ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না!
" পর্ব - ৫ "
" পর্ব - ৫ "
ষষ্ঠ উদ্দেশ্য : উম্মাহর যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি
.
হে আমার ভাইয়েরা! হকের আন্দোলন, হেদায়েতের আন্দোলন এমন কার্যক্রম, যা মানুষকে হেদায়াতের দিকে নিয়ে আসে এবং মানুষের হেদায়েতের জন্য জালেমদের সাথে লড়াই করে। এগুলো অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইমাম ব্যতীত চলতে পারে না। হকের আন্দোলনের জন্য প্রত্যেক যামানাতেই এবং প্রত্যেক স্তরে এমন কিছু ব্যক্তি প্রয়োজন, যাদের একনিষ্ঠতা-ধৈর্য-দৃঢ়তা-স্থিরতা ও দ্বীনের জন্য কুরবানি দেখে প্রত্যক্ষকারীরা হেদায়াতের দাওয়াত পেয়ে যাবে এবং তার পরবর্তীতে আসা হকের পথিকদের দৃঢ়তা এবং স্থিরতার শিক্ষা হয়ে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন-
وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দিন।
.
হেদায়াতের পথে ইমাম হওয়া অতি সহজ কাজ নয়। এই রাস্তা বিপদের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ
অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহিমকে কিছু কাজের মাধ্যমে পরীক্ষা নিলেন, তখন তিনি তা পরিপূর্ণ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা উনাকে বিপদের ঘাঁটিতে ফেলে দিয়েছিলেন, আর যখন তিনি তাতে পাশ করলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বললেন,
قالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاس إِمَامًا
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে লোকদের ওপর ইমাম বানিয়ে দেব।
.
এটা কখন বলেছেন? বিপদের সমুদ্র থেকে সফল হয়ে বের হওয়ার পর। হে ভাইয়েরা! সঠিক পথের উপর যখন কাউকে অনুসরণীয় এবং ইমাম বানানো হয়, যেন পরবর্তীরা এই অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বকে দেখে নিজেদের অন্তরে দ্বীনের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করতে পারে, দ্বীনের উপর আমল করতে পারে, দিনের পথে বড় বড় কুরবানির জন্য নিজেকে পেশ করতে পারে, তখন এই সমস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা বিপদের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করেন। আব্দুর রশিদ গাজী রাহিমাহুল্লাহর দৃষ্টান্ত দেখুন। তাকেও এই বিপদের ঘাঁটিতে ফেলা হয়েছিল, তখন তিনি দৃঢ় এবং স্থির হয়ে গিয়েছিলেন, যার ফলে ইমাম হয়ে গেছেন। এই দৃষ্টান্ত যা তারা দেখিয়ে গেছেন, যার ফলে পাকিস্তানের মাটিতে জিহাদের কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে যায়।
.
যখন জান বাঁচানোর জায়েজ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
.
আমার ভাইয়েরা! যখন মুমিনদের উপর পরীক্ষা আসে এবং তার জন্য জান বাঁচানোর সকল জায়েয রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সে এমন কোনো দরজায় করাঘাত করতে পারে না, যে দরজা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। সে এমন কোনো রাস্তায় বের হতে পারে না, যে রাস্তায় জান বেঁচে যায়, কিন্তু ঈমান থেকে সে মাহরুম হয়ে যায়। এ কারণেই মুসা আ. ও ফেরাউনের ঘটনায় যখন যাদুকররা ঈমান আনে আর ফেরাউন সেই নওমুসলিমদের উপর চাপ প্রয়োগ করে- ‘ফিরে এসো! নিজ ধর্মে ফিরে এসো! ঐ দ্বীনকে ছেড়ে দাও! যদি ফিরে না আস, দ্বীন পরিবর্তন না কর, আত্মসমর্পন না কর তাহলে জবাই হয়ে যাবে, কতল হয়ে যাবে, সমস্ত শরীর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে!’ তখন এই মুমিনরা এবং নওমুসলিম আহলে ঈমানগণ কোন জিনিসের কামনা করেন? তারা কী প্রার্থনা করেছেন? তারা ফেরাউনের সামনে নতি স্বীকার করেনি। ক্ষমা ও নিরাপত্তা চায়নি। জীবন ফিরে পাওয়ার প্রার্থনা করেনি। তারা বুঝে গিয়েছিল যে, ঈমান আনয়নের সাথে সাথে বেঁচে থাকার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তাঁরা আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকা ও ঈমানের উপরেই মৃত্যুবরণের দোয়া করেছেন-
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
হে আল্লাহ! আমাদেরকে ঈমানের উপর দৃঢ় রাখুন এবং এই ঈমানের সাথেই মৃত্যু দিন।
.
তাঁরা ঈমানের সাথে মৃত্যুর কামনা করেছেন। তাঁরা এমন জীবন কামনা করেননি, যে জীবনে চলাফেরা তো ঠিকই করা যায়, মুক্তি ও আজাদি তো মিলে, কিন্তু ঈমান থেকে মাহরুম হতে হয়।
.
.
চলবে...