
শুনেছিলাম আবরার ফাহাদের শাহাদাতের পর ততকালীন বুয়েট কর্তৃপক্ষ তার রুমে থাকা কুরআন ও ইসলামি বইয়ের ছবি প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছিল। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আবরারকে যেন তার ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পরিচিত করা না হয়।
আমরা ভেবেছিলাম জলাতঙ্ক রোগের মতো ইসলামাতঙ্ক রোগ শুধু বাম আর লীগেরই আছে, কিন্তু অনেকেই আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করছেন।
আজকাল বিভিন্ন সভাসেমিনারে আবরারকে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সৈনিক, ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতীক বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, এগুলো সবই সত্য, কিন্তু অসম্পূর্ণ সত্য বা অর্ধসত্য।
কারণ, আবরারের এই যেসব বৈশিষ্ট্য এই যে চেতনা এর কেন্দ্রবিন্দু বা প্রাণভোমরা ছিল ইসলাম, কিন্তু এসব আলোচকরা সচেতনভাবে তার এই চেতনাকে ধামাচাপা দিতে চায়।
আমার জানামতে আবরার কখনো প্রচলিত ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি; তিনি সত্য উচ্চারণ করতেন তার আকীদা-বিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার জায়গা থেকেই।
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের গভীরে যে ভারতবিরোধীতার বীজ রয়েছে তা ঈমান ও ইসলামের মাটিতেই রোপিত। এর সূত্র রয়েছে ৪৭ এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার ইতিহাসের মধ্যে।
ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি নিয়ে আবরারের প্রতিবাদও মূলত ইসলামি আত্মমর্যাদার প্রতিফলন। একজন মুসলমানের দেশ, সম্পদ ও স্বাধীনতা পৌত্তলিকদের দাসত্বে সমর্পণ করা আল্লাহর বিধানের বিরোধী—এই চেতনা থেকেই ছিলো তার প্রতিবাদ।
ইসলাম-বিমুখ জাতীয়তাবাদী জাহিলিয়াতের চক্রে নিমজ্জিত সমাজের অনেকে আবরারের আদর্শকে ভয় পান। তাই আবরারের নাম উচ্চারণের সময়, তারা অনেকেই তার ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে যান।
কারণ, তারা জানেন, যদি ইসলামকে তার চেতনার কেন্দ্র হিসেবে স্বীকার করা হয়, তাহলে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ইসলামবিমুখ জাতীয়তাবাদী প্রতিরোধের বয়ান খানখান হয়ে ভেঙে পড়বে।
তাদের ভয় হলো, আবরার নামটি যদি ইসলামি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এই জাতির তরুণেরা আবার ইসলামি আদর্শে ফিরবে।
এ কারণেই দেখা যাচ্ছে, ইসলাম-বিমুখ এসব লোকেরা আবরারের মৃত্যু নিয়ে যতই ভারত বা ফ্যাসিবাদের বিরোধিতার কথা বলেন, তারা তার ইমানি চেতনার কথা ততোটাই চেপে রাখতে চান।
এরা ভালো করে জানে যে, যদি আবরারদের চেতনা ইসলামকেন্দ্রিক হয়, তাহলে “নিউট্রাল” জাতীয়তাবাদ তার অবস্থান হারাবে। ইসলাম হয়ে উঠবে সমাজ পরিবর্তনের প্রেরণা। আর এই ভয় থেকেই তারা আবরারের অবদান থেকে ইসলামকে মুছে ফেলতে চায়।
কিন্তু, আমরা তা হতে দেব না। ইনশা আল্লাহ।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত