Announcement

Collapse
No announcement yet.

কাশ্মীর ও করণীয়!!!

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কাশ্মীর ও করণীয়!!!

    الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وأصحابه أجمعين، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين.
    أما بعد:

    India-Modi-RB-20250420184130-1-1.jpg
    لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَۃً لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الۡیَہُوۡدَ وَالَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا ...
    অর্থ: তুমি অবশ্যই মুসলিমদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং সেই সমস্ত লোককে যারা (প্রকাশ্যে) শিরক করে ... (সূরা মায়িদাহ; ৫:৮২)


    আজ আমরা এমন এক সময়ের সাক্ষী হচ্ছি, যখন দুনিয়া নিরব, অথচ অন্যায়ের আগুন চারিদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে। আজকের দুনিয়ায় ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র নিরস্ত্র, নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর নির্মম বর্বরতা চালাচ্ছে। সেই ভূমি, যা এক সময় নবীদের ভূমি ছিল, আজ সেখানে প্রতিটি অলিতে-গলিতে রক্তের নদী বইছে। আজকের দিনেও আমরা দেখতে পাই, গাজা উপত্যকায় শিশুদের, নারীদের, বয়োবৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের অসংখ্য ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল — ইসরাইলি বোমা ও মিসাইলের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

    ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় — ১৯৪৮ সালের নাকবার দিনে ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ হয়েছিল, শত শত গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে অধিকৃত হয়েছিল পূর্ব জেরুজালেম সহ অনেক এলাকা। এরপর ১৯৮২ সালে সাবরা ও শাতিলার মাটিতে কয়েক হাজার নিরস্ত্র শরণার্থী নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। তারপরে ২০০৮-২০০৯ সালের গাজা যুদ্ধ, ২০১২, ২০১৪, ২০২১ — প্রতিবারই ইসরাইল নিজের আধুনিক অস্ত্র দিয়ে পবিত্র ভূমির বুকে ভয়াবহতম গণহত্যা চালিয়েছে। সংবাদ অফিস, স্কুল এমনকি হাসপাতাল পর্যন্ত রেহাই পায়নি।

    ফিলিস্তিনিরা আত্মরক্ষার জন্য যখন ন্যূনতম প্রতিরোধ করে, তখনই ইসরাইল ও তার মিত্ররা এই প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দেয়। ফিলিস্তিনিদের পবিত্র আত্মরক্ষাকে তারা গণমাধ্যমের মিথ্যার বন্যায় ডুবিয়ে দেয়। ইসরাইলের হলুদ মিডিয়া আর পশ্চিমা দোসররা এমনভাবে প্রচারণা চালায়, যেন নিরস্ত্র নারী-শিশুদের হত্যার বৈধতা রয়েছে, আর দখলদারের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ। তারা মানবতার মুখোশ পরে গণহত্যাকে ন্যায্যতা দেয়, দখলদারকে শান্তির প্রতীক বানায়, আর মজলুম প্রতিরোধকারীদের বানায় সন্ত্রাসী। ইসরাইলের যুদ্ধবিমান যখন একের পর এক ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়, শিশুর মৃতদেহ মাটির নিচ থেকে তোলা হয়, তখন বিশ্ব মিডিয়ায় এ দৃশ্যকে আড়াল করা হয়, শুধু ফিলিস্তিনিদের ছোড়া কয়েকটি রকেটের ছবি দেখিয়ে গোটা দুনিয়াকে ভিন্নভাবে প্রোগ্রাম করা হয়।

    অন্যদিকে, কাশ্মীরের মজলুম ইতিহাস আজ আমাদের সামনে আরেকটি কষ্টের অধ্যায় খুলে দেয়। ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের উপর দমনপীড়ন কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা নয়; এটি বহু দশক আগে থেকেই চলে আসছে। স্বায়ত্তশাসন বাতিল তো এক বড় ধাক্কা বটেই, কিন্তু এর বহু আগেই কাশ্মীরকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর বুটের আঘাতে। কাশ্মীরের মুসলিমরা বছরের পর বছর ধরে সহ্য করে এসেছে নৃশংসতা, অপমান আর অবিচারের কালো রাত। তাদের ছেলেদের বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মেয়েদের সম্ভ্রম হরণ করা হয়েছে, শত শত পরিবার থেকে পিতার ছায়া ছিনিয়ে নিয়ে অসংখ্য শিশুকে ইয়াতিম বানানো হয়েছে।

    স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর এই অত্যাচার যেন আগুনের শিখা হয়ে আরো বহুগুণে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান — কিছুই নিরাপদ থাকেনি। কাশ্মীরি মুসলিমরা যখনই এই অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায্য প্রতিবাদ করেছে, তখনই ভারতীয় বাহিনী ইসরাইলি নীতির অনুকরণে নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

    পেহেলগ্রামের ঘটনার পরিণতিতে গোটা কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অথচ ন্যায়পরায়ণ সমাজে কোনো অপরাধীর শাস্তি নির্দিষ্ট অপরাধীর সীমায় থাকা উচিত ছিল; কিন্তু এখানে দেখা গেছে, পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রে দোষারোপ করে নির্মমতার সীমা অতিক্রম করা হয়েছে।

    ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মসজিদ-মাদ্রাসা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। মুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম পাড়াগুলোকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, রাস্তাঘাটে চলাচল করতেও মুসলিমদের অসহনীয় বৈষম্য ও নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এতদূর যে, আজ কাশ্মীরিদের ন্যূনতম জীবনযাপনও এক অসম্ভব সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।

    আরও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই অবিচারের আগুন কেবল কাশ্মীরের উপত্যকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ছে। যেন গোটা দেশের মুসলিমদের একঘরে করে রাখা, সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা এবং ভয়ভীতির মাধ্যমে নতজানু করার বৃহৎ নীলনকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

    আমরা দেখছি, ভারত ঠিক সেই পথ অনুসরণ করছে, যেভাবে ইসরাইল ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে পুঁজি করে গাজা উপত্যকার উপর ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে। একটি ঘটনার অজুহাতে গোটা জাতির উপর ধ্বংসের বল্লম চালানো — এই বর্বরতা আজ ভারতেও নীতিতে পরিণত হয়েছে। নিরীহ মানুষের রক্তের উপর যে কোনো আধিপত্য দাঁড়ায়, তা যে টিকতে পারে না, ইতিহাস তার সাক্ষী।

    ভারত ও ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে, যা তাদের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি, যুদ্ধনীতির কৌশল এবং আঞ্চলিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে। নিচে এই মিলগুলো তুলে ধরা হলো:

    ১. জাতিগত ও ধর্মীয় আধিপত্যবাদকে সামরিক কৌশলে রূপান্তর: ভারত এবং ইসরায়েল—দুই রাষ্ট্রই নিজেদের "ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ" পরিচয়ের উপর রাষ্ট্রীয় ও সামরিক নীতি দাঁড় করিয়েছে। হিন্দুত্ববাদ এবং ইহুদিবাদ—এই দুই মতবাদ তাদের সামরিক শক্তিকে ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠার অস্ত্রে পরিণত করেছে। কাশ্মীরে যেমন ভারত হিন্দুত্ববাদকে সামরিকীকরণ করেছে, ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েল ইহুদি রাষ্ট্রীয়ত্ব প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে।

    ২. বেসামরিক জনগণকে ‘সন্দেহভাজন শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিতকরণ: দু’টি বাহিনীই সামরিক আইন এবং গণতান্ত্রিক আইনের মধ্যকার পার্থক্য মুছে দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি বৈরী দৃষ্টিভঙ্গি নেয়। ভারত কাশ্মীরে AFSPA (Armed Forces Special Powers Act) দিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম ও হত্যা করার অধিকার দেয়, যেমন ইসরায়েল “Administrative Detention” এর নামে ফিলিস্তিনিদের আটকে রাখে কোন বিচার ছাড়াই।

    ৩. চিরস্থায়ী সংঘাত নীতির চর্চা: উভয় বাহিনী দীর্ঘমেয়াদী, স্থায়ী যুদ্ধাবস্থা বজায় রাখতে অভ্যস্ত এবং কৌশলগতভাবে তা পছন্দ করে। এটি তাদের অস্ত্র বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের জন্য কাশ্মীর এবং ইসরায়েলের জন্য গাজা ও পশ্চিম তীর—এই অঞ্চলগুলো যেন তাদের স্থায়ী ‘টেস্টিং গ্রাউন্ড’।

    ৪. অস্ত্র প্রযুক্তিতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দিকে ঝুঁক: 'Make in India’ ও ‘Blue and White Defense’—এই দুই কর্মসূচির মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রই স্থানীয় সামরিক প্রযুক্তিকে উৎসাহ দিচ্ছে। তারা একে অপরের কাছ থেকেও অস্ত্র ও প্রযুক্তি আদানপ্রদান করছে। ভারত ইসরায়েল থেকে হারপুন ড্রোন, স্পাইক মিসাইল সিস্টেম, এবং স্পাই প্রযুক্তি (যেমন পেগাসাস) ক্রয় করেছে।

    ৫. মুসলিম উম্মাহর প্রতি যৌথ বিদ্বেষ: ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট মিল হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে 'জঙ্গিবাদ দমন' হিসেবে উপস্থাপন করা। তাদের রাষ্ট্রীয় বক্তব্য ও কৌশল মুসলিম বিশ্বকে ভেঙে দেওয়ার দিকে ঝুঁকে আছে, বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের মতো দেশগুলোর বিপক্ষে।

    ৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দোহাই: দু'দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী মিত্র। মার্কিন অস্ত্র কোম্পানি, CIA ও ন্যাটোর প্রশিক্ষণ কাঠামো—এই সব কিছুতে তারা সমান অংশগ্রহণ করে। আফগান যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য টানাপোড়েন—সব জায়গায় এই দুই বাহিনী রয়েছে পরোক্ষভাবে জড়িত।

    ৭. বিরোধী মত ও সাংবাদিকতার দমন: উভয় দেশেই যুদ্ধ ও দখলদারির সমালোচনা করা মানে “দেশদ্রোহ”। ভারতের UAPA এবং ইসরায়েলের “Anti-Terror Law”—এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ মানুষকে দমন করা হয়।

    ভারতের সামনে এখন দুটি পথ খোলা। তারা এই দুইটির যেকোনো একটি বেছে নেবে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো — তারা যেটিই নির্বাচন করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেই পথ মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, নিপীড়ন এবং নির্মম আগ্রাসনেরই রাস্তা হয়ে দাঁড়াবে।

    এক, ভারত এখন যা করতে পারে, তা হলো যুদ্ধের কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরি করে কাশ্মীরের মুসলিম জনগণের ওপর সরাসরি ফিলিস্তিন মডেলে একটি নির্মম আগ্রাসন শুরু করা। পরিকল্পনা হবে অত্যন্ত সুসংগঠিত: মুসলিমদের ঘরবাড়ি, গ্রাম, জনপদ — সব কিছু ভূমিসাৎ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হবে। তারপর সেখানে হিন্দুদের জন্য পরিকল্পিতভাবে নতুন বসতি স্থাপন করা হবে, যাতে কাশ্মীরের জনসংখ্যার ভারসাম্য চিরতরে বদলে যায়।

    এই আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে ভারত তাদের চিরচেনা ছক অনুযায়ী 'আত্মরক্ষার' বুলি আওড়াবে। তারা বলবে, কাশ্মীরে 'উগ্রপন্থা দমন', 'জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা', 'সন্ত্রাস নির্মূল' — এসবের নামে এই নির্মম অভিযান চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাশ্মীরি মুসলিমদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে 'সন্ত্রাসবাদ' বলে প্রচার করা হবে। আর নিজেদের দখলদারিত্ব ও গণবসতি স্থাপনকে তুলে ধরা হবে 'শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস' হিসেবে।

    বাস্তবে, এটি হবে একটি সুপরিকল্পিত জাতিগত নির্মূল অভিযানের আধুনিক রূপ। কাশ্মীরের ভূমিতে মুসলিম উপস্থিতির চিহ্ন মুছে ফেলতে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে জনসংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা হবে। কাশ্মীরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বৈচিত্র্য — সব কিছু চাপা পড়বে দখলদারিত্বের ভারী বুটের নিচে।

    ভারত জানে, যদি বিশ্ববাসীকে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" নামের মোড়ক পরিয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা যায়, তবে অনেক দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব অপরাধকে নীরব সমর্থন দেবে। একই কৌশলে ইসরাইল ফিলিস্তিনে বছরের পর বছর দখলদারিত্ব কায়েম রেখেছে। ভারতও সেই পথেই হাঁটতে চায়।

    দুই, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে যাওয়া, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের আধিপত্য কায়েম করার জন্য, এটা এখন ভারতের অঙ্গীকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন, আরেকদিকে প্রতিবেশী দেশের প্রতি প্রতিশোধের আগুনে ঊজ্জ্বল হওয়া, এই যুদ্ধ ধীরে ধীরে একটা মহাযুদ্ধে পরিণত হবে, এটাই সত্য।

    ভারত পাকিস্তানসহ একাধিক মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে পারে এবং এটি তার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আধিপত্য ও ক্ষমতা কায়েম করার প্রক্রিয়া হতে পারে। ভারত যদি নিজের শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তানকে পরাজিত করতে চায়, তাহলে এটি এক বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে পারে, যেখানে কেবল সামরিক শক্তি ব্যবহার নয়, বরং রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতারও অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ব্যবহার রয়েছে।

    এটি কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকলেও, একে একে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও এক বড় ধরনের সংকট হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারত, ইজরায়েল এবং আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ় হচ্ছে, তা মুসলমানদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। ইজরায়েল এবং আমেরিকার সমর্থন, ভারতের জন্য এটি একরকমের শক্তির উৎস হতে পারে, যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।

    এটা হয়তো অনেকের কাছে কল্পনা মনে হতে পারে, কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে যে, অহংকার মানুষকে এমন কিছু করতে বাধ্য করে, যা সে স্বাভাবিক অবস্থায় কখনও করবে না। এই অহংকারই আবু জাহেলকে বদরের যুদ্ধের আগে এতটা দম্ভিত করেছিল। যেভাবে সে বাইতুল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, اللهُمَّ أَيَّنَا كَانَ أَحَبُّ إلَيْكَ وَأَرْضَى عِنْدَكَ فَانْصُرْهُ الْيَوْمَ اللَّهُمَّ" اَوْلاَنَا بِالْحَقِّ فَانْصُرْهُ الْيَوْمَ ‘হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে তোমার নিকটে সর্বাধিক প্রিয় ও তুমি যার প্রতি সর্বাধিক সন্তুষ্ট, আজ তুমি তাকে সাহায্য কর। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে দল সর্বাধিক হক-এর উপরে আছে, তুমি আজ তাকে সাহায্য কর."

    আজ ভারতও ঠিক সেই একই পথেই হাঁটছে। তারা ভুলে যাচ্ছে, যে জাতি অহংকারে ভোগে, তার পতন খুব দ্রুতই হয়। গতকালও যেমন বদরের ময়দানে আবু জাহেলের পতন হয়েছিল, তেমনই আজ ভারত যদি একই পথে এগিয়ে যায়, তার পরিণতি হতে পারে তীব্র, ধ্বংসাত্মক।

    দুটি কৌশলের মধ্যে ভারত গ্রহণ করুক না কেন, যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে—একটি অস্পষ্ট অথচ অস্বীকারযোগ্য নয় এমন শব্দ, যা কেবল সীমান্ত রেখার ওপার থেকে নয়, বরং মিডিয়া, রাজনীতিকের বক্তৃতা, এবং জনমনে জমে থাকা শঙ্কার ভেতর থেকেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। হয়তো এই মুহূর্তে আমরা সরাসরি যুদ্ধের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো রাস্তাঘাটে ট্যাংকের শব্দ নেই, আকাশে যুদ্ধবিমানের গর্জন নেই, তবুও . . .

    আমরা যারা সরাসরি এই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে নেই, তাদের মাঝেও প্রশ্ন জাগে: এই উত্তেজনার মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী?

    আমাদের প্রথম করণীয়, নিজেদের ঈমানকে মজবুত করা—এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। কারণ চারদিকে যখন যুদ্ধের গুঞ্জন, সৈন্য সমাবেশ, রণকৌশল আর সংখ্যার ভয় দেখানো হয়, তখন একজন ঈমানদারের হৃদয় ভয় নয়, বরং আস্থায় ভরে ওঠে। শত্রুরা পরিকল্পনা করবেই—এটাই তাদের স্বভাব। কিন্তু মু’মিনের জবাব পরিকল্পনায় নয়, নির্ভরতায়। ভয় নয়, বরং সেই শক্তি যা আসে এই আয়াত থেকে:

    "الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ"

    অর্থ: যখন মানুষ ভয় দেখায়—তোমাদের ঘিরে ফেলা হয়েছে, সময় ফুরিয়েছে—তখন ঈমানদারদের ঈমান আরও বেড়ে যায়। তারা পালায় না, পেছায় না, ভয়েও চুপসে যায় না। তারা বলে, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম রক্ষাকারী।” (আলে ইমরান; ৩:১৭৩)

    আজকের দিনেও সেই একই মনোভাব দরকার। কারণ এই যুদ্ধ কেবল বুলেটের না, এটা মন-ভাঙার যুদ্ধ, ভয় ছড়ানোর যুদ্ধ। তারা চায় আমরা মাথা নিচু করি, কণ্ঠ নিঃস্ব করি, ভেতরে ভেঙে পড়ি। কিন্তু মু’মিন জানে—যে কণ্ঠে “হাসবুনাল্লাহ” উচ্চারিত হয়, তাকে দমিয়ে রাখা যায় না।

    আমাদের দ্বিতীয় করণীয়—এই জাতির মানসিকতা যেন বনী ইসরাইলের মতো না হয়। ইতিহাস জানে, যখন তাদের নবী মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করেছিলেন, তারা বলেছিল,
    قَالُوۡا یٰمُوۡسٰۤی اِنَّا لَنۡ نَّدۡخُلَهَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوۡا فِیۡهَا فَاذۡهَبۡ اَنۡتَ وَ رَبُّكَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا هٰهُنَا قٰعِدُوۡنَ

    তারা বলল, ‘হে মূসা, আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকে। সুতরাং, তুমি ও তোমার রব যাও এবং লড়াই কর। আমরা এখানেই বসে রইলাম’। (সূরা মায়িদাহ; ৫:২৪)

    “তুমি এবং তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা তো এখানেই বসে থাকব।” একটুও না কাঁপা, একটুও না লজ্জা—নবীর মুখে এই কথা ফিরিয়ে দেওয়ার স্পর্ধা তারা দেখিয়েছে, কারণ তাদের ঈমান ছিল দুর্বল, হৃদয় ছিল দাসত্বে বন্দি।

    কিন্তু আমরা সেই জাতি—যারা উম্মতে মুহাম্মদ। আমাদের সামনে উদাহরণ সাহাবায়ে কিরাম, যারা কোনো আদেশ শুনলে বলতেন: " سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا", আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। তারা সংখ্যায় কম ছিল, অস্ত্রে দুর্বল ছিল, কিন্তু তাদের ছিল ঈমান, ছিল আস্থা, ছিল আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরতা।

    আজ আমাদেরও সেই সাহাবিদের মত হতে হবে—যারা তাদের মুজাহিদ নেতাদের ডাক শুনে প্রশ্ন করে না, বাহানা খোঁজে না, বরং সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, “যেখানে আপনি যাবেন, আমরা সেখানেই যাব, যুদ্ধে আপনি নামলে, আমরা বুক পেতে নামব।” এই সময়ও আমাদের সেই সাহসিকতা, সেই আনুগত্য, সেই ঈমান দরকার।

    আমাদের তৃতীয় করণীয়— আমাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিভেদের বিষাক্ত শেকড় উপড়ে ফেলা। ফিকহগত মতপার্থক্য, কৌশলগত ভিন্নতা কিংবা তানজিমি দ্বন্দ্ব—এইসব বিষয় আমাদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে, ঐক্যের বদলে সংঘাত, সহযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা তৈরি করে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সতর্ক করে বলেন:

    "...وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡهَبَ رِیۡحُكُمۡ وَ اصۡبِرُوۡاؕ..."
    "...তোমরা পরস্পর বিবাদ কোরো না, তা না হলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি লোপ পাবে। ধৈর্য ধরো..." (সূরা আল-আনফাল ৮:৪৬)

    এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন—বিরোধ একমাত্র পথ, যা আমাদের সম্মিলিত শক্তিকে নিঃশেষ করে দেয়, আমাদের সাহস, স্পর্ধা ও স্থিরতা ভেঙে চুরমার করে দেয়।

    আমাদের চতুর্থ করণীয় হলো— ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেবল একটি সীমান্তের সংঘাত, সাময়িক রাজনৈতিক উত্তেজনা কিংবা কাশ্মীরের মুসলিম নিধনযজ্ঞ হিসেবে নয়, বরং গোটা মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা।

    আমাদের দৃষ্টিকোণ কেবল আঞ্চলিক জিহাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা চলবে না। আজকের এই পরিস্থিতিতে, আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনাকে এমনভাবে এগিয়ে নিতে হবে, যাতে আমরা কেবল এই যুদ্ধ থেকে সাময়িক প্রতিরোধ কিংবা শত্রুকে প্রতিহত করার চিন্তা না করি, বরং দীর্ঘমেয়াদে উম্মাহ সামরিকভাবে কল্যাণ এবং বিজয় লাভ করতে পারে।

    তাই আমাদের এখন সময় এসেছে, গ্লোবাল জিহাদের পথিকৃত নেতাদের, শায়েখদের এবং মুজাহিদদের শরণাপন্ন হওয়ার। কারণ তারা বছরের পর বছর ধরে উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণে কাজ করে চলেছেন, জিহাদে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামি সংগ্রামে নিজেদের আদর্শিক ভিত্তি শক্ত করেছেন। তাদের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য অমূল্য। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের দিকনির্দেশনাগুলো ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা এবং একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করা। তারা যেভাবে একত্রিত হতে, সংগ্রাম করতে এবং উম্মাহর বৃহত্তর উদ্দেশ্যগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে শিখিয়েছেন, সেভাবে আমাদেরও নিজেদের শক্তি এবং সম্পদ একত্রিত করতে হবে।

    আমাদের পঞ্চম করণীয় হলো, যারা কোনো জামাত বা সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন না, তাদের উচিত হবে আল-কায়দার কিতাব, লেকচার, আর্টিকেল, দিকনির্দেশনা এবং নীতিমালা—যেগুলো প্রকাশ্যে রয়েছে—এসব বিষয় গভীরভাবে রপ্ত করা। এই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজে প্রস্তুত করা, নিজে নিজে দাওয়াতি কাজ শুরু করা এবং সেই সকল জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উম্মাহর কল্যাণে নিজেকে জান ও মাল দিয়ে নিবেদন করা।

    প্রতিটি মুসলিমের জন্য এই দায়িত্ব অপরিহার্য, যে তারা নিজের অবস্থান থেকে উম্মাহর কল্যাণে অবদান রাখবে, যেন ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য সবার মাঝে পৌঁছাতে পারে। এই পথিকৃৎ নেতৃত্ব এবং ত্যাগের মাধ্যমে আমরা উম্মাহর শক্তি এবং সম্মান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।

    আমরা স্পষ্ট জানি, সামনে যে যুদ্ধ আসছে তা হবে একটি অসম যুদ্ধ। এখানে সংখ্যার দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে থাকবো, অস্ত্র-শস্ত্র কিংবা রসদের দিক দিয়েও আমাদের অবস্থান হবে দুর্বল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানরা কখনোই সংখ্যা বা শক্তির উপর নির্ভর করে বিজয় অর্জন করেনি।

    মনে রাখবেন,


    এক,
    "সামান্য কষ্ট দেয়া ব্যতীত তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তবে তোমাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অতঃপর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।"
    (সূরা আলে ইমরান, ৩:১১১)


    দুই,
    "অতিসত্বরই আমি (আল্লাহ) কাফিরদের অন্তরে ভয় সঞ্চার করব, কারণ তারা আল্লাহর শরীক গ্রহণ করেছে যার স্বপক্ষে তিনি কোনও সনদ অবতীর্ণ করেননি, তাদের নিবাস হবে জাহান্নাম এবং যালিমদের নিবাস কতই না জঘন্য!
    (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৫১)


    এবং তিন, "হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।" (সূরা আলে ইমরান, ৩:২০০)​
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ
Working...
X