আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
ইসলাম ও গণতন্ত্র
।।মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।।
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
ইসলাম ও গণতন্ত্র
।।মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।।
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম অধ্যায়
তাকফিরের মাসআলায় আহলে সুন্নাতের পন্থা
তাকফিরের মাসআলায় আহলে সুন্নাতের পন্থা
তাকফিরে হক : আহলে সুন্নাতের মাসলাক
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাথে সাথে এতে দাখেল হওয়ার তরিকাও বলে দিয়েছেন। এ কারণে নামায ফরয করেছেন, সাথে সাথে এতে দাখেল হওয়ার শর্তাবলীও বর্ণনা করেছেন। তেমনিভাবে নামায শুরু করার পর যে সব কারণে নামায ভেঙ্গে যায়, যদিও সে যথারীতি রুকু সিজদা করতে থাকে... একবার নামায থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর অর্থাৎ নামায ভেঙ্গে যাওয়ার কোন পদ্ধতিতে আবার দাখেল হওয়া যায়, নামায দ্বিতীয়বার শুরু করা যায়? এসবই বলে দিয়েছেন।
উদাহরণ স্বরূপ কোনো ব্যক্তি সহীহ তরিকায় নামায শুরু করেছে। কিন্তু নামাযের ভেতর সে এমন কাজ করেছে, যার দ্বারা নামায ভেঙ্গে যায়। এরপরও সে যথারীতি নামায পড়ে গিয়েছে। রুকু করেছে, সিজদা করেছে। এমন ব্যক্তিকে কি কেউ নামায পড়ছে বলে বলবে? কখনাই না। কারণ যদিও সে বাহ্যিকভাবে নামায আদায়কারীর মত আমল করছে, কিন্তু নামাযের ভেতর সে এমন একটা কাজ করেছে, যার কারণে বাস্তবিকই সে নামায থেকে বের হয়ে গিয়েছে। এজন্য তার জন্য জরুরি আবার প্রথম থেকে নামায শুরু করা।
তাই জেনে রাখা উচিত যে, দুনিয়াতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হল ঈমান, এই ঈমানে দাখেল হওয়ার তরিকা কি...? আর দাখেল হওয়ার পর এই ঈমানকে সহীহ রাখা এবং নষ্ট হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার জন্য কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি? এগুলোর ইলম অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের বিপরীত বস্তু অর্থাৎ কুফুর সম্পর্কে জ্ঞান না থাকবে, ঈমান কি করে চিনবেন? কি করে ঈমান চেনা সম্ভব? সেই বিষয়গুলো কি যা ঈমান ও কুফুরের সীমা চিহ্নিত করে দেয়। মুসলমান কে আর কাফের কে? একজন কাফের কিভাবে মুসলমান হয়, আর সেই বিষয়গুলোই বা কি যার দ্বারা একজন মুসলমান কালেমা পড়া এবং নামায রোযা পালন করার পরও কাফের হয়ে যায়?
ইসলামে যদি এই সমস্যাগুলো না থাকত এবং সালফে সালেহীন যদি এসব বিষয় বর্ণনা না করতেন, ঈমানের সীমান্তগুলো কি করে হেফাজত করা হত? সালফে সালেহীন যদি তাকফিরের অধ্যায় গোপন করে যেতেন, ঈমান তাহলে খেলনা ও উপহাসে পরিণত হত। প্রবৃত্তিপূজারীরা যা ইচ্ছা করতে থাকত। তাদের লাগামহীন জবান আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় গতিতে চলত। রহমাতুল্লিল আলামিনকে নিয়ে ঠাট্টা উপহাস করত। আবার জোর গলায় কালেমা পড়ে নিজের মুসলমানিত্বও জাহির করে বেড়াত।
হযরত ওলামায়ে কেরাম যদি এই বিষয়গুলো বর্ণনা না করতেন, তবে বর্তমানে বাতিল ফেরকাগুলোকে বাতিল বলার কেউ থাকত না। কাদিয়ানীদেরকেও মুসলমান মনে করা হত এবং তাদের ভক্তরা তাদেরকে “কালেমাওয়ালা' প্রমাণ করে “আহলে কিবলা’র মধ্যেই গণ্য করত। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হল যেই ফেরকার উৎস ও অস্তিত্বেই মিথ্যা এবং ভ্রান্ততা নিহিত, কারণ তারা কখনো জিবরাইল আমীনকে দোষারোপ করত। কখনো রহমাতুল্লিল আলামীনের ক্রটি চিহৃত করত। কখনো উম্মাহাতুল মুমিনীনদের বিরুদ্ধে মনের জ্বালা মিটাত। কখনো আসহাবে রাসূলের বিরুদ্ধে ঘৃণার তীর বর্ষণ করত। এরপর একবার উচ্চ আওয়াজে কালেমা পড়ে নিজের মুসলমান হওয়ার প্রমাণ দিত।
কিন্তু এটা কি করে সম্ভব যে, দুনিয়ার ধন-দৌলত হেফাজত করার ব্যবস্থা করা হয়, আর দুনিয়াতে যার চেয়ে বড় কোনো দৌলত নেই, যা ছাড়া কারো কোনো আমল কবুল হয় না, তা হেফাজত করার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না!
এজন্য আল্লাহ তায়ালা ঈমান হেফাজতের উসুল ও মূলনীতি বলে দিয়েছেন। এই অমূল্য সম্পদ কিভাবে নিরাপদ থাকতে পারে, আর কিভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, তা তিনি পরিস্কার বলে দিয়েছেন। ঈমানের সীমানা কি আর কুফরের সীমানা কোথায় থেকে শুরু হয়, কোন ঈমান আল্লাহর দৃষ্টিতে ঈমান, আর কোন কোন বিষয় একে নিফাক ও কপটতায় রূপান্তর করে, তা তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।
এ কারণে হযরত ওলামায়ে কেরাম “তাকফির অধ্যায়" বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান ও কুফরের মাঝে যেই সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, উম্মতকে তাঁরা তার পাবন্দ বানিয়েছেন। এজন্য একজন মুসলমানকে যেভাবে কাফের বলা বিপদজনক বিষয়, তেমনিভাবে কোন কাফেরকে মুসলমান বলাও গুরুতর বিপদজনক। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি, উভয় ক্ষেত্রে এ’তেদাল ও ভারসাম্য বজায় রাখা।
স্মর্তব্য, হোয়াইট হাউস যেটা বলবে সেটাই ভারসাম্যপূর্ণ নয়। লন্ডন ও প্যারিস যেটা বলবে সেটাই ভারসামপূর্ণ নয়। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল যেটাকে এ’তেদাল বলেছেন, ভারসাম্যপূর্ণ বলেছেন এবং সালফে সালেহীন দলে দলে আমাদের পর্যন্ত যা পৌঁছিয়েছেন, কেবল সেটাই এ’তেদাল ও ভারসাম্যপূর্ণ।
সুতরাং কারো এই ভ্রান্তির শিকার হওয়া উচিত নয় যে, আলেম সমাজ এমনিতেই একজনকে কাফের বা মুরতাদ ঘোষণা করে। মনে রাখবেন, এটা শয়তানের কথা। শয়তান তার কর্মীদের মুখে এমন কথা প্রকাশ করে থাকে। আলেম ওলামারা কাউকে কাফের বলেন না। ওই ব্যক্তি তার আমলের কারণে পূর্বই কাফের হয়ে গিয়েছিল। আলেমরা শুধু তার কুফরের কথা প্রকাশ করেন যে এই ব্যক্তি এমন কথা বলেছে, এমন কাজ করেছে, যা কালেমা পড়া সত্ত্বেও কাফের বানিয়ে দেয়। এমনকি হযরত আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
নামায, যাকাত, রোযা, এবং হজ্ব ছেড়ে দেয়া যেমন ‘ফিসক', তবে শর্ত হল এগুলোর ফরয হওয়াকে স্বীকার করে, কিন্তু আমল করে না, এমনিভাবে সালাত, যাকাত, সওম এবং হজ্বের ‘তা’বির' স্বীকার করা এবং গ্রহণ করার পর এগুলোকে মারুফ এবং মুতাওয়াতির শরয়ী অর্থ থেকে বের করে শরীয়ত পরিপন্থি অর্থে ব্যবহার করা এবং এমন ব্যাখ্যা করা যা শুধু কুরআন-হাদীসের খেলাফই নয় বরং চৌদ্দশত বছরের ভেতর কোন আলেমেদীনও করেননি- ইসলামের ভাষায় এবং কুরআনের পরিভাষায় তার নাম ‘ইলহাদ’। আর ওই ব্যক্তির নাম ‘মুলহিদ'। পবিত্র কুরআনের এই শব্দগুলো- কুফর, নিফাক, ইলহাদ, ইরতিদাদকে মানুষের বিশেষ আকিদা, কথা, কাজ এবং নৈতিকতার দিক থেকে ব্যক্তি এবং দলের জন্য ব্যবহার করেছে। আর পৃথিবীর বুকে যত দিন কুরআনে কারীম বিদ্যমান থাকবে, এই শব্দগুলো, এর এই অর্থ এবং এর প্রয়োগক্ষেত্রও থাকবে।
এখন ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হল, তারা উম্মতকে জানাবেন, এই শব্দগুলোর ব্যবহার কাদের বেলায় কোন সময় সঠিক হবে এবং কাদের বেলায় কোন সময় ভুল হবে। অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম বলবেন, যেভাবে একজন ব্যক্তি বা ফেরকা ঈমানের নির্ধারিত দাবি পূরণ করার পর মুমিন হয় এবং তাকে মুসলমান বলা হয়, তেমনিভাবে এই দাবি পূরণ না করার কারণে একজন ব্যক্তি ও ফেরকা ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে যায়। উম্মতের আলেমদের এটাও দায়িত্ব যে তারা এই সীমানা ও এর বিস্তারিত বিবরণ অর্থাৎ ঈমানের দাবি এবং কুফরের কারণ, কুফরি আকিদা, কথা ও কাজের সীমানা নির্ধারিত করে দিবেন। যাতে কোনো মুমিনকে কাফের, বা ইসলাম থেকে খারেজ, বলতে না হয়। তেমনিভাবে কোন কাফেরকেও যেনো মুমিন এবং মুসলমান বলা না লাগে। ঈমান ও কুফরের সীমানা এভাবে নির্ধারিত ও চিহ্নিত না হলে ঈমান ও কুফরের ভেদাভেদ এবং পার্থক্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দ্বীন ইসলাম শিশুদের খেলনায় পরিণত হবে। আর জান্নাত জাহান্নাম হয়ে যাবে রূপকথার গল্প!
তাই উম্মতের আলেমদের উপর- যত কিছুই ঘটুক এবং কপালে গাল-মন্দ যত যাই জুটুক- কিয়ামত পর্যন্ত এই দায়িত্ব আছে এবং থাকবে। তারা ভয়-ভীতি এবং নিন্দাকারীদের নিন্দাবাদের পরোয়া না করে শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কাফের, তাকে কাফের হওয়ার হুকুম এবং ফতওয়া দিবে। আর এ ক্ষেত্রে শতভাগ দিয়ানতদারি এবং ইলম ও গবেষণা-অনুসন্ধানের সাথে কাজ করবে। কুরআন হাদীসের নসের আলোকে যে ব্যক্তি বা যে দলই “ইসলাম” থেকে খারেজ প্রমাণিত হবে, ওলামায়ে কেরাম তার ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং দ্বীনের সাথে তার সম্পর্কহীনতার হুকুম এবং ফতওয়া দিবে। কোনো মুল্যেই তাকে মুসলমান হিসেবে স্বীকার করবে না, যতক্ষণ না সূর্য পূর্বের পরিবর্তে পশ্চিম থেকে উদিত হয় অর্থাৎ কিয়ামত না ঘটে।[1]
সুতরাং এ বিষয়টা স্পষ্ট যে, কুফরকে কুফর বলা এবং আহলে কুফরের কুফরির কথা প্রকাশ করা আহলে সুন্নাতের মানহাজ ছিল এবং থাকবে। এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ এই ময়দানে পা দিতে অধম দশ বছর পর্যন্ত ভেবেছে এবং এই অপেক্ষায় থেকেছে যে, আমাদের নির্ভরযোগ্য কোনো আলেম যদি তার এই দায়িত্ব পুরা করতেন! কিন্তু যারাই এর সূচনা করেছেন, আল্লাহর দুশমনেরা তাদেরকে শহীদ করে দিয়েছে। আর বাকি হযরতদের কাছে কেবল আশাই করে গিয়েছি।
এজন্য শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে এবং এ বিষয়ের প্রতি পরিপূর্ণ সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয়েছি যে, কুরআন হাদীস এবং সালফে সালেহীনের পথ থেকে সরে যেন একটা কথাও বলা না হয়। সেই সাথে কট্টরপন্থার সীমান্ত থেকে দূরে এবং চাটুকারিতার দেয়াল থেকে সরে গিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পথে চলেছি। সেই সাথে এ বিষয়ের প্রতিও পরিপূর্ণ দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করেছি যে, আমার কথা যেন ইলমী আন্দাযে ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতিতে হয়। যাতে পাঠকদের দলিল প্রমাণ স্বীকার করতে হঠকারিতা ছাড়া অন্য কোনো কিছু প্রতিবন্ধক না হয় এবং তারা অস্বীকার করে না বসে। এরপরও যদি কেউ অস্বীকার করে, তবে এর দুর্বলতার কারণে অস্বীকার করবে, তা নয়। বরং এজন্য অস্বীকার করবে যে দাসত্ব তাদের চিন্তা ও বোঝার যোগ্যতাই ছিনিয়ে নিয়েছে।
সালফে সালেহীনদের মধ্যে হতে যেসব ইলমের পাহাড়দের হাওয়ালা ও উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, আমানতদার যে কোনো পাঠকই শুধু তাদের নাম দেখেই কথা মেনে নিবে। কিন্তু যার মানার ইচ্ছা নেই, তার কাছে কুরআনও অর্থহীন। সুতরাং যে ব্যক্তি জীবিত থাকবে, দলিল-প্রমাণের উপরই জীবিত থাকবে। আর যে ধ্বংস হবে সে দলিল-প্রমাণের উপরই ধ্বংস হবে। যাতে সে এ কথা বলতে না পারে যে এ বিষয়ে তো আমি কিছু জানতাম না।
খারেজী কারা
মুসলিম বিশ্বের শাসকশ্রেণী দুইশ' বছর ধরে এই উম্মাহর রক্ত চুষছে। নিজেদের হীনপ্রবৃত্তিকে উপাসক বানিয়ে বসে আছে। তাদের কামনা বাসনা পূর্ণ করার জন্য মুসলমানদেরকে অবমাননাকর জীবন যাপনে বাধ্য করেছে। নিজের সন্তানদের পেট ভরানোর জন্য সাধারণ মুসলমানদের মুখ থেকে গ্রাস ছিনিয়ে নিয়েছে। নিজের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য ইসলামী মূল্যবোধকে বিক্রি করেছে । কাফেরদের হাতে মুসলমানদেরকে লাঞ্ছিত করেছে। মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদগুলোকে গুড়া- ভূসির মূল্যে তাদের ইংরেজ প্রভূদের ঝোলায় তুলে দিয়েছে। ইসলামী আইনের জায়গায় ইবলিসি আইন বাস্তবায়ন করেছে এবং এই আইনের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফোর্স গড়ে তুলেছে।
আজ গোটা মুসলিম বিশ্বে জাগরণ শুরু হয়েছে। কাফের ও ইসলামের শক্রদেরকে ঘৃণা করা আরম্ভ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিটি দেশের সাধারণ মুসলমান এই সত্য জেনে গিয়েছে যে, শতাব্দীকাল ধরে এই উম্মাহর উপর যেই লাঞ্ছনা চেপে আছে, এর মূল কারণ এই শাসক শ্রেণীই। তারা নিজেদের ভোগ বিলাসিতার জন্য উম্মতে মুহাম্মাদীকে এতিম ও অসহায়ত্বের কয়েদি বানিয়েছে।
মুসলমানরা এখন তাদের হারানো সম্মান ফিরে নিতে চায়। আমেরিকা ও ইউরোপের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে চায়, বেরিয়ে আসতে চায়। পাপে পিষ্ঠ ও নির্যাতনে নিস্পেষিত এই পরিবেশে তাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তারা চায় ইসলামের সবুজ বসন্তে বেঁচে থাকতে। এক আল্লাহর হয়ে জীবিত থাকতে। তারা মুসলমানদের ইজ্জতের যিন্দেগী দেখতে চায়। শান্তি ও নিরাপত্তার জীবন উপভোগ করতে চায়। তারা আর শুনতে চায় না কোনো আফিয়া সিদ্দিকী ও ফাতেমার আহাজারি....!
এই আবেগ শুধু যুবকদের নয়, বুড়োদের নয়, শিশুদের নয়। এই আবেগ পর্দার আড়ালের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহানী কন্যা এবং আয়েশা ও হাফসার(রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার) জানেশিনদেরও। তারাও আজ মাথায় কাপড় বেঁধে “হয় শরীয়ত, নয় শাহাদত" শ্লোগান দেয়।
তাই প্রবৃত্তির উপাসকদের বাঁচানোর জন্য শাসকশ্রেণী, তাদের সামরিক এবং ধর্মীয় মোহাফেজ ও রক্ষীরা, সবাই তৎপর হয়ে উঠেছে। এরা শক্তি দিয়ে জনগণকে দমন করতে চায়। এরা যুবকদের দ্বীনী আবেগকে নিঃশেষ করতে দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ। এত ব্যাপকভাবে শক্তির প্রয়োগ হচ্ছে, যেন বড় কোনো শক্র দেশের সাথে যুদ্ধ চলছে। থেমে নেই এলোপাতাড়ি ধর্মীয় অস্ত্রের ব্যবহারও। বিশাল বিশাল ফতওয়া দেয়া হচ্ছে। বক্তারা ওয়াজ করছে। বুদ্ধিজীবীদের কলম থেকে আমেরিকান জীবানুর গন্ধ বের হচ্ছে। যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য জিহাদ করছে, তারা বিদ্রোহী, তারা দেশদ্রোহী। যারা হিন্দুস্তানের প্রতিমার শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে, তারা সন্ত্রাসী। যারা ব্যাভিচারের আখড়া ও মদের বৈধতা (পারমিট/অনুমোদন) দানকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে, তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। যারা মাসাজ সেন্টার, নাইট ক্লাবের (আইনি) বৈধতা দানকারীদের সাথে কিতাল করছে, তারা খারেজী।
যারা আল্লাহর বিধান পাশ কাটিয়ে গায়রুল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে, আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে তাগুতি জীবনব্যবস্থার পূজা করে, ক্ষমতার জোরে আল্লাহর নিযামকে উপেক্ষা করে, শয়তানি নিযামকে বক্ষে ধারন করে, আল্লাহর হারামকে হালাল করে এবং হালালকে হারাম করে, এদেরকে যারা কাফের বলে- তারা হয় ধর্মদ্ৰোহী!
হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজীদের যে সব নিদর্শনের কথা বলেছিলেন, ইনসাফ, আমানতদারি ও সুবিবেচনার সাথে লক্ষ্য করলে বর্তমান মুসলিম জাহানের শাসকদের মধ্যে তার সব নিদর্শনই পাওয়া যায়।
[1]- মুকাদ্দামা ইকফারুল মুলহিদীন: ৪৩-৪৪, মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ.
আরও পড়ুন
প্রথম পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------- তৃতীয় পর্ব