তাওহিদবাদী মুসলিমদের ওপর হিন্দুত্ববাদী পুলিশের নিষ্ঠুরতার যে ভিডিওগুলো বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে
ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ও উম্মুল মু’মিনিন হযরত আইশা(রাঃ)কে নিয়ে সম্প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করে হিন্দুত্ববাদী দুই উগ্রবাদী নেতা। এর প্রতিবাদে মুসলিমরা রাস্তায় নামলে অতি হিংস্র রূপে আবির্ভূত হয় হিন্দুত্ববাদী জনতা ও প্রশাসন। হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন তাওহিদবাদী প্রতিবাদরত মুসলিমদের আটক করে নিয়ে যায়। অনেককে রাস্তার মাঝেই মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে।
পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদী পুলিশের হেফাজতে থাকা একদল মুসলিম পুরুষকে বেদম প্রহার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ভারতের প্রয়াগরাজে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ পলিকার্বোনেট লাঠি দ্বারা মুসলিম যুবকদের মারছে।
এরকম একটি ভিডিও অনলাইনে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। যা মুসলিমদের অন্তরের রক্তক্ষরণকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই জঘন্য ভিডিওটি শেয়ার করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির এক নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি, সে পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণের প্রশংসা করে এই বলে যে, এই পিটুনি আসলে এসব লোকের জন্য একটি ‘উপহার।’
মুসলিম বিক্ষোভকারীদের নির্মমভাবে মারধরের ভিডিও শেয়ার করার সময় কেরালার প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) উগ্র হিন্দুত্ববাদী নির্মল চন্দ্র আস্থানা লিখেছে “সুন্দর, খুব সুন্দর।”
অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় নয়াদিল্লির জামা মসজিদ এবং উত্তর প্রদেশের শহর প্রয়াগরাজ, হাতরাস, ফিরোজবাদ, সাহারানপুর, মোরাদাবাদ এবং আম্বেদকরনগর সহ গোটা ভারত জুড়ে। যেখানে অন্তত ৩০০ জন মুসলিম বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। এরপরই, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মারধরের ছবি এবং ভিডিও টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ভিডিও শেয়ার দিয়ে উগ্রবাদী নির্মল চন্দ্র আরও লিখেছে, “ভাল, পুরানো তিসির তেলে ভেজানো লাঠি গুণ্ডাদের (মুসলিমদের) অনেক ভালো নাচ নাচিয়েছে।”
শুক্রবার বিক্ষোভের পরে ইউপির শহর জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের ধ্বংস অভিযান অব্যাহত থাকে। হিন্দুত্ববাদী আস্থানা সে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থক ও পুলিশকে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশংসা করে।
এ ঘটনায় জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পিটুনির শিকার মানুষগুলোর পরিবার বলছে, তাদের প্রিয়জনরা নির্দোষ এবং তাদের মুক্তি দেয়া উচিৎ। ‘এটা আমার ভাই, ওকে প্রচণ্ড মেরেছে ওরা, ও ব্যথায় অনেক চিৎকার করছিল,’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জেবা। যে হাতে ধরা মোবাইল ফোনে তিনি তার ছোট ভাই সাইফকে মারার এই ভয়ঙ্কর ভিডিওটি দেখছিলেন, তার সেই হাতটি কাঁপছিল। ‘এ দৃশ্যের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। ওকে যে কী সাঙ্ঘাতিকভাবে মেরেছে,’ বলছিলেন তিনি। উত্তর ভারতের শহর সাহারানপুরে নিজের বাড়িতে এসময় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়-স্বজনরা। বিচলিত হওয়ার মতো ভিডিওটিতে দেখা যায়, কিছু ভারতীয় পুলিশ তাদের হাতে বন্দি কয়েকজন মুসলিম পুরুষকে মারতে উদ্যত, যার মধ্যে জেবা’র ভাইও রয়েছে।
ভিডিওতে আরো দেখা যায়, পুলিশ অফিসাররা এসব লোককে রড দিয়ে পেটাচ্ছে, রডগুলো তারা বেসবল ব্যাটের মতো করে ঘোরাচ্ছে। প্রতিবার যখন কারো ওপর এরকম রডের বাড়ি পড়ছে, তখন তার শব্দ শোনা যাচ্ছে, এরপরই শোনা যাচ্ছে চিৎকার। ‘খুব ব্যথা লাগছে, খুব ব্যথা লাগছে …আর মেরো না,’ আতঙ্কে-ভয়ে এক কোণায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়। কিন্তু এরপরও যখন বেদম প্রহার চলতে থাকে, তখন সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা এক লোককে তার হাত জোড়া করে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। আর সাদা শার্ট পরা সাইফকে দেখা যায় ওপরে দুই হাত তুলতে, যেন সে আত্মসমর্পণ করছে।
গত সপ্তাহে পুলিশ যে কয়েক ডজন মুসলিম পুরুষকে ধরে নিয়ে আটকে রেখেছিল, ২৪-বছর বয়সী সাইফ তাদের একজন। ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে উস্কানিমূলক কিছু মন্তব্য করার পর দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ শুরু হয়, সাহারানপুরেও শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজের পর সেরকম বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। সাহারানপুরের এ প্রতিবাদ ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ, মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন শহরের দোকানপাটের সামনে দিয়ে মিছিল করে যায়।
পুলিশের কাগজপত্রে অভিযোগ করা হয় যে, সাইফ এবং আরো ৩০ ব্যক্তি মিলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেছে, সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিতে ইচ্ছেকৃতভাবে তাকে আহত করেছে এবং জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সাইফের পরিবার কার্ডবোর্ড বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন চালায়। তারা বলছে, সাইফ নির্দোষ, এমনকি সে ঐ বিক্ষোভেও পর্যন্ত ছিল না।
তারা জানায়, সাইফ শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে ঘর থেকে বেরিয়েছিল তার এক বন্ধুর জন্য বাসের টিকেট কাটতে। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং সাহারানপুরের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। জেবা যখন তাকে থানায় দেখতে যান, তখন তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান, ‘বেদম পিটুনির ব্যথায় তার শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল ও ঠিকমত বসতে পর্যন্ত পারছিল না।’ এই ভিডিও, যাতে স্পষ্টভাবেই পুলিশের নৃশংসতা দেখা যাচ্ছে, সেটি অনলাইনে শেয়ার করে বিজেপির এক নির্বাচিত হিন্দুত্ববাদী শালাভ ত্রিপাঠি। ভিডিওর নীচে সে আবার ক্যাপশনে লিখেছিল, ‘বিদ্রোহীদের জন্য একটি ফিরতি উপহার।’ ভিডিওটি অনলাইনে ভাইরাল হয়।
ত্রিপাঠি ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এক হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিক এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা। ঘটনাটি ঘটেছে এ প্রদেশেই। এখনো পর্যন্ত এই ভিডিওর ঘটনায় কেউ নিন্দাও জানায়নি।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, এগুলোর সাথে বিজেপি সরকারের হাত রয়েছে। তাদের ইশারাতেই মুসলিমদের উপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা বাড়িছে, তাদের টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।
গত শুক্রবার সাহারানপুরে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে গ্রেফতারের পর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর করা হয়েছে। এরা ভিডিওতে তাদের নিকটজনকে চিহ্নিতও করেছেন, যাতে দেখা যায় পুলিশ সহিংসতা চালাচ্ছে। অন্য ফুটেজে দেখা যায়, এসব লোককে একটি ভ্যানে তুলে অন্য একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ দৃশ্যে কোতোয়ালি থানার সাইনবোর্ড স্পষ্টভাবেই চোখে পড়ে।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভে অংশ নেয়া লোকজনের নির্মিত ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার যে নির্দেশ, তা একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টুইট করে জানিয়েছে, কথিত আইন-ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বুলডোজারের কাজ চলবে এবং শুক্রবার যে মুসলিমরা নামাজ পড়ে, তাদের প্রতি প্রচ্ছন্নভাবে ইঙ্গিত করে তার মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার একটি বুলডোজারের ছবি পোস্ট করে। এর নীচে লেখা, ‘শুক্রবারের পর শনিবার আছে কিন্তু!’ এরপর গত শনিবার বিকেলে মুসকানের বাড়িতে আসে একটি বুলডোজার এবং বাড়ির সামনের গেট ভেঙে ফেলা শুরু করে।
পুলিশ সেখানে এসে হাজির হলো তার ভাইয়ের এক ছবি হাতে এবং জিজ্ঞেস করলো, এই বাড়িতেই সে থাকে কিনা। ১৭-বছর বয়সী ছেলেটিকে এর আগের রাতেই পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। ‘আমার বাবা নিশ্চিত করেন যে, ছবিটি তার ছেলের এবং জিজ্ঞেস করলেন কিছু ঘটেছে কিনা,’ বলছিলেন মুসকান, ‘তারা কোনো উত্তর দিল না, হঠাৎ তারা বুলডোজার চালানো শুরু করলো।’ অথচ হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথের একজন উপদেষ্টা নভনীত সেহগাল বলেছে, বুলডোজার দিয়ে যা করা হচ্ছে তা আইন মেনেই এবং ‘সব নিয়মে মেনেই করা হচ্ছে … এখানে আইনের বিরুদ্ধে কিছু হচ্ছে না।’
কিন্তু ভারতের একদল শীর্ষস্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞ, যাদের মধ্যে সাবেক বিচারপতি এবং নামকরা আইনজীবীরা রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন পেশ করেছেন পুলিশের এসব মারধর এবং বুলডোজারের অনাকাঙ্খিত ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনাবলীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে। তাদের চিঠিতে তারা অভিযোগ তুলেছেন, আদিত্যনাথ পুলিশকে ‘নিষ্ঠুর এবং বেআইনিভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে’ মদত দিচ্ছেন। তারা আরোও বলেছেন, ‘সর্বশেষ এসব ঘটনা জাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে।’
‘হিন্দুত্ববাদী শাসকশ্রেণীর এরকম নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন কথিত আইনের শাসনকে যেভাবে ধ্বংস করছে, তাতেই বুঝা যায় আইনগুলো আসলে মুসলিমদের জন্য নয়। অন্যথায় রাষ্ট্র যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাকে একটা পরিহাসে পরিণত করা হত না।
‘ভারত সরকার বেছে বেছে এবং হিংস্রভাবে সেসব মুসলিমের ওপরই দমন চালাচ্ছে, যারা তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভিন্নমত তুলে ধরছে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় বোর্ডের প্রধান আকার প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিক্ষোভকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে দমন করা, বিনা বিচারে আটকে রাখা এবং শাস্তি হিসেবে ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া – এগুলোন কথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মানদণ্ড রক্ষা করে চলার যে অঙ্গীকার ভারত করেছে, তার পুরোপুরি লঙ্ঘন।’
মুসলিমদের বেলায় মানবাধিকার পুরোপুলি লঙ্ঘন হওয়ার পর জাতিসঙ্ঘ নামের কুফরী,দালাল মিডিয়া ও চেতনাবাজরা চুপ হয়ে আছে। কারণ এখানে ভিকটিম হচ্ছে মুসলিরা।
তথ্যসূত্র :
1. “Very beautiful!”: Retired IPS officer appreciates cops for beating Muslim protesters
– https://tinyurl.com/48r86r29
2. মারধর করার ভিডিও লিঙ্ক:
– https://tinyurl.com/4z54757y
3. মুসলিমদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুরতার ভিডিও
– https://tinyurl.com/4pr4pjda
ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ও উম্মুল মু’মিনিন হযরত আইশা(রাঃ)কে নিয়ে সম্প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করে হিন্দুত্ববাদী দুই উগ্রবাদী নেতা। এর প্রতিবাদে মুসলিমরা রাস্তায় নামলে অতি হিংস্র রূপে আবির্ভূত হয় হিন্দুত্ববাদী জনতা ও প্রশাসন। হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন তাওহিদবাদী প্রতিবাদরত মুসলিমদের আটক করে নিয়ে যায়। অনেককে রাস্তার মাঝেই মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে।
পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদী পুলিশের হেফাজতে থাকা একদল মুসলিম পুরুষকে বেদম প্রহার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ভারতের প্রয়াগরাজে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ পলিকার্বোনেট লাঠি দ্বারা মুসলিম যুবকদের মারছে।
এরকম একটি ভিডিও অনলাইনে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। যা মুসলিমদের অন্তরের রক্তক্ষরণকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই জঘন্য ভিডিওটি শেয়ার করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির এক নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি, সে পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণের প্রশংসা করে এই বলে যে, এই পিটুনি আসলে এসব লোকের জন্য একটি ‘উপহার।’
মুসলিম বিক্ষোভকারীদের নির্মমভাবে মারধরের ভিডিও শেয়ার করার সময় কেরালার প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) উগ্র হিন্দুত্ববাদী নির্মল চন্দ্র আস্থানা লিখেছে “সুন্দর, খুব সুন্দর।”
অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় নয়াদিল্লির জামা মসজিদ এবং উত্তর প্রদেশের শহর প্রয়াগরাজ, হাতরাস, ফিরোজবাদ, সাহারানপুর, মোরাদাবাদ এবং আম্বেদকরনগর সহ গোটা ভারত জুড়ে। যেখানে অন্তত ৩০০ জন মুসলিম বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। এরপরই, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মারধরের ছবি এবং ভিডিও টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ভিডিও শেয়ার দিয়ে উগ্রবাদী নির্মল চন্দ্র আরও লিখেছে, “ভাল, পুরানো তিসির তেলে ভেজানো লাঠি গুণ্ডাদের (মুসলিমদের) অনেক ভালো নাচ নাচিয়েছে।”
শুক্রবার বিক্ষোভের পরে ইউপির শহর জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের ধ্বংস অভিযান অব্যাহত থাকে। হিন্দুত্ববাদী আস্থানা সে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থক ও পুলিশকে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশংসা করে।
এ ঘটনায় জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পিটুনির শিকার মানুষগুলোর পরিবার বলছে, তাদের প্রিয়জনরা নির্দোষ এবং তাদের মুক্তি দেয়া উচিৎ। ‘এটা আমার ভাই, ওকে প্রচণ্ড মেরেছে ওরা, ও ব্যথায় অনেক চিৎকার করছিল,’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জেবা। যে হাতে ধরা মোবাইল ফোনে তিনি তার ছোট ভাই সাইফকে মারার এই ভয়ঙ্কর ভিডিওটি দেখছিলেন, তার সেই হাতটি কাঁপছিল। ‘এ দৃশ্যের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। ওকে যে কী সাঙ্ঘাতিকভাবে মেরেছে,’ বলছিলেন তিনি। উত্তর ভারতের শহর সাহারানপুরে নিজের বাড়িতে এসময় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়-স্বজনরা। বিচলিত হওয়ার মতো ভিডিওটিতে দেখা যায়, কিছু ভারতীয় পুলিশ তাদের হাতে বন্দি কয়েকজন মুসলিম পুরুষকে মারতে উদ্যত, যার মধ্যে জেবা’র ভাইও রয়েছে।
ভিডিওতে আরো দেখা যায়, পুলিশ অফিসাররা এসব লোককে রড দিয়ে পেটাচ্ছে, রডগুলো তারা বেসবল ব্যাটের মতো করে ঘোরাচ্ছে। প্রতিবার যখন কারো ওপর এরকম রডের বাড়ি পড়ছে, তখন তার শব্দ শোনা যাচ্ছে, এরপরই শোনা যাচ্ছে চিৎকার। ‘খুব ব্যথা লাগছে, খুব ব্যথা লাগছে …আর মেরো না,’ আতঙ্কে-ভয়ে এক কোণায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়। কিন্তু এরপরও যখন বেদম প্রহার চলতে থাকে, তখন সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা এক লোককে তার হাত জোড়া করে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। আর সাদা শার্ট পরা সাইফকে দেখা যায় ওপরে দুই হাত তুলতে, যেন সে আত্মসমর্পণ করছে।
গত সপ্তাহে পুলিশ যে কয়েক ডজন মুসলিম পুরুষকে ধরে নিয়ে আটকে রেখেছিল, ২৪-বছর বয়সী সাইফ তাদের একজন। ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে উস্কানিমূলক কিছু মন্তব্য করার পর দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ শুরু হয়, সাহারানপুরেও শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজের পর সেরকম বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। সাহারানপুরের এ প্রতিবাদ ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ, মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন শহরের দোকানপাটের সামনে দিয়ে মিছিল করে যায়।
পুলিশের কাগজপত্রে অভিযোগ করা হয় যে, সাইফ এবং আরো ৩০ ব্যক্তি মিলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেছে, সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিতে ইচ্ছেকৃতভাবে তাকে আহত করেছে এবং জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সাইফের পরিবার কার্ডবোর্ড বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন চালায়। তারা বলছে, সাইফ নির্দোষ, এমনকি সে ঐ বিক্ষোভেও পর্যন্ত ছিল না।
তারা জানায়, সাইফ শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে ঘর থেকে বেরিয়েছিল তার এক বন্ধুর জন্য বাসের টিকেট কাটতে। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং সাহারানপুরের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। জেবা যখন তাকে থানায় দেখতে যান, তখন তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান, ‘বেদম পিটুনির ব্যথায় তার শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল ও ঠিকমত বসতে পর্যন্ত পারছিল না।’ এই ভিডিও, যাতে স্পষ্টভাবেই পুলিশের নৃশংসতা দেখা যাচ্ছে, সেটি অনলাইনে শেয়ার করে বিজেপির এক নির্বাচিত হিন্দুত্ববাদী শালাভ ত্রিপাঠি। ভিডিওর নীচে সে আবার ক্যাপশনে লিখেছিল, ‘বিদ্রোহীদের জন্য একটি ফিরতি উপহার।’ ভিডিওটি অনলাইনে ভাইরাল হয়।
ত্রিপাঠি ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এক হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিক এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা। ঘটনাটি ঘটেছে এ প্রদেশেই। এখনো পর্যন্ত এই ভিডিওর ঘটনায় কেউ নিন্দাও জানায়নি।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, এগুলোর সাথে বিজেপি সরকারের হাত রয়েছে। তাদের ইশারাতেই মুসলিমদের উপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা বাড়িছে, তাদের টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।
গত শুক্রবার সাহারানপুরে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে গ্রেফতারের পর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর করা হয়েছে। এরা ভিডিওতে তাদের নিকটজনকে চিহ্নিতও করেছেন, যাতে দেখা যায় পুলিশ সহিংসতা চালাচ্ছে। অন্য ফুটেজে দেখা যায়, এসব লোককে একটি ভ্যানে তুলে অন্য একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ দৃশ্যে কোতোয়ালি থানার সাইনবোর্ড স্পষ্টভাবেই চোখে পড়ে।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভে অংশ নেয়া লোকজনের নির্মিত ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার যে নির্দেশ, তা একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টুইট করে জানিয়েছে, কথিত আইন-ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বুলডোজারের কাজ চলবে এবং শুক্রবার যে মুসলিমরা নামাজ পড়ে, তাদের প্রতি প্রচ্ছন্নভাবে ইঙ্গিত করে তার মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার একটি বুলডোজারের ছবি পোস্ট করে। এর নীচে লেখা, ‘শুক্রবারের পর শনিবার আছে কিন্তু!’ এরপর গত শনিবার বিকেলে মুসকানের বাড়িতে আসে একটি বুলডোজার এবং বাড়ির সামনের গেট ভেঙে ফেলা শুরু করে।
পুলিশ সেখানে এসে হাজির হলো তার ভাইয়ের এক ছবি হাতে এবং জিজ্ঞেস করলো, এই বাড়িতেই সে থাকে কিনা। ১৭-বছর বয়সী ছেলেটিকে এর আগের রাতেই পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। ‘আমার বাবা নিশ্চিত করেন যে, ছবিটি তার ছেলের এবং জিজ্ঞেস করলেন কিছু ঘটেছে কিনা,’ বলছিলেন মুসকান, ‘তারা কোনো উত্তর দিল না, হঠাৎ তারা বুলডোজার চালানো শুরু করলো।’ অথচ হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথের একজন উপদেষ্টা নভনীত সেহগাল বলেছে, বুলডোজার দিয়ে যা করা হচ্ছে তা আইন মেনেই এবং ‘সব নিয়মে মেনেই করা হচ্ছে … এখানে আইনের বিরুদ্ধে কিছু হচ্ছে না।’
কিন্তু ভারতের একদল শীর্ষস্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞ, যাদের মধ্যে সাবেক বিচারপতি এবং নামকরা আইনজীবীরা রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন পেশ করেছেন পুলিশের এসব মারধর এবং বুলডোজারের অনাকাঙ্খিত ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনাবলীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে। তাদের চিঠিতে তারা অভিযোগ তুলেছেন, আদিত্যনাথ পুলিশকে ‘নিষ্ঠুর এবং বেআইনিভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে’ মদত দিচ্ছেন। তারা আরোও বলেছেন, ‘সর্বশেষ এসব ঘটনা জাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে।’
‘হিন্দুত্ববাদী শাসকশ্রেণীর এরকম নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন কথিত আইনের শাসনকে যেভাবে ধ্বংস করছে, তাতেই বুঝা যায় আইনগুলো আসলে মুসলিমদের জন্য নয়। অন্যথায় রাষ্ট্র যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাকে একটা পরিহাসে পরিণত করা হত না।
‘ভারত সরকার বেছে বেছে এবং হিংস্রভাবে সেসব মুসলিমের ওপরই দমন চালাচ্ছে, যারা তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভিন্নমত তুলে ধরছে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় বোর্ডের প্রধান আকার প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিক্ষোভকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে দমন করা, বিনা বিচারে আটকে রাখা এবং শাস্তি হিসেবে ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া – এগুলোন কথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মানদণ্ড রক্ষা করে চলার যে অঙ্গীকার ভারত করেছে, তার পুরোপুরি লঙ্ঘন।’
মুসলিমদের বেলায় মানবাধিকার পুরোপুলি লঙ্ঘন হওয়ার পর জাতিসঙ্ঘ নামের কুফরী,দালাল মিডিয়া ও চেতনাবাজরা চুপ হয়ে আছে। কারণ এখানে ভিকটিম হচ্ছে মুসলিরা।
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
1. “Very beautiful!”: Retired IPS officer appreciates cops for beating Muslim protesters
– https://tinyurl.com/48r86r29
2. মারধর করার ভিডিও লিঙ্ক:
– https://tinyurl.com/4z54757y
3. মুসলিমদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুরতার ভিডিও
– https://tinyurl.com/4pr4pjda