আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
ইসলাম ও গণতন্ত্র
।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
ইসলাম ও গণতন্ত্র
।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
খারেজীদের নিদর্শন
খারেজীদের একটা নিদর্শন হল, তারা বিবাহিত যেনাকারী নারী-পুরুষকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করার বিষয় অস্বীকার করেছিল। আর এ কারণে হযরত ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে কাফের বলেছিলেন। কারণ রজমের উপর উম্মতের ইজমা রয়েছে। আর তা ছাড়া “রজম' নিশ্চিতভাবে জরুরিয়াতে দ্বীন তথা দ্বীনের অত্যবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।
এখন আপনিই ফয়সালা করুন যে, মুজাহিদরা কি খারেজী, যারা আল্লাহর জমিনে পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায়? নাকি তারা সেই দলের অন্তর্ভুক্ত, যারা বিবাহিত যিনাকারী নারী-পুরুষকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে এবং দ্বীনের অন্যান্য ‘হদ' বাস্তবায়ন করতে স্পষ্টভাষায় অস্বীকার করে?
আল্লাহর আইনের মোকবেলায় অন্য আইন প্রণয়ন করা, রাষ্ট্রক্ষমতার বলে সেগুলো যুদ্ধ করার জন্য গণতন্ত্রের সকল ভিত্তির (পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং মিডিয়া) এক জোট হওয়া এবং তাকে নাস্তনাবুদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগা। এগুলো কি আল্লাহর নাজিলকৃত শাস্তিসমূহের অস্বীকার করা নয়? যা না-ই হয়, তাহলে তবে অস্বীকারের সংজ্ঞা কি?
খারেজীদের আরেকটি নিদর্শন হল, সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাদেরকে তাকফীর করা এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের মুহব্বতকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
এবার আপনারাই বিচার করুন, এই যুগের খারেজী করা? যারা সাহাবায়ে কেরামের মুহববতে নিজেদের শরীরকে বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন করছে, তারা? নাকি যারা সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করছে এবং যারা সে সব আসর অনুষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে, যেখানে আমাদের প্রিয়তম সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করা হয়?
এগুলো ছাড়াও খারেজীদের আরও কিছু নিদর্শন হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। সেই হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, একবার গনিমতের মাল বন্টনের সময় যুলখুইসারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বলে-
হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন।
তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমিই যদি আল্লাহর নাফরমানিকারী হই, তো পৃথিবীতে আল্লাহর আনুগত্যকারী কে? আল্লাহ তায়ালা যে আমাকে পৃথিবীতে আমিন বানিয়ে প্রেরণ করেছেন, তুমি কি তা বিশ্বাস কর না? তুমি কি আমাকে আমিন মনে কর না?
এক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন । সম্ভবত তিনি খালেদ বিন ওলিদ রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছেড়ে দাও ওকে। এরপর সে যখন ফিরে যাচ্ছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ব্যক্তির বংশধর থেকে (অথবা বলেছেন, এই ব্যক্তির পর) একটি জাতির আর্বিভাব ঘটবে, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী হতে নিচে নামবে না। এরা দ্বীন হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, তীর যেমন শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। এরা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে। (তাদের সাথে কিতাল করবে না।) আমি তাদেরকে পেলে তাদেরকে আদ জাতির মত হত্যা করব।[1]
এই হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজীদের কয়েকটি নিদর্শন বর্ণনা করেছেন।
১. খারেজীরা কুরআন পড়বে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে নামবে না।
লক্ষ্য করে দেখুন, কুরআন কাদের কণ্ঠনালীর নিচে নামছে না। কার জন্য সূরা ইখলাস পর্যন্ত পড়া কষ্টকর? মুজাহিদদের জন্য নাকি শাসকশ্রেণীর জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, মুজাহিদরা তো কুরআন শুধু পড়ছে তাই নয়, বরং কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের জান-মাল এমনকি বসতবাড়ি পর্যন্ত কুরবান করছেন। আর এই অপরাধের কারণে শাসকশ্রেণী তাদের উপর ক্ষিপ্ত। এদেরকে গোপন টর্চারসেলগুলোতে নিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তাদের একটাই কথা বলা হয় যে, কুরআনের আইন বাস্তবায়নের পথ ছেড়ে নিরাপদ নাগরিক হও। অর্থাৎ কুফরি শাসনব্যবস্থার প্রতি সন্তুষ্ট থাক।
২. এরা দ্বীন হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, তীর যেমন শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়।
আল্লাহর জীবনব্যবস্থা ছেড়ে ইংরেজদের জীবনব্যবস্থার রক্ষী হওয়া, সারা জীবন আল্লাহর কুরআনের পরিবর্তে নিজেদের তৈরিকৃত আইনের উপর ফয়সালা করা, আল্লাহর 'হুদুদ' নিয়ে উপহাস করা, এবং যারা আল্লাহর ‘হুদুদ'কে পাশবিক, অমানবিক এবং হিংস্র বলে, তাদেরকে ইজ্জত-সম্মান করা, তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া, কাফেরদের সঙ্গী হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা- এগুলো দ্বীন থেকে বের হওয়া নয় তো কি?
৩. এরা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে।
আপনারাই বলুন, ভারতকে কে বন্ধু বানাচ্ছে? কাশ্মীরকে কে বিক্রি করেছে? কাশ্মীরের শহীদদের রক্তের সাথে কারা গাদ্দারী করেছে? কারা কাশ্মীর ও ভারতের মাটিতে জিহাদ করা থেকে বিরত আছে? কারা জিহাদ করতে বাধা দিচ্ছে? অথচ খোরাসানের মুজাহিদরা এখনো ভারতের সাথে জিহাদ করে যাচ্ছে। আর ভারত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চালিয়েই যাবে তারা, ইনশাআল্লাহ। বারো বছর ধরে মুসলমানদের রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে, তারা কারা? পূর্ব সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে পশ্চিম সীমান্তে মুসলমানদেরকে গণহত্যা কারা চালাচ্ছে? ইসলামী রাষ্ট্রে কাফেরদের আক্রমণের পরিপূর্ণ সহযোগিতা কারা করেছে? কাদের ঘাটি থেকে উড়োজাহাজ উড়ে গিয়ে আফগানিস্তানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে? কারা মুসলমানদের মেয়েদেরকে বন্দি করে ডলারের বিনিময়ে আমেরিকার কাছে বিক্রি করেছে? কারা উপজাতীয় অঞ্চলগুলোর মাদরাসা মসজিদ মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে? হাট-বাজার ও জনবসতিগুলোর উপর কারা অগ্নিগোলা বর্ষণ করে শ্বশানঘাটে পরিণত করেছে? খারেজী কারা, এই সিদ্ধান্ত নিতে আশা করি কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
সালফে সালেহীন তো যাকাত অস্বীকার করা লোকদেরও (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতেকালের পর যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল) কাফের বলেছিলেন। অথচ তারা দ্বীনের অন্যান্য সমস্ত বিধান স্বীকার করত। তাহলে এদের কি হুকুম হবে- যারা নামায এবং যাকাতসহ ইসলামের অধিকাংশ বিধান নিজের জীবন থেকে দূর করে দিয়েছে। যারা আল্লাহর হুদুদ বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দুশমনদের সাথে গিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাদের সাথে জোট করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। মুসলমান মুজাহিদদেরকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছে। যারা বর্তমানে সমস্ত মুসলিম বিশ্বে কাফের শক্তি এবং শয়তানী বাহিনীর সাথে একা মোকাবেলা করে যাচ্ছে এবং গোটা মুসলিমবিশ্বের জন্য যারা একমাত্র আশার আলো, এরা যদি পরাজিত হয় আর আমেরিকা যদি বিজয়ী হয়, তাহলে মুসলিম বিশ্বের দিকে ধাবমান এই শয়তানী সেনাবাহিনীকে কে প্রতিরোধ করবে? কোন সেই দেয়াল যা ইহুদীদের বিশাল ইসরাইলের অপবিত্র সঙ্কল্পের পথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে?
আল্লাহর ঝাণ্ডা সমুন্নতকারী দলকে নির্মূল করার এই শক্তি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তাগুতি বাহিনীকে শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের আলোকে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত হকের উপর অবিচল থাকবে এবং কিতাল করতে থাকবে। মুসলিম শরীফের হাদীস
لَنْ يَبْرَحَ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا، يُقَاتِلُ عَلَيْهِ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
এই দ্বীন অবশ্যই কায়েম থাকবে। আর এর হেফাজতের জন্য মুসলমানদের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে।[2]
ইনশাআল্লাহ, এ সব মুজাহিদ এই হাদীসের মিসদাক, হাদীসে এদেরকেই বুঝানো হয়েছে। এরা আল্লাহর সেই মোবারক লশকর, যারা প্রকাশ্যে শয়তানী বাহিনীকে আহ্বান করে তাদের অহমিকার প্রাসাদকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই লশকর যে ইমাম মাহদীর সহযোগিতায়ও ময়দানে নামবে, অসম্ভব কিছু নয়।
আমানতদারির সাথে ফয়সালা করুন, খারেজী কারা? যে সব মুজাহিদ ইসলামের দুশমনদের সাথে লড়াই করছে, উম্মতে মুসলিমার নিরাপত্তার জন্য নিজেদের জীবনকে বাজি রাখছে, তারা? নাকি যারা ইসলামের দুশমনদের সাথে মিলে ঈমানদারদের খুনকে নিজেদের জন্য হালাল করছে, তারা?
সিরিয়ার দিকে তাকান। সেখানে শিয়াদের হাতে অবিরাম মুসলমানদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে। মুসলমানদের জনবসতি এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে যে, তাদেরকে দাফন করার মতও কেউ নেই। কিন্তু শাসকশ্রেণী ও তাদের তথাকথিত মুসলিম সেনাবাহিনী এ সব মজলুম মুসলমানদের সাহায্যের জন্য কি করেছে? আলহামদুলিল্লাহ, এই মুজাহিদগণই- যারা ওয়াজিরিস্তানসহ সমস্ত বিশ্ব থেকে প্রলয়ের গতিতে সিরিয়ায় পৌঁছেছে- শুধুই এই উম্মতের খাতিরে, শুধুই উম্মতে মুহাম্মাদির মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার খাতিরে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জীবন বাঁচানোর খাতিরে। কিন্তু আফসোস, তারপরও এরাই নাকি খারেজী!!!
আমেরিকা ও ভারতের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সাহায্যকারীরা শান্তিকামী ও পূণ্যবান মুসলমান হয় কি করে? আর যারা উম্মতে মুসলিমাকে বৈশ্বিক স্বৈরতন্ত্রের স্টিমরোলার থেকে মুক্তি দিচ্ছে, সারাবিশ্বের সম্মিলিত কাফের জোটের সাথে জীবনবাজি রেখে লড়াই করে যাচ্ছে, তারা খারেজী হয় কী করে?
সেসব দরবারিদের জন্য আমাদের কোনো অভিযোগ নেই, যারা ইলমের বোঝা মাথায় উঠিয়েছে এমন দিনের জন্য। এতটুকু প্রাপ্তির জন্য। যাদের স্বপ্ন ও চাওয়া পাওয়া ছিল, তাদের ইলম যেন তাদের দুনিয়াবী পদ-পদবী অর্জনের মাধ্যম হয়। সে সব জুববা-পাগড়ীদারদের বিরুদ্ধেও আমাদের কোনো অভিযোগ নেই, যারা এফবিআই এবং সিআইএ’র ‘দাওয়াতি ফান্ড’ থেকে কিতাবের আকৃতিতে বিশাল বিশাল ফতওয়া প্রকাশিত করে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের কোলে বসে বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানও করে থাকে। তাদের এই বিশাল বপু শরীরের ফতওয়াগ্রন্থ দেখে আমরা পেরেশান নই। এ নিয়ে আমরা কোনো প্রকার মাথাও ঘামাই না। কারণ তাদের ও আমাদের এই টানাপড়েন তো ঐতিহাসিক। আহলে হক যখনই হকের আওয়াজ বুলন্দ করেছে, সরকারি ও দরবারি আলেমরাও জৌলুশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। তা ছাড়া রণাঙ্গণে দুশমনদের ঘাটি থেকে কখনো পুস্পস্তবক উপহার আসে না। জনৈক কবি বড় চমৎকার বলেছেন-
قال شَمِر بن عمرو الحنفي وهو جاهلي :
ولقد أمرُّ على اللئيمِ يسُبُّني
فمَضَيتُ ثَمَّه قلتُ: "لا يعنيني"
অভিযোগ তো তাদের প্রতি, যাদের সম্পর্কে আমাদের এই সুধারণা ছিল যে, তারা আহলে হকের কাফেলার পথিক। যাদের সম্পর্কে আমাদের এই ধারণাই ছিল যে, আমরা যদি সম্মুখে অগ্রসর হই তবে পিছন থেকে এরা আমাদের পিঠকে রক্ষা করবে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য মজবুত প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে, যারা ভাঙ্গবে. তো নত হবে না। তাদের নত হওয়ার ইতিহাস নেই। কিন্তু আফসোস... শত আফসোস...
ديکھا پلٹ کےپيچھےجوکمين گاہ کی طرف
اپنے ہے دوستوں سے ملاقات ہوگئ
اپنے ہے دوستوں سے ملاقات ہوگئ
আফসোস, আপনার কলমের তীর তাদের শরীরেই বর্ষিত হয়, যাদের শরীর আগে থেকেই আমেরিকার ড্রোন, জেটবিমান এবং তোপ-ট্যাঙ্কে ঝাঝরা হয়ে গিয়েছিল। এত বড় দুনিয়ায় আপনার বাগ্মিতার আক্রমণের জন্য আর কাউকে পেলেন না, যাদের উপর বোম্বিং করে কুফরের দুর্গকে দুর্বল করে দেয়া যেত? শুধু মুজাহিদদেরকেই পেলেন? যাদের প্রতিটি গ্রন্থি আগের থেকেই ব্যথাতুর ছিল। কলম দিয়ে মুজাহিদদের অন্তর কর্তন করার পূর্বে একবার তাদের অন্তরে নেমে দেখতেন, আপনদের আঘাত সহ্য করার মত কোনো স্থান অবশিষ্ট আছে কি না? ভদ্রজন তো তারা, কবির ভাষায়-
زخم دینے میں بھی انصاف کیا کرتے ہیں
যারা আঘাত দিতেও ইনসাফ করে।
যারা আঘাত দিতেও ইনসাফ করে।
আপনি আপনার বাক্যবানের অস্ত্র নিয়ে যদি এতটাই আস্থাভাজন হয়ে থাকেন, গর্বিত হয়ে থাকেন, তো দু” চারটা আক্রমণ উম্মতের সেই সব দুশমনদের উপরও করতেন, যারা এই উম্মতকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ফেলেছে। আমাদের ছাড়া আমেরিকা, ইসরায়েল, ভারতের ব্রাক্ষ্মননেতৃত্ব, কুফরের ফ্রন্টলাইন জোটকে কি আপনাদের চোখে পড়ে না? নিজের বর্তমানকে বাঁচানোর জন্য অতীতকে এভাবেই মুছে ফেললেন? মনে রাখবেন, আপনার লেখার একটি বর্ণও আমাদের বিরুদ্ধে নয়, বরং আপনার প্রতিটি বর্ণ আপনারই অতীতের বিরুদ্ধে। আপনি নিজেই সাক্ষী থাকবেন, অতীতের সম্পর্ক আমরা ছিন্ন করিনি, বরং আমরা আমাদের লাশের পুল বানিয়ে এই উম্মতের বর্তমানকে তার অতীতের সাথে জুড়ে দিতে চাই। অতীতের সম্পর্ককে আপনারাই ছিন্ন করছেন। আসলাফের পবিত্র আচল আপনার কলমই ছিন্নভিন্ন করছে!
আমেরিকান গ্রীনকার্ডকে যারা জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছে, জীবনের চাওয়া পাওয়া বানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কিসের অভিযোগ! আমাদের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে যারা শিশুদেরকে হাত ধরে চলা শিখিয়েছে, আর আজ তারা নিজেরাই অক্ষম হয়ে বসে আছে। গতকালও যারা কাফেলার প্রাণ ছিলেন... পথপ্রদর্শক ছিলেন... যারা তাদের তেজদীপ্ত নির্দেশনার মাধ্যমে কাফেলার তনুমনে চেতনার আগুন জ্বালিয়ে দিতেন... আজ তাদের এ কি হল যে তারা নিজেরাই কোনো পথপ্রদর্শকের অপেক্ষায় আছেন? আর যারা এই কাফেলার মোহাফেজ ছিলেন, পাহারাদার ছিলেন... দেখুন তো কাশ্মীরের কাফেলাগুলোকে মোশাররফ ও তার বাহিনী লুটে নিয়েছে। শুহাদায়ে কাশ্মীরের খুন দিল্লির বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরের বোনদের কণ্ঠও চিৎকার করতে করতে বসে গিয়েছে। চিৎকার কান্না ও ফুফানিতে রূপান্তরিত হয়েছে...। ঝিলামের তরঙ্গমালা আজও পাকিস্তানীদের নামে কাশ্মীরদুহিতাদের অভিযোগ বহন করে আসে।
আসাম, গুজরাট, ইউপি, হায়দারাবাদ আজও আমাদের পথ চেয়ে আছে। দিল্লি ও সোমনাথ বিজয় তো অনেক দূরের বিষয়, ভারতের দখল এখন করাচি ও ইসলামাবাদ পর্যন্ত অগ্রসর হচ্ছে। সেই মুসাফিরের চেয়ে অধিক করুণার পাত্র আর কে, যে সারাটা জীবন সফর করল, আর মনজিলের সন্নিকটে এসে ঘুমিয়ে পড়ল । কিংবা পথের ছাউনিকেই মনজিল ভেবে বসে পড়ল?
ইনসাফ করুন... ইনাসাফ! ভদ্রজনেরা দুশমনির ক্ষেত্রেও আমানতদারির সাথে কাজ করে। ইনসাফ করুন! আপনারা আসলাফের বর্ণনাকৃত তাকফীরের অধ্যায়ের (সেই সব মাসআলা যাতে এ কথা আলোচনা করা হয়েছে যে একজন মুসলমান কালেমা পড়া সত্বেও কোন কোন কথা ও কাজের দ্বারা কাফের হয়ে যায়।) আলোকে ফয়সালা করুন যে, ক্ষমতার দাপটে যারা আল্লাহর শরীয়তকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে কি ঈমানদার বলে গণ্য করা যেতে পারে?
যারা কাফেরদের সাথে জোট করে ঈমানদারদের হত্যা করাকে আইনসম্মত (হালাল) বলে, তাদেরকে কি মুসলমান বলা ঠিক হতে পারে? যারা ভারতের সাথে মিতালি করে আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা কি মুসলমান থাকতে পারে? কুফরি ব্যবস্থায় ফয়সালাকারী আদালতের ব্যাপারে অনড় থাকা, এর হেফাজত করাকে ফরয মনে করা এবং ঈমানদারদেরকে জোরপূর্বক তার অধীনে ফয়সালা মেনে নিতে বাধ্য করা, কুফর ও কাফেরকে সম্মান করা, শাআয়িরুল্লাহ (জিহাদ ইত্যাদি) এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপহাস করা, এগুলোই যদি ঈমান হয় তবে কুফর কি? এগুলোই যদি আহলে সুন্নাতের মাসলাক হয় তবে মুরজিয়া কারা?
আমাদেরকে একটু বুঝান যে, দ্বীন থেকে যারা খারেজ হয়ে গিয়েছে তাদেরকে কাফের বলাই যদি খারেজী হওয়ার নিদর্শন হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম খলিফা, রফিকে গার, হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সম্পর্কে আপনারা কি বলবেন, যিনি যাকাত না দেয়ার কারণে তাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করেছিলেন। অথচ তারা কালেমা পড়ত এবং নামাযও আদায় করত। পরে অন্যান্য সাহাবীও এর সমর্থন করেন। দরবারি ফতওয়াবাজদের নিকট জিজ্ঞাসা, (নাউযুবিল্লাহ) তারা সবাই কি খারেজি ছিলেন?
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু জাফর মনসুরের বিরুদ্ধে অপসারণের সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করেন এবং নিজেও কার্যত (আমলি) সহযোগিতা করেন। বলুন, ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিও কি খারেজি ছিলেন? তিনিও কি বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে অপসারণের জন্য জনগণকে উত্তেজিত করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবেন?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাতারিদের ইসলাম কবুল করার পরও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি কি তবে আপনাদের নিকট খারেজী?
ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহির এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী একটা ফরয ত্যাগকারীও কাফের । বলুন, কেউ কি তাকে খারেজী বলেছে?
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি নামায ত্যাগকারীকে কাফের বলতেন। অথচ তাঁর যুগে কেউই তাঁকে খারেজী বলেননি। তার সম্পর্কে আপনাদের রায় কি? তিনি কি খারেজী?
ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
“যে ব্যক্তি জেনে বুঝে নামায ছেড়ে দিবে এমনকি যোহর থেকে মাগরিব এবং মাগরিব থেকে অর্ধ রাত্রি পার হয়ে গেলে সে কাফের হয়ে যাবে। তিন দিন পর্যন্ত তাকে তাওবার সুযোগ দেয়া হবে। এরপরও যদি রুজু না করে এবং এ কথা বলে যে নামায না পড়া কুফরি নয়, তবে তার শিরোচ্ছেদ করা হবে। যখন সে নিজে নামায না পড়বে। আর যদি নামায পড়ে এ কথা বলে, তাহলে এটা ইজতিহাদী মাসআলা। [মজমু' আল ফতওয়া : ৭/৩০৭]
এঁর সম্পর্কে আপনাদের অভিমতটা একটু বলুন। আপনাদের দৃষ্টিতে ইনিও কি খারেজী?
হে ওলামায়ে কেরাম! আপনারাই বলুন, খারেজী কারা? যারা ভারতের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করে, তারা? যারা ভারতকে এ সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয় যে, তারা মুসলমানদের নদীর উপর ড্যাম নির্মাণ করুক? যারা হিন্দুদের সাথে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে থাকতে চায়? আর অন্যদিকে মুজাহিদদের সাথে যুদ্ধ করে। আল্লাহর দুশমনদের সাথে সমঝোতা করে, তাদেরকে মিত্র বানায় এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সঙ্গ দেয়, তাদেরকে সহযোগিতা করে? মুজাহিদদের বিরুদ্ধে পৈত্তলিকবাহিনীদের সাহায্য করে? ইসলামের মুজাহিদদের বিরুদ্ধে বদদুআ করে, অভিশাপ দেয়ঃ আমেরিকান সৈনিকদের সহযোগিতার ফতওয়া দেয়। আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাথে বসে প্রেমের কাব্য রচনা করে এবং তাদের টাকায় বই লেখে। এমনকি মুসলমানদের হত্যা করার জন্য আমেরিকাকে পরামর্শও দেয়।
ইনসাফের সাথে বলুন, খারেজী কারা?
[1] اللؤلؤ والمرجان فيما التفق عليه الشيخان . باب ذكر الخوارج وصفاتهم. الجزء الاول 23.
[2] صحيح مسلم: الجزء 10 كتاب الامارة. باب قوله صلي ا لله عليه وسلم لا تزال طائفة من أمتي ظاهرين علي الحق لا يضرهم من خالفهم س