Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। একাদশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। একাদশ পর্ব

    আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
    ইসলাম ও গণতন্ত্র
    ।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
    এর থেকে– একাদশ পর্ব



    ইসলামের কতিপয় কানুনকে আইনের অংশ বানানো


    সাধারণত মুসলিম দেশগুলোর আইনে কিছু ইসলামী ধারা অন্তর্ভূক্ত করে এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, এটা ইসলামী আইনসুতরাং এর আনুগত্য করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরয

    এ প্রসঙ্গে প্রথমত সেই কথাই স্মরণ রাখতে হবে যা পূর্বে বলা হয়েছেগণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থায় কোনো আইন ততক্ষণ পর্যন্ত আইন হতে পারে না, যতক্ষণ না মানবজ্ঞান অর্থাৎ সংসদ সদস্যরা এটাকে আইন হওয়ার যোগ্য মনে না করেআর আল্লাহর আইনকে অনুমোদনের জন্য মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া স্পষ্ট কুফরি

    দ্বিতীয় কথা হল, কোনো আইনে দু’চারটি ইসলামী আইন থাকলেই কি সেটা ইসলামী আইন হওয়ার জন্য যথেষ্ট? কিছু কুফরি আর কিছু ইসলামীর সমষ্টিকে কি ইসলাম বলা যেতে পারে? কখনোই না।

    আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের কয়েক জায়গায় বর্ণনা করেছেনআল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

    أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ


    তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? [সূরা বাকারা : ৮৫]

    আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশ্বাসীদেরকে পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন-

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ


    হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না [সূরা বাকারা : ২০৮]

    এখানে ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখেল হওয়ার নির্দেশ করা হয়েছেপরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, তোমরা শয়তানের আনুগত্য কর না। এর অর্থ হল, তোমরা যদি পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ না কর, ইসলামের কিছু কথা মানলে আর কিছু কথা ছেড়ে দিলে, তবে এটা শয়তানের আনুগত্য হল। শয়তান এর দ্বারা খুশি হয় আমেরিকা আজ মুসলমানদের নিকট এটাই দাবি করছে, এটাই চাচ্ছেতোমরা নামায, রোযা, হজ করে যাও কিন্তু বিচারব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমাদের তৈরিকৃত দ্বীন-ধর্মই অনুসরণযোগ্য হবেযারা এমন করছে, আমেরিকা তাদের প্রতি খুশিআর যারা আমেরিকার দ্বীন-ধর্ম মানতে অস্বীকার করে এবং এ কথা বলে যে, আল্লাহর জমিনে কেবল আল্লাহরই দ্বীন চলবে, তার দ্বীন ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা চলতে পারে না, সাথে সাথে আমেরিকা ও পরকালবিমূখ সমস্ত শক্তি জোট বেধে জ্বলে ওঠে। পবিত্র কুরআনে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে-

    وَإِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ ۖ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ


    যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়[সূরা যুমার : ৪৫]

    আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন যে, ইহুদী ও নাসারারা যেন আপনাকে কতিপয় ইসলামী আইন থেকে বিচ্যুত না করে।

    আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন-

    وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ


    আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো নাআর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে[সূরা মায়েদা : ৪৯]

    এই আয়াতে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, কাফেররা চাইবে, যে কোনোভাবে হোক মুসলমানরা কুরআনের কোনো কোনো বিষয় বাদ দিয়ে আমাদেরটা মানুক কারণ তারা এ কথা জানে যে, মুসলমানদের এমন কাজ অর্থ তারা মূলত ইবলিসেরই অনুসরণ করল এবং ফিতনায় নিপতিত হল

    এই আয়াতের তাফসীরে হাফেয ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে-

    এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদের অভিযোগ রদ করেছেন যারা আল্লাহর কুরআন ছেড়ে (যাতে রয়েছে সমূহ কল্যাণ) এমন আইনের দিকে যায়, যা মানুষের রায় ও প্রবৃত্তির উপর প্রতিষ্ঠিতএবং সেসব (আইনী) পরিভাষা গ্রহণ করবে যা মানুষ শরীয়তের দলিল ছাড়াই তৈরি করেছেসুতরাং যে ব্যক্তি এমন করল, সে কাফেরতাকে হত্যা করা ওয়াজিব, যতক্ষণ না সে আল্লাহ এবং তার রাসূলের আইনের দিকে প্রত্যাবর্তন না করেসুতরাং ইহা ছাড়া অন্য কোনো আইন দ্বারা ফয়সালা করা হবে না, হোক সেটা ছোট সমস্যা কিংবা বড়[তাফসীরে ইবনে কাসির,২য় খন্ড]

    ইবনে জাওষী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যাদুল মাসির গ্রন্থে লিখেছেন-


    زادالمسير গ্রন্থে এই আয়াতের তাফসীরে بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ দুটি মত বর্ণনা করা হয়েছে । এক হল “রজম", এটি হযরত ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মতআর দ্বিতীয় মত হল, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কিসাসের ধরন, এটি মাকাতিল রহমাতুল্লাহি আলাইহির মত

    এই আয়াতের শানে নুযুল তথা নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইমামুল মুফাসসিরীন ইবনে জারীর তাবারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীর গ্রন্থ জামেউল বয়ান ফি তাবিলিল কুরআন-এ লিখেছেন-

    কতিপয় ইহুদী সরদার ও পন্ডিত একত্রিত হয়ে পরস্পরে আলোচনা করে যে, আসো আমরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় ফেলিযাহোক, এর পর তারা সবাই একত্রিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসে এবং বলে, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি তো জানেন আমরা ইহুদীদের সম্মানিত ব্যক্তি এবং ধর্মীয় গুরুআমরা যদি আপনাদের উপর ঈমান আনি তাহলে সমস্ত ইহুদী আমাদের সাথে সাথে আপনার উপর ঈমান নিয়ে আসবেকিন্তু সমস্যা হল, আমাদের আর আমাদের কওমের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। আমরা আপনার মাধ্যমে ফয়সালা করাতে চাইআপনি যদি আমাদের পক্ষে ফয়সালা করেন, আমরা তাহলে আপনার উপর ঈমান আনবতাদের প্রস্তাব শোনার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানান'

    যারা এই গণতান্ত্রিক কুফরি ব্যবস্থায় জড়িত হয়ে ইসলামের খেদমত করতে চায়, এই ঘটনায় ওই সব লোকদেরও জবাব রয়েছেহযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মাত্র বিষয়েই শরীয়ত পরিপন্থি ফয়সালা করতে স্বীকার করেননিঅথচ এর দ্বারা পুরো ইহুদী কওম ধর্ম গ্রহণ করার মত বিশাল কল্যাণ অর্জিত হতআর কাল্পনাপ্রসূত কল্যাণের খাতিরে ৭৫ বছর পর্যন্ত কুফরিতে ভরপুর গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থার অংশ হয়ে থাকা কিভাবে ঠিক হতে পারে? সুতরাং ইসলামের খেদমতের নামে গণতন্ত্রের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি হল, তারা যদি সত্যিই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিস হয়ে থাকে, তাহলে তারা নবীজির ইত্তেবা করে গণতান্ত্রিক এই কুফরি ব্যবস্থাকে অস্বীকার করুক এবং এর জন্য সব যুক্তিকে কুরবান করতে প্রস্তুত হোক ।

    আল্লামা আলুসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-

    সাবধান থাকুন, তারা বাতিলকে হকের রূপে পেশ করার মাধ্যমে আল্লাহর নাজিলকৃত আইন হতে আপনাকে সামান্য হলেও ফিরিয়ে রাখতে চায়

    এখানে এ বিষয়টিও স্পষ্ট থাকা উচিত যে, কিছু বিষয়ে কুরআন এবং হাদীসের পায়রুবি করা আর কিছু বিষয়ে কাফেরদেরকে মানা, এটা সাধারণ কোনো বিষয় নয়কুরআন এটাকে ইরতিদাদ অর্থাৎ দ্বীন থেকে পৃষ্টপ্রদর্শনপূর্বক মুখ ফিরিয়ে নেয়া বলেছেসূরা মুহাম্মাদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

    إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَىٰ أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى ۙ الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَىٰ لَهُمْ‎﴿٢٥﴾ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ ۖ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ


    নিশ্চয় যারা হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পৃষ্টপ্রদর্শনপূর্বক মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদের কাজকে চমৎকৃত করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দিয়ে থাকে এটি এ জন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা যারা অপছন্দ করেতাদের উদ্দেশ্যে, তারা বলে, “অচিরেই আমরা কতিপয় বিষয়ে তোমাদের আনুগত্য করব”আল্লাহ তাদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন(সূরা মুহাম্মাদ : ২৫-২৬/)

    এই আয়াত সুস্পষ্টভাবে এ কথা বলছে যে, কতিপয় বিষয়ে কাফেরদের পায়রুবি ও অনুসরণ করা, অনেক সময় মুরতাদ হওয়ার কারণও হয় ।


    আল্লামা কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত তাফসীরে কুরতুবীতে এই আয়াতের তাফসীরে এ কথা বলেছেন যে-

    এটা এ কারণে যে, তারা বলেছে আমরা কতিপয় বিষয়ে তোমাদেরকে মানব যেমন মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরোধিতা করা, তার সাথে শক্রতা চালিয়ে যাওয়া, তার সাথে শরিক হয়ে পরে জিহাদ করা থেকে বিরত থাকা এবং গোপনে গোপনে তার কার্যক্রমকে দুর্বল করতে থাকা তারা নিঃসন্দেহে কথাগুলো গোপনে বলেছিলকিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে এ সম্পর্কে জানিয়ে দেন(তাফসীরে কুরতুবী)

    আর ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং অধিকাংশ তাফসীরকারকগণ مَا نَزّلَ اللهُএর তাফসীর কিতাল করেছেন অর্থাৎ আল্লাহর নাজিলকৃত যেই হুকুমকে তারা অপছন্দ করেছে, সেটা হচ্ছিল কিতালের হুকুম

    একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থার সাথে জড়িত রাষ্ট্র ও শাসকরা কিতাল ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কাফেরদের কথার উপর নিয়মতান্ত্রিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেএরপরও তাদের ঈমানে কোনো তারতম্য সৃষ্টি হয় নাবরং তাদেরকে ইমামুল মুসলিমীন প্রমাণ করা হয়

    আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাফসীরে জালালাইনে এবং কাযী সানাউল্লাহ পানিপথি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাফসীরে মাযহারীতে এর তাফসীর এভাবে করেছেন-

    মুনাফিকদের এই ভ্রষ্টতা এ কারণে যে, তারা মুশরিকদেরকে বলেছে, কিছু কিছু বিষয়ে আমরা তোমাদের কথা মানবঅর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দুশমনিতে আমরা তোমাদের সাহায্য করব এবং মানুষদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখব

    পবিত্র কুরআন তার পরবর্তী আয়াতে এই লোকদের পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেছে-

    ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ


    অতঃপর তাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন ফেরেশতারা তাদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশসমূহে আঘাত করতে করতে তাদের জীবনাবসান ঘটাবে? (সূরা মুহাম্মাদ : ২৭)


    জরুরিয়াতে দ্বীন তথা ধর্মের অত্যাবশ্যকীয় বিষয় অস্বীকার করা


    শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

    হযরত ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ের উপর এক মত যে, কোনো লশকর (বা দল) যদি শরীয়তের এমন কোনো নির্দেশ পালন করার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অস্বীকার করতে থাকে, যা মুতাওয়াতির দ্বারা প্রমাণিত, তবে তাদের সাথে কিতাল করা ওয়াজিব, যদিও তারা কালেমা শাহাদাহ পড়তে থাকেনামায, রোযা ও হজের ফরযিয়্যাত অস্বীকার করা, কুরআন ও হাদীসের আইন না মানা, অথবা অশ্লীলতা, মদ্যপান ও মাহরামদেরকে বিবাহ করার হুরমতের বিধান স্বীকার না করা, অথবা মুসলমানদের জান-মাল শরয়ী হক ছাড়া হালাল মনে করা, সুদ জুয়াকে বৈধ বলা, অথবা কাফেরদের সাথে জিহাদ করা ও আহলে কিতাবের উপর কর নির্ধারণ করাকে হারাম সাব্যস্ত করা সহ অন্যান্য ইসলামী বিধিবিধানকে এমনই মনে করা যারা এমন মনে করবে, তাদের সাথে ওই সময় পর্যন্ত জিহাদ করে যেতে হবে যতক্ষণ না পরিপূর্ণ দ্বীন (আইন ও সংবিধান) আল্লাহর না হবে।


    বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সাথে যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের সাথে কিতাল করার বিষয়ে আলোচনা করেন, হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, 'আমি এমন লোকদের সাথে কিতাল করব না কেনো, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কর্তৃক ফরযকৃত বিষয় ছেড়ে দিচ্ছে, যদিও তারা মুসলমান? আল্লাহর কসম! তারা যদি উটের একটা রশি দেয়া থেকেও বিরত থাকে, যা তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিত, তবে আমি তাদের সাথে অবশ্যই কিতাল করব' হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ তায়ালা আবু বকর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বক্ষ উন্মোচন করে দিয়েছেন তিনি হকের উপর ছিলেন[1]

    চিন্তা করে দেখুন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এই কথা বলা যে, উটের একটা রশি দেয়া থেকেও যদি তারা বিরত থাকে, তবুও আমি তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করবঅর্থাৎ পরিপূর্ণ যাকাত অস্বীকার করা তো অনেক মারাত্মক কথা, যা এরা করছে, এরা যাকাতের ফরযিয়্যাতের প্রবক্তা হওয়ার পরও যদি আমার নবী কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ থেকে কম দেয়, তখনও আমি তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করবরফিকে গারের (গুহা সঙ্গী) মত কোমল মেজাযের ব্যক্তির অবস্থানের এই কঠোরতা সেই বুঝতে সক্ষম, যে তার খুব কাছের মানুষকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসেহযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এই অনুভূতি প্রচণ্ড রকমভাবে কাজ করছিল যে, কিয়ামতের দিন যদি প্রিয়তম নবী জিজ্ঞাসা করেন, হে আবু বকর! আমি তো পরিপূর্ণ দ্বীন তোমাদের হাতে রেখে এসেছিলাম আমার অনুপস্থিতিতে তুমি কার অনুমতিতে এতে ত্রুটি রেখে এসেছ? মানুষের ভয়ে তুমি আল্লাহর শরীয়তকেই বদলে ফেলেছ?

    বর্তমানের শাসকশ্রেণী কি আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে তাদের এসেম্বলীর দ্বারা এমন আইন বানাচ্ছে না যা সরাসরি কুরআন-হাদীসের পরিপন্থি?

    তারা কি সুদকে হালাল করেনি?

    সারা দেশে কি সুদিকারবারও ব্যাংক ইত্যাদি চালু করেনি?

    তারা কি ইবলিস শয়তানকে খুশি করার জন্য কাফেরদের সাথে কিতাল করাকে হারাম এবং বেআইনি (সন্ত্রাস) ঘোষণা করেনি?

    তারা কি জিহাদকারীদেরকে শাস্তি দেয়নি?

    আমেরিকার সাথে মিলে কালেমাওয়ালা মুসলমানদের জান-মাল নিজেদের জন্য হালাল করেনি?

    পার্লামেন্ট কি আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইকারীদেরকে হত্যা করা এবং তাদের ধন- সম্পদ ধবংস করার অনুমতি দেয়নি?

    তারা কি আল্লাহর নাযিলকৃত হুদুদ (রজম, মদ্যপানের শাস্তি, কিসাস ইত্যাদি)-এর বিরুদ্ধে তার এসেম্বলীর মাধ্যমে আইন পাস করিয়ে তা বাস্তবায়ন করেনি?

    এগুলো তারা হালাল এবং আইন সম্মত মনে করেছে বলেই তো দিয়েছে?



    খুরুজ আনিল ইমাম-এর আলোচনা


    এখানে আরও একটি বিষয় ভালো করে বুঝে নিনমুসলিম বিশ্বে যখনই কোনো হক্কানী আলেম এবং মুজাহিদ এই কুফরি জীবনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়ত প্রবর্তন করতে চায়, সরকারি ও দরবারি আলেমদের পক্ষ হতে তখন কঠিনভাবে বিরোধিতা করা হয়তারা এটাকে ‘খুরুজ আনিল ইমাম’ বা ‘ইমামুল মুসলিমীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ' সাব্যস্ত করে না জায়েয বলেন।

    এমন জালেম শাসক, যারা মূর্তির পৃষ্ঠপোষক, ইবলিসী জীবনব্যবস্থার রক্ষক এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে সেনাশক্তির জোরে নিরানব্বই বছর থেকে (খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের পর থেকে) ইসলামী নিযাম ও জীবনব্যবস্থা থেকে দূরে রেখেছে, তারা কি করে ইমামুল মুসলিমীন হতে পারে?


    [1]کتب ورسائل وفتاوی ابن تیمیہ،جلد20،ص8۔45.


    আরও পড়ুন
    দশম পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------ দ্বাদশ পর্ব

    Last edited by tahsin muhammad; 2 days ago.
Working...
X