ঢাকায় শিগগিরই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। ২৯শে অক্টোবর মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে শারমিন মুরশিদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেছে। এই বিষয়ে তার বক্তব্য হলো, কার্যালয় হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। কিন্তু জাতিসংঘের এই মানবাধিকার পরিষদের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিষয়গুলো মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়? জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ কোন ধরনের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে?
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, একুশ শতকে তারা আদিবাসী, বয়স্কদের অধিকার এবং এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে কাজ করছে। অর্থাৎ, বিশ্বব্যাপী ট্রান্সজেন্ডার, সমকাম এবং এই ধরনের অন্যান্য সব বিকৃত মতবাদ প্রতিষ্ঠাকে তারা তাদের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বিশেষ কিছু বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। যেমন: লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যতা এবং লৈঙ্গিক পরিচয়, নারী শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং যৌন রোগ (যার অধিকাংশই বিকৃত যৌনাচারের ফলে দেখা দেয়), মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, নারীদের প্রতি সহিংসতা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা “ENDING VIOLENCE AND DISCRIMINATION AGAINST LESBIAN, GAY, BISEXUAL, TRANSGENDER AND INTERSEX PEOPLE” শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রচার করে। বিবৃতিতে তারা সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারসহ সব বিকৃত যৌনাচারকে সমর্থন জানিয়ে এদের দমনে আরোপ করা বিভিন্ন আইন বাতিলের নির্দেশনা দেয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ জনবিরোধী একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশে এসব বিকৃত যৌনাচারের বৈধতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপিত হলে এই দেশে সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার মতবাদসহ ইসলামবিরোধী পশ্চিমা মতবাদের প্রচার-প্রসার ব্যাপকতা লাভ করবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার আরেকটি ঘোষিত কর্মসূচি হলো আদিবাসী নিয়ে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন যাবৎ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তারা নিজেদের আদিবাসী দাবি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নিজেদের আলাদা দেশ প্রতিষ্ঠার কথাও বলছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এসব উগ্রবাদী গোষ্ঠী নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
এছাড়া, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর সব সময় দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। দাতা সংস্থাগুলো এই সংস্থাকে যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়নে প্রভাব সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কোনো দেশের কোনো নীতি যখন দাতা দেশগুলোর বিপক্ষে যায়, তখন তারা মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এই কার্যালয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে এই কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ হবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়ার। বাংলাদেশ নিজ স্বার্থের বদলে তখন বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য হবে।
এতসব ভয়ানক বিষয় সামনে থাকলেও বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলে, একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটা কার্যালয় চালু হবে।
তার কথায় বুঝা যাচ্ছে যে, এটা যেন খুবই খুশির খবর, বড় বিজয়ের খবর। অথচ এই উপমহাদেশেরই কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। বিশেষত শ্রীলংকা ও নেপাল বহু চাপের মুখেও তাদের দেশে মানবাধিকার কমিশনের কান্ট্রি অফিস খুলতে দেয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় রয়েছে বিশ্বের মাত্র ১৭টি দেশে। প্রধানত দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধে ভঙ্গুর, যেমন- বুরকিনো ফাসো, কম্বোডিয়া, চাঁদ, গুয়াতে-মালা, গায়েনা, সাইবেরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি, দেশগুলোতে মানবাধিকার কমিশনের কান্ট্রি অফিস রয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশে জাতিগত কোনো সংঘাত হয়নি। বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ অথবা ভঙ্গুর নিরাপত্তা অবস্থাও নেই। তবুও এখানে মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করতে দেওয়ার মানে হলো, বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধে পতিত ভঙ্গুর নিরাপত্তার দেশ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া। যেটা উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদরা স্বীকার করতে চাইবে না। তবে কেন তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় খোলার প্রস্তাব দেওয়ার সাথে সাথেই তা সাদরে গ্রহণ করে নিলো?! বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান একটি কারণ হিসেবে দেখছেন, বাংলাদেশে সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারসহ ইসলাবিরোধী বিভিন্ন পশ্চিমা মতবাদ প্রচার, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া। আর এটা সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের মানুষের মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা এবং দেশের স্বার্থবিরোধী একটি সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা।
তথ্যসূত্র:
১. Brief history of UN Human Rights
– https://tinyurl.com/mryxjaaj
২. ENDING VIOLENCE AND DISCRIMINATION AGAINST LESBIAN, GAY, BISEXUAL, TRANSGENDER AND INTERSEX PEOPLE
– https://tinyurl.com/s9shuzea
৩. ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খুলতে চায় জাতিসংঘ
– https://tinyurl.com/yc2m3xkz
৪. Where we work
– https://tinyurl.com/378a8dxt