বর্তমান (তথাকথিত) মুসলিম দেশসমূহের শাসকবর্গ ও তাদের শাসন – শায়খ আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসি (হাঃ) [পর্ব ১]
বাংলায় অনূদিত বইয়ের সূচীপত্রঃ
★ আল্লাহর বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিধান রচনা করা ও বিচারকগণের এই মানবরচিত আইন দ্বারা ফায়সালা করা একটি কুফরি কাজ
★ প্রথম সংশয়ঃ শাসকদের বিধান রচনার কুফর বড় কুফর না ছোট কুফর?
-কুফরির প্রথম কারনঃ কালিমার প্রথম দাবী, ‘তাগুতকে বর্জন’ না করার কারনে তারা কাফির।
-কুফরির দ্বিতীয় কারনঃ আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ও শরীয়ত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার কারণে তারা কাফির।
-কুফরির তৃতীয় কারনঃ তারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রাখার কারণে এবং বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করার কারণে কাফির।
-কুফরির চতুর্থ কারনঃ আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে গণতন্ত্রকে দ্বীনরূপে গ্রহণ করার কারণে তারা কাফির।
-কুফরির পঞ্চম কারনঃ তারা নিজেদেরকে এবং তাদের শাসকদেরকে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করার কারণে কাফির।
*
-কুফরির ষষ্ঠ কারনঃ আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে বিধান রচনা করার কারণে তারা কাফির।
-ইবনে আব্বাস রাদিঃ এর মতের সঠিক ব্যাখ্যা
★ দ্বিতীয় সংশয়ঃ তারা তো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে।
★ তৃতীয় সংশয়ঃ তারা তো সালাত কায়েম করে সিয়াম পালন করে।
★ চতুর্থ সংশয়ঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে তাকফির করে সে কুফরি করে।
★ পঞ্চম সংশয়ঃ তারা তো দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ।
★ ষষ্ঠ সংশয়ঃ তারা তো বাধ্য, দরিদ্র ও অসহায়।
★ সপ্তম সংশয়ঃ তাদেরকে তাকফির করে কি লাভ?
★ শেষ কথা
★ আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা
★ আমাদের সর্বশেষ পয়গাম
__________________________________________________ ________________________________________________
বিস্তারিতঃ
★ আল্লাহর বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিধান রচনা করা ও বিচারকগণের এই মানবরচিত আইন দ্বারা শাসন করা একটি কুফরি কাজ
শাসকদের আল্লাহর বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিধান রচনা করা ও বিচারকগণের এই মানবরচিত আইন দ্বারা ফায়সালা করা একটি কুফরি কাজ। কিন্তু এই কুফর বড় কুফর না ছোট কুফর তা নিয়ে কিছু জ্ঞানপাপী দরবারি আলিম সংশয় সৃষ্টি করছে। এই সংশয়গুলোর সঠিক জবাব না জানার কারণে সাধারন মুসলিমরা তো বিভ্রান্ত হচ্ছেই এমনকি অনেক দা’য়ী ভাইদেরকেও বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে। এই সংশয়গুলো ও তার জবাব নিম্নে এক এক করে তুলে ধরা হল।
★ প্রথম সংশয়ঃ শাসকদের বিধান রচনার কুফর বড় কুফর [১] না ছোট কুফর [২] ?
শাসকদের আল্লাহর বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিধান রচনা করা হচ্ছে একটি বড় কুফর। আমাদের সাথে দ্বিমত পোষণকারী কিছু লোক আছেন, যারা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নকারী তথাকথিত মুসলিম শাসকদের পক্ষাবলম্বন করে বলে থাকেন, “তোমরা যে মূলনীতির উপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগণ ও তাদের সাহায্যকারী সাংবাদিকদল, তাদের রক্ষাকারী সৈন্যদল ও তাদের পক্ষাবলম্বনকারী অন্যান্যদের কাফির বলে ঘোষণা দাও, সে মূলনীতিতে আমরা তোমাদের সাথে একমত নই। কেননা এই শাসকদের কুফুরি আমাদের মতে ছোট কুফর, বড় কুফর (যা কোন ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়) নয়। আর তাদের দাবী হচ্ছে, এ মতের প্রবক্তা ছিলেন কুরআনের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারী ইবনে আব্বাস রাদিঃ।
আমাদের জবাবঃ দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে কিছু মানুষের মতানৈক্য থাকে। তবে তার একটি সীমারেখা আছে। যদি তা হয় শাখাগত বিষয়ে তবে তা মেনে নেয়া যায়। (উদাহরণস্বরূপ ৫ ওয়াক্ত সালাত যে ফরজ এটি একটি মূল বিষয়। এতে মতভেদ থাকতে পারে না। কিন্তু সালাতের মধ্যে ‘রফউল ‘ইয়াদাইন করা অথবা না করা এ নিয়ে মতভেদ থাকতেই পারে কারণ এটি শাখাগত বিষয়)। আলেমগণ বলেন, শাখাগত বিষয়ের মতানৈক্য সম্ভাব্য এবং স্বাভাবিক। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই এ মতানৈক্য সৃষ্টি হয় কোন একটি হাদিস সাহিহ বা জায়িফ বলে রায় দেয়ার ক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকার কারণে। অথবা কোন হাদিস ফাক্বিহ পর্যন্ত না পৌঁছার কারণে বা এ ধরনের অন্য কোন সমস্যা থাকার কারণে। আর যদি এ মতভেদ হয় দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে, তবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তারপরও কেউ মতানৈক্য তুলতে পারে; তবে তার অর্থ এই নয় যে, সত্যের সন্ধান না করেই অন্ধ ভাবে কোন এক মতের অনুসরণ করতে হবে। সত্য তো একটিই, একাধিক হতে পারে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,
‘সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কি অবশিষ্ট থাকে?’ [সুরা ইউনুস- ৩২]
অপর স্থানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,
‘এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত তবে তারা এর মধ্যে বহু অসঙ্গতি পেত।’ [সুরা নিসা- ৮২]
সুতরাং দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে মতানৈক্য, বিশেষ করে তাওহীদ, রিসালাত, শিরক, ঈমান ও কুফরের মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কোন ব্যক্তির জন্য এটি কোন ভাবেই বৈধ হবে না যে, এধরনের মতানৈক্যকে অজুহাত হিসেবে পেশ করে, এটিকে(মতানৈক্যকে) মুরতাদ ও মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন বা তাদের থেকে সাহায্য গ্রহনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করবে! আর এ কাজটি যদি হয় সন্তুষ্টচিত্তে তবে তা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবৈধ। বরং অত্যাবশ্যক হল যে সকল মাস’য়ালার উপর ঈমানের মূল ভিত্তি রয়েছে সেগুলোর মাঝে বিদ্যমান মতানৈক্যের সমাধান করা এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,
‘তবে কি তোমরা মনে করে ছিলে যে, আমি তোমাদেরকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে এমনিতেই সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না?’ [সুরা মু’মিনুন- ১১৫]
আর তিনি কোন বিষয় কোরআন মাজীদের আলোচনা ব্যাতিরেকে ছেড়ে দেননি। যেমন তিনি (সুবঃ) বলেছেন,
‘আমি কিতাবে কোন ত্রুটি রাখিনি’ [সূরা আন’আম- ৩৮]
সুতরাং সকল কল্যানকর বিষয়ে আল্লাহ (সুবঃ) আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সকল মন্দ বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন এবং তা থেকে সতর্ক করেছেন।
বর্তমানে শাসকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাদের কাফির হওয়া সুস্পষ্ট। আর কুফর হলো দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের একটি অন্যাতম দিক। যে ব্যাক্তি আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ও তাওহীদকে বুঝেছে তার নিকট এ সকল আল্লাহদ্রোহী শাসকদের কুফরের বিষয়টি দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্ট। কিন্তু এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, যে ব্যাক্তির চোখে পর্দা রয়েছে দ্বি-প্রহরের সূর্যও তার দৃষ্টিগোচর হবে না। ইনশাআল্লাহ সামনে আমরা চেষ্টা করবো তাওহীদের পথ্য দ্বারা চোখের পর্দাকে সরিয়ে দিতে ও ঐশী আলো দ্বারা সকল আঁধার দূর করতে। প্রথমত আমাদের জানা উচিত ঐ সমস্ত আল্লাহদ্রোহী শাসকদেরকে শুধুমাত্র একটি নীতির উপর ভিত্তি করে কাফের বলা হচ্ছে না। ফলে তাদেরকে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর বানী “কুফর দূনা কুফর” ‘এই কুফর সেই পর্যায়ের কুফর নয়’ এর অপব্যাখ্যা দ্বারা রক্ষা করা সম্ভব নয়। বরং তাদের এই কুফরী অনেকগুলো মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার প্রত্যেকটি তাদেরকে স্পষ্ট কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। ঐ সকল কারনসমূহ হতে শুধুমাত্র ছয়টি কারণ এখানে উল্লেখ করা হলো।
-কুফরীর প্রথম কারণঃ কালিমার প্রথম দাবী, ‘তাগুতকে[৩] বর্জন’ না করার কারনে তারা কাফির।
তাওহীদের সাক্ষ্য প্রদানের মূলভিত্তি হলো দুটি। যার একটি অপরটি ব্যতীত কোন কাজে আসে না। বরং তাওহীদের কালেমাকে মেনে নেওয়া এবং তার সত্যায়নের জন্য উভয়টি একই সাথে থাকা আবশ্যক। তার একটি হচ্ছে সকল বাতিল ইলাহ তথা গাইরুল্লাহকে প্রত্যাখ্যান (লা ইলাহা) আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ তথা সত্যায়ন (ইল্লাল্লাহ) যেমনটি আল্লাহ (সুবহানাহু তাআলা) বলেছেনঃ
قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشْدُ مِنَ ٱلْغَىِّ فَمَن يَكْفُرْ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَا وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
‘...অতঃপর যে ব্যাক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরলো’। [সূরা বাক্বারা-২৫৬]
উক্ত আয়াতে كْفُرْ بِٱلطَّٰغُوت 'তাগুতকে অস্বীকার' থেকে প্রথম ভিত্তি (লা ইলাহা) এবং وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّه ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস’ থেকে দ্বিতীয় ভিত্তি (ইল্লাল্লাহ) এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলো। অতএব যে ব্যাক্তির মাঝে এ দুটি ভিত্তির সমন্বয় ঘটলো না, সে শক্ত হাতলকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরলো না। ফলে সে হবে মুওয়াহহিদের(আল্লাহর এককত্বে বিশ্বাসীদের) কাতার বহির্ভূত এক ব্যাক্তি। আমরা যদি তাদের (দরবারী আলেমদের) দাবী মেনে নেই যে, এ সমস্ত শাসকবর্গ (যারা আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে বিধানদাতা হিসেবে অংশীদার সাব্যস্ত করে এমনকি কখনো কখনো তারা নিজেরাও আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের বিরোধী বিধান রচনা করে তাগুতে পরিণত হয়) যদিও তারা তাওহীদের দ্বিতীয় ভিত্তি আল ঈমানু বিল্লাহ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস) আনয়ন করেছে তাও তারা আল্লাহর এককত্বে বিশ্বাসীদের কাতারে শামিল হতে পারবে না। কেননা অপর একটি আবশ্যকীয় ভিত্তি এখনো বাকি রয়ে গেছে তা হলো 'আল কুফরু বিত তাগুত' (তাগুতকে অস্বীকার)। আর আল্লাহ (সুবঃ) ‘আল ঈমানু বিল্লাহ’ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস) এ রুকনের পূর্বে তা উল্লেখ করেছেন। 'আল কুফরু বিত তাগুত' (তাগুতকে অস্বীকার) করা ব্যতীত ‘আল ঈমানু বিল্লাহ’ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস) তৎকালীন মক্কার কাফের কুরাইশদের ঈমানের মতই। কেননা মক্কার কাফের কুরাইশরা আল্লাহর (সুবঃ) প্রতি বিশ্বাস রাখতো কিন্তু তাগুতকে বর্জন করতো না। (তারা আল্লাহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছিলো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর ইবাদাতের পাশাপাশি তারা মূর্তিরও ইবাদাত করতো। মোটকথা তারা একমাত্র ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়নি। তারা আল্লাহর বিধানসমূহকে নিজেদের জন্য গ্রহন করেনি। মোট কথা তারা আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য/ইতাআত করেনি।) আর এটি জানা কথা, এই ঈমান মক্কার কাফের কুরাইশদের কোন কাজে আসেনি। তাদের জান-মালকে রক্ষা করতে পারেনি। বরং 'আল্লাহর প্রতি ঈমান' এর সাথে শর্ত যুক্ত ছিলো 'তাগুতকে অস্বীকার করা' , তাগুতের সাথে সকল সম্পর্ক ছেদ করা। এর পূর্বে শিরক মিশ্রিত ভেজাল ঈমান তাদের পার্থিব জগতের এবং পরকালের কোন বিধানের ব্যাপারে সামান্যতম উপকারেও আসেনি। আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করা স্বত্ত্বেও মুশরিক’ [সূরা ইউসুফ-১০৬]
আর শিরক হলো ঈমানকে নষ্টকারী এবং নেক আমল ধ্বংসকারী। আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
‘যদি তুমি শিরক করো তাহলে তোমার সকল কর্ম নিস্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ [সূরা যুমার-৬৫]
সকলের জানা আছে এ সমস্ত শাসকেরা পাশ্চাত্যের তাগুতদেরকে (ব্রিটিশ সরকার, আমেরিকান সরকার, কানাডিয়ান সরকার ইত্যাদি যারা ইসলামী আইন বাস্তবায়নকারী ও বাস্তবায়নকামী জনতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।) এবং প্রাচ্যের তাগুতদেরকে (ভারত সরকার, চীন সরকার, জাপান সরকার ইত্যাদি) অস্বীকার করেনা। তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেনা। বরং এরা তাদেরই আস্থাভাজন ও তাদেরকেই ভালোবাসে এবং ঝগড়া বিবাদে তাদের নিকট মামলা দায়ের করে। তাদের রাষ্ট্রীয় নিয়ম অর্থাৎ কুফরী বিধানসমূহকেই পছন্দ করে। তাদের সৃষ্ট আন্তর্জাতিক কুফরী সংস্থা জাতিসংঘের অপবিত্র ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এভাবে আরবী (এরাবিয়ান তথা আরবের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী শাসকেরা যারা কাফেরদের কাছে আল্লাহর এককত্বে বিশ্বাসী মুসলিমদের এবং ইসলামী খিলাফতকামী মুসলিমদের তুলে দেয় কঠোর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করার জন্য) তাগুতরা এবং তাদের নীতি সমূহ আন্তর্জাতিক কুফরি সংস্থা জাতিসংঘের নীতির মতই। আর এরা, এসকল তাগুতদেরকেই ভালোবাসে এবং তাদের সাথেই বন্ধুত্ব রাখে। আর তাদের এমন গোলামে পরিণত হয়েছে যে, কোন বিষয়েই মনিবের অবাধ্য হয় না এবং শিরক, কুফর সকল কাজেই মনিবের শক্তি যোগায়। চোখে পর্দা থাকার কারণে কারো কারো নিকট এই সমস্ত শাসকদের তাগুত হওয়ার বিষয়টি যদিও সংশয়যুক্ত কিন্তু প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য কাফিরদের তাগুত হওয়ার ব্যাপারে কারো সামান্যতম সংশয় নেই (কাউকে যদি আল্লাহ অন্ধ করে দেন তাহলে ভিন্ন কথা।) এ সত্ত্বেও তাদেরকে বর্জন করাতো দূরের কথা বরং এ শাসকরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করতে সদা সচেষ্ট। এমনকি তাদের সাথে জাতিসংঘ নামের কুফরি সংঘ চুক্তিতেও আবদ্ধ। ফলে কোন সমস্যা দেখা দিলে এরা জাতিসংঘের কুফরি আদালতে মামলা দায়ের করে। অতএব তারা তাওহীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি আল কুফরু বিত তাগুত(তাগুতকে অস্বীকার) পূর্ণ করেনি। সুতরাং কিভাবে তারা মুসলমান হতে পারে? তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেয়া হয়, তারা তাওহীদের দ্বিতীয় ভিত্তি আল ঈমানু বিল্লাহ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ) পূর্ণ করেছে। কিন্তু অপরদিকে তারা নিজেরাই তাগুত সেজে বসে আছে। ফলে আল্লাহ ব্যাতিরেকে তাদের ইবাদত করা হচ্ছে। কারণ তারা মানুষের জন্য এমন সব আইন প্রণয়ন করেছে যার অধিকার আল্লাহ (সুবঃ) কোন মাখলূককে দেননি। উপরন্তু তারা মানুষদেরকে সেদিকে আহ্বানও করছে এবং তাদের সংবিধান মানতে বাধ্য করছে। (যার আলোচনা ইনশাআল্লাহ সামনে আসছে)
-কুফরীর দ্বিতীয় কারণঃ আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন এবং শরীয়ত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার কারণে তারা কাফির।
তারা আল্লাহর দ্বীন এবং শরীয়াত নিয়ে বিদ্রুপকারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে তারা(বিদ্রুপকারীরা) পত্রিকা, রেডিও, টিভি এবং অন্যান্য স্বাধীন সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্য এবং আকার ইঙ্গিতে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছে। আর এ কুলাঙ্গার শাসকবর্গরা এ মাধ্যমগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছে (আমরা প্রায়ই দেখতে পাই সমাজে যারা রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, ইসলাম নিয়ে মশকরা করে তাদেরকে শাসকবর্গরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকে)। সাথে সাথে তাদের স্ব-রচিত আইন এবং সেনাবাহিনী দ্বারা এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এ নাস্তিক মুরতাদদের আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দিচ্ছে।
আল্লাহ (সুবঃ) বলেন,
...ُ* قُلْ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمْ تَسْتَهْزِءُونَ
لَا تَعْتَذِرُوا۟ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَٰنِكُمْ...
...বলো ! তোমরা কি এক আল্লাহ, আল্লাহর আয়াত ও রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলে? অজুহাত দেখিওনা- তোমরা তো ঈমান আনার পরে কাফির হয়েছো... [সূরা তাওবা-৬৫,৬৬]
এই আয়াতগুলো ঐ সকল লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে যারা ছিলো মুসলিম। তারা সালাত আদায় করতো, সিয়াম পালন করতো ও যাকাত দিত এমনকি তারা মুসলিমদের সাথে এক বড় জিহাদেও অংশগ্রহণ করেছিলো। ইহা সত্ত্বেও যখন তারা কোরআন পাঠকারী সাহাবীদের ব্যাপারে উপহাসমূলক কথা বলল, তখন আল্লাহ (সুবঃ) তাদেরকে কাফের বলে ঘোষণা করলেন।
যুবায়ের (রাঃ) বলেন, আর তিনি এ কথা বলার সময় উপস্থিত ছিলেন, ওদিয়া ইবনে ছাবেত বিন আমর বলল, আমরা শুধুমাত্র তোমাদের সাথে হাসি ঠাট্টা করছি এবং সে আরো বলল, হায়! কি হল যে, এই কুরআন পাঠকারীরা দেখি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খাদ্যের প্রতি বেশি উৎসাহী, আর শত্রুর মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি ভীরু। [তাবারানির মু’জামুল কাবিরঃ ৩০১৭; প্রত্যেক রাবি আলাদা আলাদা ভাবে সিকাহ, তবে সনদটি গারিব। মোটকথা হাদিসটি হাসান স্তরের তাই গ্রহণযোগ্য।]
তাহলে ঐ সমস্ত লোকের ব্যাপারে চিন্তা করুন যাদের অন্তরে আল্লাহর বিধানের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ নেই বরং তাকে হাসি-তামাশার বস্তুরূপে গ্রহণ করেছে। নিজেদের পিছনে অবহেলা ভরে ছুঁড়ে মেরেছে। আর সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হল তারা আল্লাহর কুরআনকে তথা কুরআনের বিধি-বিধানকে তাদের স্বহস্তে রচিত আইন-কানুনের নিচে অবস্থান দিয়েছে। কুরআনের আদেশ এবং নিষেধ সমূহকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান ও নাস্তিকদের সাথে সলাপরামর্শ করে রদ করছে (তারা বলে কুরআনের বিধানগুলো নাকি মানবতাবিরোধী বর্বর)। কিতাবুল্লাহ'র সাথে এর চেয়ে বড় উপহাস ও ঠাট্টা আর কি হতে পারে?
-কুফরির তৃতীয় কারনঃ তারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রাখার কারণে এবং বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করার কারণে কাফির।
এই সমস্ত শাসকরা কাফিরদের সাথে পারস্পরিক সাহায্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং মুওয়াহহিদ(আল্লাহর এককত্বে বিশ্বাসী) মুসলমানদেরকে জঙ্গি ও চরমপন্থী আখ্যা দিয়ে উক্ত চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সংবাদ কাফিরদের সাথে আদান-প্রদান করে এবং মুসলিম মুজাহিদদের গ্রেফতার করে তাগুত সরকারদের হাতে অর্পণ করে। আল্লাহ (সুবঃ) বলেন,
ٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُۥ مِنْهُمْ
‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে।'[সুরা মায়িদা- ৫১]
একারণেই শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নাওয়াক্বিদুল ইসলাম নামক গ্রন্থে বলেন, ঈমান নষ্ট হওয়ার ৮ নং কারণ হল, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
তার দৌহিত্র সুলাইমান বিন আব্দুল ওয়াহহাব তার হুকমু মুওয়ালাতি আহলিল ইশতিরাক নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
'আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ نَافَقُوا۟ يَقُولُونَ لِإِخْوَٰنِهِمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ لَئِنْ أُخْرِجْتُمْ لَنَخْرُجَنَّ مَعَكُمْ وَلَا نُطِيعُ فِيكُمْ أَحَدًا أَبَدًا وَإِن قُوتِلْتُمْ لَنَنصُرَنَّكُمْ وَٱللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَٰذِبُونَ
‘তুমি কি মুনাফিকদের দেখনি যারা আহলে কিতাবের মধ্য হতে তাদের কাফির ভাইদের বলে, ‘তোমাদেরকে বের করে দেয়া হলে আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই বেরিয়ে যাব এবং তোমাদের ব্যাপারে আমরা কখনোই কারো আনুগত্য করব না। আর তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা হলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা মিথ্যাবাদী।'[সুরা হাশর- ১১]
এই আয়াত গুলো অবতীর্ণ হয়েছে, এমন কিছু মানুষের ব্যাপারে, যারা বাহ্যিক ভাবে ইসলামকে প্রকাশ করতো। একজন ব্যক্তি মুসলিম কি কাফির তার প্রমাণস্বরূপ তাদের বাহ্যিক প্রকাশকেই গ্রহণ করা হত। কেননা মুসলমানদের প্রতি হুকুম ছিল বাহ্যিকতার বিচার করার। কিন্তু যখন তারা সাহাবীগণের বিরুদ্ধে ইয়াহুদিদের সাহায্য করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হল (যদিও আল্লাহ তা’য়ালা জানতেন তাদের চুক্তিতে তারা মিথ্যাবাদী) তখন আল্লাহ(সুবঃ) ইয়াহুদিদেরকে তাদের ভাই বলে আখ্যা দিলেন। আর এ চুক্তিই ছিল তাদের কুফরির কারণ।' [হুকুম মুওয়ালাতি আহলিল ইশতিরাক]
অতএব ঐসমস্ত শাসকদের পরিণতি আর কত করুণ, যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আইন প্রণয়নকারী মুশরিকদের সাথে পরস্পর সাহায্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং তাওহিদে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও তাদেরকে আপন মনিবদের(আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য কাফির রাষ্ট্রের সরকারের) হাতে অর্পণ করে। কোন সন্দেহ নেই, অবশ্যই তারা এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
-কুফরির চতুর্থ কারনঃ আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে গণতন্ত্রকে দ্বীনরূপে গ্রহণ করার কারণে তারা কাফির।
আল্লাহ (সুবঃ) বলেছেন,
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন কেবল ইসলামই।'[সুরা আল ইমরান- ১৯]
ইসলাম হল আল্লাহর দ্বীনে হাক্ব, যা দিয়ে তিনি মুহাম্মাদ সাঃ কে প্রেরণ করেছেন। আর গনতন্ত্রের প্রবর্তক হল গ্রীকরা। নিঃসন্দেহে না এটা আল্লাহ প্রদত্ত, না সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ ‘সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে?'[সুরা ইউনুস- ৩২]
আর এ সকল লোকেরা সর্বদাই প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করছে যে, তাদের একমাত্র পছন্দ ও গর্বের বিষয় গনতন্ত্র, ইসলাম নয়। গনতন্ত্র ও ইসলাম এ দুটি পরিপূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দুটিকে একত্র করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আল্লাহ তা’য়ালা একমাত্র খালেছ ইসলামকেই কবুল করবেন। আর ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে,
‘বিধান একমাত্র আল্লাহর।'[সুরা আন’আম- ৫৭, সুরা ইউসুফ- ৪০]
আর গনতন্ত্র হল একটি শিরক ও কুফর মিশ্রিত জীবন বিধান। যা আল্লাহকে বাদ দিয়ে বিধি-বিধান এবং আইন প্রণয়নকারী হিসেবে জনগণকে সাব্যস্ত করে। [যেমন বাংলাদেশ সংবিধান ৭/ক ধারা হল ‘সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ বা ‘সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ’।] আর আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন এমন মানুষের আ’মল কখনোই গ্রহণ করবেন না এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না যে কুফরকে গ্রহণ করে আবার ইসলামেরও দাবী করে, শিরকও করে আবার তাওহীদেরও বুলি আওড়ায়। বরং কোন ব্যক্তির ইসলাম ও তাওহীদ ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সঠিক বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে সত্যনিষ্ঠ দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল দ্বীনকে অস্বীকার না করে এবং সকল শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত না হয়।
কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছেঃ...
ٓ إِنِّى تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَهُم بِٱلْءَاخِرَةِ هُمْ كَٰفِرُونَ
وَٱتَّبَعْتُ مِلَّةَ ءَابَآءِىٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشْرِكَ بِٱللَّهِ مِن شَىْءٍ ذَٰلِكَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
‘...নিশ্চয়ই আমি পরিত্যাগ করেছি সেই কওমের দ্বীন যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে। আর আমি অনুসরণ করছি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন। আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা আমাদের জন্য সঙ্গত নয়।'[সুরা ইউসুফ- ৩৭, ৩৮]
এবং সাহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘আবি মালিক রাঃ তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লহ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করল সে তার মাল-সম্পদ, রক্ত এবং হিসাবকে আল্লাহর কাছ থেকে নিরাপদ করে নিল।’ [সাহিহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমানঃ ৩৭-(২৩)] অন্য রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে মান ওয়াহহাদাল্লাহ ‘যে আল্লাহ কে মেনে নিল’ [সাহিহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমানঃ ৩৮-(২৩)]
দ্বীন বা জীবন বিধান বলতে শুধুমাত্র ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মকে বুঝায়না বরং গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা এধরনের মানব রচিত যত বিধান আছে সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আবশ্যক হল এ ধরনের সকল মিথ্যা ধর্ম এবং বাতিল মতবাদ থেকে নিজেকে পবিত্র রাখতে হবে, যাতে আল্লাহ আমাদের থেকে দ্বীন ইসলামকে কবুল করেন। যেমনিভাবে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে এই বৈধতা ও সম্ভাবনা নেই, কোন মানুষ ‘খ্রিষ্ট মুসলমান’ বা ‘ইয়াহুদি মুসলমান’ হবে তেমনিভাবে আল্লাহ (সুবঃ) এটাও পছন্দ করেন না যে, কোন ব্যক্তি 'গণতন্ত্রী মুসলমান' হবে। কেননা ইসলাম হল আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন আর গনতন্ত্র হল একটি কুফরি মতবাদ। আল্লাহ (সুবঃ) বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ
‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায়, তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।'[সুরা আলে ইমরান- ৮৫]
আর যদি কোন ব্যক্তি ইসলামকে ছেড়ে দেয় এবং ইসলামের সীমারেখা, বিধি-বিধান অবজ্ঞা করে এবং গণতন্ত্রকে পছন্দ করে ও তার আইন-কানুন ও সীমারেখাকে গ্রহণ করে তাহলে তার অবস্থা কতই না শোচনীয়!
-কুফরির পঞ্চম কারনঃ তারা নিজেদেরকে এবং তাদের শাসকদেরকে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করার কারণে কাফির।
যে (বাতিল) দ্বীনকে তারা নিজ দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেছে এটাই তাদের নিকট আল্লাহ'র (সুবঃ) চেয়ে অধিক সম্মানিত! তাইতো তারা আল্লাহর বিধান সমূহকে পরিত্যাগ করেছে এবং দেয়ালের পিছনে ছুড়ে মেরেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের বিরোধিতা করে বা বিপক্ষে যায় এবং এর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে ও যুদ্ধে অবস্থান নেয় সে-ই তাদের প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়। তাকে নিজেদের আইন দ্বারা রক্ষা করে। সে মুরতাদ হওয়া সত্ত্বেও মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদি মুখরোচক স্লোগান তুলে তার জন্য সাফাই গাওয়া হয়। আর যদি কেউ তাদের নিয়মের বিরোধিতা করে এবং তাদের বিধি-বিধানকে তিরস্কার করে, তাদের শাসকদের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে হয়ত তাকে তাদের রোষানলে পতিত হয়ে জীবন হারাতে হয়! অথবা তাকে বন্দী করে রাখা রাখা হয়! পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ (সুবঃ) এবং তাঁর রাসুল সাঃ কে অথবা ইসলামকে গালি দেয়, অতঃপর যদি তাকে আদালতে নেয়া হয় তাহলে তার বিচার হয় বেসামরিক আদালতে এবং তার শাস্তি হয় দুই মাস! এর বিপরীতে কেউ যদি তাদের বানানো ইলাহ বা রব তথা প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী এবং তাদের দোসরদের গালি দেয় তাহলে তার বিচার হয় উচ্চ আদালতে এবং কমপক্ষে তার শাস্তি হয় তিন বছর! যদি আল্লাহ সুবঃ এর জন্য তাদের সামান্যতমও সম্মানবোধ থাকতো তাহলে তারা নিজেদেরকে এবং তাদের শাসকদেরকে আল্লাহ (সুবঃ) এর সমতুল্য করত না। উপরন্তু তারা এর চেয়ে আগে বেড়ে তাদের রবদেরকে (শাসকদেরকে) আল্লাহর চেয়ে বেশি সম্মান করে। প্রথম যুগের মুশরিকরাও তাদের শরীকদেরকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসত এবং তারা তাদের রবদেরকে (সমাজপতিদের) বিধান প্রণয়ন, সম্মান প্রদান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করতো। আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ وَلَوْ يَرَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓا۟ إِذْ يَرَوْنَ ٱلْعَذَابَ أَنَّ ٱلْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعَذَابِ
‘এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে এমনভাবে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে, তাদেরকে তারা ভালোবাসে আল্লাহকে ভালবাসার মতো।'[সুরা বাক্বারা- ১৬৫]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
تَٱللَّهِ إِن كُنَّا لَفِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
‘(জাহান্নামে কাফিররা তাদের শরীক ইলাহদের ব্যাপারে বলবেঃ) আল্লাহর কসম! আমরাতো সেই সময় স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত ছিলাম। যখন আমরা তোমাদেরকে রব্বুল আ’লামিনের সমকক্ষ গণ্য করতাম।'[সুরা শু’আরা- ৯৭, ৯৮]
আর আমাদের সময়ের মুশরিকরা তাদের চেয়ে অধিক ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এবং তাদের রবদেরকে আল্লাহর উপরে স্থান দিয়েছে। (তারা যা কিছু বলে আল্লাহ তা’য়ালা তার অনেক ঊর্ধ্বে)। তাদের আইন-কানুন এবং অবস্থা সম্পর্কে যার সামান্যও অবগতি রয়েছে সে এ ব্যাপারে কোন আপত্তি তুলতে পারে না। সামনের আলোচনা থেকে পাঠকগণ বুঝতে পারবেন যে, তাদের নিকট প্রধান বিধানদাতা আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন নন, বরং তারা যাদের প্রণীত আইনের অনুসরণ করে সে সকল তাগুতই হল তাদের মূল ইলাহ। যাদেরকে তারা ভালবাসে এবং আল্লাহর চেয়ে বেশি সম্মান করে। যাদের জন্য এবং যাদের বিধি-বিধানের জন্য তারা লড়াই করে, প্রতিশোধ গ্রহণ করে এমনকি তা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের কষ্ট স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকে। যদি আল্লাহর দ্বীন ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাঁর শরীয়তকে গালি দেয়া হয় তাহলে তারা সামান্য প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে না। (বর্তমান সময়ের বাস্তব চিত্রই তার বড় প্রমাণ। )
-কুফরির ষষ্ঠ কারনঃ আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে বিধান রচনা করার কারণে তারা কাফির।
নিজেদের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন এটা বর্তমান সময়ের একটি সর্বগ্রাসী শিরক। যার প্রচলন ঘটিয়েছে এই কুলাঙ্গার শাসকবর্গ এবং মানুষদেরকে তার দিকে আহ্বান করছে। প্রতিনিয়ত এ কাজে সদস্য হতে এবং অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা তাদের সংবিধানে আল্লাহর তাওহীদ এবং সঠিক দ্বীনের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করছে। আর সংবিধান তাদেরেকে সকল বিষয়ে আইন প্রনয়নের ক্ষমতা দিয়ে থাকে। [বাংলাদেশের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদে ৭ এর (ক) ধারায় উল্লেখ আছে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগনের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীনে ও কর্তৃ্ত্বে কার্যকর হইবে।”] যেমন জর্ডানের সংবিধানের ২৬ এর (ক) ধারা হলঃ “আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বাদশা এবং জাতীয় পরিষদের সদস্যদের হাতে ন্যস্ত থাকবে।” সংবিধানের ২৬ এর (খ) ধারায় আছেঃ “আইন প্রণয়নের ক্ষমতা তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা সংবিধানের মূলনীতি অনুযায়ী হবে।”
আল্লাহ (সুবঃ) মুশরিকদের ধিক্কার দিয়ে বর্ণনা করেছেন,
أَمْ لَهُمْ شُرَكَٰٓؤُا۟ شَرَعُوا۟ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنۢ بِهِ ٱللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ ٱلْفَصْلِ لَقُضِىَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?'[সুরা শু’রা- ২১]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
يَٰصَىٰحِبَىِ ٱلسِّجْنِ ءَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلْوَٰحِدُ ٱلْقَهَّارُ
‘হে কারাসঙ্গীরা! ভিন্ন ভিন্ন বহু রব শ্রেয়, নাকি ঐ এক আল্লাহ যার ক্ষমতা সর্বব্যাপী।'[সুরা ইউসুফ- ৩৯]
শুধুমাত্র একটি মাস’য়ালার ক্ষেত্রেও মুশরিকদের অনুসরণ করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَلَا تَأْكُلُوا۟ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ ٱسْمُ ٱللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسْقٌ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَٰدِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে।[সুরা আন’আম- ১২১]
এ কথা স্পষ্ট যে, তারা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে বড় শিরক করেছে। জর্ডানের সংবিধানে উল্লেখ আছেঃ ‘আইন প্রণয়নের উৎস সমূহ থেকে প্রধান উৎস হল ইসলামি শরীয়ত।’[৪]
অর্থাৎ তারা আইন প্রনয়নে আল্লাহর একক ক্ষমতায় বিশ্বাসী নয়। বরং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাদের ছোট বড় অনেক উৎস রয়েছে। আর ইসলামি শরীয়ত হল এ সমস্ত উৎসের একটি।
সারকথা হলঃ*তাদের জন্য বিধানদানকারী অনেক প্রভু রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ বা প্রধান আবার কেউবা ছোট। আর আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন হলেন এসব প্রভুদের মধ্য থেকে একজন (তারা যা মিথ্যা বলে আল্লাহ সুবঃ তার থেকে অনেক উর্ধ্বে)। এই শাসকদের বিধি-বিধান সম্পর্কে যিনি অবগত তিনি অবশ্যই জেনে থাকবেন, তাদের মধ্যে একজন প্রধান থাকে। যার অনুমোদন ব্যতীত কোন আইন পাশ হয় না বা বাতিল হয় না। এই তাগুতই হল তাদের প্রধান বিধানদাতা বা রব। চাই সে বাদশা হোক বা প্রধানমন্ত্রী হোক বা প্রেসিডেন্ট হোক অথবা হোক কোন আমীর।
যদি আসমানে অবস্থিত মহান রবের বিধান থেকে কোন কিছুর প্রস্তাব পেশ করা হয়, তাহলে তাদের মনোনীত পৃথিবীর এই মিথ্যা রবের সন্তুষ্টি এবং অনুমোদন ব্যতীত তা বাস্তবায়ন হয় না। যদি সে অনুমোদন না করে তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়। আর এদের কুফর কুরাইশ কুফফারদের চেয়েও জঘন্যতম। কেননা তারা আল্লাহর সাথে একাধিক ‘ইলাহ’ এবং বহু রবের শরীক করতো, আর এ শিরক ছিল শুধু ইবাদত তথা রুকু, সিজদার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পক্ষান্তরে এই তাগুতরা আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে। যার দুঃসাহস তৎকালীন মুশরিকরাও দেখাতে পারেনি। ফলে এদের শিরক হল অত্যধিক জঘন্য ও ঘৃণিত। কেননা কুরাইশের মুশরিকরা আল্লাহ (সুবঃ) কে তাদের সবচেয়ে বড় এবং মহান রব হিসেবে গ্রহণ করেছিল। বরং তাদের বিশ্বাস ছিল তারা এ সমস্ত মূর্তির পূজা করে যাতে করে এরা তাদেরকে আসমানে অবস্থিত মহান রব আল্লাহ রব্বুল আ’লামিনের নিকটবর্তী করে দেয়।
مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلْفَىٰٓ
‘(মুশরিকদের উক্তি) আমরা কেবল এজন্যই ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে।'[সুরা যুমার-৩]
তাদের কেউ কেউ আবার হজ্জের সময় তালবিয়া পাঠ করতঃ
‘হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। তোমার কোন শরীক নেই কিন্তু একজন যার মালিক তুমি স্বয়ং এবং তার মালিকানাধীন সবকিছুর অধিকার তোমারই।'[সাহিহ মুসলিমঃ কিতাবুল হাজ্জ- ২২-(১১৮৫)]
এই সমস্ত মুশরিকরা এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ (সুবঃ) রিযিক্ব দান করেন। তিনিই মৃতকে জীবিত করেন। তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফসল উৎপন্ন করেন, সুস্থতা দান করেন। যাকে চান পুত্র সন্তান দান করেন, আর যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন। অথবা কাউকে উভয়টা দিয়ে থাকেন কিংবা কাউকে বন্ধ্যা বানান। এগুলোর কোনটার ক্ষমতা তাদের বাদশা বা সরকারের নেই। কিন্তু বর্তমান শাসকদের সাহায্যকারী সাংবাদিক, সৈনিকসহ অন্যান্য সরকারি আমলাদের বিশ্বাস হল আইন প্রণয়ন করা এবং বিধি-বিধান প্রবর্তনের ক্ষমতা তাদের এই সমস্ত শাসক বা রবদের আছে। আর এই তাগুতগুলোই হল তাদের জমিনের ইলাহ। এরা শিরকের ক্ষেত্রে কুরাইশ কুফফারদের মতই। কিন্তু এরা এইসব ইলাহদের আদেশ নিষেধ এবং আইন কানুনকে আল্লাহর বিধি-বিধানের চেয়ে বেশি সম্মান করে থাকে। সুতরাং ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যে আবু জাহেল আবু লাহাবের চেয়েও নিকৃষ্টতম কাফির। জেনে রাখা উচিৎ! এই সমস্ত লোকদের কুফর ও শিরকের আর অনেক কারণ রয়েছে। আমরা যদি সবগুলি এখানে উল্লেখ করি তাহলে লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। কুফরির প্রায় সকল কারণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। বরং এই ক্ষেত্রে তারা অনেক আগে বেড়েছে। কিন্তু যা আলোচনা হল তা-ই সত্যসন্ধানীর জন্য যথেষ্ট। তবে আল্লাহ (সুবঃ) যদি কারো অন্তরে মহর অংকিত করে দেন আর তার সামনে পাহাড় সমান প্রমাণ পেশ করা হয় তাহলে সেটাও তার কোন কাজে আসবে না। তথাপি সে সত্য অনুসন্ধান করবে না।
এই অধ্যায়গুলোতে আমরা যা বুঝাতে চেয়েছি তা হলো এই সমস্ত লোকদের কুফরি শুধুমাত্র একটি কারণে নয় যা কোন ব্যক্তি বিশেষের উক্তি বা সংশয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বরং তারা শিরক ও কুফরের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত।
টীকাঃ
[১] বড় কুফরঃ যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তা বিধান উঠে যায়। যেমন- আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করা।*
[২] ছোট কুফরঃ এটা বড় কুফরের বিপরীত, অর্থাৎ তা কোন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে না তবে তা অনেক অনেক বড় গুনাহ। যেমন- কোন নির্দোষ মুসলিমকে স্বেচ্ছায় হত্যা করা।*
[৩] ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারি বলেনঃ ত্বগুত হল, ঐ সকল আল্লাহদ্রোহী যারা আল্লাহর নাফরমানীতে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ যাদের আনুগত্য করে। সে মানুষ, জীন, শয়তান, প্রতিমা বা অন্য কিছু হতে পারে।(তাফসিরে তাবারি- ৩/২১)*
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ আল্লাহ ছাড়া যাদের আনুগত্য করা হয় তারাই ত্বাগুত।(মাজমু’আতুল ফাতওয়া- ২৮/২০০)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব বলেনঃ ত্বাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, লিডার, মুরুব্বী, আল্লাহর পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করা হয় এবং তারা এতে সন্তুষ্ট।(মাজমু’আতুত তাওহীদ- পৃষ্ঠাঃ ৯)*
ইমাম কুরতুবি রহঃ বলেনঃ ত্বাগুত হচ্ছে গণক, যাদুকর, শয়তান এবং পথভ্রষ্ট সকল নেতা।(আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন- ৩/২৮২)*
ইবনুল কায়্যিম বলেনঃ ত্বাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, লিডার, মুরুব্বী যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ ও তার রাসুলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয় অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়। অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলীল প্রমাণ ছাড়া আনুগত্য করা হয়। অথবা আল্লাহর আনুগত্য মনে করে যেসব গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা হয়। এরাই হল পৃথিবীর বড় বড় ত্বাগুত। তুমি যদি এই ত্বাগুতগুলো এবং মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য কর তবে বেশীরভাগ মানুষকেই পাবে, যারা আল্লাহর ইবাদাতের পরিবর্তে ত্বাগুতের ইবাদাত করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়ার পরিবর্তে ত্বাগুতের কাছে বিচার ফায়সালা নিয়ে যায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করার পরিবর্তে ত্বাগুতের আনুগত্য করে।(এ’লামুল মুওয়াক্কীঈন- ১/১৫০)*
ইমাম আব্দুর রাহমান বলেনঃ আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়, যারা বাতিলের দিকে আহ্বান করে এবং বাতিলকে সজ্জিত-মন্ডিত করে উপস্থাপন করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আইন বাদ দিয়ে মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার ফায়সালা করার জন্য যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে; এমনিভাবে গণক, যাদুকর, মূর্তিপূজকদের নেতা যারা কবর পূজার দিকে মানুষকে আহ্বান করে, যারা মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করে মাজারের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করে; এরা সকলেই ত্বাগুত। এদের লিডার হচ্ছে শয়তান।(আদদুরারুস সানিয়্যাহ- ২/১০৩)
মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফক্বী বলেনঃ আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদাত করা হতে যারা মানুষকে বিরত রাখে এবং আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয় (চাই সে জীন, মানুষ, গাছ, পাথর যাই হোক না কেন); এমনিভাবে যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে বাদ দিয়ে মনগড়া আইনে হুদুদ, কিসাস, যিনা-ব্যভিচার, মদ এবং সুদ ইত্যাদির বিচার ফায়সালা করে।(হাশিয়া ফতহুল মুজিদ- পৃষ্ঠাঃ ২৮২)
[৪] আর বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে ৭ এর (খ) ধারায় উল্লেখ আছে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।”(সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের প্রধান উৎস হিসেবে তো দূরের কথা, শাখা উৎস হিসেবে ইসলামী শরীয়ত নেই)