Announcement

Collapse
No announcement yet.

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিন!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিন!!

    আলহামদুলিল্লাহির রব্বিল আলামীন। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়্যিদিল মুরসালীন।



    সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি সকল বিশ্বের প্রতিপালক। তিনি যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের রিযিক দান করেছেন এবং আমাদেরকে হিদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর রহমতের সীমা নেই, তাঁর ক্ষমতার কোনো শেষ নেই। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে, তিনি আমাদেরকে ইসলামের মতো পরিপূর্ণ দ্বীন দান করেছেন এবং তাওহীদের পথে চলার তাওফিক দিয়েছেন।"
    "আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া আ'লা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।


    হে আল্লাহ্‌! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত।"

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,
    يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ قُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
    অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। (সুরা আত-তাহরীমঃ ৬)

    সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজ আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, যা আমাদের ইমান, আকিদা এবং তাওহীদের মূল ভিত্তির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পহেলা বৈশাখ, যাকে অনেকে একটি নির্দোষ সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে গ্রহণ করেন, তা কি সত্যিই কেবল একটি নিরীহ উদযাপন? নাকি এর গভীরে লুকিয়ে আছে এমন একটি বিপদ, যা আমাদের ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমাদের তাওহীদকে দুর্বল করে এবং আমাদের আকিদাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়? এই আলোচনায় আমরা ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ করবো, ঐতিহাসিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করবো এবং এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করবো যে, পহেলা বৈশাখ কীভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

    ইসলামের মূল ভিত্তি হলো তাওহীদ—একমাত্র আল্লাহ্‌র একত্ববাদ। তাওহীদ শুধু এই বিশ্বাস নয় যে আল্লাহ্‌ এক ও অদ্বিতীয়, বরং এটি এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে আল্লাহ্‌র সাথে কোনো কিছুকে অংশীদার করা যায় না, তাঁর সার্বভৌমত্বকে কোনোভাবেই খণ্ডিত করা যায় না এবং শিরক বা মুশরিকী কার্যকলাপ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখতে হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন:
    اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَكَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا
    "নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না, তবে এর নিচে যে গুনাহ তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করেন।" (সূরা আন-নিসা: ৪৮)।

    এই আয়াত আমাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করে যে, শিরক এমন একটি অপরাধ, যা ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু পহেলা বৈশাখে আমরা কী দেখি? এই উৎসবে এমন সব আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, যা সরাসরি শিরক ও কুফরীর সাথে জড়িত।

    পহেলা বৈশাখের উৎস কোথায়? এর শিকড় গভীরভাবে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ও মূর্তিপূজার সাথে সংযুক্ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি মূলত হিন্দু সৌরবর্ষের একটি অংশ হিসেবে উদযাপিত হতো। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে গণেশ, লক্ষ্মী এবং অন্যান্য দেব-দেবীর পূজার মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা করা হতো। আজও আমরা দেখতে পাই, পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন মূর্তি, প্রতীক ও হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের ছায়া স্পষ্ট। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করা হয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।" (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)।

    তাহলে আমরা কীভাবে এমন একটি উৎসবে অংশ নিতে পারি, যার মূল উৎসই ইসলামের বিরোধী?

    এই তথাকথিত বর্ষবরণের ঐতিহাসিক পটভূমি আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যাক। পহেলা বৈশাখের উৎপত্তি সাধারণত মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে (১৫৮৪ সাল) যুক্ত করা হয়, যিনি হিজরি পঞ্জিকার পরিবর্তে একটি সৌর পঞ্জিকা চালু করেছিলেন। কিন্তু এই পরিবর্তনের পেছনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। আকবরের শাসনকালে হিন্দু জমিদার ও সম্প্রদায়ের চাপে এই বঙ্গাব্দ চালু হয়, যা তাদের ধর্মীয় ও কৃষি অনুষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ঐতিহাসিক গ্রন্থ যেমন ‘বারভূঁইয়া’ (আনন্দনাথ রায়) এবং অন্যান্য উৎসে দেখা যায়, এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেদনের ফল ছিল, যারা তাদের পূজা-অর্চনা ও ফসলি উৎসবের জন্য এই পঞ্জিকা চেয়েছিল। বৈশাখ মাসের শুরুতে মা অন্নপূর্ণার পূজা, নবান্ন, এবং অন্যান্য হিন্দু রীতি এই দিনের মূলে জড়িয়ে আছে।এটি ভারতের অন্যান্য হিন্দু উৎসবের সঙ্গেও মিলে যায়—যেমন পাঞ্জাবের ‘বৈশাখী’ বা দক্ষিণ ভারতের ‘বিষু’, যা হিন্দু সৌর পঞ্জিকার প্রথম দিন হিসেবে পালিত হয়। মুঘল আমলের আগেও বাংলার গ্রামীণ হিন্দু সমাজে বৈশাখী মেলা ও ফসলের উৎসব প্রচলিত ছিল। তাই এই দাবি যে পহেলা বৈশাখ বাঙালিদের সর্বজনীন উৎসব, তা একটি ভ্রান্তি। এটি মূলত হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ, যা পরে প্রশাসনিক কাঠামোয় রূপ নিয়েছে। মুঘল আমলে এটি প্রশাসনিক প্রয়োজনে গ্রহণ করা হলেও, এর ধর্মীয় ও মুশরিকী চরিত্র কখনোই পরিবর্তিত হয়নি। ফলে, এটি ইসলামের সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

    পহেলা বৈশাখের আচার-অনুষ্ঠান স্পষ্টভাবে হিন্দু প্রভাবিত। বৈশাখী মেলায় পিঠে-পুলি, নৌকাবাইচ, এবং ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার—এসবই হিন্দু গ্রামীণ জীবনের উৎসবের অংশ। আধুনিক সময়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো আয়োজনও হিন্দু প্রতীক ও মূর্তি দিয়ে সজ্জিত হয়, যা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই উৎসবকে বাঙালি জাতীয়তার প্রতীক বলে যে দাবি করা হয়, তা একটি জোর করে চাপানো ধারণা।

    ১৯৬৭ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে রমনা বটমূলে এই উৎসব শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে। কিন্তু এটি কি সত্যিই বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে? না, এটি ছিল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হিন্দু-প্রভাবিত আয়োজন, যা পরে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী এই উৎসবে কেন অংশ নেবে, যার শিকড়ে রয়েছে হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য?

    আজকের দিনে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এই উৎসবকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পহেলা বৈশাখকে ‘জাতীয় ঐতিহ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে মুসলমানদের তাদের ধর্মীয় পরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। এটি কেবল একটি উৎসব নয়, বরং ইসলামকে অপমানিত করার এবং মুসলমানদের ইমানী চেতনাকে ধ্বংস করার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষরা চায়, মুসলমানরা তাদের দ্বীন ভুলে যাক, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাক এবং একটি ইসলামহীন, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে রূপান্তরিত হয়। এই লক্ষ্যে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পহেলা বৈশাখকে চাপিয়ে দিচ্ছে, যাতে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে দুর্বল করা যায়।

    এই ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার জন্য হিন্দু-মুসলিম একতার নামে এই ধরনের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো হয়েছিল। ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিল যে, মুসলমানদের ইমানী শক্তিই তাদের প্রধান শত্রু। তাই তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মিশ্রণের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়া আরও তীব্র হয়েছে। পহেলা বৈশাখকে ‘জাতীয় পরিচয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানদের তাদের ইসলামী শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ও ইসলামবিরোধী অপশক্তি, যারা মুসলমানদের দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে একটি নাস্তিক্যবাদী সমাজ গড়ে তুলতে চায়।

    কিছু মুসলমান অজ্ঞতা বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে মনে করেন যে, পহেলা বৈশাখ কেবল একটি সাংস্কৃতিক উৎসব, এর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। ইসলাম কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। যদি কোনো সংস্কৃতি বা প্রথা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পহেলা বৈশাখের মূল উৎস ও চর্চা যখন শিরক ও মুশরিকী কার্যকলাপের সাথে জড়িত, তখন এটি কীভাবে একজন মুসলমানের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

    আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামী চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলাম কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে না। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র বিধানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনোই বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বিজাতীয় প্রথার বিরোধিতা করেছেন এবং আমাদেরকে তাওহীদের পথে অটল থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন এমন একটি উৎসবে অংশ নেবো, যা আমাদের দ্বীনের মূলনীতির বিরুদ্ধে যায়?

    প্রিয় মুসলিম উম্মাহ, এখন সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার। আমাদের ইমান রক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই এই ধরনের শিরকি ও বিদআতি উৎসব থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। একজন প্রকৃত মুসলমানের জন্য একমাত্র উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা, যা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর বাইরে যেকোনো উৎসব গ্রহণ করা আমাদের ইমানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

    আসুন, আমরা সকলে মিলে বিজাতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করি এবং এমন কোনো কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখি, যা আমাদের তাওহীদকে দুর্বল করতে পারে। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের ইমানকে অটুট রাখুন।


    আমাদের করণীয়:

    প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা যখন পহেলা বৈশাখের মতো শিরকি ও বিদআতি উৎসবের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয়েছি, তখন আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত? আমাদের ইমান রক্ষা এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমাদের করণীয় কী? আসুন, আমরা এই বিষয়ে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা গ্রহণ করি এবং আমাদের দায়িত্ব পালনে অটল থাকি।

    প্রথমত, আমাদের দায়িত্ব হলো ‘আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’—ভালো কাজের আদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা। এটি প্রত্যেক মুসলমানের উপর একটি ফরয দায়িত্ব।

    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন:
    وَلۡتَكُنۡ مِّنۡكُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
    "তোমরা মানুষের মধ্যে এমন একটি দল হও, যারা ভালোর দিকে আহ্বান করে এবং ভালো কাজের আদেশ দেয় আর মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে; আর তারাই সফলকাম।" (সূরা আল-ইমরান: ১০৪)

    আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দিয়ে বন্ধ করে; যদি তাতে সক্ষম না হয়, তবে জিহ্বা দিয়ে; আর যদি তাতেও না পারে, তবে অন্তর দিয়ে তার প্রতিবাদ করবে। আর এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।" (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯)। তাই পহেলা বৈশাখের মতো শিরকি ও বিদআতি কার্যক্রম দেখে আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদের সাধ্যমতো এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে এবং মানুষকে সতর্ক করতে হবে।

    দ্বিতীয়ত, যেখানে যেখানে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, সেখানে আমাদের দাওয়াতি কাজে নিয়োজিত হতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হলো মানুষকে সচেতন করা, তাদেরকে তাওহীদ ও ইমানের পথে আহ্বান করা। আমরা তাদের বোঝাতে পারি যে, এই উৎসবের মাধ্যমে শিরক ও কুফরীর প্রসার ঘটছে, যা একজন মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। এই দাওয়াতি কাজ আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে—গ্রামে, শহরে, স্কুল-কলেজে, বাজারে, সর্বত্র। আমরা যদি নিজেরা সচেতন থাকি এবং অন্যদেরও সচেতন করি, তাহলে এই বিপদ থেকে আমাদের উম্মাহকে রক্ষা করা সম্ভব।

    তবে এই কাজ কীভাবে করবো? শুধু ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিন কাজ করে কী লাভ? সেদিন একদিকে মানুষ শিরকি উৎসবে মেতে উঠবে, আর অন্যদিকে আমরা তাদের ডাকবো—এতে ফলাফল খুব একটা কার্যকর হবে না। বরং আমাদের পরিকল্পনা হওয়া উচিত আরও বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলগত। আমরা ১ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত—অর্থাৎ ১৩ দিন—এই দাওয়াতি কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবো। এই সময়ে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে যাবো, তাদের সাথে কথা বলবো, তাওহীদের গুরুত্ব বোঝাবো, পহেলা বৈশাখের শিরকি ও মুশরিকী দিকগুলো তুলে ধরবো। আমরা আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণ, সামাজিক মাধ্যমে প্রচার—যে যেভাবে পারি, সেভাবে এই বার্তা ছড়িয়ে দেবো। আর ১৪ এপ্রিল, যখন এই উৎসব পালিত হবে, সেদিন আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করবো যেন আমাদের এই কাজ কবুল হয় এবং মানুষ তাওহীদের পথে ফিরে আসে। এই ১৩ দিনের প্রস্তুতি আমাদের কাজকে আরও ফলপ্রসূ করবে, ইনশাআল্লাহ।

    তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই কাজের জন্য কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠীর প্রয়োজন নেই। তাওহীদ ও ইমানের দাওয়াত দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। এটি আপনার ও আমার একার উপরই নির্ভর করে। আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    "তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।" (সহীহ বুখারী, হাদিস: ২৪০৯)। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাই দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি কোনো সংগঠনের অপেক্ষায় ছিলেন না। তাই আমরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে এই কাজ শুরু করবো। আপনি একজনকে বোঝান, সে আরেকজনকে বোঝাক—এভাবে একটি শৃঙ্খল তৈরি হবে। আপনার পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু—সবাইকে এই বার্তা পৌঁছে দিন। এটি আমাদের একার দায়িত্ব, এবং আমরা এতে অবহেলা করতে পারি না।

    প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের ইমান আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই ইমান রক্ষার জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। পহেলা বৈশাখের মতো শিরকি উৎসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হতে হবে। আমরা নাহি আনিল মুনকারের নীতি মেনে এর বিরোধিতা করবো, দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করবো, ১ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রস্তুতি নেবো এবং শেষ দিন আল্লাহ্‌র কাছে কবুলের দোয়া করবো। এই কাজে আমরা একা হলেও যথেষ্ট, কারণ আল্লাহ্‌ আমাদের সাথে আছেন। তিনি বলেন:
    اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا وَّ الَّذِیۡنَ هُمۡ مُّحۡسِنُوۡنَ
    "নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্ম করে।" (সূরা আন-নাহল: ১২৮)

    আল্লাহ্‌ আমাদের তাওফিক দিন, আমাদের ইমানকে শক্তিশালী করুন এবং আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের খেদমতে কবুল করুন।


    ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 day ago.
Working...
X