথরে নির্মিত মূর্তি জড়পদার্থ, তাদের কোনো অনুভূতিই নেই । তাদের দেহে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজিত থাকলেও সেগুলো তারা ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের যে অদৃশ্য মূর্তি, তা অধিকাংশ মানুষের রায় তথা মতামতকে গ্রহণ করে, অনুসরণ করে এবং আইন হিসাবে দেশের বুকে প্রয়োগ করে।

    ভোগবাদী গণতন্ত্রের এই অদৃশ্য মূর্তি সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য, সাধুকে চোর, চোরকে সাধু, বৈধকে অবৈধ, অবৈধকে বৈধ বানানোর ক্ষমতাও সংরক্ষণ করে।

    পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র নামক এই অদৃশ্য মূর্তির অন্ধ পূজারীদের কাছে স্থায়ী কোনো মূল্যমান নেই- এদের কাছে সত্য আর মিথ্যা, ন্যায় আর অন্যায়ের চিরন্তন কোনো মানদণ্ড নেই । এদের মানদণ্ড হলো দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের রায় বা মতামত। আবার সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের রায়ের যথাযথ প্রতিফলনের ব্যবস্থাও পাশ্চাত্যের তথাকথিত গণতন্ত্রে যেমন অনুপস্থিত- তেমনি সুক্ষ্ম কারচুপি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আশ্রয় গ্রহণ করে প্রকৃত জনরায়কে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার সুযোগ রয়েছে।

    দেশের জনসমষ্টির মধ্যে যদি সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ সত্যকে মিথ্যা বলে রায় দেয়, তাহলে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র সত্যকে মিথ্যা বলেই গ্রহণ করতে বাধ্য। পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রে সংখ্যা গরিষ্ঠের রায় বা মতামতের মুকাবেলায় আল্লাহর নাযিল করা কুরআনও বড় সত্য নয়। সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যে রায় বা মতামত দিলো, সেই জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা, নীতি-আদর্শ, রুচিবোধ, মননশীলতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান, ন্যায়-নীতির বিচারবোধ, সত্য-মিথ্যা যাচাই করার যোগ্যতা কোনোটিই ধর্তব্য নয়। অশিক্ষিত, বিবেক-বুদ্ধি, বিচারবোধ শূন্য, দেশ-সমাজ ও সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান নেই, এমন ধরনের ভোঁতা ও জড় বুদ্ধির অধিকারী সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী একদিকে রায় বা মতামত দিলো, অপরদিকে ইসলামী চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ, উন্নত বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাধারা, মননশীলতা, রুচিবোধ, সমাজ, সভ্যতা-সংস্কৃতি সচেতন দেশ ও সমাজের সংখ্যা লঘিষ্ঠ জনগোষ্ঠী আরেকদিকে রায় বা মতামত পেশ করলো, পাশ্চাত্যের এই ভোগবাদী গণতন্ত্র নামক মূর্তি সংখ্যা লঘিষ্ঠের সুচিন্তিত রায়কে পদদলিত করে অবিবেচনা প্রসূত অজ্ঞ জড়বুদ্ধির অধিকারী সংখ্যা গরিষ্ঠের রায়কেই সমাদরে গ্রহণ করলো ।

    শুধু তাই নয়, পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্রের অনুসারীরা ক্ষেত্র বিশেষে সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের মতামতেরও মূল্য দেয় না। সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আল্লাহর বিধান অনুসরণের লক্ষ্যে নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের পক্ষে যদি রায় দেয়, পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্রের অনুসারীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের সে রায়কে পদদলিত করতে সামান্যতম দ্বিধা করে না। এর বাস্তব প্রমাণ আলজেরিয়া ও তুরস্ক। ১৯৯২ সনে আলজেরিয়ার সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কুরআন সুন্নাহর বিধান অনুসরণ করার লক্ষ্যে ইসলামপন্থী দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করলো। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্রের অনুসারীরা অস্ত্রের জোরে সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের রায়কে পদদলিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলো। তুরস্ক ও মিসরের দিকে দৃষ্টি দিলেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হবে।(সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালীন পৃষ্টা ৪৬৬-৪৬৭)


    🌹.গনতন্ত্রের ব্যাপারে মাওলানা আব্দুর রহীম রহঃ বলেনঃ
    এই পদ্ধতিতে সাধারণত কম সংখ্যক লোকেরা দেশের শাসন চালায়। যেমন ধরা যাক একটি নির্বাচনী এলাকায় তিন থেকে চার পাঁচজন পর্যন্ত প্রার্থী থাকে।

    তার মধ্যে একজন প্রার্থী ভোট পেল ১০ হাজার, একজন পেল ১২ হাজার আর একজন পেল ১৪ হাজার, আর একজন পেল ১৫ হাজার। যে-ব্যক্তি পনের হাজার ভোট পেল সে-ই নির্বাচিত হলো। আর বাহিরে থাকল (১০+১২+১৪) মোট ৩৬ হাজার ভোট। তাহলে দেখা গেল এই ৩৬ হাজার ভোটারদের ভোট মাঠে মারা গেল, তাদের সমর্থন কোনো কাজে আসল না। এই অধিক সংখ্যক ভোটারের মত এবং তাদের ইচ্ছা রাষ্ট্রের কাজে কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না। অথচ অল্প সংখ্যক ভোট পেয়ে একজন প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে গেল প্রচলিত গণতান্ত্রিক সিস্টেমে। এভাবে অল্প সংখ্যক ভোট পেয়েও সদস্যরা পার্লামেন্টে আসে। এরপর আরও মজার ব্যাপার হলো— পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৩০০ জন। এই ৩০০ জনের মধ্যে অন্তত ১৫১ জন যখন কাউকে সমর্থন করে তবে সে সরকার গঠন করে। এই ১৫১ জন লোকের প্রাপ্ত ভোট যদি গণনা করা হয় আর এর বাইরে যারা রয়ে গেল তাদের ভোট সংখ্যা গণনা করা হয় তাহলেও দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে থাকা লোকদের পক্ষে বেশি সংখ্যক লোকদের সমর্থন (ভোট) রয়েছ। এখানেও দেখা যায় গণতান্ত্রিক সিস্টেমে মাইনরিটি বা কমসংখ্যক লোকেরাই শাসন ক্ষমতার মালিক হয়ে বসে।

    এরপর মনে করুন একটা পার্টির মধ্যে ১৬০ জন সদস্য পার্লামেন্ট মেম্বার। এখন সেই পার্টির মধ্যে আবার বিভিন্ন নেতার বিভিন্ন গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপের মধ্যে যার লোক সংখ্যা বেশি তাদের সমর্থিত ব্যক্তি হয় প্রধানমন্ত্রী। অন্য গ্রুপের যে মত তা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যায়।

    আবার যখন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় তখনো ঐ ১৬০ জন সদস্য আর মন্ত্রী-মিনিস্টার হতে পারে না। অল্প কয়েকজন সদস্যই কেবল সে সুযোগ পায়। তাদের হাতেই থাকে দেশের সর্বময় ক্ষমতা। ফলে সরকারের সমর্থনেও যে বাকি সদস্যরা রইলেন তাদের মতও অনেক সময় কার্যকর হয় না। তদের সপক্ষে যে জনগণ ভোট দিয়েছিল তাদের আশাও পূর্ণ হয় না। এভাবে যে কোনো দিক দিয়ে বিচার করলেই দেখা যাবে, গণতান্ত্রিক সিষ্টেমে অল্প সংখ্যক লোকেরাই শাসনের আসল সুবিধা ভোগ করে। অর্থাৎ মাইনরিটি বা কম সংখ্যক লোক দ্বারা দেশ শাসিত হয়। তাই বলতে হয়, গণতন্ত্র আসলে ধোঁকাতন্ত্র — একটা বাস্তব প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ এমন এক প্রতারণা যা দিনের উজ্জ্বল আলোতেই সবাইকে দেয়া হচ্ছে, অথচ কেউ বুঝতে পারছে না। তদুপরি গণতন্ত্রটা একটা বিরাট ধোঁকা হয় তখন যখন একে মেজরটি লোকের শাসন বলে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়।( বইঃগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শূরা-ই-নিজাম পৃষ্টা ১১-১২)



    সবার প্রতি নসীহাঃ
    রাসূল সাঃ উম্মতের জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছেন, তায়েফে রক্ত ঝরিয়েছেন, ওহুদে রক্ত ঝরিয়েছেন।সকল নবীর একটি একটি দোয়া ছিলো। যে দোয়া নবীরা দুনিয়াতে করে ফেলেছেন। কিন্তু রাসূল সাঃ এর বিশেষ দোয়াটি তিনি উম্মতের জন্য রেখে দিয়েছেন, যা তিনি কিয়ামতে করবেন। যে নবী এত ভালোবাসেন তার উম্মতকে, উম্মতের মুক্তির জন্য এতো কষ্ট করেছেন সেই উম্মত যদি আমার বা আপনার কারণে বিভ্রান্ত হয়, তাদের মাঝে কোন শিরক বা কুফর প্রবেশ কিয়ামতে কি পরিনতি হবে চিন্তা করেছেন?
    আজ অনেকেই গণতন্ত্রের ব্যাপারে দুই চারটা বই না পড়েই জায়েজ বা নাজায়েজ ফতুয়া দিচ্ছেন।

    প্রত্যেকের উচিত যে বিষয় কথা বলবে সে বিষয় ভালোভাবে জেনে কথা বলা। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
    Last edited by tahsin muhammad; 12-12-2022, 07:17 PM.
Working...
X