Announcement

Collapse
No announcement yet.

“বর্তমান ভারতে মুসলিম হওয়াটাই অপরাধ”: Nia অভিযানের স্মৃতিকথা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “বর্তমান ভারতে মুসলিম হওয়াটাই অপরাধ”: Nia অভিযানের স্মৃতিকথা




    ২৯ ডিসেম্বর ২০২২। ভোর ৪টা বাজে। কেরালার রাজ্য-মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছে একটি এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) গাড়ি। স্থানীয় পুলিশের একটি গাড়ি এটিকে সঙ্গ দিচ্ছে। গাড়িটি একটি কর্দমাক্ত রাস্তার দিকে মোড় নিল। গ্রামের নৈসর্গিক দৃশ্যের মাঝ দিয়ে বহুদূর গেছে সেই রাস্তা। গ্রামীণ রাস্তার ডানদিকে মোড় নেওয়ার কয়েক মিটার পরে গ্রামের একটি দ্বিতল কংক্রিটের বাড়ির সামনে থামল গাড়িটি। নিস্তব্ধ পরিবেশ, সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগেছিল কেবল কয়েকটি সাদা রঙের সারস পাখি; ডানা ঝাপটে তারা নিকটবর্তী গাছে আশ্রয় খুঁজে নিল।

    অফিসাররা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। বাড়ির প্রধান ফটকে গিয়ে থামলো তারা। ডোরবেল কাজ করছে না, তাই ঠোকা দিলো দরজায়। কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। ভেতরে আছেন আনভার (ছদ্মনাম) নামে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার একজন সাবেক কর্মী এবং তার স্ত্রী। শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলেন তারা।

    সাড়া না পেয়ে স্থানীয় পুলিশ অফিসাররা বেডরুমের জানালার কাছে গেল, আবারও ঠোকা দিতে শুরু করলো। এবারে ঠকঠক শব্দে জেগে ওঠলেন মাঝবয়সী নারী। প্রাথমিকভাবে তিনি ভেবেছিলেন, এই অসময়ে হয়তো কেউ মৃত্যুর খবর নিয়ে এসেছে। স্বামীকেও ঘুম থেকে জাগালেন তিনি।
    স্থানীয় সাব-ইন্সপেক্টর নিজের পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললো।

    “সংগঠনের নিষেধাজ্ঞার পরে, আমার হৃদয়ে সর্বদা এই ভাবনা জাগতো যে, খুব শীঘ্রই আমাদের বাড়িতেও একটি অভিযান হতে পারে। তবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে আজকেই হবে সেই দিন,” বলছিলেন আনভারের স্ত্রী।

    আনভার শার্ট না পরেই দরজার দিকে ছুটে গেলেন। তার বুকে কাপড় নেই; এ অবস্থায় আগন্তুকদের সাথে দেখা করায় তিনি অস্বস্তিতে ভুগছিলেন।

    অ্যাডভোকেট তুষার নির্মল সারথি এনআইএ-এর আদালতে বহু মামলায় বিবাদীর পক্ষে লড়েছেন। এই আইনজীবীর মতে, এনআইএ-কে বহু মামলার তদন্ত করার ক্ষেত্রে রাতের এমন অসময়ে বাড়িতে অভিযান চালাতে দেখা যায়। এটা তাদের সাধারণ প্যাটার্ন।

    তিনি বলেন, “গোপনীয়তার অধিকার একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। একটি পরিবারের শান্তির ঘুমে বেঘাত ঘটানো এবং রাতের অসময়ে তাদের বেডরুমে প্রবেশ করা গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন।”
    এই ধরনের অভিযানকে “একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করে তিনি আরও বলেন, এই কাজগুলো আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা হিসেবে আইনত সমর্থিত।

    ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) অফিসাররা কেরালা পুলিশের সহায়তায় একই সময়ে কেরালা-জুড়ে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সাবেক কর্মীদের ৫৬টি স্থান, বাড়ি এবং অফিসে অভিযান চালিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা ইরনাকোলামের ৮টি স্থানে, কুঝিকোড় ও থিরুভানানথাপুরামে ৩টি করে স্থানে, মালাপপুরাম ও আলাপপুঝাতে ৪টি করে স্থানে এবং ওয়ানাদ ও অন্য কিছু জেলায় ৬টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে।

    এই সকল অভিযানে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার চার সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, নিষেধাজ্ঞার পরেও সংগঠনটিকে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পরিচালনা করতে সচেষ্ট হওয়ার জন্য এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের লক্ষ্য ছিল, সংগঠনটির অর্থায়ন ও কথিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র উন্মোচন করা।

    এনআইএ অফিসাররা আনভারকে তার বাড়িতে অভিযান চালানোর ব্যাপারে আদালতের আদেশপত্র দেখায় এবং এক্ষেত্রে তার সহযোগিতা চায়। “আদেশপত্রে বলা হয়েছে যে, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার নিষেধাজ্ঞার মামলার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আমার বাড়ি তল্লাশি করা হবে। এই মামলাটি নিবন্ধ করেছিল এনআইএ কোচি অফিস। আর তারা আমাকে আদালতের আদেশপত্রে সাক্ষর করতে বলে,” বলছিলেন আনভার।

    এদিকে আনভারের স্ত্রীর হৃদয়ে উদ্রেক হয়েছে নানা চিন্তা। তার স্বামীকে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে, এই ভয় ছিল তার মনে। তার আশঙ্কা, স্বামীর মুক্তির জন্য তাকে অবিরাম অপেক্ষায় থাকতে হবে। নিষেধাজ্ঞার পর কেরালায় পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার বেশ কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    এই অভিযানে এনআইএ দলে ছিল তিনজন অফিসার, দুইজন সাক্ষী, একজন কেন্দ্রীয় আবগারি কর্মী এবং একজন কাস্টমস কর্মী। তারা আনভারের অফিস রুম, ডাইনিং রুম, তিনটি বেডরুম এবং বারান্দার মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়। অফিসাররা বাড়ির প্রতিটি কোণে কঠোরভাবে তল্লাশি চালায়।

    অ্যাডভোকেট তুষারের মতে, নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণে সাক্ষীকে হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য এবং এলাকায় পরিচিত ব্যক্তি। “কিন্তু এনআইএ পরিচালিত অধিকাংশ অভিযানেই সাক্ষীরা হয় প্রধানত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। দেখা যায়, তারা প্রথমবারের মতো ঐ এলাকা পরিদর্শন করছে।”

    তুষার বলেন, “এই সাক্ষীদের আনুগত্য থাকবে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি। এমনকি তথ্য-প্রমাণ পাচার অথবা নতুন তথ্য যোগ করার সম্ভাবনাও রয়েছে।”

    শেলফে রাখা বইগুলো উলটেপালটে দেখছিল এনআইএ অফিসার। এসময় তার চোখ আটকে যায় ‘জিহাদ’ শিরোনামের একটি বইয়ের উপর। বইটি লিখেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুসলিম আলেম আবুল আলা মওদুদি। “আপনি এমন বই পড়ছেন কেন?” আনভারকে জিজ্ঞেস করল অফিসার।

    “আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন না যে, আমি থাকাঝি শিব শঙ্কর পিলার উপন্যাস ‘কায়ারু’ এবং ভ্রুথা মঞ্জরি কেন পড়ি? আমার কাছে তো ঐ বইগুলোও আছে,” জবাব দিলেন আনভার।

    আনভারের অভিযোগ, অফিসাররা কেবল খুঁজে খুঁজে ইসলামি ধারার বইগুলো বাছাই করছিল। যেন আদালতে এগুলো উপস্থাপন করে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার নেতাদের ফাঁসাতে পারে।

    ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা হয়রানিমূলক অভিযান শেষ করে অফিসাররা যখন একগুচ্ছ বই ও স্মার্টফোন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, আনভার তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি দোষী কিছু পেয়েছেন? আপনি বই, মোবাইল নিচ্ছেন কেন?” “আমরা আর কী করতে পারি? আমরা খালি হাতে ফিরতে পারি না,” তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জবাব দেয়।

    উল্লেখ্য, পপুলার ফ্রন্টের নেতারা মুসলিম হওয়ায় হিন্দুত্ববাদীরা তাদেরকে এনকাউন্টারে হত্যা করতে এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছে। অনেক হিন্দু উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের শুরু করা বুলডোজার-নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। ইতঃপূর্বে দুই মাস আগে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। অথচ, এই সংগঠনটি উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর মতো কোনো ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াতো না।

    কেন তিনি এবং তার সংস্থাকে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের পক্ষ থেকে টার্গেট করা হচ্ছে জানতে চাইলে আনভার জবাব দেন, “একজন মুসলিম হওয়াটাই ভারতে আলাদা একটি অপরাধ। দিনের আলোতে মুসলিমদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া যাচ্ছে। মুসলিম জনসাধারণকে সংঘবদ্ধ করার যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র অপরাধ সাব্যস্ত করছে। মুসলিম সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্টরা অনলাইন এবং অফলাইন প্ল্যাটফর্মে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেবল মুসলিম নাম রাখার জন্য রাষ্ট্র নির্যাতন চালাচ্ছে।”


    প্রতিবেদক: উসামা মাহমুদ

    তথ্যসূত্র:
    ——–
    1.“Being a Muslim itself is a crime in present-day India”: Memoir of an NIA raid
    https://tinyurl.com/4t7c9uup
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X