সরকার নানা অজুহাতে জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও। খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। গত বছর জানুয়ারিতে যেখানে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট, সেখানে এ বছর জানুয়ারিতে প্রতিদিন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অথচ বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর ফলে সারা দেশ তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে।
এদিকে গ্রীষ্মকাল নিকটবর্তী। তীব্র গরমে মানুষের অবস্থা যেমন খারাপ থাকে, তেমনি ফসলের মাঠেও প্রয়োজন হয় পানির। আর দেশের অধিকাংশ জায়গায় পানি সেচ দিতে হয় মোটরের মাধ্যমে। এজন্য চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণের বিদ্যুৎ কি আছে দেশে? নেই; শীতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে কম, তখনও দৈনিক দেড়-দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি টানা লোডশেডিং করা হয়েছে। গ্রীষ্মে যে এই লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, বিশেষজ্ঞরা তা স্পষ্ট করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। কেননা, বর্তমানে ডলার সঙ্কটের কারণে কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লা সঙ্কটের কারণে এক মাস বন্ধ ছিল বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ কেন্দ্রে আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কয়লা আমদানি না করা গেলে এপ্রিলের পর ফের কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক নিজেই এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, এখন পাইপলাইনে যে কয়লা রয়েছে তা দিয়ে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালানো সম্ভব। এর মধ্যে এলসি জটিলতা না কাটলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে। ফলে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
এভাবে দেশে বর্তমান তীব্র ডলার সঙ্কটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। অনেক বেসরকারি কেন্দ্র জ্বালানি সঙ্কটের কারণে তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। জ্বালানি আমদানির জন্য এলসি খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়েছে তারা। কিন্তু আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে দেশের রিজার্ভের অবস্থা টালমাটাল। এ অবস্থায় জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এদিকে আবার বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নিয়মিত বিল দিতে পারছে না পিডিবি। গত আগস্ট থেকে বিল বকেয়া প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এতে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না বেসরকারি মালিকেরা। পেট্রোবাংলার কাছে পিডিবির গ্যাস বিল বকেয়া ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর চিন্তা করছে বলে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে। গত ১১ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধে। সামনে এই খরচ আরও বাড়বে। এ ছাড়া জ্বালানি খাতে আমলানির্ভরতাকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম ইনকিলাবকে বলেন, আমদানি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করাই হয়েছিল। মূল্যবৃদ্ধি করে সমাধান হবে না। এ খাতের মূল সমস্যা এখন ডলারের সংস্থান। এটি করা না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ থেকেই যাবে।
প্রতিবেদক : সাইফুল ইসলাম
তথ্যসূত্র:
১. চরম সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন
– https://tinyurl.com/bdf88sru