আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (১)”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
“এই তো গাযা…
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (১)”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
ইস্টারের পৌরাণিক কাহিনী[1] এবং ইহুদী জীবনযাত্রায় এর প্রভাব:
তানাখের[2] ছোটগল্পগুলির মধ্যে একটি হলো ইস্টারের বই। এটি একটি উপন্যাস যার বৈধতা এবং ঘটনার কালানুক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এখানে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু সেটা নয়। আমাদের মূল বিষয় হলো উক্ত ঘটনা থেকে আমরা কি বুঝতে পারি? তাই আসুন ঘটনার সারসংক্ষেপ আমরা একটু দেখে নিই:
‘মর্দেকাই’ তার চাচাতো বোনের সৌন্দর্যের সুযোগ নিয়ে তাকে পারস্যের রাজার সাথে বিয়ে দিয়েছিল; এই আশায় যে, সম্ভবত তার এই বোন একদিন তাদের কাজে আসবে। মর্দেকাই পরে রাজাকে একটি হত্যার হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হন। রাজার মন্ত্রী যখন ইহুদীদের নিপীড়ন করতে এবং তাদের নির্মূল করতে চেয়েছিলেন, তখন মর্দেকাই চাচাতো বোন ইস্টারের কাছে আশ্রয় নেন এবং গণহত্যার হাত থেকে ইহুদীদেরকে বাঁচানোর জন্য রাজার মনোযোগ ও ভালোবাসা উপভোগকারী একজন সুন্দরী রাণী হিসাবে তার অবস্থানের সদ্ব্যবহার করেন। এভাবেই সম্রাজ্ঞীর অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে শত্রুর কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়ার এবং রাজার পর রাষ্ট্রের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চলমান থাকে। আর ইহুদীদের পরিত্রাণের ঐ দিনটি তাদের জন্য ঈদ তথা উৎসবের দিন হিসেবে পরিগণিত হয়, যার নাম হলো- ‘পুরিম ঈদ’।
গল্প যেদিকে ইঙ্গিত করেছে, ইহুদীদের জীবন আচার অনেকটা সেরকমই ছিল। অবিলম্বেই ইহুদীরা[3] সিদ্ধান্ত গ্রহণের উৎস মূলের কাছাকাছি থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তারা এটাকে নিজেদের ক্ষমতা, আত্মরক্ষা, অস্তিত্ব এবং কর্তৃত্বের নিয়ামক শক্তি হিসেবে স্ট্র্যাটেজি বানিয়ে নেয়। তাই তারা তাদের পুরো ইতিহাসে শাসকের কাছ থেকে উপযুক্ত ও অনুকূল একটি দূরত্বে অবস্থান করতে থাকে। এভাবে তারা উপযুক্ত সময়ে সমর্থন দান, ঘুষ এবং নারীদের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে থাকে। তারা অনেক সংগঠন ও সংস্থার নকশা তৈরি করে, যেগুলোর কাজ হচ্ছে শাসক এবং উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। সম্প্রতি ইহুদীরা বাকি ইহুদীদের প্রতিনিধিত্ব করে এ কাজটাই করেছে। ব্রিটেনে রথসচাইল্ড পরিবার এমনটাই করেছিল। ব্রিটেন সে সময় একটি সাম্রাজ্য ছিল। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে তারা বেলফোর চুক্তি পাস করায়। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার জায়নবাদীরা aipac নামে একটি সংস্থা তৈরি করে, যা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী অথবা কংগ্রেস প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রচারে ঘুষ এবং অর্থ প্রদান করে। এভাবেই তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের উৎস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়— চাই সেটা হোয়াইট হাউজ হোক কিংবা কংগ্রেস। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: Aipac[4] সংস্থাটির সামনে অন্য কোনো আইডিওলজি থেকে আসা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। আমেরিকার অঙ্গনে তারাই হয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্লেয়ার।
সংক্ষেপে এ কথা বলতে হয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিশেষ করে প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইহুদীবাদীদের হাতে। কোনো মুসলিম যেন এই স্বপ্ন না দেখেন যে, তাদের এই অবস্থান পরিবর্তন হয়ে যাবে— (ইল্লা মাশাআল্লাহ তথা আল্লাহ যদি অলৌকিকভাবে কিছু চান তাহলে ভিন্ন কথা) বিশেষ করে যখন মুসলিমদের অধিকাংশ শাসক[5] এবং আরবের ক্ষমতাসীন শাসকদেরকে ইহুদীবাদীরা নিজেদের দাস বানিয়ে রেখেছে। তাদেরকে দিয়ে তারা নিজেদের মিশন পরিচালনা করছে। ভেটো অধিকারটাই হলো তাদের এমন ছাতা, যার আশ্রয়ে ইহুদী খুনিদের জন্য নৃশংসতা ও নির্মমতা সহজ হয়ে উঠছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
كَيۡفَ وَإِن يَظۡهَرُواْ عَلَيۡكُمۡ لَا يَرۡقُبُواْ فِيكُمۡ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ يُرۡضُونَكُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَتَأۡبَىٰ قُلُوبُهُمۡ وَأَكۡثَرُهُمۡ فَٰسِقُونَ
“কেমন করে চুক্তি বলবৎ থাকবে? অথচ তারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তারা তোমাদের আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের কোনো মর্যাদা দেবে না তারা মুখে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট রাখে; কিন্তু তাদের হৃদয় তা অস্বীকার করে; আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।” [সূরা বারাআত ০৯:০৮]
অতএব মনুষ্য বিবেক নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এই মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেক হারাবার ভয় তাদের নেই। মনুষ্যত্ব নিয়ে তারা যা কিছু প্রচার করে, সেগুলো বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করে তাদেরকে নিয়ে তামাশা করার জন্য। তারা শুধু শক্তির ভাষাই জানে। কারণ শক্তিমানরাই ইচ্ছে মতো সবকিছু করতে পারে, এরপর বাস্তবতাকে নিজেদের স্বার্থ ও লালসার বলি বানাতে পারে। শক্তি ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়ে তা সম্ভব নয়।
উপর্যুক্ত অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই ইউক্রেন এবং প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ইহুদীবাদী স্ববিরোধিতা। فهم لا يدافعون عن أصحاب العيون الملونة والبشرة البيضاء তারা রঙিন চোখ ও সাদা চামড়ার লোকদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে না। এটাই হচ্ছে বর্ণবাদী পশ্চিমা জনমতের একমাত্র উপযুক্ত ব্যাখ্যা। এভাবেই তারা বনি আদম অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে ছোট করে দেখে। বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের ন্যায় ইনসাফ তাদের স্বার্থকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। কোনো ইস্যুতে তাদের স্বার্থ থাকলে তারা ইনসাফ দেখাতে চায় এবং ওই ইস্যুতে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে; এমনকি যদিও সেটা তাদের লিখিত রীতিনীতির বিপরীত হোক না কেন। এ কারণেই দখলদার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কারণ ইউক্রেন হলো ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিরক্ষার জন্য প্রথম ফ্রন্টলাইন স্বরূপ। যদি রাশিয়া এই ফ্রন্ট অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে হয় রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা একটি নতুন বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। পক্ষান্তরে যদি ফিলিস্তিনের দিকে তাকাই, তখন দেখা যায়, ফিলিস্তিন দখলকারী ইহুদীদের পক্ষে তারা আত্মরক্ষার কথা বলে; সেটাও আবার ওই ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে, যাদের ভূমি বেদখল হয়ে আছে। কারণ ইহুদীরাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমাদের মূল সেতুবন্ধন স্বরূপ। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য যেকোনো বিষয়কে বৈধতা দেয়। অত্যন্ত বাজেভাবে বাস্তবতাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিবর্তন করে এবং তখন নিজেদের তৈরি আন্তর্জাতিক নীতি ও কানুনকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেয়। তখন কেউ যদি তাদের সঙ্গে তর্ক করতে আসে, তবে সে তাদের মিডিয়া প্রোপাগান্ডা, অপবাদ ও অনৈতিকতার হামলা থেকে বাঁচতে পারে না। অন্ধকারের এই কালো মেঘের নিচে আমরা নিশ্চিত যে, পশ্চিমা ইহুদীবাদী লবি (আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি এবং অন্যান্য) যারা মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা গাজায় শোকাহত আমাদের ভাই-বোনের উপর অবরোধ আরোপ করার জন্য খুনি (নেতানিয়াহু) থেকে যেকোনো ইঙ্গিত বা সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে। যখনই খুনি (নেতানিয়াহু) দাবি করেছিল, unrwa-এর কিছু কর্মচারী ৭ অক্টোবরের হামলায় অবদান রেখেছে, তখনই পশ্চিমা দেশগুলি খুনি (নেতানিয়াহু)-এর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই না করেই unrwa-এর জন্য তাদের তহবিল বন্ধের উদ্যোগ নেয়। শুধু তাই নয়; পশ্চিমা দেশগুলো ভালো করেই জানে, খুনি নেতানিয়াহু নিকৃষ্ট এক মিথ্যাবাদী। কিন্তু... গাজায় মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশা, অবরোধ ও অনাহার ট্র্যাজেডির অধ্যায়গুলো আরও দীর্ঘায়িত করা এবং ইহুদীদের খুশি করার জন্য পশ্চিমারা এই দ্রুত উদ্যোগ নেয়। এছাড়া তাদের এমন কাজের আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা (ইহুদী ও অ-ইহুদী জায়োনিস্ট) মুসলিমদেরকে নির্মূল করার জন্য একটি ফ্রন্ট তৈরি করতে চাচ্ছে। গাজা হলো সেই ফ্রন্টের সূচনা। অতএব জনগণকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা বলে তারা প্রতারিত করবে সেটা জানা কথা। সেখান থেকে কোনো লাভ আমরা আশা করতে পারি না। কারণ জনগণকে যতক্ষণ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার না দেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদেরকে ফিলিস্তিনে বসবাস করতে কখনোই দেয়া হবে না। শুধু আকাঙ্ক্ষা করলেই কখনো উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। অধিকার জোর করে আদায় করে নিতে হয়।
এছাড়াও তাদের অতল বিভ্রান্তির আবর্তে আমি একটি কথা বলতে চাই; যদিও ইহুদীদের ইতিহাস অনেক ঘটনা ও অভিজ্ঞতার সম্ভারে সমৃদ্ধ, কিন্তু তবু এতসব ঘটনা ও অভিজ্ঞতা তাদের কোনো উপকারে আসেনি।[6] এগুলো তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেয়নি। উল্টো তাদেরকে সীমালঙ্ঘনের পথে নিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
كَلَّآ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَيَطۡغَىٰٓ
أَن رَّءَاهُ ٱسۡتَغۡنَىٰٓ
أَن رَّءَاهُ ٱسۡتَغۡنَىٰٓ
“বাস্তবেই, মানুষ সীমালঙ্ঘনই করে থাকে কারণ সে নিজকে অমুখাপেক্ষী মনে করে।” [সূরা আলাক ৯৬:০৬-০৭]
তারা কখনোই এমন কোনো পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়নি যা তাদেরকে আল্লাহর কিংবা মানুষের নিকটবর্তী করে তুলবে। কারণ ইহুদীরা যখনই বাতিল ও অসৎ উদ্দেশ্য স্থির করেছে, সেটাকেই তারা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। তারা নিজেদের নবীদেরকে হত্যা করেছে। আল্লাহর মানহাজ ও পথ তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। বরাবরই তারা আল্লাহর অলি ও প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সত্যপন্থীদেরকে তারা নিপীড়ন করেছে। আজও তারা সেই কাজই করে যাচ্ছ। কারো সঙ্গে তাদের মিলিত হবার প্রয়োজন নেই। তারা নিজেদের মধ্যে ভিত্তিহীন বর্ণবাদ এমনভাবে লালন করেছে, যা গোটা বিশ্ব থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আল্লাহ যাদের ওপর ক্রোধান্বিত হন, তাদেরকে এভাবেই তিনি সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ কারণে কখনোই তারা অবশিষ্ট মানব গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থান করতে সক্ষম হবে না। তাদের পরিণতি খুবই কাঁটা যুক্ত। দিন দিন তাদের অশুভ পরিণাম তাদের নিকটবর্তী হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই তাদের দিকে তাকাতে হবে, তাদের ভবিষ্যত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে এবং তাদের সাথে লড়াই করতে হবে... আমরা নিশ্চিত যে, আজ হোক কাল হোক তারা অবশ্যই একা হয়ে যাবে। এখন তারা ক্ষমতা উপভোগ করার পর এবার যখন তাদের পতন ঘটবে[7], তখন পৃথিবী আর কখনো তাদের অস্তিত্ব দেখতে পাবে না।
তাদের অনাচার ও সীমালংঘনের অবস্থা বোঝাবার জন্য একটি উদাহরণ হলো: খুনি (নেতানিয়াহু) এবং তার ব্যাকটেরিয়া বাহিনী যেভাবে বাইডেন এবং আমেরিকাকে অপমান করেছে! এই খুনি আমেরিকাকে বাধ্য করেছে গাজার জনগণের জন্য সহায়তা সামগ্রী যেন তারা সেভাবেই পৌঁছে দেয়, যেভাবে জর্ডান আকাশ থেকে নিক্ষেপ করে সাহায্য পৌঁছিয়েছে। অথচ অপরাধী বাইডেন ইহুদীদের সমস্ত প্রয়োজনে তাদেরকে আকাশ ও নৌপথে শক্তি সরবরাহ করে আসছে। নেতানিয়াহুর ব্যাপারে বাইডেন আর ধৈর্য ধরতে পারুক কিংবা না পারুক, সে ইহুদীবাদী রাষ্ট্রকে সমর্থন করে যেতে বাধ্য— চাই নেতানিয়াহু অথবা অন্য কেউ তাকে যতই অপমান করুক। কেউ কেউ দাবি করছে যে, নেতানিয়াহু বাইডেনকে অপমান করার জন্য যা করছে তা নিছক একটা নাটক। যেকোনো কিছুরই সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এটা নির্বাচনের বছর এবং কেউই একজন দুর্বল প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করতে আগ্রহী নয়, কিন্তু তবুও যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাতে এ বিষয়টা ফুটে উঠছে যে, নেতানিয়াহু এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে, যা গোটা পশ্চিমকে বিশ্বকে বিব্রত করছে কিংবা বলা যেতে পারে, ইহুদীরা পশ্চিমাদের ওপর তাদের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রদর্শন করছে। ইহুদীরা পশ্চিমাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেই তাদের সাথে জোট করেছে। পশ্চিমাদের কাজ হচ্ছে শুধু সমর্থন করে যাওয়া; মত প্রকাশ করা নয়।
বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে সকলেই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে। জর্ডান, মিশর, আরব আমিরাত এবং তুরস্ক এসব দেশের শাসকবৃন্দ বীরত্ব ও সাহসিকতার ফাঁকা বুলি শুনিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দেশ দুটি গাজার অধিবাসীদের জন্য কিছু ব্যাক্স ফেলেছে, যা জীবন রক্ষার পরিবর্তে জীবনকে আরো শেষ করে দেয়। অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সমর্থনের জন্য বাণিজ্যিক কনভয়গুলো সমস্ত কিছু নিয়ে জর্ডান ও মিশরের ফটকগুলো অতিক্রম করছে। তৃতীয় দেশটির নাগরিক পরিবহনের বিমানগুলো ওই সমস্ত আহতকে স্থানান্তরিত করার কাজে নিয়োজিত আছে, যাদেরকে তাদেরই যুদ্ধবিমানগুলো অধিকৃত ফিলিস্তিনের ইহুদীদের সমর্থনে বোমা হামলা করেছে। (একদিকে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইহুদীদের সমর্থনে বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে অপরদিকে সেই বোমার আঘাতে আহতদেরকে স্থানান্তরিত করার জন্য বেসামরিক বিমানগুলো ব্যবহার করছে)। আর চতুর্থ দেশটি বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ উত্তপ্ত বাক্যবাণ ছুঁড়ে দিচ্ছে এবং বক্তব্যের মাধ্যমে গাজার অধিবাসীদেরকে সমর্থন জানাচ্ছে, একই সময়ে এই দেশের নৌবহরগুলো অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের কাছে সমস্ত রসদপত্র সরবরাহ করছে। তারা আর কত নিচে নামবে?
***
[1] এই ঘটনার বিশদ বিবরণ এস্টারের বইতে পাওয়া যাবে।
[2] তানাখ: ইহুদীদের ঐতিহাসিক নথি। এতে রয়েছে তাওরাত, তাওরাতের পাঁচটি বই, রাজা ও নবীদের ইতিহাস, এই সম্পর্কিত ২১টি বই, মোট ৩৯টি বই। এছাড়াও আরো কিছু পুস্তক রয়েছে যেগুলোর বৈধতা নিয়ে ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
[3] ইহুদী জাতি ও ইহুদী ধর্মের ইতিহাস শুরু হয় আল্লাহর নবী মুসা আলাইহিস সালামের সিনাই পর্বত থেকে ফেরাউনের প্রাসাদে ফিরে আসার মাধ্যমে।
[4] এই সংস্থার কর্মকর্তারা এবং তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তারা বিপ্লবীদের টার্গেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত, যাদের শীর্ষে রয়েছে লোন উলফ্ তথা একাকী নেকড়ে দল।
[5] কারো মুনাফেকি ও লৌকিকতার প্রয়োজন আমাদের এই উম্মাহর নেই। মহত্ত্বের সমস্ত উপাদান এই উম্মাহর রয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা এবং রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন ও প্রভাবশালী হওয়ার জন্য এই উম্মাহর রবের পথে ফিরে যাওয়াই যথেষ্ট। বিশ্বের অনেক জনগোষ্ঠী অচিরেই মুসলিম উম্মতের স্নেহ ভালোবাসা কামনা করবে। কিন্তু উম্মাহর শাসকরা নিজেদের প্রভুর অবাধ্যতা করেছে, নিজেদের বীরত্ব হারিয়েছে, আপন জাতিকে অপমান করেছে এবং শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আমাদের জনগণ যা ভোগ করেছে তা জুলুম অত্যাচারের মুখে আমাদের নীরবতার ফসল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ
অর্থ “নিশ্চয় আল্লাহ্ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।” [সূরা রাদ ১৩:১১]
[6] তবে আমি ওই সমস্ত ব্যক্তিকে ব্যতিক্রম ঘোষণা করছি, যারা নবীদের-কে অনুসরণ করেছেন এবং তাদের পথে চলেছেন।
[7] ثُمَّ رَدَدۡنَا لَكُمُ ٱلۡكَرَّةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَمۡدَدۡنَٰكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ أَكۡثَرَ نَفِيرًا
“তারপর আমরা তোমাদেরকে আবার তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম এবং সংখ্যায় গরিষ্ঠ করলাম।” [সূরা বনি ইসরাঈল/সুরাতুল ইসরা ১৭:০৬]
আরও পড়ুন