মাউশি ও অধীনস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৭ কোটি টাকার অনিয়ম
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৪ সরকারি কলেজ ও পাঁচটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ খাতে প্রায় ১৭ কোটি টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারি বিধিবিধান পরিপালন না করায় নানা অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
মাউশির হিসাব সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, মোট ৪৫ খাতে অনিয়ম হয়েছে ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৪ টাকার। তাই আপত্তিতে জড়িত অর্থ আদায়/সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে অডিট অফিস।
অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাউশির ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইনসিটু হিসেবে কর্মরত শিক্ষকদের প্রাপ্যতার অতিরিক্ত হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ায় সরকারের ৫৫ লাখ ৩ হাজার ২৬৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মাউশির অধীন সাতটি সরকারি কলেজের ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিভিন্ন সেশনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ভর্তি ও পুনঃভর্তি ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের ২ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৯ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ১৯টি সরকারি কলেজ ও একটি স্কুলের ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিপত্র বহির্ভূতভাবে এক খাতের অর্থ অন্য খাতে এবং খাতবিহীন ক্ষেত্রে অনিয়মিতভাবে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৮ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে খাতভিত্তিক আদায়কৃত অর্থ খাতের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বাইরে অনিয়মিতভাবে এফডিআর করায় অনিয়ম ৪ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৭২১ টাকা; ছাত্রসংসদ কার্যকরী না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার ৭০৯ টাকা; নন রেসপনসিভ দরদাতাকে রেসপনসিভ দেখিয়ে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ১ কোটি ৪১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৩ টাকা।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিপত্র বহির্ভূত খাতে এবং পরিপত্রের নির্ধারিত হার অপেক্ষা অতিরিক্ত হারে আদায় ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬৩ টাকা; সরবরাহকারীর অনুকূলে চেক/ক্রসড চেক ইস্যু না করে অধ্যক্ষ এবং অন্য ব্যক্তিদের অনুকূলে চেক ইস্যু করে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭১৪ টাকা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ না নিয়ে বাণিজ্যিক হিসেবে সংযোগ নেওয়ায় এবং অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জ দেওয়ায় ক্ষতি ২৬ লাখ ৬ হাজার ১৯০ টাকা; আরএফকিউ পদ্ধতিতে ক্রয়ের বার্ষিক সিলিং সীমা অতিক্রম করে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৭ টাকা।
নগদ ক্রয়ের নির্ধারিত সীমার ঊর্ধ্বে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান না করে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৭ টাকা; পরিপত্রবহির্ভূত অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার খাতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতি বিষয়/পত্রের জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় করায় আর্থিক ক্ষতি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩২০ টাকা; সাজানো মূল্য-সংবলিত কোটেশনের মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৩ টাকা।
পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন পূর্বক একক কাজকে একাধিক প্যাকেজে বিভক্ত করে খণ্ড খণ্ড ভাউচারের মাধ্যমে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অনিয়মিতভাবে নগদে ক্রয় ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা; প্রযোজ্য না হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ‘পরিবহন’ খাতে অনিয়মিতভাবে আদায় করা হয়েছে ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৯১০ টাকা; ক্রয়কৃত মালপত্র স্টক রেজিস্টারে এন্ট্রি না থাকায় সরকারের ক্ষতি ২৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৫ টাকা; বিভিন্ন কাজে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক গৃহীত অগ্রিম সমন্বয় করা হয়নি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৫ টাকা। কলেজের অভ্যন্তরে সরকারি স্থাপনায় বসবাসকারী এবং দোকানি ও হোস্টেল থেকে আদায়কৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিল আদায় করা সত্ত্বেও সরকারি কোষাগারে জমা না করায় ক্ষতি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৪১ টাকা।
মাউশির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম বলে, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। অডিট অফিস থেকে আমাদের জানানো হলে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দিয়ে খোঁজ নেব।
তথ্যসূত্র:
১. মাউশি ও অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে ১৭ কোটির অনিয়ম
– https://tinyurl.com/8jbwp3av