ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না!
পর্ব - ২
পর্ব - ২
জিহাদ ও পরীক্ষা :
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَنَبلُوَنَّكُم حَتّىٰ نَعلَمَ المُجٰهِدينَ مِنكُم وَالصّٰبِرينَ وَنَبلُوَا۟ أَخبارَكُم
وَلَنَبلُوَنَّكُمঅবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব। এই পরীক্ষার কারণ কী! তিনি বলেন, حَتّىٰ نَعلَمَ المُجٰهِدينَ مِنكُم যেন আমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারী, হাকীকী অর্থে জান কুরবানকারী মুজাহিদদের সম্পর্কে জেনে নিতে পারি। وَالصّٰبِرينَ এবং জিহাদের পথে সবরের সাথে অবিচল ব্যক্তিদের সন্ধান মিলে। وَنَبلُوَا۟ أَخبارَكُم এবং তোমরা যে দাবি কর ‘আমি মুমিন’, ‘আমি মুজাহিদ’, তোমাদের এ দাবির ব্যাপারে অবশ্যই আমি পরীক্ষা করব। আল্লাহর আরেক ফরমান হলো,
ما كانَ اللَّهُ لِيَذَرَ المُؤمِنينَ عَلىٰ ما أَنتُم عَلَيهِ حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ
আল্লাহর সুন্নত এটা নয় যে, তোমরা মুমিনগণ যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায়ই তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বরং আল্লাহর বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, তিনি পরীক্ষা নিবেন বিপদ-মসিবত দিয়ে এবং কখনো কিছু সফলতাও দিবেন,
وَنَبلوكُم بِالشَّرِّ وَالخَيرِ فِتنَةً
(আমি তোমাদের ভালো ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করব।)
.
আল্লাহর উদ্দেশ্য কী? পরীক্ষা করা। আর পরীক্ষার দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
.
যেন খবীস (নোংরা) তয়্যিব (উত্তম) থেকে পৃথক হয়ে যায়।
.
জিহাদের ময়দানের ভায়েরা! আল্লাহ তা‘আলা মন্দ ও ভালো একস্থানে জমা করেন না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ভালো বানিয়েছেন। এমনটা হতে পারে না যে, এই জিহাদী আন্দোলনে যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, মুসলিমদের হেফাজতের জন্য, মুসলিমদের হিদায়াতের জন্য এবং তাদের কল্যাণের জন্য নিজের সব কিছু কুরবানি করছে, জীবনকে লটারীর মাধ্যমে বাজি লাগায় সে এবং যে ইখলাস ও আখলাক থেকে খালি, যে জিহাদের বদনাম রটায়, যার কাছে নিজের জীবনসত্ত্বা, প্রসিদ্ধি, নিজের দুনিয়া কামাই করা উদ্দেশ্য, এই দুই শ্রেণির লোক একত্রে থাকতে পারে না। স্বর্ণকে খাঁটি করার জন্য অগ্নিকুণ্ডে ঢালতে হয়, আগুনে গরম করতে হয়, যেন ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়ে খাঁটি সোনা পৃথক হয়ে যায়। এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুমিনদেরকেও পরীক্ষার পাত্রে ঢেলে দেবেন। তিনি বলেন,
إِن يَمسَسكُم قَرحٌ فَقَد مَسَّ القَومَ قَرحٌ مِثلُهُ
আজ যদি তোমাদের উপর জমীন সংকীর্ণ হয়ে যায়, তাহলে তোমাদের দুশমনের উপরেও এমন দিন অতিবাহিত হয়।
.
এই যে কখনো একজনের বিজয় লাভ হয়, অপরজনের উপর পরীক্ষা আসে, একজনের জমীন ছিনিয়ে নেয়া হয়, ক্ষতির পর ক্ষতির সংবাদই আসতে থাকে, রোগে আক্রান্ত হয়, অমুক ভাই শহীদ হয়, অমুক ভাই গ্রেফতার হয়। আর বিপরীতে শত্রুরা শুধু সফলতা আর বিজয় লাভ করে। তোমাদের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে, অকল্যাণ পছন্দকারীদের (ওদের নিকট অকল্যাণ পছন্দকারী) অকল্যাণ থেকে জমিন সাফ করে দিয়েছে। আমার ভায়েরা! এটা হক-বাতিলের পরিচয় নয়। এই হার-জিত হক-বাতিলের পরিচয় নয়। এমন তো সর্বদাই হতে থাকে।
وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
ঐ দিনগুলো যা আমি মানুষের মাঝে ঘুরপাক করাই, উলট-পালট করি।
কখনো একজনকে দুনিয়াবী বিজয় দান করি, কখনো আরেক জনকে। তো এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষা করা।
জিহাদের পথে বিপদ আসার উদ্দেশ্য :
যেগুলো আল্লাহ তা‘আলা নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রথম উদ্দেশ্য : মুখলিস ও ইখলাস বিহীন লোকের মধ্যে পার্থক্য
আল্লাহ তা‘আলা ফরমায়েছেন,
وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا
(যেন আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের ব্যাপারে জানতে পারেন)
যার ফলে মুমিন এবং মুনাফেক, মুখলিস ও গায়রে মুখলিস, মুজাহিদ ও গায়রে মুজাহিদ, মিথ্যা এবং সত্যের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয়,
حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
এবং খারাপ থেকে ভালো পৃথক হয়ে যায়।
.
এবং যে মন্দ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে ভালো বলে প্রকাশ করেছে তারা পেছন ফিরে ভেগে যাবে এবং যে ভালো আল্লাহ তা‘আলা তাকে দৃঢ় রাখবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সত্য করে দেখাবেন। মিথ্যাবাদী লোকেরা স্রষ্টা এবং সৃষ্টিজীবের সামনে অপদস্থ ও পরাজিত হয়ে যায়। অন্যদিকে সত্যবাদীদের আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া এবং আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
দ্বিতীয় উদ্দেশ্য : ঈমানদারদের উত্তম প্রতিদান বৃদ্ধি করা
যখন বিপদ আসে, কষ্ট বেড়ে যায় এবং সংকীর্ণতা অনুভব হতে থাকে তখন এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদারদের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
عِظَمُ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ
অধিক কষ্টের অধিক প্রতিদান।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিপদ যত কঠিন হবে, বিপদ যত বড় হবে প্রতিদানও তত বৃদ্ধি পাবে। জান্নাতের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য এবং মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অনেকগুলো স্তর রেখেছেন। যখন কোনো আল্লাহওয়ালার উপর বিপদ আসে তখন তিনি মনে করেন, এর দ্বারা আমার গুনাহ মাফ হচ্ছে এবং জান্নাতের স্তরসমূহ থেকে অনেক উচ্চ স্তর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য রেখেছেন। সেই স্তরে পৌঁছানো হচ্ছে এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। তাই এ পরীক্ষা এসেছে, তবে ধৈর্য ধারণ শর্ত। প্রতিদানের নিয়তে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কোন জিনিসের উপর সবর? ঈমানের উপর সবর, জিহাদের উপর সবর এবং শরিয়তের অনুসরণের উপর সবর।
.
(উদ্ধৃত অংশটি শাইখ উস্তাদ উ@স]ম। ম]হ-মুদ হাফিজাহুল্লাহর "ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না!" থেকে চয়ন করা হয়েছে।)
Comment