Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল্লাহ্*র অবস্থান কোথায়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল্লাহ্*র অবস্থান কোথায়

    বইটি ডাউনলোড করুন
    Last edited by titumir; 09-16-2015, 12:39 AM.

  • #2
    বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
    কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে
    আল্লাহ্*র অবস্থান কোথায়?

    গবেষক-
    মুহাম্মাদ ইকবাল বিন ফাখরুল ইসলাম

    ভূমিকা
    সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্*র জন্য,আমরা তারই ইবাদত করি, তার নিকট সাহায্য চাই ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। তার নবী ও রাসুল মুহাম্মাদ(সাঃ) এর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হউক।
    অতঃপর, কথা এই যে অনেকদিন যাবত মুসলিমদের মাঝে একটি বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলছে আর তা হচ্ছে আল্লাহ্*র অবস্থান নিয়ে। কেউ বলেছে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান আবার কেউ বলছে আল্লাহ সাত আসমানের উপরে আরশের উপর অবস্থান করছেন। এখন এই মতবিরধপূর্ণ বিষয়টি বোঝার জন্য আমি নিম্নোক্ত আয়াতটির অনুসরণ করছি। আয়াতটি হচ্ছে,

    “...যদি তোমাদের মাঝে কোন একটি বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হয় তাহলে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাক;এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠ সমাধান।” সুরা নিসা-৪/৫৯
    এই আয়াতে বলা হয়েছে যে কোন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তা আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ)দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ করতে হবে। তাই আমি বইটিতে এই বিষয় বোঝার জন্য শুধুমাত্র কুরআন ও গ্রহণযোগ্য হাদিসের উল্লেখ করছি।তদুপরি মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয় । যদি কারো কাছে ব্যাখ্যাগুলো ভুল মনে হয় তাহলে আমাকে কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে শুধরিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
    আল্লাহ্* উপরে অবস্থান করেছেন
    মহান আল্লাহ্* বলেন,
    “বরং আল্লাহ্* তাকে (ঈসা আঃ)কে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন।”-সুরা নিসা ৪/১৫৮
    এই আয়াতটি বলছে যে, আল্লাহ্ ঈসা (আঃ)কে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। এই তুলে নিয়েছেন শব্দ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্ উপরে অবস্থান করছেন।
    মহান আল্লাহ্ বলেন,
    “তার কাছে পবিত্র বাক্য ও সৎকাজ উঠানো হয়।” সুরা ফাতির(৩৫)/১০
    এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন যে,পবিত্র বাক্য এবং সৎকাজ তার নিকট উঠানো হয়। এই উঠানো হয় শব্দ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্ উপরে অবস্থান করছেন।
    মহান আল্লাহ্ আরও বলেন,
    “মালাইকাহগন (ফেরেশতাগণ) এবং রুহ (জিবরীল) আল্লাহ্র কাছে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে যার পরিমান পঞ্চাশ হাজার বছর।”-সুরা মাআরিজ(৭০)/৪
    এই আয়াতটি বলছে যে, মালাইকাহগন(ফেরেশতাগণ) এবং রুহ (জিবরীল) আল্লাহ্র দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়। এই ঊর্ধ্বগামী হয় শব্দ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্ উপরে।
    মহান আল্লাহ্ বলেন,
    “তারা তাদের উপরে অবস্থিত তাদের রবকে ভয় করে…”-সুরা নাহল(১৬)/৫০।
    এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন তারা তাদের উপরে অবস্থিত রবকে ভয় করে। এই “উপরে অবস্থিত” কথাটি দ্বারা বোঝা যায় যে আল্লাহ্ উপরে আছেন।
    মহান আল্লাহ্ আরও বলেন,
    “তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর…”সুরা আরাফ(৭)/৩
    এই আয়াতে আরবি শব্দ “উনযিলা” যার অর্থ নামানো হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ্*র পক্ষ থেকে যা নামানো হয়েছে তা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।আর কোন কিছু নামানো হয় উপর থেকেই।এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্* উপরে অবস্থান করছেন। এই সংক্রান্ত আয়াত কুরআন মাজীদে আরও আছে।সুরা মাইদাহ(৫)/২৪,২৭,২৮, সুরা আনআম (৬)/১১৪, সুরা রাদ (১৩)/১, সুরা ত্বহা(২০)/৪, সুরা শুয়ারা(২৬)/১৯২, সুরা সাজদাহ (৩২)/২, সুরা সাবা (৩৪)।৬ , সুরা জুমার (৩৯)/৫৫, সুরা ফুসসিলাত (৪১)/২,সুরা জাসিয়া (৪৫)/২।

    আল্লাহ্* আকাশের উপরে অবস্থান করছেন
    পূর্বের অধ্যায়ে আমরা জানতে পেরেছি আল্লাহ্ তালা উপরে অবস্থান করছেন। এখন আমাদের জানা দরকার আল্লাহ্* উপরে কোথায় অবস্থান করছেন? এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্* বলেন,
    “তোমরা কি নিজেদের নিরাপদ মনে করে নিয়েছ যে যিনি আকাশের উপরে আছেন তিনি তোমাদের জমিনে বিধ্বস্ত করে দিবেন না, যখন তা(পৃথিবী)থর থর করে কাঁপতে থাকবে কিংবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গিয়েছ যে,যিনি আকাশের উপরে আছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী ঝরো-হাওয়া পাঠাবেন না ? যাতে তোমরা জানতে পার যে, কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।” সুরা মূলক (৬৭)/১৬-১৭
    এই আয়াতটি বলছে যে, যিনি আকাশের উপরে আছেন তাকে যেন আমরা ভয় করি।আর জাকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে তিনি তো আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়াতালা ছাড়া আর কেউ নন।এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্* আকাশের উপর অবস্থান করছেন।
    আবদুল্লাহ ইবনে আমর(রা) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন
    রাসুলুল্লাহ (সা)বলেছেন ... যারা জমিনে বসবাস করছে তোমরা তাদের প্রতি দয়া কর। তাহলে যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনিও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন...।”তিরমিজি সহিহ লি-গইরিহি অধ্যায়ঃ২৫ সদব্যবহার ও পারস্পারিক সম্পর্ক বজায় রাখা অনুচ্ছেদ ১৬, মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা, হাদিস।আরবি রিয়াদ ১৯২৪
    এই হাদিসটির প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যিনি আকাশের উপর আছেন তিনি আমাদের উপর দয়া করবেন। আর এখানে রাসুলুল্লাহ (সাঃ), আল্লাহ্*কে বুঝিয়েছেন।অতএব হাদিসটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম আল্লাহ্* আকাশের উপরে আছেন।
    জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহ) হতে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত ,
    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন (আখিরাতের দিন) তোমাদের আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তখন তোমরা কি বলবে? তারা বললেন,আমরা সাক্ষ দিব আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার আমানতের হক আদায় করেছেন এবং ভাল কাজের উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি (সাঃ) আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে এবং মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, হে আল্লাহ্* তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ্* তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ্* তুমি সাক্ষী থাক...।” আবু দাউদ ,সহিহ, অধ্যায়ঃ৫,কিতাবুল হাজ্জ অনুচ্ছেদঃ ৫৮, নবী (সাঃ)এর বিদায় হাজ্জের বিবরন হাদিস।আরবি রিয়াদ ১৯০৫
    এই হাদিসটি ভালভাবে লক্ষ্য করুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলেছেন, হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক। আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কারনে বোঝা যায় আল্লাহ্ আকাশের উপরে রয়েছেন।
    মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম আসসুলামি (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত,
    “তিনি বললেন, একদা আমি (রাসুলুল্লাহ সাঃ) কে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসুল(সাঃ) আমার একজন দাসী আছে আমি তাকে জোরে চড় মেরেছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এটা কষ্টদায়ক মনে হল। আমি তাকে মুক্ত করে দেই। তিনি (সাঃ) বললেন আমার কাছে নিয়ে এসো। বর্ণনাকারী বললেন,আমি তাকে নিয়ে এলে তিনি(সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ্ কোথায়? মেয়েটি বলল আকাশের উপর, এবং তাকে বলা হল আমি কে? মেয়েটি বলল আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)। তিনি (সাঃ) আমাকে বললেন তাকে মুক্ত করে দাও কারন সে মুমিনা।”-আবু দাউদ সহিহ, অধ্যায়ঃ ১৬, শপথ ও মানত অনুচ্ছেদঃ১৫ কাফফারা হিসেবে মুমিন দাসী মুক্ত করা, হাদিস।আরবি রিয়াদ ৩২৭৬
    এই হাদিসটির প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মুমিন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ্* কোথায়? মেয়েটি তখন বলল আকাশের উপর। তাই বুঝা যায় যে আল্লাহ আকাশের উপর অবস্থান করছেন।
    আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ্* তালা রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর প্রতি রাতে পৃথিবীর নিকটতম(প্রথম) আকাশে অবতরণ করেন...” ।বুখারি অধ্যায় ঃ১৯ কিতাবুত তাহাজ্জুত ,অনুচ্ছেদঃ১৪ ।আরবি মিশর ,১১৪৫ ।মুসলিম অধ্যায় :৬ মুফাসিরের সালাত ও তার কসর, অনুচ্ছেদঃ২৪, শেষ রাতে যিকির ও প্রাথর্না করা এবং দুয়া কবুল হওয়া হাদিস,১২৬১,১২৬২,১২৬৩,১২৬৪,১২৬৫। তিরমিজি, সহি্হ, অধায়ঃ২ ।ইবনে মাজাহ,সহিহ, অধ্যায়ঃ৫,সালাত কায়েম করা ও তার নিয়ম কানুন,অনুচ্ছেদঃ১৮২
    এই হাদিসটি বলছে যে, আল্লাহ্ প্রতি রাতে প্রথম আকাশে নেমে আসেন।এই কথা থেকেই বোঝা যায় যে আল্লাহ্ তালা আকাশের উপরে অবস্থান করছেন।
    আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ততে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাঃ) যখন মেরাজে যান তখন সপ্তম আকাশের উপরে আল্লাহ্র সাথে কথোপকথন হয় এবং ঐ দিনই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত বিধান হিসেবে প্রদান করা হয়। বিস্তারিত জানতে দেখুন- বুখারি,অধ্যায়ঃ৮ কিতাবুস সালাত,অনুচ্ছেদঃ১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ১ কিতাবুল ইমান, অনুচ্ছেদ ৭৪।
    এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ্* মুলত আকাশের উপরেই থাকেন। যদি আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান হতেন তাহলে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে পৃথিবীতেই দেখা করতেন, আকাশে নিয়ে যেতেন না।
    আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি
    “জাইনাব বিনতে জাহহাশ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অন্য স্ত্রীদের গর্ব করে বলতেন আল্লাহ্* তালা আমাকে আকাশ থেকে বিবাহ দিয়েছেন।” – বুখারি অধ্যায়ঃ ৯৭ কিতাবুত তাওহিদ, অনুচ্ছেদঃ২১। নাসাঈ সহিহ অধ্যায়ঃ২৬ অনুচ্ছেদঃ২৬। তিরমিজিঃ সহিহ অধ্যায়ঃ৪৪ অনুচ্ছেদঃ৩৪
    এই হাদিসটি বলছে যে, আল্লাহ্, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং জাইনাব (রাঃ) এর বিবাহ আকাশ থেকে দিয়েছেন। এই কথা থেকে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ তালা আকাশের উপর অবস্থান করছেন।

    আল্লাহ্ আরশের উপর অবস্থান করছেন
    পূর্বের অধ্যায়ে আমরা জেনেছি আল্লাহ্* আকাশের উপর থাকেন। এখন আমাদের জানা দরকার আল্লাহ্* উপরে কোথায় অবস্থান করছেন?কারন আকাশতো সাতটি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্* বলেন,
    “অবশ্যই তোমাদের রব আল্লাহ্* যিনি ছয়টি মেয়াদকালে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর, আরশের উপর অবস্থান করছেন।” সুরা আরাফ(৭)/৫৪ এ সংক্রান্ত আরও আয়াত রয়েছে- সুরা ইউনুস(১০)/৩,সুরা রাদ(১৩)/২, সুরা তহা(২০)/৫,সুরা ফুরকান(২৫)/৫৯,সুরা সাজদাহ(৩২)/৪,সুরা হাদিদ(৫৭)/৪
    এই সকল আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় আল্লাহ্ তালা আরশের উপর অবস্থান করছেন।
    আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন
    “অবশ্যই আল্লাহ্ যখন সকল মাখলুক সৃষ্টি করলেন তখন তার আরশের উপর তার কাছে লিখে রাখলেন আমার রহমত আমার গযব থেকে এগিয়ে আছে। বুখারি অদ্ধায়ঃ৯৭,কিতাবুত তাওহিদ অনুচ্ছেদঃ২১।
    এই হাদিসটি বলছে যে, আল্লাহ্ আরশের উপর তার কাছে লিখে রেখেছেন তার রহমত তার গযব থেকে এগিয়ে আছে। আর এই আরশের উপর তার কাছে লিখে রাখলেন কথা থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ্ আরশের উপর অবস্থান করছেন।

    Comment


    • #3
      সংশয়মূলক প্রশ্ন
      প্রশ্ন ১।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা (২০)/৫
      এই আয়াতে আল্লাহ্* ইসতাওয়া শব্দটি দ্বারা অবস্থান বুঝাননি বরং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন বুঝিয়েছেন।কারণ ইসতাওয়া শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি চরমভাবে বিভ্রান্তিকর। কারণ আল্লাহ্* তালা বলেন
      “অবশ্যই তোমাদের রব আল্লাহ্* যিনি ছয়টি মেয়াদকালে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর ইসতাওয়া করছেন।” –সুরা আরাফ(৭)/৫৪/
      এই আয়াতে আল্লাহ্* বলছেন যে, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পরে আরশের উপর ইসতাওয়া হয়েছেন।অর্থাৎ বুঝা গেল আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহ্* আরশের উপর ইসতাওয়া হননি। এখন যদি এই আয়াতে ইসতাওয়া শব্দটির অর্থ ক্ষমতা করা হয়, তাহলে বলুনতো আসমান ও জমিন সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্* আরশের উপর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন না? নিশ্চয়ই এতবড় কুফুরি বিশ্বাস আপনাদের নেই।
      অতএব বুঝা গেল, এই আয়াতে আল্লাহ্*, ইসতাওয়া শব্দটি দিয়ে ক্ষমতা বুঝাননি বরং অবস্থানকেই বুঝিয়েছেন।
      প্রশ্ন ২।
      মহান আল্লাহ্* বলেন
      “অবশ্যই তোমাদের রব আল্লাহ্* যিনি ছয়টি মেয়াদকালে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর আরশের উপর ইসতাওয়া করছেন।–সুরা আরাফ(৭)/৫৪
      এই আয়াতে আল্লাহ্, ইসতাওয়া শব্দটি অবস্থান অর্থে ব্যবহার করেননি।বরং মনোনিবেশ অর্থে ব্যবহার করেছেন।যেমন মহান আল্লাহ্ বলেন,
      “ পৃথিবীর সবকিছুই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর তিনি আকাশের দিকে ইসতাওয়া(মনোনিবেশ) করেছেন। এবং তা সাতটি আকাশে সাজান। তিনি সকল বিষয় জানেন। ” –সুরা বাকারাহ(২)/২৯।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি চরমভাবে আপত্তিকর। যারা আরবি ব্যকারনে অজ্ঞ তারাই মুলত এভাবে অপব্যাখ্যা করে থাকে। “ইসতাওয়া” শব্দটির পরে যখন “ইলা” শব্দটি আসে তখন ইসতাওয়া শব্দটির অর্থ হয় “মনোনিবেশ করা”।যেমনভাবে সুরা বাকারাহ এর ২৯নং আয়াতে ইসতাওয়া শব্দটি রয়েছে।আর যখন “ইসতাওয়া” শব্দটির পর “আলা” শব্দটি আসে তখন “ইসতাওয়া” শব্দটির অর্থ হয় “অবস্থান করা”। যেমন মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “অতঃপর বলা হল হে জমিন তোমরা পানি গিলে ফেল আর হে আকাশ থাম। অতঃপর পানি জমিনে বসে গেল,কাজ শেষ হল এবং নৌকা জুদি পর্বতের উপরে “ইসতাওয়া”(অবস্থান) করল।–সুরা হুদ(১১)/৪৪।
      এই আয়াতে “ইসতাওয়া” শব্দটির পরে “আলা” শব্দটির ব্যবহার হওয়ায় অর্থটি হয়েছে নৌকা জুদি পর্বতের উপরে অবস্থান করল। এই আয়াতে কোনোভাবেই “ইসতাওয়া” শব্দটির অর্থ “মনোনিবেশ” করা সম্ভব নয়। তাই বুঝে নিতে হবে যে, সুরা আরাফের ৫৪নং আয়াতে আল্লাহ্* আরশের উপর “ইসতাওয়া” করছেন কথাটি উল্লেখ রয়েছে,ঐ আয়াতে “ইসতাওয়া” শব্দের পর “ আলা” শব্দটি এসেছে।যে কারনে আয়াতটির অর্থ হয়েছে “ আল্লাহ্* আরশের উপর অবস্থান করছেন”।
      আয়াতটি আবারও লক্ষ্য করুন,
      “অবশ্যই তোমাদের রব আল্লাহ্* যিনি ছয়টি মেয়াদকালে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর, আরশের উপর “ইসতাওয়া(অবস্থান)” করছেন।সুরা আরাফ (৭)/৫৪।
      প্রশ্ন ৩।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “তিনি বলেন তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের দু জনের সাথেই আছি।”-সুরা ত্বহা (২০)/৪৬।
      এই আয়াতে আল্লাহ্* বলছেন, আল্লাহ্* আমাদের সাথেই আছেন। এতে বুঝা যায়, আল্লাহ্* সকল জায়গায় রয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ প্রশ্নকারী পুরো আয়াতটি উল্লেখ করেননি। পুরো আয়াতটি লক্ষ্য করুন-
      “তিনি বলেন তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের দুজনের সাথেই আছি। আমি দেখি এবং শুনি।”-সুরা ত্বহা(২০)/৪৯।
      এই আয়াতটি বলছে যে, আল্লাহ্* আমাদের সাথেই আছেন। তবে আল্লাহ্* আমাদের সাথে কিভাবে আছেন তা আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ করেছেন। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে আল্লাহ্* দেখেন এবং শুনেন। এই কথা থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ্* আমাদের সাথে শুনা এবং দেখার মাধ্যমে রয়েছেন। যদি বলা হয় আল্লাহ্* আমাদের সাথে স্ব-শরীরে রয়েছেন, তাহলে ভাই বলুনতো মানুষ যখন টয়লেটে, সিনেমা হলে, জুয়ার আসরে, বেশ্যালয়ে ইত্যাদি জায়গায় যায় তখনও কি আল্লাহ্* মানুষের সাথে থাকেন? নিশ্চয়ই এতবড় কুফুরি বিশ্বাস আপনাদের নেই। মুলত আল্লাহ্* ঐ খারাপ জায়গায় মানুষের সাথে থাকেন দেখা ও শুনার মাধ্যমে, স্ব-শরীরে নয়। স্ব-শরীরে মহান আল্লাহ্* আরশের উপর অবস্থান করছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্* বলেন
      “ অতঃপর আল্লাহ্* আরশের উপর অবস্থান করছেন।” –সুরা আরাফ(৭)/৫৪
      প্রশ্ন ৪।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি,আর প্রবৃত্তি তাকে কি কুমন্ত্রণা দেয় তাও আমি জানি। আমি তার গলার শির থেকেও নিকটবর্তী।” সুরা কফ(৫০)/১৬।
      এই আয়াতটি বলছে যে, আল্লাহ্* মানুষের গলার যে রগ রয়েছে তারও নিকটবর্তী। অর্থাৎ আল্লাহ্* বুঝাচ্ছেন, আল্লাহ্* মানুষের ভিতর থাকেন।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি চরমভাবে বিভ্রান্তিকর।কারণ আব্দুল্লাহ(রাঃ) হতে বরনিত,তিনি বলেন,
      “নবী (সাঃ) বলেছেন জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার থেকেও বেশি নিকটে আর জাহান্নামও সেই রকম।” বুখারি অদ্ধায়ঃ৮১ অনুচ্ছেদঃ২৯
      এই হাদিসটি বলছে যে, জান্নাত এবং জাহান্নাম আমাদের জুতার ফিতা থেকেও নিকটে। তাহলে কি জান্নাত ও জাহান্নাম আমাদের ভিতরে অবস্থান করছে? নিশ্চয়ই না। মুলত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এখানে বুঝাচ্ছেন যে, যে বাক্তি জান্নাত বা জাহান্নামের কাজ করবে সে তাই অর্জন করবে।এই কথাটি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) জুতার ফিতার উদাহরন দিয়ে বুঝিয়েছেন যে জান্নাত ও জাহান্নাম খুব দূরে নয়।
      আর আমাদের প্রভু আল্লাহ্* উল্লেখিত আয়াতটিতে বলেছেন “তিনি মানুষের গলার রগের থেকেও নিকটে”। এই কথাটি দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন আল্লাহ্*, মানুষের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন। কারণ আয়াতের শুরুতেই বলা হয়েছে যে,
      “আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি, আর প্রবৃত্তি তাকে কি কুমন্ত্রনা দেয় তাও আমি জানি।” সুরা কফ (৫০)/১৬।
      আয়াতের প্রথমাংশ থেকেই বুঝা যায় আল্লাহ্* মানুষের গলার নিকট রয়েছেন সবকিছু জানার মাধ্যমে। তাহলে বুঝা গেল যে, আল্লাহ্* মানুষের ভিতরে স্ব-শরীরে থাকেন না। মুলত আল্লাহ্*র অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ্* বলেন,
      “রহমান(আল্লাহ্*) আরশের উপর অবস্থান করছেন।” সুরা ত্বহা(২০)/৫।

      প্রশ্ন ৫।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “পূর্ব পশ্চিম আল্লাহ্*রই সুতরাং তোমরা যেদিকেই মুখ কর সেদিকেই আল্লাহর ওয়াজহুন(সত্ত্বা)...।” সুরা বাকারা(২)/১১৫
      এই আয়াতে ওয়াজহু শব্দটি “সত্ত্বা” অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “...কিন্তু তমার রব এর ওয়াজহুন(সত্তা)চিরস্থায়ী,যিনি মহিয়ান-গরিয়ান।” সুরা আর রহমান(৫৫)/২৭
      অতএব সব্দিকেই আল্লাহর “সত্ত্বা” থাকাতে বুঝে নিতে হবে যে আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান।

      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি চরমভাবে বিভ্রান্তিকর। যদি সবদিকেই আল্লাহ্*র সত্ত্বা থাকে তাহলে তো সবকিছুই আল্লাহ্* হয়ে যেত। গাছ-পালা, গরু-ছাগল,পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সকল কিছুর ভেতর আল্লাহ্*র সত্ত্বা অবস্থান করছে?নাউযুবিল্লাহ। নিশ্চয়ই এই ধরনের কুফুরি বিশ্বাস আপনাদের নেই। ওয়াজহু শব্দটি দিয়ে সবসময় সত্ত্বা হয় না। যেমন মহান আল্লাহ্* তালা বলেন,
      “ তার মহান রবের ওয়াজহু(সন্তুষ্টি) ব্যতিত।”-সুরা লাইল(৯২)/২০
      এই আয়াতে ওয়াজহু শব্দটি সন্তুষ্টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ঠিক তেমনি সুরা বারাকার ১১৫ নং আয়াতে ওয়াজহুন শব্দটি সন্তুষ্টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আয়াতটির সঠিক অনুবাদ হবে
      “পূর্ব পশ্চিম আল্লাহরই সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ করো না কেন সে দিকেই আল্লাহর ওয়াজহু(সন্তুষ্টি) রয়েছে...।” সুরা বাকারা(২)/১১৫
      আর এই আয়াতটির শানে-নযুল হচ্ছে
      আবদুল্লাহ ইবনু ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় আসার পথে যেদিকেই তার মুখ হোক না কেন সওয়ারীতে বসে সলাত আদায় করতেন। এই ব্যাপারে আয়াতটি নাযিল হয় “তোমারা যেদিকেই মুখ ফিরাবে সেদিকেই আল্লাহর ওয়াজহুন(সন্তুষ্টি) সুরা বাকারা(২)/১১৫-সহিহ মুসলিম অধ্যায়:৬ মুসাফিরের সালাত ও তার কসর অনুচ্ছেদঃ৪
      এই হাদিসটি থেকে স্পষ্টভাবে প্রমান হল যে, যানবাহনে সলাতরত অবস্থায় কিবলা নিয়ে পেরেশানির কিছু নাই। কারণ ঐ অবস্থায় যানবাহন যে দিকেই ফিরুক না কেন ঐ দিকেই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি থাকবে। অর্থাৎ বুঝা গেল যে, আয়াতটিতে ওয়াজহুন শব্দটি সন্তুষ্টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সত্ত্বা অর্থে নয়।
      অতএব এই আয়াতটি দিয়ে কোন ভাবেই আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান প্রমান করা সম্ভব নয়।বরং আল্লাহ্ তার অবস্থান সম্পর্কে বলেন
      “রহমান(আল্লাহ্) আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫
      প্রশ্ন ৬
      মহান আল্লাহ্ বলেন
      “অবশ্যই আমি স্বজ্ঞানে বর্ণনা করে দিব। আমি অনুপস্থিত ছিলাম না।”-সুরা আরাফ(৭)/৭
      এই আয়াত থেকে বোঝা যায় আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ বলেন
      “… আল্লাহ্ অবশ্যই জ্ঞান দ্বারা সবকিছু ঘিরে রেখেছেন।”-সুরা ত্বলাক(৬৫)/১২
      এই আয়াত থেকে বুঝা যায় আল্লাহ্র জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান।অতএব বুঝা গেল আল্লাহ্ সকল জায়গায় উপস্থিত থাকেন তার জ্ঞান দ্বারা স্বশরীরে নয়।স্বশরীরে মহান আল্লাহ্ আরশের উপর অবস্থান করছেন।মহান আল্লাহ্ বলেন
      “রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”সুরা ত্বহা(২০)/৫
      প্রশ্ন ৭।
      মহান আল্লাহ্ বলেন
      “আল্লাহ্ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে যান।”-সুরা আনফাল(৮)/২৪
      এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে আল্লাহ্ মানুষের মাঝে অবস্থান করেন।
      উত্তর।
      এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ বলেন
      “আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিত কেউ ঈমান আনতে পারবে না… ” সুরা ইউনুস(১০)/১০০
      এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ্র অনুমতি ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারবে না। অর্থাৎ কোন মানুষ যদি তার অন্তরে ঈমান আনতে চায় তাহলে আল্লাহ্ তালার অনুমতির প্রয়োজন আছে।আল্লাহ্*র অনুমতি ছাড়া কোন মন ঈমান আনতে পারে না।এভাবেই আল্লাহ্* তালা, মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছেন।এই কথাটি তিনি এভাবে বুঝিয়েছেন
      “... আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ্* মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে যান...।”-সুরা আনফাল(৮)/২৪
      যদি মানুষের ভিতর আল্লাহ্* থাকেন, তাহলে ইসা(আঃ)সম্বন্ধে কেন বলেছেন
      “বরং আল্লাহ্* তাকে(ঈসা আঃ)নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন।”সুরা নিসা(৪)/১৫৮
      এই আয়াত থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান হয় যদি আল্লাহ্* ইসা(আঃ) এর ভিতরে থাকতেন তাহলে আল্লাহ্*, ঈসা(আঃ)কে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন একথা বলার যৌক্তিকতা থাকত না।
      অতএব বুঝা গেল আল্লাহ্* মানুষের ভিতরে থাকেন না। বরং আল্লাহ্* আরশের উপর রয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “ রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫
      প্রশ্ন ৮।
      আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
      “রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ্ ……বলেন আমার সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে।অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় বান্দা বানিয়ে নেই যে আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে,আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে যে চলে…।”-বুখারি অধ্যায়ঃ৮১
      এই হাদিসটি বলছে যে, আল্লাহ্ তার প্রিয় বান্দার কান,চোখ,হাত,পা হয়ে যান। এ থেকেই বোঝা যায় যে আল্লাহ্ তার প্রিয় বান্দার ভিতরে অবস্থান করছেন।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি একেবারেই মনগড়া,কারণ প্রশ্নকারী হাদিসটি সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করেননি। হাদিসের শেষাংশে বলা হয়েছে যে,
      “সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায় তবে আমি তাকে তা দান করি, সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই...।”-বুখারি অধ্যায়ঃ৮১
      হাদিসের এই অংশ বলছে যে, যদি আল্লাহ্*র প্রিয় বান্দা আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চায় আল্লাহ্* তাকে আশ্রয় দেন। এখন আপনি যা বুঝেছেন যে, আল্লাহ্* তার প্রিয় বান্দার ভেতরে চলে আসে, তাহলে বলুন তো ঐ প্রিয় বান্দা কিভাবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে?আর নিশ্চয়ই এতবড় কুফুরি বিশ্বাস আপনাদের নেই।মুলত হাদিসটিতে রাসুলুল্লাহ(সাঃ)বুঝিয়েছেন আল্লাহ্*র প্রিয় বান্দা আল্লাহ্*র নির্দেশের বাহিরে কিছু শুনতে চায় না,দেখতে চায় না,ধরতে চায় না, চলতে চায় না।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “ রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫

      প্রশ্ন ৯।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “মুসা যখন আগুনের কাছে পৌঁছল তখন পবিত্র ভুমিতে অবস্থিত ডানদিকের গাছ থেকে তাকে ডাক দিয়ে বলা হল হে মুসা আমিই আল্লাহ্* জগতসমূহের রব।”-সুরা কাসাস(২৮)/৩০
      এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্* তালা, মুসা(আঃ)কে তার ডানদিকের গাছ থেকে বলেছিলেন আমিই আল্লাহ্*। এই কথা থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহ্* তালা গাছের ভিতর ছিলেন। অতএব বুঝে নিতে হবে যে, আল্লাহ্* আকাশের উপর ও পৃথিবীতে উভয় জায়গায় থাকেন অর্থাৎ আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি মারাত্মক বিভ্রান্তিকর। এই আয়াতে বলা হয়নি যে আল্লাহ্* গাছের ভিতর ছিলেন। বরং বলা হয়েছে যে তিনি গাছ থেকে ডাক দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি বুঝতে নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুন।মহান আল্লাহ্* বলেন,
      মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে আসলো আর তার রব তার সাথে কথা বললেন।তখন সে বলল,হে আমার রব আমি তোমাকে দেখতে চাই। তিনি(আল্লাহ)বললেন তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না।বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি তা নিজ স্থানে স্থির থাকতে পারে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে।অতঃপর তার রব যখন পাহাড়ের নিজ জ্যোতি বিচ্ছরিত করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল আর মুসা জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল...।”-সুরা আরাফ(৭)/১৪৩
      এই আয়াতটি বলছে যে, আল্লাহ্* যখন তার জ্যোতি পাহাড়ে ফেললেন তখন পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। তাহলে এখন বুঝার বিষয় হচ্ছে পাহাড় যদি আল্লাহ্*র জ্যোতিকে ধারন করার ক্ষমতা না রাখে তাহলে একটি গাছ কিভাবে আল্লাহকে ধারন করল? পাহাড় থেকে একটি গাছ নিশ্চয়ই অনেক দুর্বল। অতএব বুঝে নিতে হবে যে, মুসা(আঃ)কে আল্লাহ্* যে গাছ থেকে ডাক দিয়েছেন সেই গাছের ভিতরে আল্লাহ্* ছিলেন না। বরং আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ্* বলেন,
      “ রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫
      প্রশ্ন ১০।
      রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
      “মুমিনের অন্তর হল আল্লাহ্*র আরশ।”-আল হাদিস
      এই থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ্* মানুষের অন্তরে অবস্থান করছেন।
      উত্তরঃ
      এই হাদিসটি জাল।তাই এই হাদিসটি দলিলের জন্য অযোগ্য। তাছাড়া সহিহ হাদিস বলছে
      উবাদা ইবনুস স্বমিত (রাঃ) হতে বর্ণিত,
      রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন...ফিরদাউস হচ্ছে উঁচুস্তরের জান্নাত, যেখান থেকেই জান্নাতে চারতি ঝরনা প্রবাহিত হয় এবং এর উপরেই আল্লাহ্* তালার আরশ অবস্থিত।”-তিরমিযি,সহিহ অধ্যায়ঃ৩৬ অনুচ্ছেদঃ৪
      এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ্*র আরশের নিচেই জান্নাতুল ফিরদাউস অবস্থিত। এখন যদি মুমিনদের অন্তর আল্লাহর আরশ হয়, তাহলে কি মুমিনদের অন্তরের নিচে জান্নাতুল ফিরদাউস অবস্থান করছে?নিশ্চয়ই এ ধরনের জাহিলের মত কথা আপনারা কথা বলবেন না। আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ্* বলেন
      “ রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫

      প্রশ্ন ১১।
      মহান আল্লাহ্* বলেন,
      “আল্লাহ্* আকাশ ও পৃথিবীতে রয়েছেন।”-সুরা আনআম(৬)/৩
      এই আয়াত থেকে বুঝা যায় আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান ।
      উত্তরঃ
      এই ব্যাখ্যাটি ঠিক নয়। কারণ প্রশ্নকারী পুরো আয়াতটি উল্লেখ করেননি। আয়াতের বাকি অংশ হচ্ছে-
      “তোমাদের গপন বিষয়াদি আর তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়াদি তিনি(আল্লাহ) জানেন আর তিনি জানেন তোমরা যা উপার্জন কর।সুরা আনআম(৬)/৩
      আয়াতের বাকি অংশ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ্* সবকিছু জানেন। যেখানে আল্লাহ্* পৃথিবীতে অবস্থান করার কথাটি বলেছেন তারপরেই আল্লাহ্* দেখেন বা শোনেন এই ধরনের কথা উল্লেখ থাকে। এ থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান নয়। আল্লাহ্* বলেন
      “ রহমান আরশের উপর অবস্থান করছেন।”-সুরা ত্বহা(২০)/৫
      অতএব বুঝা গেল যে, আল্লাহ্* সর্বত্র বিরাজমান নয়। বরং আল্লাহ্* আরশের উপর অবস্থান করছেন।
      Last edited by abcd1; 09-29-2015, 01:53 AM.

      Comment

      Working...
      X