ক্ষমতায় থাকতে হিন্দুত্ববাদী মোদীর ‘আশীর্বাদ’ নিতেই কি হাসিনার দিল্লী সফর.!
তাবেদারীর চুক্তি নবায়ন করতেই কি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩ বছর পর ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লীতে গিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে হাসিনার এই দিল্লী সফর নিয়ে দু’দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে কি ধরণের চুক্তি ও স্মারক সই হতে পারে এবং কি হওয়া উচিত তা নিয়ে ভারতে গণমাধ্যমগুলোতে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশে ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করা দরকার করতে হবে’ – পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন দেশের মানুষ। শুধু তাই নয় এবার শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতকে কি কি দিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের জন্য কি কি নিয়ে আসে সেটা জানতে দেশের জনগণ মুখিয়ে রয়েছেন। কারণ গত এক যুগে দুই দেশের ‘বন্ধুত্বের’ নামে ভারতকে শুধু উজার করে দিয়েছে দালাল হাসিনা সরকার। বিনিময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই পায়নি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার কুখ্যাত উক্তি- ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
অথচ, ভারত তিস্তা নদীর ন্যায্য পানি চুক্তি এক যুগ ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এরই মাঝে গত বছর ভারত ফেনী নদীর পানি উঠিয়ে নিতে স্মারকচুক্তি করেছে। এখন শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারছে না বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন ২০১১ সালে। ওই চুক্তির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তা ঝুলে রয়েছে। এবিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরেও তিস্তা নিয়ে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই।
ভারত সফর নিয়ে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে, শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লী সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরে ৭টি সমঝোতা চুক্তির কথা জানালেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি কি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে তা প্রকাশ করেনি। তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত থেকে সিলেটে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। কুশিয়ারার পানি প্রত্যাহার স্মারক সই হবে। এছাড়াও দুই দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতার চুক্তি হতে পারে।
প্রতিবেশী কথিত ‘বন্ধু’ হিসেবে ভারত গত এক যুগে বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। সড়ক পথে ট্রানজিট, রেলপথে ও নৌ পথে ট্রানজিট পেয়েছে, সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যে নিরাপত্তার খরচ কমে গেছে। চাওয়া মাত্রই ফেনি নদীর পানি তুলে ত্রিপুরায় নেয়ার সমঝোতা করেছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দালাল হাসিনা সরকার ভারতকে সব ধরণের সহযোগিতা করেছে। তারপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধের অঙ্গিকার করেও কথা রাখেনি হিন্দুত্ববাদী ভারত। এক যুগ ধরে তিস্তা চুক্তি ঝুলে রয়েছে। ৫৪ নদীর পানিবণ্টনে সমঝোতা হয়নি এবং ফারাক্কার ২৫ বছরের পানি চুক্তি হলেও চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশের মুসলিমরা।
ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর রিপোর্টে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দু’দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ভারত ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ, কানেক্টিভিটি, সমুদ্রবন্দর, সড়কপথ, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করছে। বলতে গেলে বিনা শুল্কে ভারতের পণ্যাদি বাংলাদেশের ভূমি ও পথ ব্যবহার করে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে হচ্ছে। ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য পরিবহণের যে খরচ হয় বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহার করায় তার চেয়েও কম খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে অনুরূপ সুবিধা ভারতের কাছ থেকে এখনো পাচ্ছে না।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ মে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিল, ‘আমরা কারো কাছে কিছু চাই না। আমি নিতে পছন্দ করি না। সব সময় অন্যকে দিতে বেশি পছন্দ করি। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
বিগত দু’টি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে ওই সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগের পাশে ছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত। এর প্রতিদান হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের তাবেদারী করে বাংলাদেশের মুসলিমদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে দালাল হাসিনা সরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করেছে তারা।
টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নামে স্বাধীন দেশের উপর আগ্রাসনের সুযোগ
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমাতে এবার নয়াদিল্লী ঢাকার সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে যখন ভারত সফরে গিয়েছিল, তখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল যে, যেকোন সময় ভারত বাংলাদেশে সামরিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সামরিক সরঞ্জাম কেনাসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপারে চুক্তি করার জন্য ভারতের দিক থেকে তাগিদ আসতে পারে। এমন ইঙ্গিত রয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছে।
আগে ২০১৯ সালে যে সমঝোতা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। আর সেই ঋণের আওতায় ভারত থেকে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম কিনতে হবে। এ ব্যাপারে এবার চুক্তি সই হতে পারে।
সীমান্তে বাংলাদেশী মুসলিমদের খুন
যদিও ভারত বিভিন্ন সময় সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এরপরও তা বন্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত, যেখানে দু’টি দেশ শত্রু না হওয়া সত্বেও অবিরাম মানুষ হত্যা চলছে।’ এর ব্যাখ্যায় সে বলেছে, দিল্লি বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা বা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলছে, কিন্তু মাঠে তার বাস্তবায়ন নেই।
জনাব তৌহিদ হোসেন আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের সপক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে বসেই এমন জঘন্য করা বলেছিল হিন্দুত্ববাদী বিএসএফ প্রধান।
‘সীমান্ত অপরাধ থাকলে হত্যা হবে – এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে।’
‘অপরাধ হলে তা আদালতে নেয়ার কথা। কিন্তু অপরাধী কিনা- সেটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে গুলি করে মানুষ হত্যা করা – এটা সভ্য দেশের কাজ হতে পারে না।’
ভারতের কথিত সোনালী সম্পর্ক, কিন্তু প্রাপ্তি কী
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় ঘনিষ্ঠ বা ভালো বলে বলা হয়ে থাকে। সে কারণে বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুতে মীমাংসা না হওয়ায় দালাল আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘ভারত যা চায়, তা পায়। কিন্তু আমরা যা চাই, তা পাই না। এই সমালোচনা বাংলাদেশে রয়েছে।’
হিন্দুত্ববাদী ভারত তাদের দালাল হাসিনা সরকারের মাধ্যমে সব সুযোগ-সুবিধা নিলেও বাংলাদেশ কিছুই পায় না। তারা শুধু পারে বাংলাদেশীদের প্রয়োজনের সময় পানি আটকে রেখে ফসল নষ্ট করতে। আর বর্ষাকালে পানি ছেড়ে বাংলাদেশীদের ডুবিয়ে মারতে, আবাদী ফসল পচিয়ে দিতে। ভারতের মত ধূর্তবাজ কথিত বন্ধু যাদের আছে, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশ্লেষকগণ।
তবে দালাল হাসিনা সরকার এবং কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল যতই ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের অলীক গল্প প্রচার করুক, এদেশের সাধারণ মুসলিমরা জানেন যে, ভারত কখনোই আমাদের বন্ধু নয়; বরং সে মুসলিমদের রক্তপিপাসু। কাশ্মীর ও আসামসহ গোটা ভারতে মুসলিম গণহত্যার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে ফেলা ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদের তীব্র ঢেউ যে অচিরেই বাংলাদেশেও আঁছড়ে পরবে, এবং সেই প্রস্তুতিও যে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে – সে ব্যাপারেও বাংলাদেশের মুসলিমরা এখন অবগত।
মুসলিমদেরকে তাই হক্কানী উলামাদের ডাকে সারা দিয়ে নিজেদের ও পরিবার-পরিজনদের জান-মাল-ইজ্জত হেফাজতের জিম্মা নিজের কাঁধে নিতে প্রস্তুত হতে বলেছেন ইসলামি চিন্তাবীদগণ। তবে সবার আগে মুসলিমদেরকে নববী মানহাজ ও আদর্শে ফিরে আসতে হবে, এবং কাফেরদের এঁকে দেওয়া সীমানার বন্ধন মাথা থেকে ঝেরে ফেলে এক উম্মাহ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। কেননা আসাম-আরাকান আর কাশ্মীরের মুসলিমদের রক্ত, আমাদেরই রক্ত।
তথ্যসূত্র :
১. শেখ হাসিনার ভারত সফর: আওয়ামী লীগের লাভ-ক্ষতির হিসাব
– https://tinyurl.com/yyff8kwr
২. প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
– https://tinyurl.com/3m3v2mu6
তাবেদারীর চুক্তি নবায়ন করতেই কি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩ বছর পর ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লীতে গিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে হাসিনার এই দিল্লী সফর নিয়ে দু’দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে কি ধরণের চুক্তি ও স্মারক সই হতে পারে এবং কি হওয়া উচিত তা নিয়ে ভারতে গণমাধ্যমগুলোতে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশে ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করা দরকার করতে হবে’ – পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন দেশের মানুষ। শুধু তাই নয় এবার শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতকে কি কি দিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের জন্য কি কি নিয়ে আসে সেটা জানতে দেশের জনগণ মুখিয়ে রয়েছেন। কারণ গত এক যুগে দুই দেশের ‘বন্ধুত্বের’ নামে ভারতকে শুধু উজার করে দিয়েছে দালাল হাসিনা সরকার। বিনিময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই পায়নি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার কুখ্যাত উক্তি- ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
অথচ, ভারত তিস্তা নদীর ন্যায্য পানি চুক্তি এক যুগ ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এরই মাঝে গত বছর ভারত ফেনী নদীর পানি উঠিয়ে নিতে স্মারকচুক্তি করেছে। এখন শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারছে না বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন ২০১১ সালে। ওই চুক্তির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তা ঝুলে রয়েছে। এবিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরেও তিস্তা নিয়ে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই।
ভারত সফর নিয়ে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে, শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লী সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরে ৭টি সমঝোতা চুক্তির কথা জানালেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি কি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে তা প্রকাশ করেনি। তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত থেকে সিলেটে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। কুশিয়ারার পানি প্রত্যাহার স্মারক সই হবে। এছাড়াও দুই দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতার চুক্তি হতে পারে।
প্রতিবেশী কথিত ‘বন্ধু’ হিসেবে ভারত গত এক যুগে বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। সড়ক পথে ট্রানজিট, রেলপথে ও নৌ পথে ট্রানজিট পেয়েছে, সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যে নিরাপত্তার খরচ কমে গেছে। চাওয়া মাত্রই ফেনি নদীর পানি তুলে ত্রিপুরায় নেয়ার সমঝোতা করেছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দালাল হাসিনা সরকার ভারতকে সব ধরণের সহযোগিতা করেছে। তারপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধের অঙ্গিকার করেও কথা রাখেনি হিন্দুত্ববাদী ভারত। এক যুগ ধরে তিস্তা চুক্তি ঝুলে রয়েছে। ৫৪ নদীর পানিবণ্টনে সমঝোতা হয়নি এবং ফারাক্কার ২৫ বছরের পানি চুক্তি হলেও চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশের মুসলিমরা।
ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর রিপোর্টে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দু’দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ভারত ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ, কানেক্টিভিটি, সমুদ্রবন্দর, সড়কপথ, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করছে। বলতে গেলে বিনা শুল্কে ভারতের পণ্যাদি বাংলাদেশের ভূমি ও পথ ব্যবহার করে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে হচ্ছে। ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য পরিবহণের যে খরচ হয় বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহার করায় তার চেয়েও কম খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে অনুরূপ সুবিধা ভারতের কাছ থেকে এখনো পাচ্ছে না।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ মে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিল, ‘আমরা কারো কাছে কিছু চাই না। আমি নিতে পছন্দ করি না। সব সময় অন্যকে দিতে বেশি পছন্দ করি। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
বিগত দু’টি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে ওই সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগের পাশে ছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত। এর প্রতিদান হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের তাবেদারী করে বাংলাদেশের মুসলিমদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে দালাল হাসিনা সরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করেছে তারা।
টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নামে স্বাধীন দেশের উপর আগ্রাসনের সুযোগ
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমাতে এবার নয়াদিল্লী ঢাকার সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে যখন ভারত সফরে গিয়েছিল, তখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল যে, যেকোন সময় ভারত বাংলাদেশে সামরিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সামরিক সরঞ্জাম কেনাসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপারে চুক্তি করার জন্য ভারতের দিক থেকে তাগিদ আসতে পারে। এমন ইঙ্গিত রয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছে।
আগে ২০১৯ সালে যে সমঝোতা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। আর সেই ঋণের আওতায় ভারত থেকে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম কিনতে হবে। এ ব্যাপারে এবার চুক্তি সই হতে পারে।
সীমান্তে বাংলাদেশী মুসলিমদের খুন
যদিও ভারত বিভিন্ন সময় সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এরপরও তা বন্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত, যেখানে দু’টি দেশ শত্রু না হওয়া সত্বেও অবিরাম মানুষ হত্যা চলছে।’ এর ব্যাখ্যায় সে বলেছে, দিল্লি বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা বা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলছে, কিন্তু মাঠে তার বাস্তবায়ন নেই।
জনাব তৌহিদ হোসেন আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের সপক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে বসেই এমন জঘন্য করা বলেছিল হিন্দুত্ববাদী বিএসএফ প্রধান।
‘সীমান্ত অপরাধ থাকলে হত্যা হবে – এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে।’
‘অপরাধ হলে তা আদালতে নেয়ার কথা। কিন্তু অপরাধী কিনা- সেটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে গুলি করে মানুষ হত্যা করা – এটা সভ্য দেশের কাজ হতে পারে না।’
ভারতের কথিত সোনালী সম্পর্ক, কিন্তু প্রাপ্তি কী
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় ঘনিষ্ঠ বা ভালো বলে বলা হয়ে থাকে। সে কারণে বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুতে মীমাংসা না হওয়ায় দালাল আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘ভারত যা চায়, তা পায়। কিন্তু আমরা যা চাই, তা পাই না। এই সমালোচনা বাংলাদেশে রয়েছে।’
হিন্দুত্ববাদী ভারত তাদের দালাল হাসিনা সরকারের মাধ্যমে সব সুযোগ-সুবিধা নিলেও বাংলাদেশ কিছুই পায় না। তারা শুধু পারে বাংলাদেশীদের প্রয়োজনের সময় পানি আটকে রেখে ফসল নষ্ট করতে। আর বর্ষাকালে পানি ছেড়ে বাংলাদেশীদের ডুবিয়ে মারতে, আবাদী ফসল পচিয়ে দিতে। ভারতের মত ধূর্তবাজ কথিত বন্ধু যাদের আছে, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশ্লেষকগণ।
তবে দালাল হাসিনা সরকার এবং কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল যতই ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের অলীক গল্প প্রচার করুক, এদেশের সাধারণ মুসলিমরা জানেন যে, ভারত কখনোই আমাদের বন্ধু নয়; বরং সে মুসলিমদের রক্তপিপাসু। কাশ্মীর ও আসামসহ গোটা ভারতে মুসলিম গণহত্যার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে ফেলা ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদের তীব্র ঢেউ যে অচিরেই বাংলাদেশেও আঁছড়ে পরবে, এবং সেই প্রস্তুতিও যে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে – সে ব্যাপারেও বাংলাদেশের মুসলিমরা এখন অবগত।
মুসলিমদেরকে তাই হক্কানী উলামাদের ডাকে সারা দিয়ে নিজেদের ও পরিবার-পরিজনদের জান-মাল-ইজ্জত হেফাজতের জিম্মা নিজের কাঁধে নিতে প্রস্তুত হতে বলেছেন ইসলামি চিন্তাবীদগণ। তবে সবার আগে মুসলিমদেরকে নববী মানহাজ ও আদর্শে ফিরে আসতে হবে, এবং কাফেরদের এঁকে দেওয়া সীমানার বন্ধন মাথা থেকে ঝেরে ফেলে এক উম্মাহ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। কেননা আসাম-আরাকান আর কাশ্মীরের মুসলিমদের রক্ত, আমাদেরই রক্ত।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
১. শেখ হাসিনার ভারত সফর: আওয়ামী লীগের লাভ-ক্ষতির হিসাব
– https://tinyurl.com/yyff8kwr
২. প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
– https://tinyurl.com/3m3v2mu6