Announcement

Collapse
No announcement yet.

মাহে রমাদ্বানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল : লাইলাতুল কদর : গুরুত্ব ও ফযীলত ।। সুন্নত ইতিকাফ : গুরুত্ব ও ফযীলত

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মাহে রমাদ্বানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল : লাইলাতুল কদর : গুরুত্ব ও ফযীলত ।। সুন্নত ইতিকাফ : গুরুত্ব ও ফযীলত

    আজ ২০ শে রমাদ্বান। আজকে সূর্যাস্তের পর থেকেই রমাদ্বানের শেষ দশকের আমল শুরু হবে ইনশা আল্লাহ।
    এই সংক্রান্ত কিছু আলোচনা পড়ি ও আমলের নিয়ত করি ইনশা আল্লাহ।
    আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন ও আমলের তাওফিক দান করুন।
    __________________________________________________

    লাইলাতুল কদর : গুরুত্ব ও ফযীলত



    রমযানের পুরো মাস জুড়ে বিরাজ করে রহমত বরকত এবং ক্ষমার ঘোষণা। তবে এ মাসে রয়েছে বিশেষ এক মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা এ রাতের ব্যাপারে বলেন-

    لَیْلَةُ الْقَدْرِخَیْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ. تَنَزَّلُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ وَ الرُّوْحُ فِیْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ ۚ مِنْ كُلِّ اَمْرٍ، سَلٰمٌ ، هِیَ حَتّٰی مَطْلَعِ الْفَجْرِ۠.

    কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সূরা কদর (৯৭) : ৩-৫

    তাই এ রাতের অন্বেষণে যেমন আগ্রহী হওয়া জরুরি তেমনি এ রাতে ইবাদত বন্দেগীÑ নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির, তওবা-ইস্তিগফার, দুআ-দরূদ ইত্যাদির প্রতিও আরো যত্নবান হওয়া কাম্য।



    লাইলাতুল কদর : যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে

    রমযানের কদর রজনীতে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীম নাযিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

    اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةِ الْقَدْرِ.

    নিশ্চয়ই আমি কদর রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। -সূরা কদর (৯৭) : ১

    আরো ইরশাদ হয়েছে-

    اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةٍ مُّبٰرَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِیْنَ.

    আমি এ (কিতাব) অবতীর্ণ করেছি বরকতপূর্ণ রজনীতে, বস্তুত আমি সতর্ককারী। -সূরা দুখান (৪৪) : ৩

    এখানে লাইলাতুম মুবারকা বা বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর বুঝানো হয়েছে। তো কদর রজনী একদিকে যেমন মহিমান্বিত অপরদিকে তা অত্যন্ত বরকতপূর্ণও বটে।



    লাইলাতুল কদর : যে রাতে গুনাহ মাফ হয়

    এ রাতে আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত ও করুণা বর্ষিত হয়। নবীজী বলেনÑ

    مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

    ...যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪

    তো ঈমান ও ইহতিসাবের উপলব্ধি জাগরূক রেখে লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করা বান্দার গুনাহ মাফের একটি বড় মাধ্যম।



    লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক বড় মাহরূমী

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এত বড় খোশখবরী পাওয়ার পর এ রাতের ক্ষমা ও রহমত লাভের চেষ্টা না করা অনেক বড় বঞ্চনার বিষয়। হযরত আনাস রা. বলেন, রমযান আসলে নবীজী বলতেন-

    إِنّ هَذَا الشّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلّهُ، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلّا مَحْرُومٌ.

    এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত। তাতে একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। আর কেবল অভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ২১০৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ২৪২৭

    সুতরাং হেলায় না কাটিয়ে কদরের রাতের কদর করা দরকার।



    নবীজী শেষ দশকে ইবাদত বাড়িয়ে দিতেন

    হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী কদরের রাত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে রমযানের শেষ দশকে তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ হিসেবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. নবীজীর শেষ দশকের আমলের বিবরণ দিয়ে বলেন-

    كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، مَا لَا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ.

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দিনগুলোর তুলনায় রমযানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৫

    তিনি আরো বলেন-

    كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ، أَحْيَا اللّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَجَدّ وَشَدّ الْمِئْزَرَ.

    রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজী পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪



    যেভাবে লাভ করতে পারি শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত

    মুমিনমাত্রেরই কর্তব্য হল কদর রজনীর পূর্ণ কদর করা। অন্তত এ রাতে বিলকুল গাফেল না থাকা। রমযান মাসের ফরয নামাযগুলো জামাতের সাথে আদায় করার মাধ্যমে কদর রজনীর ন্যূনতম কদর হতে পারে। হাদীস শরীফে এসেছে-

    مَنْ صَلّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنّمَا قَامَ نِصْفَ اللَيْلِ، وَمَنْ صَلّى الصُبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنّمَا صَلّى اللّيْلَ كُلّهُ.

    যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধ রজনী কিয়াম করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাযও জামাতে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়ল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৬

    তাই এ মাসে জামাতে নামাযের প্রতি সবিশেষ যত্নবান হওয়া জরুরি। তাহলে আশা করা যায় শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত থেকে মাহরূম হব না - ইনশাআল্লাহ।



    শবে কদরে কী দুআ করব?

    লাইলাতুল কদর যেহেতু বিশেষ রজনী, তাই এ রাতে বিশেষ কিছুই চাওয়া দরকার। তো আমি বিশেষভাবে কী চাইব এবং কীভাবে চাইব? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. নবীজীকে জিজ্ঞাসা করেনÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ, যদি আমি জানতে পারি, আজ লাইলাতুল কদর তাহলে আমি কী দুআ করতে পারি? নবীজী বললেন, তুমি বল-

    اللّهُمّ إِنّكَ عُفُوّ تُحِبّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي.

    আয় আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতেই ভালবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫১৩

    একজন মুমিনের জন্য তার রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অপেক্ষা বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!

    তাৎপর্যপূর্ণ এ দুআটি কেবল লাইলাতুল কদরের জন্যই নির্ধারিত নয়। পুরো রমযানেই, ইফতারীর সময়, সাহরীর সময় এবং অন্যান্য সময়েও পড়া যায়। এমনকি রমযান ছাড়াও এ দুআ পড়া যায়। নবীজীর শেখানো দুআ যত পড়া যায় ততই লাভ।



    লাইলাতুল কদরের তালাশে...

    হাদীস শরীফে কদর রজনী নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো সামনে রেখে যা বুঝে আসে, লাইলাতুল কদর লাভের জন্য গোটা রমযান, বিশেষ করে রমযানের শেষ দশক, আরো বিশেষ করে বললে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই শেষ দশকে শবে কদরের অন্বেষণে পূর্ণ মনোযোগী এবং প্রস্তুত থাকা চাই। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    تَحَرّوْا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.

    তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২০

    আরেক বর্ণনায় এসেছে-

    الْتَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي الوَتْرِ.

    তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদর অন্বেষণ কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৬

    যেহেতু হাদীসে লাইলাতুল কদর নির্ধারিত করে বলা হয়নি তাই নির্দিষ্ট কোনো রাতে নির্দিষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাঝে তা বেঁধে ফেলা ঠিক নয়। আর লাইলাতুল কদরের জন্য হাদীসে নির্দিষ্ট করে কোনো আমলের কথাও উল্লেখ নেই। তাই বিদআত ও রুসুমাত থেকে দূরে থেকে ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদতের মাধ্যমে এ রাত যাপন করাই শ্রেয়।
    __________________________________________________


    সুন্নত ইতিকাফ : গুরুত্ব ও ফযীলত



    রমযানের ত্রিশ দিনের শেষ দশদিন অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। রমযানের একটি বিশেষ আমল হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফ। আর তা আদায় করার সময় এটি। রমযানের খায়র-বরকত লাভে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করার সম্ভাবনাও বেশি। তাই নবীজী রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এজন্য রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। সুতরাং আগে থেকে পরিকল্পনা করে আমরা ইতিকাফ করার চেষ্টা করব। তেমনি মহল্লার মসজিদে যেন ইতিকাফ হয় সে বিষয়ে আগে থেকে আলোচনা করব এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করব।



    নবীজী সর্বদা রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন

    নবীজী প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেনÑ

    أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬

    হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন-

    كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.

    জিবরীল প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনান। নবীজী প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯৯৮, ২০৪৪



    লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম

    পূর্বে যেমনটি উল্লেখ হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। কদরের খায়র ও বরকত লাভ করার ক্ষেত্রে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফের গুরুত্ব অনেক। ইতিকাফকারী অন্যান্য আমল করতে না পারলেও শুধু মসজিদে অবস্থান করাটাই একটা বড় আমল। সে যতক্ষণ মসজিদে থাকবে ততক্ষণ তার সওয়াব লেখা হতে থাকবে। আর অন্যান্য আমলের জন্য তো ভিন্ন সওয়াব আছেই। তাই শুধু মসজিদে অবস্থান করার মাধ্যমেই সে সহজে কদরের ফযীলত লাভ করতে পারছে।



    সুন্নত ইতিকাফ সম্ভব না হলে দু-এক দিনের জন্য তো ইতিকাফ করা যায়

    কর্ম-ব্যস্ততা কিংবা হিম্মতের কমতি বা অন্য কোনো ওযর থাকতে পারে। সুন্নত ইতিকাফ করা যাচ্ছে না। তাই বলে যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুও করব না - এমনটি নয়। পূর্ণ দশ দিন সুন্নত ইতিকাফ করতে না পারলে নফল হিসাবে যে যতটুকু পারি ততটুকুই আল্লাহর ঘরে অবস্থান করি। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন। তাতেও অনেক ফায়দা। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে কমপক্ষে বেজোড় রাতগুলোতে নফল ইতিকাফের নিয়তে যদি মসজিদে অবস্থান করা হয় তবুও তো কদরের রহমত-বরকত লাভ করার আশা করা যায়। তাই পুরো সময় না পারলেও যে যতটুকু পারি ততটুকু সময় ইতিকাফ করি।



    নারীরাও ঘরে ইতিকাফ করতে পারেন

    যেসকল বোনের ইতিকাফের জন্য ফারেগ হওয়ার সুযোগ রয়েছে তারাও ইতিকাফ করতে পারেন। স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি নিয়ে ইতিকাফে বসুন। বাড়িতে নামায-ঘর থাকলে সেখানে বসতে পারেন। নামাযের জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা না থাকলে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে সেখানে ইতিকাফের জন্য বসতে পারেন। এভাবে মা-বোনরাও ইতিকাফ ও কদরের ফযীলত লাভ করতে পারেন।

    আয়েশা রা. বলেন-

    أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬

    __________________________________________________


    সার কথা: পবিত্র মাহে রমাদ্বানের শেষ দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল হচ্ছে-

    শবে কদরের অন্বেষণে থাকা!
    কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (অর্থ) নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।-সূরা কদর : ১-৩
    হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান থাকবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭৬০; সহীহ বুখারী হাদীস : ২০১৪

    সুতরাং এই ফযীলত লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। অন-ত ইশা ও ফজর যদি জামাতের সাথে হয় তবুও সারারাত নামায পড়ার সমান ছওয়াব পাওয়া যাবে এবং শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত লাভ করা যাবে। কারণ এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইশা ও ফজর জামাতের সাথে পড়ল সে যেন সারারাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ল।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ৬৫৬; মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪০৮

    শেষ দশকে ইতিকাফ করা!
    শবে কদর লাভ করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল শেষ দশকে ইতিকাফ করা। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ কর।’
    অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ কর।’-সহীহ বুখারী হাদীস : ২০১৭; ২০২০
    নির্দিষ্টভাবে সাতাশের রাতকে শবে কদর বলা ঠিক নয়। কারণ হাদীসে শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। তাই শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদাত করা চাই।
    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতিকাফ শেষ করার পর যখন রমযানের একুশতম রাত এল তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ আমাকে শবে কদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের অমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ... সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবে কদর খোঁজ কর।’-সহীহ বুখারী হাদীস : ২০২৭; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৬৭
    সুতরাং বুঝা গেল যে, শেষ দশকে যে ইতিকাফ করবে তার শবে কদর নসীব হবে। মাসনূন ইতিকাফ দশ দিন। যাদের দশ দিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই বা সাহস হয় না তারা দুই তিন দিন নফল ইতিকাফ করতে পারেন। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন'ষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও যমীনের দূরত্ব থেকে অধিক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।-শুআবুল ঈমান হাদীস ”: ৩৯৬৫


    [Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬]
    __________________________________________________

    প্রোডাক্টিভ ইতিকাফ করবেন যেভাবে




    আজকেই রোজারদাররা ইতিকাফে বসবেন। জাগতিক সকল ব্যস্ততা ছেড়ে মসজিদে থাকবেন লাইলাতুল কদরের খোঁজে। ১০ দিনের এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিকল্পনা করে সময়টা কাজে লাগাতে হবে। কিছু বিষয় মাথায় রাখলে আমাদের ইতিকাফ হতে পারে প্রোডাক্টিভ:

    একটা সহজ রুটিন করুন

    যেখানে কী কী আমল করবেন তার তালিকা থাকবে। আমলগুলো ওয়াক্ত অনুযায়ী ভাগ করে নিন। অর্থাৎ ফজর, যোহর, আসর, মাগরীব, ইশা—প্রত্যেক ওয়াক্তের আগে পরে কী কী আমল করবেন তার খসড়া রুটিন। তবে খেয়াল রাখবেন, রুটিন যেন খুব কঠিন না হয়। বিশেষ করে এবারের ইতিকাফ যদি আপনার প্রথম ইতিকাফ হয়, তাহলে তো অবশ্যই খুব সহজ করতে হবে।

    যে বইগুলো পড়বেন

    ইতিকাফে বই পড়তে চাইলে ইসলামী বই নিন। তবে বইয়ের লাইব্রেরি না নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বই নিয়ে বসুন। এমন কিছু বই, যা আপনাকে আমলগুলো তাৎক্ষণিক সুন্দর করবে, রবের প্রতি মনের টান বাড়াবে। ভালো হয় ইতিকাফের পুরোটাই কুরআনের সাথে বেশি সময় কাটালে। বুজুর্গ আলিমগণ ইতিকাফে বসে কুরআনের সাথেই বেশি সময় কাটান।

    নো ডিভাইস

    সব ধরণের ডিজিটাল ডিভাইস বাসায় রেখে আসুন। একান্ত প্রয়োজনে যদি ফোনে যোগাযোগ করতেই হয়, তাহলে বাটন ফোন সাথে রাখতে পারেন। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট—এগুলো থাকলে অভ্যাসবশত অনেক সময় এমনিতেই চলে যাবে।

    ছোট টার্গেট, বড় প্রতিদান

    ছোট ছোট কিছু টার্গেট নিয়ে ইতিকাফে বসুন। যেহেতু এই দশদিন সম্পূর্ণ আপনি একা থাকছেন, তাই পুরো সময়টা জুড়ে নিজেকে নিয়ে কাজ করুন। ছোট ছোট টার্গেটের মধ্যে থাকতে পারে: কুরআনের শেষ পারার কিছু সূরা মুখস্থ করা, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দুআ, যিকর মুখস্থ করা, কম খাওয়া, কম কথা বলা, ইত্যাদি।

    আড্ডার সার্কেল এড়িয়ে চলুন

    ইতিকাফে অনেকেই দেখবেন ১ দিন যেতেই আড্ডার সার্কেল বানিয়ে ফেলেছে। সেসব সার্কেলে একবার ঢুকে গেলে আপনার আর বাড়তি আমলের ফুরসৎ মিলবে না। তাই শুরু থেকেই সবার সাথে কথা কম বলুন। হাসি ঠাট্টা, জাগতিক কথাবার্তা পরিহারের চেষ্টা করুন।

    ভালো খান, ফিট থাকুন

    ইতিকাফে হাটাচলা কম হয়। তাই খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এমন খাবার পরিহার করবেন যা হজমে সমস্যা হয়, গ্যাস করে, কিংবা ঘুম বাড়িয়ে দেয়। দশদিনের এই সময়টায় যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে আপনারই লস।

    সেরাটা দিন

    ইতিকাফে বসে থাকাই ইবাদত—এই কথা বলে অনেকেই দেখবেন, আমলের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে বসে আছে। শুয়ে বসে কাটাচ্ছে। এগুলো নেকসুরতে শয়তানের ধোঁকা ছাড়া কিছু নয়। আপনি চেষ্টা করুন এই সময়টায় নিজের সেরাটা দিতে। বিশেষ করে আপনি যদি যুবক হন, তাহলে বেজোড় রাত্রীগুলোতে কম ঘুমিয়ে কীভাবে বেশি আমল করা যায়, সেই ফিকির করুন।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটি সুন্দর ইতিকাফ করার তাওফীক দিক এবং লাইলাতুল কদর দিয়ে সৌভাগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করে নিক।



    [Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬]
    __________________________________________________
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.
Working...
X