আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৪র্থ পর্ব
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৪র্থ পর্ব
নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা
ফিতনার জমানায় যে বিষয়টি বান্দাকে সবচেয়ে বেশি হেফাজত করবে তা হচ্ছে, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং তাঁর আনুগত্য, ইবাদত ও নেক আমলের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। সুতরাং নেক বান্দা যখন কোনো বিষয়ে সন্দেহে পতিত হবে তখন দোয়া, ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার দিকে মনোনিবেশ করবে। ফিতনার জমানায় আনুগত্য ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, হিদায়েত ও অবিচলতার সবচেয়ে বড় সহায়ক। এর দ্বারা বিপদ-আপদ দূর হয়, হিদায়েত নাযিল হয় এবং বান্দা অবিচলতার রিজিকে ধন্য হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّـهِ ۚذَٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚوَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا﴿٢﴾وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚوَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚإِنَّ اللَّـهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚقَدْ جَعَلَ اللَّـهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا﴿٣﴾
‘অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এর দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। (2) এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।‘ (3) – (সূরা তালাক 65: ২-3)
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗوَاللَّـهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴿٢٦٥﴾
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নিজের মনকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে, তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা বাকারা 2: ২৬৫)
وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُوا مِن دِيَارِكُم مَّا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٌ مِّنْهُمْ ۖوَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا﴿٦٦﴾وَإِذًا لَّآتَيْنَاهُم مِّن لَّدُنَّا أَجْرًا عَظِيمًا﴿٦٧﴾
‘আর যদি আমি তাদের নির্দেশ দিতাম যে, নিজেদের প্রাণ ধ্বংস করে দাও কিংবা নিজেদের নগরী ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তারা তা করত না; অবশ্য তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন। যদি তারা তাই করে যা তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এং তাদেরকে নিজের ধর্মের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা উত্তম হবে। (66) আর তখন অবশ্যই আমি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে মহান সওয়াব দেব। (67) (সূরা আন নিসা ৪:৬৬-৬৭)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العِبَادَةُ في الهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِليَّ رواه مسلم
‘ফিতনার মুহূর্তে ইবাদত করা আমার উদ্দেশ্যে হিজরত করার মত।’ –(মুসলিম-৭৫৮৮)
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘হাদিসে উল্লিখিতهرج শব্দের অর্থ হচ্ছে ফিতনা, গোলমাল। এসব মুহূর্তে ইবাদতের ফজিলত অনেক; কিন্তু মানুষ এ মুহূর্ত গুলোতে উদাসীন থাকে, অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া সময় দেয়ার মত কাউকে পাওয়া যায় না।’ -শরহুন নববী আলা মুসলিম:৯/৩৩৯
‘লাতাইফুল মাআরিফ:১৩৮’-এ ইবনে রজব রহ. বলেন, ‘মুসলিম শরিফে বর্ণিত:
عَن مَعْقِلِ بنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ العِبَادَةُ في الهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِليَّ رواه مسلم
মা’কাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোলযোগ মুহূর্তে ইবাদত করা আমার উদ্দেশ্যে হিজরত করার মত।’–(মুসলিম-৭৫৮৮)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. এর বর্ণনায় এ হাদিসটি ‘ফিতনা’ শব্দে উল্লেখ হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, ফিতনার জমানায় মানুষ তার মন মতো চলে, দ্বীনের ধার ধারে না। তখন তাদের অবস্থা জাহেলী যুগের লোকদের মত হয়ে যায়। এমন কঠিন মুহূর্তে যে মানুষ থেকে আলাদা হয়ে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে, আল্লাহর ইবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক চলার চেষ্টা করে এবং অন্যায় অবিচার থেকে বেঁচে থাকে, সে ঐ ব্যক্তির মত যে জাহেলী যুগে রাসূলের প্রতি ঈমান এনে, তাঁর আদেশ মান্য করে, নিষেধকে পরিহার করে তাঁরই উদ্দেশ্যে হিজরত করল। এ ধরণের একটি বিষয়, যে ব্যক্তি গাফেল অপরাধী সম্প্রদায় থেকে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে আলাদা হয়, তার কারণে কখনো কখনো সকল মানুষের বিপদ-আপদ দূর হয়ে যায়। যেন সে তাদেরকে বাঁচালো, তাদের বিপদ দূর করে দিল।
এক সালাফে সালেহ বলেন, গাফেলদের মাঝে আল্লাহর যিকিরকারী ঐ ব্যক্তির মত, যে নিশ্চিত ধ্বংসশীল সম্প্রদায়কে রক্ষা করে। গাফেল সম্প্রদায়ের মাঝে যদি আল্লাহর যিকিরকারী কোনো ব্যক্তি না থাকত তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যেত। পূর্বযুগের এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, বিভিন্ন শহরে ফেরেশতারা অবতরণ করে একে অপরকে বলছে, এই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দাও। তখন তাদের কেউ কেউ বলে উঠল, কীভাবে ধ্বংস করব অথচ অমুক নামাজী, ইবাদতকারী এখানে বিদ্যমান? আরেক ব্যক্তি স্বপ্নযুগে এক কবিকে দেখল, সে বলছে,
‘যদি নামাজীরা না থাকত, যদি রোজাদাররা না থাকত, তাহলে তোমাদের জমিন এক ভেলকিতেই ধ্বংস হয়ে যেত; কারণ তোমরা নিকৃষ্ট সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর না।’
আল্লাহর পথের প্রিয় বন্ধু! এখন আপনার সামনে এমন কিছু ইবাদতের কথা আলোচনা করব, ফিতনার জমানায় প্রত্যেক বান্দার জন্য যা খুবই প্রয়োজনীয়।
নামাজ
নামাজ বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যকার বিশেষ একটি বন্ধন, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে, যার মাঝে প্রশান্তি খোঁজে পায়। নামাজ বান্দার জন্য চোখের শীতলতা, উচ্চ মর্যাদা ও চির সফলতা লাভের কারণ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুসংহত পদ্ধতি। আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚإِنَّ اللَّـهَ مَعَ الصَّابِرِينَ﴿١٥٣﴾
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।’ (সূরা বাকারা ২׃ ১৫৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন,
يَا بِلاَلُ أَقِمِ الصَّلاَةَ أَرِحْنَا بِهَا
হে বিলাল। সলাত ক্বায়িম করো। আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারবো। (আবু দাউদ-4985)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«حُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيبُ، وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ»
‘দুনিয়ার তুলনায় নারী ও সুগন্ধিকে আমার কাছে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাজের মধ্যে।’ –(নাসাঈ-৩৯৩৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
" أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ "
‘সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্যশীল হয়। অতএব, তোমরা বেশি বেশি দোয়া করতে থাক।’ –(মুসলিম-৪৮২)
হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن الرسول صلى الله عليه وسلم كان إذا حزبه أمر فزع إلى الصلاة) فهذا الحديث أخرجه أبو داود (1319) من حديث حذيفة رضي الله عنه ، وحسنه الألباني في صحيح أبي داود ( 1319 )
‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ –(আবু দাউদ)