Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩১ || “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।। ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ || শেষ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩১ || “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।। ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ || শেষ পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ফিতনারযুগে
    মুজাহিদদের প্রতি নসিহত ।।
    ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||


    এর থেকেশেষ পর্ব


    সৎকাজের সামনে মাথা নত করা তখা আনুগত্য করা


    “জামাআতকে আঁকড়ে ধরা” এর থেকে আরেকটি শাখাগত বিষয় নির্গত হয়, তা হলো, বিদ্যমান জামাআতের সীমার ভিতরে সৎকাজের সামনে মাথা নত করা। চাই তা ব্যাপক নেতৃত্ব হোক অথবা এমন কোনো দল বা জামাআত হোক যারা সত্যের উপর জমায়েত হয়েছে। কেননা, সৎকাজের সামনে মাথা নত করা- দল ও ব্যক্তিকে ফিতনার মুখোমুখি হওয়া ও ফিতনা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধতার ভূমিকা রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ عَصَى أَمِيرِي فَقَدْ عَصَانِي.

    যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ্‌রই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ্‌রই নাফরমানী করল। এবং যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের নাফরমানী করল সে আমারই নাফরমানী করল। (-বুখারী-৭১৩৭,মুসলিম)

    উক্ত হাদিসের এই আনুগত্যকেই বলা হয় সৎকাজের অনুসরণ। ইমাম মুসলিম রহ. এর হাদিস থেকে যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছি; আলি রা. থেকে বর্ণিত,

    عَنْ عَلِيٍّ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلاً مِنْ الأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ فَغَضِبَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ أَلَيْسَ قَدْ أَمَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُطِيعُونِي قَالُوا بَلَى قَالَ قَدْ عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ لَمَا جَمَعْتُمْ حَطَبًا وَأَوْقَدْتُمْ نَارًا ثُمَّ دَخَلْتُمْ فِيهَا فَجَمَعُوا حَطَبًا فَأَوْقَدُوا نَارًا فَلَمَّا هَمُّوا بِالدُّخُولِ فَقَامَ يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّمَا تَبِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِرَارًا مِنْ النَّارِ أَفَنَدْخُلُهَا فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ خَمَدَتْ النَّارُ وَسَكَنَ غَضَبُهُ فَذُكِرَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا أَبَدًا إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ.

    আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল পাঠালেন এবং একজন আনসারীকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে সেনাবাহিনীকে তাঁর আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (‘আমীর) তাদের উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তোমাদের আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি যে তোমরা কাঠ জড় কর এবং তাতে আগুন জ্বালাও। এরপর তোমরা তাতে প্রবেশ করবে। তারা কাঠ জড় করল এবং তাতে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন প্রবেশ করতে ইচ্ছা করল, তখন একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করেছি। তাহলে কি আমরা (সবশেষে) আগুনেই প্রবেশ করব? তাঁদের এসব কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে যায়। আর তাঁর (আমীরের) ক্রোধও দমিত হয়ে যায়। এ ঘটনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করতে, তাহলে কোনদিন আর এ থেকে বের হত না। জেনে রেখো! আনুগত্য কেবল বৈধ কাজেই হয়ে থাকে। [বুখারী-৭১৪৫; মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৪০, আহমাদ ৭২৪]


    মুতাশাবিহ (যে সকল বাক্যের অর্থ জটিল এবং কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে সেগুলোকে মুতাশাবিহ বলা হয়) এমন মুতাশাবিহকে মুহকাম (যে সকল বিষয় অকাট্য ও দৃঢ় তাকে মুহ্কাম বলা হয়) এর দিকে ফিরিয়ে দেয়া এবং শরীয়ত-সম্মত ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রতি মনোনিবেশ করা

    ফিতনার জমানায় একটি মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিৎ, তা হল কথা-কাজ ও বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মুহ্কাম তথা যা অকাট্য ও সদৃঢ় তা গ্রহণ করা, মুশকিল ও মুতাশাবিহ (যার অর্থ জটিল ও কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে) এমন বিষয়কে মুহ্কামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া। এমনিভাবে ফিতনার সময়কালে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রতি মনোনিবেশ করা।

    আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


    أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ كَيْفَ بِكُمْ وَبِزَمَانٍ ‏"‏ ‏.‏ أَوْ ‏"‏ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ زَمَانٌ يُغَرْبَلُ النَّاسُ فِيهِ غَرْبَلَةً تَبْقَى حُثَالَةٌ مِنَ النَّاسِ قَدْ مَرِجَتْ عُهُودُهُمْ وَأَمَانَاتُهُمْ وَاخْتَلَفُوا فَكَانُوا هَكَذَا ‏"‏ ‏.‏ وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَقَالُوا وَكَيْفَ بِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ تَأْخُذُونَ مَا تَعْرِفُونَ وَتَذَرُونَ مَا تُنْكِرُونَ وَتُقْبِلُونَ عَلَى أَمْرِ خَاصَّتِكُمْ وَتَذَرُونَ أَمْرَ عَامَّتِكُمْ "

    ‘অচিরেই একটি জামানা আসছে যখন মানুষদেরকে চালনি দিয়ে চালা হবে, সে সময় খরকোটার মত কিছু মানুষ অবশিষ্ট থাকবে। যারা অঙ্গিকার, আমানত নষ্টকারী হবে। সেইসাথে মতবিরোধ করতে করতে এরূপে পরিণত হবে’, (এ কথা বলে) তিনি আঙ্গুলসমূহকে পরস্পর মিলিত করলেনসাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের কী অবস্থা হবে? তিনি বললেন, ‘যা জানা আছে তোমরা তা গ্রহণ করবে এবং যা অপছন্দ মনে হয় তা পরিহার করবে। বিশেষ ব্যক্তিদের নির্দেশ কবুল করবে, আর সাধারণদের নির্দেশ পরিহার করবে।’- আবু দাউদ: ৪৩৪২

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    إِنَّمَا كَانَ مَثَلُنَا فِي الْفِتْنَةِ كَمَثَلِ قَوْمٍ كَانُوا يَسِيرُونَ عَلَى جَادَّةٍ يَعْرِفُونَهَا ، فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ غَشِيَتْهُمْ سَحَابَةٌ وَظُلْمَةٌ ، فَأَخَذَ بَعْضُهُمْ يَمِينًا وَشِمَالا فَأَخْطَأَ الطَّرِيقَ ، وَأَقَمْنَا حَيْثُ أَدْرَكَنَا ذَلِكَ حَتَّى جَلَّى اللَّهُ ذَلِكَ عَنَّا ، فَأَبْصَرْنَا طَرِيقَنَا الأَوَّلَ فَعَرَفْنَاهُ وَأَخَذْنَا فِيهِ ، وَإِنَّمَا هَؤُلاءِ فِتْيَانُ قُرَيْشٍ يَقْتَتِلُونَ عَلَى السُّلْطَانِ وَعَلَى هَذِهِ الدُّنْيَا ، مَا أُبَالِي أَنْ يَكُونَ لِي مَا يُفَتِّلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ الْجَرْدَاوَيْنِ

    ‘এ ফিতনায় আমাদের উদাহরণ হলো সে জাতির মত, যারা তাদের পরিচিত পথেই চলতে লাগলএক পর্যায়ে মেঘ ও অন্ধকার এসে তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেললফলে কেউ ডানে কেউ বামে চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেললআমাদের যখন এমন হলো, আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম। আল্লাহ আমাদের পথ দেখালেন। আমরা প্রথম পথটি দেখে চিনে ফেললাম এবং চলতে থাকলাম। এ হলো কুরাইশী যুবকদল, সুলতানের বিরুদ্ধে, দুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা যদি আমার এ কাপড়ের দু’টি জুতা নিয়ে পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়- আমি তাকে পরওয়া করি না।’ -হিলয়াতুল আওলিয়া: ১/৩০৯

    হুযাইফা রা. বলেন, নিশ্চয় ফিতনা কলবের সামনে পেশ করা হয়। যে ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে তার অন্তরে একটি কালো দাগ স্থাপিত হয়। আর যে তাকে অস্বীকার করে তার অন্তরে একটি সাদা দাগ পড়ে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার জানতে মনে চায়, তাকে ফিতনায় পেয়ে বসেছে কি না, সে যেন লক্ষ্য রাখে- যদি সে কোনো হারামকে দেখে যা সে হালাল মনে করত অথবা কোনো হালালকে দেখে যা সে হারাম মনে করততাহলে বুঝতে হবে তাকে ফিতনায় পেয়ে বসেছে।

    মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল-কুরাযী থেকে আবুল মিকদাম হিশাম ইবনে যিয়াদ বলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফিতনার আলামত কী? তিনি বললেন, লোকে ভালো জিনিসকে খারাপ মনে করতে শুরু করবে আর খারাপ জিনিসকে ভালো মনে করতে থাকবে।’- হিলয়াতুল আওলিয়া: ৩/২১৪



    বর্তমানে মুসলমানরা যে সমস্যার সম্মুখীন, শরঈ শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তার চেয়ে আরো মারাত্মক সমস্যা


    এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে আমরা আলোচনার ইতি টানব যে, বর্তমানে মুসলমানরা যে সমস্যার সম্মুখীন, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ থেকে শরঈ শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তার চেয়ে বেশি মারাত্মক ব্যাপার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শরীয়ত বিবর্তনকারী তাগুতদের সাথে মিলে ইসলামকে নিয়ে মুসলমানদের অবহেলা- অনেক ফিতনা ও মসিবত ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি অবদান রাখছে। এ ক্ষেত্রে বাস্তব শরঈ বিধানের দাবি কী তা গোপন নয়, সে মাসআলা সূর্যালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এ ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে, আল্লাহর শরীয়তকে শরীয়ত পরিপন্থী অন্যান্য বিধিবিধানের মাধ্যমে পরিবর্তনকারী শাসক স্পষ্ট কাফের। তিনি (আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া-১৩/১৩৯) কিতাবে বলেন, ‘এসবের প্রত্যেকটি আম্বিয়া কেরামের উপর আবর্তিত শরীয়তের পরিপন্থীসুতরাং যে খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিলকৃত সুসংহত শরীয়তকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো রহিত শরীয়তদারীর কাছে ফায়সালা তলব করল সে কাফের। তাহলে যে ইলয়াসার কাছে ফায়সালা তলব করল এবং মামলা দায়ের করল তার কী অবস্থা? যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাফের।

    আল্লাহ তা’আলা বলেন,

    أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚوَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّـهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴿٥٠

    ‘তারা কি জাহেলী যুগের ফায়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম ফায়সালাকারী আর কে আছে?’ -সূরা মায়িদা 5:৫০

    فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴿٦٥

    ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।’ -সূরা নিসা 4:৬৫

    মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম রহ. বলেন, ‘বিশ্ববাসীর মাঝে ফায়সালা করার লক্ষ্যে এবং অসঙ্গতি ও অবাধ্যতায় ঝগড়াকারীদের ঝগড়ার সময় মীমাংসাকারী রূপে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় ভীতি প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে জিবরাইল আ. যা নাযিল করেছেন তার পরিবর্তে অভিশপ্ত নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা স্পষ্টতই সবচেয়ে বড় কুফরি

    আল্লাহ তা’আলা বলেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْۖفَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴿٥٩

    ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।‘ -সূরা নিসা 4:৫৯

    পরস্পর বিবাদের সময় যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়সালাকারী রূপে গ্রহণ না করে তাদের ঈমানকে আল্লাহ তা’আলা বারবার নেতিবাচক ও কসমের শব্দ দ্বারা শক্তভাবে নাকচ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন,

    فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴿٦٥

    ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।’ -সূরা নিসা 4:৬৫

    আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুধু ফায়সালাকারী রূপে মেনে নেয়াকে যথেষ্ট মনে করেননি; বরং পরবর্তীতে এ বিষয়ে অন্তরে কোনোরূপ সংকোচতা না থাকার বিষয়টিকেও যুক্ত করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না।’ الحرج অর্থ সংকীর্ণতা। বরং এ ব্যাপারে অন্তর থাকবে প্রশস্ত, পেরেশানি ও অস্থিরতা থেকে নিরাপদ।

    এখানে আল্লাহ তা’আলা এ দু’টি বিষয় উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি; তার সাথে তাসলীম তথা মেনে নেয়াকেও যুক্ত করেছেন। তা হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা। নফসের সাথে সম্পর্কিত যে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা থেকে পবিত্র হবে এবং একে পরিপূর্ণরূপে মেনে নিবে। এখানে তাকীদযুক্ত মাসদার উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, تسليما আবার تسليما শব্দের উপরও যথেষ্ট নয়; বরং এখানে التسليم المطلق (সাধারণ মেনে নেয়া)।’ -তাহকীমুল্ কাওয়ানীন: ১

    মাসআলাটি সুস্পষ্ট, পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা সাব্যস্ত। এটি মতবিরোধপূর্ণ কোনো মাসআলা নয় যে, উলামায়ে-সু এর সূত্র ধরে মানুষের মাঝে দ্বীনকে নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলবে। সুতরাং এসব তাগুতদেরকে বাতিল সাব্যস্ত করা, তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান করা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ, ফিতনা নয়। বরং ফিতনা হলো, মুসলমানদের মাঝে আল্লাহর শরীয়তের বিবর্তনকারী তাগুতদের ব্যাপারে নীরব থাকা। অতএব, বর্তমান উলামা ও দাঈগণের উপর কর্তব্য হলো, এ মাসআলা প্রকাশ করা এবং তার দাওয়াত দেয়া। নিশ্চয় তাগুত ও তাদের সহযোগীরা মাসআলাটি মুছে দেয়া ও মানুষদেরকে এ থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা ভালো করেই জানে যে, শরীয়তের নেতৃত্ব তাদেরকে ধ্বংস ও গুমরাহী সাব্যস্ত করার চূড়ান্ত মাধ্যম।


    ড. সামী আল-উরায়দী
    ৮ সফর ১৪৩৮


    ***********





    আরও পড়ুন​
Working...
X