জাকুরা ও টেংপোরা গণহত্যা : ৩২ বছর পরেও ন্যায়বিচার পায়নি কাশ্মীরী ভুক্তভোগি মুসলিমরা
১৯৯০ সালের ১ মার্চ, ভারতীয় দখলদার হিন্দুত্ববাদী বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের জাকোরা এবং টেংপোরা বাইপাসে গণহত্যা চালায়, যাতে যথাক্রমে ২৬ এবং ২১ জন মুসলিমকে খুন করা হয়।
ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর গণহত্যার শিকার হওয়া কাশ্মীরী মুসলিম পরিবারগুলো এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন গুণছে। আর অপরাধীদের বিচারের দাবিতে তাদের বার বার আহ্বানকে উপেক্ষা করে চলেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
জাকোরাতে সেদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে কাশ্মীরের বিরোধের সমাধান চেয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা। এর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের জন্য কথিত জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গ্রুপের অফিসের দিকে যাওয়ার সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। একই ভাবে, ভারতীয় সেনাবাহিনী টেঙ্গোরা বাইপাসের কাছে দুটি বাসকে লক্ষ্যবস্তু করে পাঁচ মহিলাসহ ২১ নিরস্ত্র কাশ্মীরিকে হত্যা করেছে। ১৯৯০ সালে, আইআইওজেকে-তে চারটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই শ্রীনগরে কাশ্মীরি মুসলমানদের টার্গেট করে সংঘটিত হয়।
১৯৯০ সালের ২১শে জানুয়ারী প্রথম গণহত্যাটি গাওকাদাল সেতুতে ঘটে, যেখানে ৫০ জনেরও বেশি কাশ্মীরি মুসলিম বিক্ষোভকারীকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স কর্মীরা গুলি করে হত্যা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালের ২৫ জানুয়ারী হান্দওয়ারায়, যেখানে কমপক্ষে নয়জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৯০-এর ২১ মে হাওয়াল হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, যখন কাশ্মীরের মিরওয়াইজ, মৌলভি ফারুকের জানাজা মিছিলে আধা-সামরিক বাহিনী গুলি চালায়, ৪৫ জনেরও বেশি শোকাহত ব্যক্তিকে হত্যা করে।
এশিয়াওয়াচ এবং ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটসের একটি প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে যে, কাশ্মীরে ১৯৯০ সাল থেকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। প্রথমদিকের ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ছানাপোরা শ্রীনগরে গণধর্ষণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ১৯৯০ সালের জানুয়ারির পর ভারতীয় সৈন্যরা প্রায়শই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কাশ্মীরি মুসলিম মহিলা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল টেংপোরা এবং জাকুরা গণহত্যার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের জন্য একটি আবেদন করেছে; তবে কারও বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীর ইস্যুটিকে কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলার ইস্যু হিসেবে দেখছে। ২০১৬ সাল থেকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী নিরস্ত্র কাশ্মীরি যুবকদের বিরুদ্ধে পেলেট বন্দুক ব্যবহার করে। এ জঘন্য অস্ত্রকে টিকে “অ-মারাত্মক অস্ত্র” বলে অভিহিত করে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
এই তথাকথিত অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র ১০ হাজার ২৯৪ জনকে শুধু আহত করেনি বরং ১৪৭ জন যুবক তাদের বাকি জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে প্রায় ২১৫ জন যুবক। হিন্দুত্ববাদী মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে অসহায় কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবুও মানবতার বুলি আউড়ানো বিশ্বসংস্থা কিংবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিন্দুত্ববাদীদের উপর হস্তক্ষেপ করে নি। অন্যদের জন্য মানবতা উতলে উঠলেও মুসলিমদের উপর হামলা হলে তাদের মানবতা থমকে যায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করল, তখন থেকেই বিশ্ববাসী ইউক্রেনের জনগণের বীরত্ব ও সহনশীলতাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করছে।
বিশ্বের বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিককে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বাধ্য করেছে। ইউক্রেনের ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা’দের প্রতি তাঁরা সমর্থন জানিয়েছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের বড় একটা অংশের ভণ্ডামিও প্রকাশ পেয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে বিশ্বসম্প্রদায় মুসলিমদের প্রতি ভণ্ডামি করে আসছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর মুসলিমরা বুঝতে পারলো তাদের উপর যেসব ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে, তা রুখে দেওয়ার মতো আন্তর্জাতিক আইন আছে। শুধু কাগজে-কলমের আইন নয়, সেটা কার্যকরও হয়। যখন কেউ অন্য কোনো দেশে আগ্রাসন চালায়, তখন অন্য দেশগুলোর কিছু করার সামর্থ্য ও ইচ্ছা দুই-ই থাকে। আগ্রাসনকারীর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কার্যকর করা যায়। তবে তা মুসলিমদের জন্য নয়। কারণ ইতিপূর্বেও কাশ্মীরসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে হামলা চালানো হয়েছে তখন এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশ্ব মোড়লরা আজকে সবক দিচ্ছে, দখলদারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ‘সন্ত্রাসবাদ’ নয়, সেটা ন্যায়সংগত অধিকার।
তাহলে কি দোষ করেছে কাশ্মীরসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের যুবকরা। যাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কারণ একটাই তারা মুসলিম।
গত কয়েক দিন সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভরে উঠছে ইউক্রেনের জনগণের ‘বীরত্ব ও প্রতিরোধ’-এর গল্পে। রাশিয়ার ট্যাংকবহরের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে কীভাবে সেনারা ব্রিজ উড়িয়ে দিচ্ছে, হাতের কাছে যা কিছু পাচ্ছে, তা-ই দিয়ে কীভাবে বেসামরিক নাগরিকেরা সশস্ত্র যানবাহনে হামলা চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষ কীভাবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং পরিখা খুঁড়ছে—এসব বীরত্বপূর্ণ কাহিনি প্রচার করছে। পক্ষান্তরে ইউক্রেনের ব্যতিত মুসলিমগুলে যেমন কাশ্মীর কিংবা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সন্ত্রাস বলে ট্যাগ করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সৈন্যদের আক্রমণ করার জন্য ইউক্রেনের মানুষ যে মলোটোভ বোমা বানাচ্ছে, সেটাও খুব ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে সংবাদমাধ্যম। ইউক্রেনের মানুষ রাশিয়ার দখলদারির বিরুদ্ধে এটা করলে বলা হয় বীরত্ব। আর মুসলিমরা সেটা করলে হবে সন্ত্রাস। আর কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া এসকল গণহত্যাকে ভুলিয়ে দেওয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন দ্রুততার সাথে করে ফেলে পশ্চিমা-জায়নিস্ট-হিন্দুত্ববাদী ঐক্যজোট।
বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী শত্রুদের- বিশেষ করে জায়নবাদী ইহুদী এবং হিন্দুত্ববাদীদের সামরিক আগ্রাসন, দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার এখনই উপযুক্ত সময়। এখন পশ্চিমের সব শক্তিশালী রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং এমনকি ইসরায়েলের শাসকেরা প্রকাশ্যে স্বীকার করছে, আগ্রাসন ও দখলদারি খারাপ। প্রতিরোধের অধিকার শুধু বৈধ নয়, সম্মানজনকও। তাদের প্রোপাগান্ডায় আর তাই নিপীড়িত মুসলিমদের ভুলে থাকলে চলবে না।
লিখেছেন: মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র:
———
১। জাকুরা ও টেংপোরা গণহত্যা : ৩২ বছর পরেও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় কাশ্মীরের ভুক্তভোগি পরিবারগুলো
১৯৯০ সালের ১ মার্চ, ভারতীয় দখলদার হিন্দুত্ববাদী বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের জাকোরা এবং টেংপোরা বাইপাসে গণহত্যা চালায়, যাতে যথাক্রমে ২৬ এবং ২১ জন মুসলিমকে খুন করা হয়।
ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর গণহত্যার শিকার হওয়া কাশ্মীরী মুসলিম পরিবারগুলো এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন গুণছে। আর অপরাধীদের বিচারের দাবিতে তাদের বার বার আহ্বানকে উপেক্ষা করে চলেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
জাকোরাতে সেদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে কাশ্মীরের বিরোধের সমাধান চেয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা। এর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের জন্য কথিত জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গ্রুপের অফিসের দিকে যাওয়ার সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। একই ভাবে, ভারতীয় সেনাবাহিনী টেঙ্গোরা বাইপাসের কাছে দুটি বাসকে লক্ষ্যবস্তু করে পাঁচ মহিলাসহ ২১ নিরস্ত্র কাশ্মীরিকে হত্যা করেছে। ১৯৯০ সালে, আইআইওজেকে-তে চারটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই শ্রীনগরে কাশ্মীরি মুসলমানদের টার্গেট করে সংঘটিত হয়।
১৯৯০ সালের ২১শে জানুয়ারী প্রথম গণহত্যাটি গাওকাদাল সেতুতে ঘটে, যেখানে ৫০ জনেরও বেশি কাশ্মীরি মুসলিম বিক্ষোভকারীকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স কর্মীরা গুলি করে হত্যা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালের ২৫ জানুয়ারী হান্দওয়ারায়, যেখানে কমপক্ষে নয়জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৯০-এর ২১ মে হাওয়াল হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, যখন কাশ্মীরের মিরওয়াইজ, মৌলভি ফারুকের জানাজা মিছিলে আধা-সামরিক বাহিনী গুলি চালায়, ৪৫ জনেরও বেশি শোকাহত ব্যক্তিকে হত্যা করে।
এশিয়াওয়াচ এবং ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটসের একটি প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে যে, কাশ্মীরে ১৯৯০ সাল থেকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। প্রথমদিকের ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ছানাপোরা শ্রীনগরে গণধর্ষণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ১৯৯০ সালের জানুয়ারির পর ভারতীয় সৈন্যরা প্রায়শই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কাশ্মীরি মুসলিম মহিলা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল টেংপোরা এবং জাকুরা গণহত্যার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের জন্য একটি আবেদন করেছে; তবে কারও বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীর ইস্যুটিকে কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলার ইস্যু হিসেবে দেখছে। ২০১৬ সাল থেকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী নিরস্ত্র কাশ্মীরি যুবকদের বিরুদ্ধে পেলেট বন্দুক ব্যবহার করে। এ জঘন্য অস্ত্রকে টিকে “অ-মারাত্মক অস্ত্র” বলে অভিহিত করে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
এই তথাকথিত অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র ১০ হাজার ২৯৪ জনকে শুধু আহত করেনি বরং ১৪৭ জন যুবক তাদের বাকি জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে প্রায় ২১৫ জন যুবক। হিন্দুত্ববাদী মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে অসহায় কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবুও মানবতার বুলি আউড়ানো বিশ্বসংস্থা কিংবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিন্দুত্ববাদীদের উপর হস্তক্ষেপ করে নি। অন্যদের জন্য মানবতা উতলে উঠলেও মুসলিমদের উপর হামলা হলে তাদের মানবতা থমকে যায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করল, তখন থেকেই বিশ্ববাসী ইউক্রেনের জনগণের বীরত্ব ও সহনশীলতাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করছে।
বিশ্বের বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিককে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বাধ্য করেছে। ইউক্রেনের ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা’দের প্রতি তাঁরা সমর্থন জানিয়েছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের বড় একটা অংশের ভণ্ডামিও প্রকাশ পেয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে বিশ্বসম্প্রদায় মুসলিমদের প্রতি ভণ্ডামি করে আসছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর মুসলিমরা বুঝতে পারলো তাদের উপর যেসব ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে, তা রুখে দেওয়ার মতো আন্তর্জাতিক আইন আছে। শুধু কাগজে-কলমের আইন নয়, সেটা কার্যকরও হয়। যখন কেউ অন্য কোনো দেশে আগ্রাসন চালায়, তখন অন্য দেশগুলোর কিছু করার সামর্থ্য ও ইচ্ছা দুই-ই থাকে। আগ্রাসনকারীর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কার্যকর করা যায়। তবে তা মুসলিমদের জন্য নয়। কারণ ইতিপূর্বেও কাশ্মীরসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে হামলা চালানো হয়েছে তখন এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশ্ব মোড়লরা আজকে সবক দিচ্ছে, দখলদারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ‘সন্ত্রাসবাদ’ নয়, সেটা ন্যায়সংগত অধিকার।
তাহলে কি দোষ করেছে কাশ্মীরসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের যুবকরা। যাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কারণ একটাই তারা মুসলিম।
গত কয়েক দিন সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভরে উঠছে ইউক্রেনের জনগণের ‘বীরত্ব ও প্রতিরোধ’-এর গল্পে। রাশিয়ার ট্যাংকবহরের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে কীভাবে সেনারা ব্রিজ উড়িয়ে দিচ্ছে, হাতের কাছে যা কিছু পাচ্ছে, তা-ই দিয়ে কীভাবে বেসামরিক নাগরিকেরা সশস্ত্র যানবাহনে হামলা চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষ কীভাবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং পরিখা খুঁড়ছে—এসব বীরত্বপূর্ণ কাহিনি প্রচার করছে। পক্ষান্তরে ইউক্রেনের ব্যতিত মুসলিমগুলে যেমন কাশ্মীর কিংবা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সন্ত্রাস বলে ট্যাগ করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সৈন্যদের আক্রমণ করার জন্য ইউক্রেনের মানুষ যে মলোটোভ বোমা বানাচ্ছে, সেটাও খুব ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে সংবাদমাধ্যম। ইউক্রেনের মানুষ রাশিয়ার দখলদারির বিরুদ্ধে এটা করলে বলা হয় বীরত্ব। আর মুসলিমরা সেটা করলে হবে সন্ত্রাস। আর কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া এসকল গণহত্যাকে ভুলিয়ে দেওয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন দ্রুততার সাথে করে ফেলে পশ্চিমা-জায়নিস্ট-হিন্দুত্ববাদী ঐক্যজোট।
বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী শত্রুদের- বিশেষ করে জায়নবাদী ইহুদী এবং হিন্দুত্ববাদীদের সামরিক আগ্রাসন, দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার এখনই উপযুক্ত সময়। এখন পশ্চিমের সব শক্তিশালী রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং এমনকি ইসরায়েলের শাসকেরা প্রকাশ্যে স্বীকার করছে, আগ্রাসন ও দখলদারি খারাপ। প্রতিরোধের অধিকার শুধু বৈধ নয়, সম্মানজনকও। তাদের প্রোপাগান্ডায় আর তাই নিপীড়িত মুসলিমদের ভুলে থাকলে চলবে না।
লিখেছেন: মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র:
———
১। জাকুরা ও টেংপোরা গণহত্যা : ৩২ বছর পরেও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় কাশ্মীরের ভুক্তভোগি পরিবারগুলো