Announcement

Collapse
No announcement yet.

আদিবাসী উপাখ্যান- ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির আড়ালের গোপন সত্য

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আদিবাসী উপাখ্যান- ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির আড়ালের গোপন সত্য

    আদিবাসী উপাখ্যান- ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির আড়ালের গোপন সত্য



    প্রতি বছরের ৯ই আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘আদিবাসী দিবস’। এই দিবসকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় নানান উৎসব, আয়োজন, সেমিনার ইত্যাদি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও উপজাতিরা নানান সব উৎসব, সেমিনারের আয়োজন করে।

    এবছর ৯ আগস্ট উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও তাদের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, যেখানে কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিল।তবে এই দিনটিতে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চালানো হয় এক আলাদা রকমের প্রচেষ্টা।

    খুবই সূক্ষ্মভাবে ব্যাপক প্রোপ্যাগান্ডা, সেমিনার, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মূলধারার মিডিয়া সাধারণ মানুষের মাথায় একটি বিষয় গেঁথে দিতে চায়, যা হলো- “পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা আসলে উপজাতি নয়, বরং তারা হলো দেশের ‘আদিবাসী’।”বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা নিজেদের ‘আদিবাসী’ বলে দাবি করে আসছে অনেক দিন থেকেই। যদিও এই দাবিকৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। কিন্তু তবুও সংখ্যায় কম হলেও তারা দেশে বেশ শক্ত অবস্থানে আছে।

    কারণ হলো দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের পেছন থেকে এই উপজাতিদের শক্ত সমর্থন।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই উপজাতিরা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে? কেনই বা দেশের একটি মহল এই উপজাতিদের পেছন থেকে শক্ত সমর্থন দিচ্ছে? এই উত্তর জানার আগে আমাদের জানা দরকার আদিবাসী আসলে কারা?

    আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১-এর উপঅনুচ্ছেদ ১(খ) অনুযায়ী ‘আদিবাসী’র সংজ্ঞা হল- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগলিক ভূখণ্ডে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আদিবাসী’ বলে পরিগণিত, এবং যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদা নির্বিশেষ নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ব্যবহারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।’

    সহজ ভাষায় আদিবাসী হচ্ছে তারা- যারা একটি ভূখণ্ডে আদিকাল থেকে বাস করছে এবং এখনও নিজেদের সংস্কৃতি, সামাজিক আচার-আচরণ ধরে রেখে বাস করছে। সুতরাং সেই হিসেবে বাংলাদেশের আসল আদিবাসী হচ্ছে এদেশের বাঙালি মুসলিমরা, মুসলিম কৃষকরা। তারাই বন কেটে কৃষিজমি বানিয়ে আর বসতি স্থাপন করে এদেশকে বাসযোগ্য করেছে। তাঁরা এই ভুমির প্রকৃত আদিবাসী নয়, তো কারা.!?

    পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা, যারা নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে দাবি করে! অথচ তাদের এই ভূখণ্ডে বসবাস শুরু মাত্র ৩০০ বছর আগে। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জাতির আদিনিবাস বলা হয় বার্মার চম্পকনগরকে। তাদের ভাষ্যমতে তারা মঙ্গোলীয় জাতি। মঙ্গোলিয়া থেকে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা বার্মার চম্পকনগরে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে চম্পকনগর থেকেও তারা দেশান্তরিত হয়ে ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা তাদের উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কেউই বাংলাদেশে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাস করছে না।

    সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা আজ নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করছে তাদের এই দাবিকে ‘হাস্যকর’ একটি দাবি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। কারণ, না তাদের এই ভূখণ্ডে হাজার বছরের বসবাসের ইতিহাস রয়েছে, আর না তাদের নিজস্ব কোন সংস্কৃতি রয়েছে। তাদের বর্তমান সংস্কৃতি এখন অনেকটাই বাঙালি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারক।এখন তাহলে আগের সেই প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যায়- কেন এই উপজাতীরা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে?

    ২০০৭ সালে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানকার কয়েকটি অনুচ্ছেদ এখানে তুলে ধরা হল-অনুচ্ছেদ-৩: আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। সেই অধিকার বলে তারা অবাধে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং অবাধে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখে।

    অনুচ্ছেদ-৪: আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চার বেলায় তাদের আভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্বশাসন ও স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বশাসনের কার্যাবলীর জন্য অর্থায়নের পন্থা ও উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে।অনুচ্ছেদ-১০: আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি কিংবা ভূখণ্ড থেকে জবরদস্তিমূলক উৎখাত করা যাবে না। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা যাবে না।অনুচ্ছেদ-১৪: আদিবাসীদের তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং এসবের ওপর নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আছে।অনুচ্ছেদ-৩০: আদিবাসীদের ভূমিতে বা ভূখণ্ডে কোন সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে না। সামরিক কার্যক্রম নিতে হলে আদিবাসীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে।

    জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবার পর থেকেই কিছু দুষ্টচক্র স্বার্থ হাসিল করার জন্য নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে। কারণ, নিজেদের ‘আদিবাসী’ ঘোষণার দাবি আদায় করতে পারলে উপজাতিরা এদেশে স্বশাসনের অধিকার পাবে; আরও পাবে উপরোক্ত ধারাগুলোর সকল অধিকার পালনের সুযোগ। আর উপজাতিদের অধিকাংশই যেহেতু ইতিমধ্যে খ্রিস্টবাদে দীক্ষিত হয়ে গেছে, সুতরাং নিজেদেরকে ‘আদিবাসী’ দাবি করার পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্য- এই দেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করা। যা স্বাভাবিকভাবেই এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।


    আর ঠিক এজন্যই দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই দুষ্ট চক্রকে শক্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। কারণ তারাও চায় যে, এই দেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আলাদা হয়ে পড়ুক। আর এই পুরো মহলকে ব্যাপক প্রোপ্যাগান্ডার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো। বিশ্বের নজরে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে দেশের সরকারকে চাপে ফেলে তারা আলাদা করতে চায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে।বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ।

    মূলত এটিই বিশ্বের অনেক দেশের কাছে মাথাব্যাথার কারণ। তাইতো এই দেশ থেকে এবং দেশের মানুষের কাছ থেকে ইসলামকে মুছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন এনজিও ও খ্রিষ্টান মিশনারিরা এক হয়ে কাজ করছে। এই মিশনারিরা দেশের মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর জন্য কথিত ‘সভ্য’ পশ্চিমা সংস্কৃতির আমদানি, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি তৈরীর জন্য ব্যাপক প্রোপ্যাগান্ডা চালানো, দেশকে হিন্দুত্ববাদী ভারতের প্রতি আজ্ঞাবহ রাখা সহ নানান ইসলাম-বিরোধি কার্যক্রম খুবই একনিষ্ঠতার সাথে পালন করে আসছে।

    তাই এদেশের মুসলিমদের উচিত, যারা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে এবং যারা এই দাবিদারদের পক্ষে সমর্থন দেয়, যারা এদেশকে খ্রিস্টবাদের জোয়ারে ভাসিয়ে নিতে চায়- তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, তাদের এবং তাদের কার্যক্রমের ব্যপারে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং বিভিন্ন জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা। সর্বোপরি, সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ বিপদ মোকাবেলায় নববী মানহাজের আলোকে প্রস্তুত হওয়া, যাতে করে এইসব দেশদ্রোহীরা তাদের পরিকল্পনা মুসলিমদের এই ভূখণ্ডে বাস্তবায়ন না করতে পারে।


    লেখক : আবু-উবায়দা


    তথ্যসূত্র :
    1. আদিবাসী স্বীকৃতির অন্তরালে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সুধী সমাবেশ
    https://tinyurl.com/3a3em6ur
    2. ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও আদিবাসী আখ্যান’
    https://tinyurl.com/3ppyyv6a
    3. বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার
    https://tinyurl.com/2ayd5ruk
    4. উপজাতি না আদিবাসী কোনটা সত্য
    https://tinyurl.com/3f6a7sbb






    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X