কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৬।। শ্রাবালা হত্যাকাণ্ড
১৯৯৩ সালের ৯ এপ্রিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শ্রাবালা এলাকায় স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী বিএসএফ বাহিনী। এলাকার সকল মুসলিমকে ইকবাল পার্কে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেয় তারা। এরপর স্বাধীনতাকামীদের সনাক্তকরণ করতে তিনবার সার্চ করা হয়।
সেখানে উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী এশিয়া ওয়াচকে জানান, প্রথম দফায় ৯ জনকে এবং দ্বিতীয় দফায় ৫ জনকে আটক করে তারা। আটককৃত ১৪ জনের মধ্যে সাজাদ আহমেদ চৌধুরী, ইশতাক আহমেদ খান, তাহের মুঘল এবং শুধুমাত্র ‘দরজি’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তিসহ মোট ৪ জনকে চিনতে পারেন তিনি।
এরপর বিকেল ৫টা নাগাদ জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ বাহিনী দরজি নামে পরিচিত সেই ব্যক্তির নিথর দেহ নিয়ে আসে তাঁর শ্রাবালার বাসভবনে। সেই প্রত্যক্ষদর্শী এশিয়া ওয়াচকে বলেন, “আমি দেখি দরজির পুরো বুক রক্তে মাখা।”
একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, যিনি এই চারজনকে আটকের সাক্ষী ছিলেন, এশিয়া ওয়াচকে জানান, “আমি সাজাদ চৌধুরীর বাবার সাথে সাজাদ এবং তাহেরের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করতে একজন বিএসএফ অফিসারের কাছে যাই। তখন অফিসারটি তাদের ছেড়ে দেবার ব্যপারে আমাদের আশ্বাস দেয়।”
সাজাদের বাবা গুলাম নবী এশিয়া ওয়াচকে জানান, অভিযান শেষ হবার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি সহ আরও কয়েকজন জেলা প্রশাসক মিলে ডিসি আবদুস সালাম ভাটের কাছে যান আটককৃতদের ব্যপারে জানতে। তখনও ডিসি বন্দীদের মুক্তির ব্যপারে তাদের আশ্বাস দেয়।
আটককৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই মুক্তি পাবার আগে দখলদার বাহিনীর বন্দী শিবিরে চরম নির্যাতনের শিকার হন। এরপর সাজাদের বাবা ও অন্যান্য বন্দীদের পরিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও ডিসির কাছে যান। তাদের সন্তানদের মুক্তির জন্য তার কাছে অনুরোধ করেন। ডিসি সেই পরিবারগুলোকে আবারও আশ্বস্ত করে এই বলে যে, রাত সাড়ে ৯টার মধ্যেই সকল বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।
ডিসির কথায় ভরসা করে সকলেই বাড়ি ফেরার পর দরজির নিথর দেহ দেখতে পান তারা। গুলাম নবী আবারও ডিসিকে ফোন করলে ডিসি তাকে বলে যে, সাজাদ মাত্রই তার সামনে রাতের খাবার খেয়েছে।
পরদিন ১০ই এপ্রিল সকালে গুলাম নবী এবং অন্যান্য সবাই ডিসির বাসভবনে যান। সে আবারও সাজাদ সহ বাকী সমস্ত আটককৃত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বাড়ি যেতে বলে।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় দখলদার পুলিশ বাহিনীর একটি ট্রাক শ্রাবালার মাহাবুবিয়া প্রেসের সামনে এসে দাঁড়ায়। সাজাদ আহমেদ চৌধুরী, ইশতাক আহমেদ খান ও তাহের মুঘলের নিথর দেহ সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়।
পরের দিন ১১ই এপ্রিল একটি সরকারী বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, তাহির, সাজাদ এবং ইশতাকের মৃতদেহ লাল বাজারের মালাবাগে পাওয়া গিয়েছে।
এভাবেই স্বাধীনতাকামী ট্যাগ লাগিয়ে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিরীহ কাশ্মীরী মুসলিমদের খুন করে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস ভারতীয় প্রশাসন ও তার পোষা বিভিন্ন গুণ্ডা বাহিনী।
Reference: Human Rights Crisis in Kashmir [Pg: 48-50]
তথ্যসূত্রঃ
বইঃ হিউম্যান রাইটস ক্রাইসিস ইন কাশ্মীর (The Human Rights Crisis in Kashmir) [Page: 48-50]
প্রথম প্রকাশিতঃ জুন ১৯৯৩
প্রতিবেদনকারীঃ এশিয়া ওয়াচ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি বিভাগ) এবং ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস (পিএইচআর)
অনুবাদক ও সংকলক : আবু-উবায়দা
আগের পর্বগুলো পড়ুনঃ
১। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা ।। পর্ব-১।। চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/24/59437/
২। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-২।। ধর্ষণ যাদের সংস্কৃতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/25/59476/
৩। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা || পর্ব-৩ || নাসরুল্লাহপুরার হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/09/28/59560/
৪। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৪।। সাফাকাদাল হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/04/59692/
৫। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৫।। সোপোর হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/12/59884/