Announcement

Collapse
No announcement yet.

ব্যর্থতার ইতিহাসঃ ইখওয়ান, হামাস, আন নাহদা, ইসলাহ, জামাত...!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ব্যর্থতার ইতিহাসঃ ইখওয়ান, হামাস, আন নাহদা, ইসলাহ, জামাত...!




    ইখওয়ানুল মুসলিমিন হচ্ছে মিশরে ১৯২৮ সালে হাসানুল বান্না রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ইসলামী আন্দোলন; যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে ও দেখিয়ে থাকে।
    .
    তিউনিশিয়ার আন-নাহদা, ইয়েমেনের আল ইসলাহ, ফিলিস্তিনের হামাস, উপমহাদেশের জামাতে ইসলামী এই আন্দোলনে নেতা ও আলেমদের মানহাজের অনুসরণ করে থাকে। তাই ইখওয়ানের ইতিহাস মূলত আমাদের দেশের জামাতেরই ইতিহাস, বা 'ইসলামী' গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরই ইতিহাস!
    .
    ইখওয়ানুল মুসলিমিন, জামাত বা আন-নাহদার মানহাজ বুঝতে "আল-মুসাওওয়ার" ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে দেয়া ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রধান মুরশিদের বক্তব্য দেখা যাক। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনারা কি পশ্চিমা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী?"
    .
    জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর গণতন্ত্রই যেহেতু মানবরচিত সর্বোপযোগী ব্যবস্থা, যেখানে স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি রক্ষা হয়, তাই এর সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই।”
    .
    তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়, "ক্ষমতা গ্রহণের পর রায় প্রদানের কর্তৃত্ব কাদের হাতে থাকবে? আহলুল হাল্ল ওয়াল 'আক্বদের (সুনির্দিষ্ট ইসলামী উলামা, নের্তৃত্ববৃন্দ্ব) হাতে থাকবে, নাকি সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত সাংসদদের হাতে?"
    .
    জবাবে তিনি বলেন, “ক্ষমতা দখলের আলাদা কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে জনগণ আমাদেরকে নির্বাচিত করলে, আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করি না। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমান সময়ে জনগণের অভিব্যক্তির যথোচিত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতিই সর্বাধিক উপযুক্ত মাধ্যম।”
    .
    মূলত ইখওয়ান, জামাত ও সমমনারা একথা বুঝতে ব্যার্থ হয়েছে যে,
    লিবারেল পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই এটা মেনে নেয়নি ও নিবেনা, ইসলামের মৌলিক অবস্থানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
    অতীতে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ, নানা অভিজ্ঞতা ও ঘটনাপ্রবাহ একথা প্রমাণ করেছে। এ মানহাজ অনুসরণ করে ক্ষমতার আসন গ্রহণ করার জন্য বেছে নিতে হবে- অন্তঃসারশূন্য, ধর্মনিরপেক্ষ, বেহাত, বিকলাঙ্গ এক বিকৃত পন্থা।
    .
    ইখওয়ানি গণতন্ত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের উপরোক্ত বক্তব্যের যথার্থতা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। ইতিহাস, ইখওয়ানের এ সমস্ত ব্যর্থ গণতান্ত্রিক উদাহরণে ভরপুর।
    সত্যান্বেষী ব্যক্তি স্মরণকালের ইতিহাসের কয়েকটি পাতা উল্টালেই হতবাক হয়ে এ জাতীয় ব্যর্থ গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেখতে পাবেন।
    .
    বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট করার লক্ষ্যে সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিদের জন্য আমি এমনই কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি। এসব ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা সে সমস্ত লোকদের, যাদেরকে বলা হয় গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী অথবা মধ্যমপন্থী।
    .
    *প্রথম উদাহরণ- আলজেরিয়া।
    .
    আলজেরীয় অভিজ্ঞতা সর্বাধিক সুস্পষ্ট উদাহরণ, যা দ্বারা খুব সহজেই বোঝা যায় যে, ইসলামপন্থীদের জন্য গণতন্ত্র কার্যকরী নয়। আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট নামের দলটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইখওয়ানের নীতিমালা গ্রহণ করেছিল। এবং রাজনৈতিক যুদ্ধ হিসেবে পার্লামেন্টে প্রবেশ করে গণতন্ত্রকে ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিল। দলটি তাদের প্রথম নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছিল। অতঃপর ক্ষমতা গ্রহণের দিকে কিছুদূর এগোতেই খ্রিস্টান কুচক্রী মহলের প্রণোদনায় সেনা অভ্যুত্থান ঘটে । নির্বাচনের ফলাফল বাতিল হয়ে যায়। দলের প্রতীক বাজেয়াপ্ত করা হয়। নেতা-কর্মীদেরকে আটক করে মরুভূমিতে নির্বাসিত করা হয়।
    .
    তাদের অপরাধ হলো, নির্বাচনে কেনো তারা বিজয় অর্জন করল? আর এভাবেই জেল-জুলুমের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রহসন সমাপ্ত হয়, আর নতুন করে সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।
    .
    .
    *দ্বিতীয় উদাহরণ- ফিলিস্তিন
    .
    হারাকাতুল মুকাওয়ামা আল-ইসলামীয়া বা হামাস ফিলিস্তিনের বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করেছিল। কিন্তু তারপর কী হয়েছে?
    সারাবিশ্ব দ্রুত ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অন্যায় অবরোধ আরোপ করেছে! এই অবরোধ আরোপের উদ্দেশ্য ছিল, জনগণকে দুর্বল করে দেয়া এবং ইহুদিদের জবরদখলকৃত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে হামাসের রাজনৈতিক স্বীকৃতি কেড়ে নেয়া। সেই তখন থেকে আজও পর্যন্ত গণতান্ত্রিক এই সমস্ত প্রহসনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
    .
    .
    *তৃতীয় উদাহরণ- তিউনিসিয়া
    .
    আশির দশকের শেষের দিকে প্রাথমিক নির্বাচনগুলোতে ‘হিযব আন নাহদ্বা আল-ইখওয়ানি’ বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। আর এই বিজয়ের মাধ্যমেই ইসলামী এই সংগঠনের পতনের সূচনা হয়। দলটি ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং নেতা-কর্মীদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। জনগণের পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে স্বদেশ থেকে উৎখাত করে প্রবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে "হিযবুন নাহদ্বা আল-ইখওয়ানি" নেতৃবৃন্দের সে সময় প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় তাগুত প্রেসিডেন্ট যাইনুল আবেদীন ইবনে আলীর রোষানল থেকে আত্মরক্ষা করা।
    .
    এছাড়াও, আরব বসন্তের পর ক্ষমতা চর্চার কিছুদিন পার না হতেই সেক্যুলার প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয় আন-নাহদা। রাস্ট্রীয়ভাবে ইসলামপন্থীদেরকে আরো কোনঠাসা করা হয়।
    .
    .
    *চতুর্থ উদাহরণ- তুরস্ক
    .
    জাহেলী মনোভাবাপন্ন তুর্কিরা কোনো অবস্থাতেই এটা মেনে নেয়নি যে, ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় যাবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ঘটনাপ্রবাহ একাধিকবার এটা প্রমাণ করেছে। তবে এই শর্তে তারা এটা মানতে রাজি ছিল, ইসলামপন্থীদের দ্বীন থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। যদি তা না করা যায়, তবে ইসলামপন্থীদের পরিণতি হচ্ছে: কারাবরণ করা, বিতাড়িত ও দেশান্তরিত হওয়া, বিচারের মুখোমুখি হওয়া এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া।
    .
    নাজমুদ্দিন আরবাকান নেতৃত্বাধীন সালামা পার্টি (MSP) কয়েক দশক পূর্বে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ লাভ করে। আরবাকান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। ইসলামী আন্দোলনের এই জাগরণের মুখে ইহুদি ভাবাপন্ন সামরিক বাহিনী সেনা-অভ্যুত্থান ছাড়া তাদের সামনে দ্বিতীয় কোনো উপায় খুঁজে পেল না। তাই তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশে স্বৈরশাসন ফিরিয়ে আনে...।
    .
    সেনা অভ্যুত্থানের পর কয়েক বছর না যেতেই সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক প্রহসন আরম্ভ করে দেয়। সালামা পার্টি ফজিলত পার্টি নাম ধারণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট লাভ করে সেনা নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। আঙ্কারার সিংহাসন টিকিয়ে রাখার জন্য অযৌক্তিক বহু ছাড় দেয়া সত্ত্বেও নব্য জাহিলিয়াত-প্রিয় তুর্কিদের মনোরঞ্জন করতে সক্ষম হয়নি তারা।
    সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক ক্যানভাসে নতুন চিত্র আসে। নাজমুদ্দিন আরবাকানসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিচারের মুখোমুখি হন। ইসলামী দলটি ভেঙে দেয়া হয় এবং নাজমুদ্দিন আরবাকান ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনীতি থেকেই নিষিদ্ধ হন।
    .
    গণতন্ত্র-প্রেমিকদের অভ্যাস অনুযায়ী তুরস্কের ইসলামপন্থীরা দ্বিতীয়বার রাজনীতিতে আসার প্রচেষ্টা চালান। এবার "ওয়েলফেয়ার পার্টি" (কল্যাণ সংগঠন) নামে তারা দল ঘোষণা করেন। অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে এ দল পরাজয় বরণ করে এবং অল্প সময়ের ভেতর তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
    .
    শেষ পর্যন্ত রজব তাইয়্যেব এরদোগান নতুন দল গঠন করেন, যার নাম দেন Adalet ve Kalkınma Partisi (AKP)।
    ইসলামবান্ধব ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে তিনি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন!
    .
    দলটি পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করে।
    তবে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ইসলামের লেবাস চড়ানো হয়। সবমিলিয়ে উদ্দেশ্য হল, লিবারেল পশ্চিমা বিশ্বের মর্জি যেন রক্ষা হয়। পাশাপাশি তুরস্ক রাষ্ট্রের মূল নিয়ন্ত্রক যায়োনিস্ট সেনাবাহিনীকে তোয়াজ করে চলা যায়।
    .
    ক্রোয়েশিয়া সফরকালে তুরস্ককে সকলপ্রকার দীন থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিয়ে এরদোগান বলেন,
    "My views are known on this. The reality is that the state should have an equal distance from all religious faiths."
    "এব্যাপারে আমার অবস্থান সকলেই জানেন। বাস্তবতা হচ্ছে রাস্ট্রের উচিৎ সকল ধর্ম থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখা।"
    .
    এছাড়াও, ইজরায়েলের সাথে এরদোগানের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনাও, সচেতন সকলেরই জানা রয়েছে।
    .
    .
    *পঞ্চম উদাহরণ- ইয়েমেন
    .
    প্রকৃতপক্ষে ইয়েমেনে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পরিণতি কলজে পোড়ানো মর্মান্তিক এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। আব্দুল মাজিদ আল-জিনদানির নেতৃত্বে ইখওয়ান (ইয়েমেন "আল ইসলাহ" নামে পরিচিত) ক্ষমতা গ্রহণের দিকে কিছুদূর অগ্রসর হতে না হতেই এই জামাত ইতিহাস হয়ে যায়।
    .
    সেক্যুলার, আমেরিকান দাস আলী আব্দুল্লাহ সালেহকে নিঃশেষ করার জন্য দশ লক্ষ সশস্ত্র ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট ভবন ঘেরাও করেছিল। কিন্ত আব্দুল মাজিদ আল-জিনদানির হেকমতের কারণে তা সফল হয়নি। প্রকারান্তরে, তিনি ইয়েমেনের এই তাগুতকে সুযোগ করে দিলেন মুসলিমদের ঘাড়ে চেপে বসার জন্য।
    আব্দুল মাজিদ আল-জিনদানির হেকমত, দশ লক্ষ সদস্যের সেই দলটি ভেঙ্গে দিল যাদের দাবি ছিল, (ইসলামী) শরীয়তই হবে আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস। এরপর সরকার গঠন হলো। জিনদানি সেদেশের উপপ্রধান হয়ে গেলেন।
    .
    আর এদিকে আলী আব্দুল্লাহ সালেহ ষড়যন্ত্র করে সালেম আলবাইদ্ব-এর নেতৃত্বে পরিচালিত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্কট মোকাবেলায় ইখওয়ানকে ব্যবহার করতে লাগল। দক্ষিণাঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে পার্লামেন্টে রাজনৈতিকভাবে বয়কট করা হলো। আলবাইদ্ব ও তার অনুচরেরা ওই অবস্থায় উত্তরাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখলনা।
    .
    যুদ্ধ শুরু হলো। সেই যুদ্ধে ইখওয়ানের যুবকেরা ত্যাগের বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। যুদ্ধে অল্প সময়ের ভেতর দক্ষিণাঞ্চল পরাজিত হল। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে তা পুনরায় যুক্ত হলো।
    দ্বিতীয়বার নির্বাচন দেয়া হলো। তখন বিভিন্ন সেবামূলক মন্ত্রণালয়ের দায়-দায়িত্ব ইখওয়ানের লোকদের কাঁধে অর্পণ করা হলো। এদিকে তাদের মন্ত্রণালয়ের কাজে অর্থ খরচ করতে বাধা দেয়া হলো। উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের সামনে তাদেরকে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপন করা। নিজেদের মন্ত্রণালয় পরিচালনায় তারা অক্ষম; অর্পিত দায়িত্ব পালনে তারা অপারগ— মানুষকে এমনটা বোঝানো। যাইহোক, বাস্তবেই কুচক্রী আলী আব্দুল্লাহ সালেহ যা চেয়েছিল তাই হয়েছে।
    .
    ধীরে ধীরে ইখওয়ানের বলয় সঙ্কুচিত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অবদান রাখার সুযোগ কমে এসেছে। অথচ একসময় তারা শাসন ক্ষমতা প্রায় লাভ করেই বসেছিল।
    আরব বসন্ত পরবর্তী বাস্তবতায় ইখওয়ান ক্ষমতার বলয় থেকে তো বটেই, ইয়েমেনের ইসলামপন্থার মেহনতে আরো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পরে।
    .
    .
    ষষ্ঠ উদাহারণঃ মিশর
    দীর্ঘ ৯০ বছর পর, আরব বসন্তের বদৌলতে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আরোহণ করা ইখওয়ান এক বছরেও রাস্ট্রকে ইসলামী আইনের অধীনে আনতে সক্ষম হয়নি। বরং ২০১৩ এর লিবারেল পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে অপসারিত হয় ইখওয়ান। প্রেসিডেন্ট মুরসি, মুরশিদে আম মাহদি আকেফ (রহ.) বন্দি অবস্থায় মারা যান।
    গণহত্যা ও গণবন্দীত্বের এই ফলাফল ইখওয়ানের পরিণতি আলজেরিয়ার ঘটনারই পুনরাবৃত্তিই মাত্র!
    .
    .
    *সপ্তম উদাহারণঃ বাংলাদেশ
    .
    জিয়াউর রহমানের আমলে গোলাম আযমের নের্তৃত্বে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করা ইখওয়ানি মানহাজের দল "জামাতে ইসলামি" কখনো বিএনপি আবার কখনো আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে সামান্য ক্ষমতা চর্চার বাইরে কিছু অর্জন করতে পারেনি।
    .
    ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের অন্যতম শরীক হিসেবে সংসদ ও মন্ত্রীসভায় জামাত নেতাদের অংশ থাকলেও, ৫ বছরে একটিও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
    আর মার্কিনপন্থী বিএনপি কেনই তা হতে দিবে?
    .
    অতঃপর ২০০৮ সালের পর আওয়ামী সরকার জামাতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেয়। এবং এক পর্যায়ে দলের নিবন্ধন বাতিল করে। ঠিক যেন ইয়েমেন, আলজেরিয়া আর মিশরেরই পুনরাবৃত্তি।
    .
    .
    ব্যর্থ গণতন্ত্রের এমন উদাহরণ অনেক দেয়া যাবে। হয় সেক্যুলার রাজনৈতিক নেতারা মুজাহিদ ও অন্যান্য ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে আদর্শিক আপসে সম্মত হওয়া ইখওয়ানিদের ক্ষমতার কোণে সাময়িক জায়গা দিয়েছে। অতঃপর আবার ছুড়ে ফেলেছে।
    অন্যথায় কুসুম কুসুম বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর নিরাপদ সংগ্রামীদের কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করেছে।
    .
    ইসলামী বিশ্বের পূর্ব থেকে পশ্চিমে অবস্থানকারী সকল ইখওয়ানি ধারার জামাত বা ইসলামী গণতান্ত্রিক দলসমূহের পরিণতি এমনইঃ-
    ক) আদর্শের সাথে আপস। শরিয়াহর স্থলে সেক্যুলার শাসনেই সন্তুষ্টি।
    খ) অন্যথায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকেই চিরবিদায়।
    .
    তাই,
    আদতেই যদি কেউ সত্যকে ভালোবাসেন, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে এসে মুক্তমনে ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর গণতন্ত্রের কুফল নিয়ে চিন্তা করেন; তবে ইন শা আল্লাহ বাস্তবতা অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
    .
    আর ইখওয়ান, জামাতে ইসলামী বা আন নাহদার জন্য শায়খ সামি আল উরাইদির পুরনো কথাটিই স্মরণ করিয়ে দেয়া যায়-
    "বুদ্ধিমান তো সেই ব্যাক্তি, যে অন্যের পরিণতি দেখে শিক্ষা নেয়। আর নির্বোধ তো সেই ব্যাক্তি, যে নিজে আক্রান্ত হয়েও শিক্ষা নেয়না।"

    *সংগৃহীত*

Working...
X