রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাহ পাঠ করলে তাঁর জীবনকে চারটা বড় বড় ভাগে ভাগ করা যায়।
❐ ১। দা’ওয়াহ:
নবুওয়াতের প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিশন ছিল দা’ওয়াহ কেন্দ্রিক। প্রথম তিন বছর ছিল গোপন দা’ওয়াহ দেবার সময়। একেবারে কাছের মানুষদেরকে দা’ওয়াহ দিচ্ছিলেন রাসূলুল্লাহ, যাঁদের ব্যাপারে তাঁর ধারণা ছিল তাঁরা এই দ্বীনের দা’ওয়াহকে কবুল করবেন। এভাবে একটা ছোট কিন্তু বিশ্বস্ত ভিত গড়ে তোলার কাজে আল্লাহর আদেশে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিশন কন্টিনিউ করে যান টানা তিন বছর।
❐ ২। তারবিয়্যাহ:
তিন বছরের এই গোপন দা’ওয়াহর সময়ে কি শুধুই দা’ওয়াহর কাজ হয়েছিল? না, তারবিয়্যাহও ছিল। কিন্তু ওই সময়টায় স্বাভাবিক ভাবেই তারবিয়্যাহর চেয়ে দা’ওয়াহ কার্যক্রমটাই ছিল মূখ্য। তারবিয়্যাহর মাত্রা দা’ওয়াহর চেয়ে কম থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ তখনও যথেষ্ট পরিমাণে ওয়াহী আসেনি। সেটা ছিল ইসলামের একেবারে প্রাথমিক একটা পর্যায়। তিন বছরের গোপন মিশনের পর এবার শুরু হল প্রকাশ্য দা’ওয়াহ এবং একই সাথে দা’ওয়াহর আওতায় আসা জনগোষ্ঠীর তারবিয়্যাতের কাজ। ওয়াহীর আলোয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গড়ে তুলতে লাগলেন এক সুশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী, যাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশে যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিল।
❐ ৩। হিজরত:
একটা সুসংগঠিত ও সুপ্রশিক্ষিত টিম তৈরি করে ফেলার পর আল্লাহর রাসূলের মিশনের নেক্সট স্টেপ ছিল এমন একটা সেইফ প্লেইস বের করা, যেখানে তিনি এই নবগঠিত দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারবেন, দা’ওয়াহ আর তারবিয়্যাহর কাজ আরো গুছিয়ে নিতে পারবেন। হাজ্জ্বের মৌসুমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন। তিনি হাজ্জ্বে আগত বিভিন্ন গোত্রের কাছে তাঁর দা’ওয়াহকে পেশ করছিলেন এবং তাঁকে নিরাপত্তা দেবার শর্ত পেশ করছিলেন। অবশেষে ইয়াসরিববাসী এতে সম্মত হয় এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিয়ে ইয়াসরিবে হিজরত করেন যেখান থেকে সূচনা ঘটে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের।
❐ ৪। জিহাদ:
অস্ত্র খুব সেনসিটিভ একটা জিনিস। সঠিক হাতে এর সঠিক ব্যবহার হয় আর বেঠিক হাতে পড়লে এর ফলাফল কি যে হয় সেটা আল্লাহই ভালোমতো জানেন। কিছু কিছু আপনারাও জানেন। একটা সুসংগঠিত, সুপ্রশিক্ষিত আর সুনিয়ন্ত্রিত জনশক্তি এবং তাঁদের জন্য একটা সেইফ জোন গড়ে তোলার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনোযোগ দিলেন অস্ত্রের দিকে। আল্লাহর আদেশে মুসলিমরা হাতে তুলে নিলেন সিলাহ, শুরু হল গাযওয়াহ-সারিয়্যাহ। ইসলাম তার প্রতাপ, প্রভাব ছড়াতে শুরু করলো, আতংকিত করে তুললো আল্লাহর শত্রুদের। ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহই এরপর থেকে হল মূল দা’ওয়াহ। একই সাথে ‘ইলমি ও অন্যান্য আ’মালি দা’ওয়াহও চলতে থাকলো, একই সাথে তারবিয়্যাতি কার্যক্রমেও ভাটা পড়লো না।
মানহাজ বলতে আমি এটাই বুঝি। এটাই কর্মপন্থা। এটাই নববী মানহাজ। খেয়াল করে দেখবেন, প্রতিটা ধাপ তার পূর্ববর্তী ধাপগুলোকেও কিন্তু অন্তর্ভূক্ত করে। শেষ ধাপে এসে সবগুলোই সমন্বিতভাবে চলতে থাকে আর এভাবেই ঘুরতে থাকে ইসলামের চাকা। যুগের সাথে এই চার ধাপের অধীনস্থ কাজগুলো হয়তো ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করবে। কিন্তু পন্থা এইই। কর্মপন্থা আর কর্ম এক জিনিস নয়। হিজরাতের সময় রাসূলুল্লাহ তাঁর সময়ের, প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পথ বের করে নিয়েছিলেন। এখন ঠিক এইভাবেই যে করতে হবে এমন না। কিন্তু মূল কাজ সেইমই থাকবে। কিতাব আমাদের সামনে, সুন্নাহ আমাদের সামনে, সীরাহ আমাদের সামনে। তাহলে কিভাবে মানহাজ আমাদের সামনে থাকে না? কিভাবে মানহাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগে যখন রাসূলের সীরাহ আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় পথের শুরু আর কোথায় পথের শেষ?
*************
❐ লেখা : সংগ্রহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত [আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা লেখককে উত্তম বিনিময় দান করুন। লেখকের ইলম ও ফাহমে বরকত দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।]
❐ লেখা : সংগ্রহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত [আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা লেখককে উত্তম বিনিময় দান করুন। লেখকের ইলম ও ফাহমে বরকত দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।]