ভারতে ‘ত্রিশূল দীক্ষার নামে অস্ত্র বিতরণ’, মুসলিম গণহত্যার একটি অশনি সংকেত
ভারতের বিভিন্ন স্থানে “ত্রিশূল বিতরণ” বা “ত্রিশূল দিক্ষার” নামে হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র বিতরণ করছে। নতুন বছর শুরু হওয়ার মাত্র ৪০ দিন অতিবাহিত হতে না হতেই এই বিষয়ে কমপক্ষে ৭টি স্থানের ঘটনা বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
উগ্র হিন্দুরা ত্রিশূলের নামে যা বিতরণ করে, সেটি মূলত ধারালো খঞ্জর। হিন্দুত্ববাদীরা কৌশলে তাদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এর মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে এই অস্ত্রগুলিকে ব্যবহার করে থাকে। এই ত্রিশূলগুলো অত্যন্ত সুচালো এবং মানুষ খুন করার মত হলেও নিষিদ্ধ অস্ত্রের চেয়ে এক সেন্টিমিটার ছোট; যা তাদের অস্ত্র আইনের অধীনে কোনো অপরাধের জন্য মামলা করা থেকে রক্ষা করে।
আইনের এই ফাঁকা গলিকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা ব্যাপকভাবে সাধারণ হিন্দুদের হাতে ত্রিশূল তুলে দিচ্ছে, যা দিয়ে অনায়েশে মানুষ খুন করা যায়।
এই ত্রিশূল দীক্ষা অনুষ্ঠানগুলিতে হিন্দুত্ববাদী বক্তাদের কাজই হল ঘৃণাত্মক ও গণহত্যার উস্কানিমূলক বক্তৃতা প্রদান করা। এসব বক্তারা কুখ্যাত অপরাধী বা শাসক দলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন এমপি বা বিধায়ক বা দলের রাজ্য প্রধান। অনেক সময় উপস্থিত হিন্দুদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার শপথও দেওয়া হয়।
চলতি বছরে সংগঠিত ত্রিশূল বিতরণ অনুষ্ঠানের কিছু বিবরণ তুলে ধরা হল:
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যাধরে, জয়পুর বজরং দল ১,১১০ উগ্র হিন্দু যুবকের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করেছে এবং সেই ত্রিশূল ধারণ করা সদস্যদের একটি ড্রোন শট ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে।
জয়পুরের অন্য একটি অনুষ্ঠানে, ৫ ফেব্রুয়ারী ভিএইচপি এবং বজরং দলের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে যেখানে প্রায় ৮০০ উগ্র হিন্দু যুবক তাদের হাতে ত্রিশূল নিয়ে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার শপথ নিচ্ছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দল হিন্দু সম্মেলন উদযাপনের এক দিন আগে, হিন্দু পুরুষদের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করেছিল, ইউপি বিধানসভার বর্তমান স্পিকার এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের কানপুর নগরে পুলিশের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান করা হয়।
গত জানুয়ারী মাসে, আরএসএস প্রচারক, ঈশ্বর লাল রাজস্থানের লোহওয়াতে অনুষ্ঠিত ত্রিশূল দীক্ষা অনুষ্ঠানে মুসলিম বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে ছিল। এই বক্তৃতার মাধ্যমে, উগ্র লাল মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়েছিল এবং ৩০,০০০মসজিদকে মন্দিরে রূপান্তর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
এমনিভাবে, মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে, ১০ জানুয়ারী, ভিএইচপি পুরুষদের পাশাপাশি ধর্ম রক্ষার জন্য অনুষ্ঠানে হিন্দু মহিলাদের মাঝেও ত্রিশূল বিতরণ করে। এবং এগুলো ব্যবহার করার জন্য শপথ করায়।
এদিকে,রাজস্থানের সিরোহিতে শ্রী শ্রী মহা মন্ডলেশ্বর স্বামী কুশলগিরিজি মহারাজের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষ,অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।
জানুয়ারির শুরুতে, উত্তরাখণ্ডের গদ্দারপুরে মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় প্রবীণ তোগাড়িয়া বলেছিল যে সে ২ কোটি হিন্দু যুবককে ত্রিশূল দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে চায়।
জয়পুর রাজস্থানের শাস্ত্রী নগর থেকে ২ জানুয়ারী একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে বজরং দলের সদস্যরা ত্রিশূল হাতে শত শত হিন্দুদের কাছে শপথ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। তারা হিন্দুদের, তাদের সংস্কৃতি এবং তাদের ধর্মকে রক্ষা করার শপথ নেয়। তারা হিন্দু ধর্ম রক্ষায় ত্রিশূল ব্যবহার করারও শপথ নেয়।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট প্রকাশ করেছিল, এ পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রকাশ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ ত্রিশূল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হিন্দুরা বিভিন্ন সময় অস্ত্রের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছে।
উগ্র হিন্দু ধর্মগুরু ও নেতাদের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তৃতা ও ত্রিশূল বিতরণের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় উগ্র হিন্দুরা মুসলিমদের উপর হামলা চালাচ্ছে। হতাহত করছে। যার পরিমাণ দিনকে দিন শুধু বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাসী দলগুলো হিন্দু যুবকদের অস্ত্র দিয়ে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করছে। এবং তাদের হিংস্র করে তুলছে। যা অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম গণহত্যায় রুপ নেওয়ার সতর্কবাণী দিয়েছেন বিশ্লেষকগণ।
‘ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’, ভারতের বাইরের একটি বিশিষ্ট মুসলিম সংস্থা- টুইট করে জানিয়েছে “রুয়ান্ডার গণহত্যার আগে, হুটুসদের মধ্যে একইভাবে টন টন ছুরি বিতরণ করা হয়েছিল।”
রুয়ান্ডা গণহত্যার পূর্বের অবস্থার উপর ভিত্তি করে সহজেই যে কেউ অনুমান করতে পারবে যে, উগ্র হিন্দুরা মুসলিম গণহত্যার লক্ষ্যেই ব্যাপকভাবে ত্রিশূল বিতরণ করছে। এটি মুসলিমদের জন্য নিঃসন্দেহে অনাগত ভবিষ্যতের অনিবার্য সংঘাতের একটি অশনি সংকেত।
তথ্যসূত্র:
1. ‘Trishul Diksha’ in poll bound Rajasthan, a matter of grave concern
– https://tinyurl.com/2p9mm272
2. Bajrang Dal provides ‘Trishul Diksha’ to 300 Hindu men in Jaipur
– https://tinyurl.com/2sxb86pe
video link: https://tinyurl.com/yckruycm
3. The Erasure: California Panel Claims Indian Muslims Face Impending Genocide
– https://tinyurl.com/2s468uew
4. Process of Genocide Already Underway in India: Experts at Global Summit
– https://tinyurl.com/yckjhvrc
5. RSS member calls for converting 30,000 mosques into temples
– https://tinyurl.com/5h72wczv
ভারতের বিভিন্ন স্থানে “ত্রিশূল বিতরণ” বা “ত্রিশূল দিক্ষার” নামে হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র বিতরণ করছে। নতুন বছর শুরু হওয়ার মাত্র ৪০ দিন অতিবাহিত হতে না হতেই এই বিষয়ে কমপক্ষে ৭টি স্থানের ঘটনা বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
উগ্র হিন্দুরা ত্রিশূলের নামে যা বিতরণ করে, সেটি মূলত ধারালো খঞ্জর। হিন্দুত্ববাদীরা কৌশলে তাদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এর মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে এই অস্ত্রগুলিকে ব্যবহার করে থাকে। এই ত্রিশূলগুলো অত্যন্ত সুচালো এবং মানুষ খুন করার মত হলেও নিষিদ্ধ অস্ত্রের চেয়ে এক সেন্টিমিটার ছোট; যা তাদের অস্ত্র আইনের অধীনে কোনো অপরাধের জন্য মামলা করা থেকে রক্ষা করে।
আইনের এই ফাঁকা গলিকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা ব্যাপকভাবে সাধারণ হিন্দুদের হাতে ত্রিশূল তুলে দিচ্ছে, যা দিয়ে অনায়েশে মানুষ খুন করা যায়।
এই ত্রিশূল দীক্ষা অনুষ্ঠানগুলিতে হিন্দুত্ববাদী বক্তাদের কাজই হল ঘৃণাত্মক ও গণহত্যার উস্কানিমূলক বক্তৃতা প্রদান করা। এসব বক্তারা কুখ্যাত অপরাধী বা শাসক দলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন এমপি বা বিধায়ক বা দলের রাজ্য প্রধান। অনেক সময় উপস্থিত হিন্দুদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার শপথও দেওয়া হয়।
চলতি বছরে সংগঠিত ত্রিশূল বিতরণ অনুষ্ঠানের কিছু বিবরণ তুলে ধরা হল:
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যাধরে, জয়পুর বজরং দল ১,১১০ উগ্র হিন্দু যুবকের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করেছে এবং সেই ত্রিশূল ধারণ করা সদস্যদের একটি ড্রোন শট ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে।
জয়পুরের অন্য একটি অনুষ্ঠানে, ৫ ফেব্রুয়ারী ভিএইচপি এবং বজরং দলের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে যেখানে প্রায় ৮০০ উগ্র হিন্দু যুবক তাদের হাতে ত্রিশূল নিয়ে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার শপথ নিচ্ছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দল হিন্দু সম্মেলন উদযাপনের এক দিন আগে, হিন্দু পুরুষদের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করেছিল, ইউপি বিধানসভার বর্তমান স্পিকার এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের কানপুর নগরে পুলিশের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান করা হয়।
গত জানুয়ারী মাসে, আরএসএস প্রচারক, ঈশ্বর লাল রাজস্থানের লোহওয়াতে অনুষ্ঠিত ত্রিশূল দীক্ষা অনুষ্ঠানে মুসলিম বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে ছিল। এই বক্তৃতার মাধ্যমে, উগ্র লাল মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়েছিল এবং ৩০,০০০মসজিদকে মন্দিরে রূপান্তর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
এমনিভাবে, মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে, ১০ জানুয়ারী, ভিএইচপি পুরুষদের পাশাপাশি ধর্ম রক্ষার জন্য অনুষ্ঠানে হিন্দু মহিলাদের মাঝেও ত্রিশূল বিতরণ করে। এবং এগুলো ব্যবহার করার জন্য শপথ করায়।
এদিকে,রাজস্থানের সিরোহিতে শ্রী শ্রী মহা মন্ডলেশ্বর স্বামী কুশলগিরিজি মহারাজের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ত্রিশূল বিতরণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষ,অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।
জানুয়ারির শুরুতে, উত্তরাখণ্ডের গদ্দারপুরে মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় প্রবীণ তোগাড়িয়া বলেছিল যে সে ২ কোটি হিন্দু যুবককে ত্রিশূল দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে চায়।
জয়পুর রাজস্থানের শাস্ত্রী নগর থেকে ২ জানুয়ারী একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে বজরং দলের সদস্যরা ত্রিশূল হাতে শত শত হিন্দুদের কাছে শপথ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। তারা হিন্দুদের, তাদের সংস্কৃতি এবং তাদের ধর্মকে রক্ষা করার শপথ নেয়। তারা হিন্দু ধর্ম রক্ষায় ত্রিশূল ব্যবহার করারও শপথ নেয়।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট প্রকাশ করেছিল, এ পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রকাশ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ ত্রিশূল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হিন্দুরা বিভিন্ন সময় অস্ত্রের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছে।
উগ্র হিন্দু ধর্মগুরু ও নেতাদের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তৃতা ও ত্রিশূল বিতরণের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় উগ্র হিন্দুরা মুসলিমদের উপর হামলা চালাচ্ছে। হতাহত করছে। যার পরিমাণ দিনকে দিন শুধু বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাসী দলগুলো হিন্দু যুবকদের অস্ত্র দিয়ে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করছে। এবং তাদের হিংস্র করে তুলছে। যা অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম গণহত্যায় রুপ নেওয়ার সতর্কবাণী দিয়েছেন বিশ্লেষকগণ।
‘ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’, ভারতের বাইরের একটি বিশিষ্ট মুসলিম সংস্থা- টুইট করে জানিয়েছে “রুয়ান্ডার গণহত্যার আগে, হুটুসদের মধ্যে একইভাবে টন টন ছুরি বিতরণ করা হয়েছিল।”
রুয়ান্ডা গণহত্যার পূর্বের অবস্থার উপর ভিত্তি করে সহজেই যে কেউ অনুমান করতে পারবে যে, উগ্র হিন্দুরা মুসলিম গণহত্যার লক্ষ্যেই ব্যাপকভাবে ত্রিশূল বিতরণ করছে। এটি মুসলিমদের জন্য নিঃসন্দেহে অনাগত ভবিষ্যতের অনিবার্য সংঘাতের একটি অশনি সংকেত।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
1. ‘Trishul Diksha’ in poll bound Rajasthan, a matter of grave concern
– https://tinyurl.com/2p9mm272
2. Bajrang Dal provides ‘Trishul Diksha’ to 300 Hindu men in Jaipur
– https://tinyurl.com/2sxb86pe
video link: https://tinyurl.com/yckruycm
3. The Erasure: California Panel Claims Indian Muslims Face Impending Genocide
– https://tinyurl.com/2s468uew
4. Process of Genocide Already Underway in India: Experts at Global Summit
– https://tinyurl.com/yckjhvrc
5. RSS member calls for converting 30,000 mosques into temples
– https://tinyurl.com/5h72wczv