Announcement

Collapse
No announcement yet.

আসিফা বানু এবং হিন্দুত্ববাদের আসল চেহারা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আসিফা বানু এবং হিন্দুত্ববাদের আসল চেহারা

    হিমালয়ান পর্বতমালায় বকরি পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে যাযাবর এক মুসলিম সম্প্রদায়। সে সূত্রে এই সম্প্রদায়ের নাম হয়ে উঠে 'বকরিওয়াল'। তারা বকরি, মেষ এবং অন্য পশুর পাল নিয়ে গ্রীষ্মকালে পাহাড়ে আর শীতকালে থাকে সমতলে। জুম্মু ও কাশ্মীরের তফসিলি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এরাই সংখ্যায় সবচাইতে বেশি। সে রকম কয়েকটি বকরিওয়াল পরিবার কাঠুয়ার রাসানা গ্রামে আশ্রয় নিয়ে ১০/১২ শীত আগে বসতি স্থাপন করে। এখানকার দোগরা সম্প্রদায়ের হিন্দুরা সেটা মেনে নিতে পারছিল না। দোগরারা রাজপুত, ভারতীয় সেনবাহিনীতে দোগরাদের জন্য আলাদা রেজিমেন্ট আছে।

    এই বসতি গড়া পরিবারগুলোর মধ্যে একটি মোহাম্মদ ইউসুফ এবং নাসীমা বিবির। তাদের দুজন কন্যা ছিল। দুজনেই মর্মান্তিক এক দূর্ঘটনায় মারা যায়। কন্যা শোক ভুলতে নাসীমা বিবি তার বোনের দু'বছর বয়সী মেয়েকে দত্তক নেন। নাম দেন আসিফা। আসিফা অর্থ করুণাময়ী।



    আসিফার জন্ম হয়েছিল ২০১০ সালে। আসিফার খালা, যার কোলে পিঠে সে বড়ো হয়েছে, তাঁর ভাষায়, 'আসিফা ছিল গানের পাখির মত, আর দৌড়াদৌড়ির সময় মনে হত যেন হরিণের বাচ্চা।'দেখতে দেখতে আসিফার বয়স হয় আট বছর। দোগরা হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের এই ছোট্ট পাড়াটির দূরত্ব বাড়তে থাকে। জুম্মুর হিন্দুদের ধারণা কাশ্মীরি মুসলমানরা তাদের জায়গার ডেমোগ্রাফি চেঞ্জ করছে। 'অপবিত্র' করে ফেলছে। তাই বকরওয়াল মুসলিমদের ভয় দেখাতে পরিকল্পনা আঁটে স্থানীয় মন্দিরের সেবায়েত এবং সরকারের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা সঞ্জি রাম। সঙ্গে ছিল স্পেশাল পুলিশ অফিসার দীপক খাজুরিয়া, এবং সঞ্জিলালের ভাতিজা।

    আসিফা গ্রামের অন্য মেয়েদের মত নিজের পরিবারের কাজে সাহায্য করত। ঘোড়া, ছাগল মাঝেমধ্যে চড়াতে নিয়ে যেত। ১০ জানুয়ারি বিকেলে আসিফাদের ঘোড়া বাড়ি না ফিরলে ঘোড়া খুঁজতে বের হয় আসিফা। এই সুযোগে সঞ্জি রামের বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে আট বছরের আসিফাকে চেতনানাশক দিয়ে বেহুঁশ করে সঞ্জিলালের ভাতিজা এবং তার বন্ধু মন্নু। বেহুঁশ রক্তাক্ত আসিফাকে নিয়ে মন্দিরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ঘোড়া ঘরে ফিরলেও সেদিন আসিফা আর ঘরে ফেরে নি। আসিফার পরিবার হন্নে হয়ে খুঁজতে থাকে। সাঞ্জিরামের কাছেও গিয়ে খোঁজ করে তারা। সাঞ্জি রামের ছেলে বিশাল মীরাট থেকে বাড়ি আসে। এরপর দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্দিরেই আসিফাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে সঞ্জিলাল, তার পুত্র বিশাল, তার ভাতিজা, ভাতিজার বন্ধু মন্নু।

    সন্ধ্যায় সাঞ্জিরাম পুলিশ কর্মকর্তা দীপককে ডেকে আসিফাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। দীপক শিশুটিকে মেরে ফেলার আগে আবারও একবার ধর্ষণ করতে চায় আসিফাকে। সে এবং সাঞ্জি রামের ভাতিজা আবারও ধর্ষণ করে নিথর আসিফাকে। পুলিশ কর্মকর্তা দীপক তাঁরই গলার উড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসিফাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাঞ্জি রামের ভাতিজা পাথর দিয়ে আসিফার মাথা থেতলে দেয়। পরে ধর্ষিত, নিহত, রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত আসিফাকে ফেলে রেখে যায় জঙ্গলে।

    নিখোঁজ হবার পর আসিফার পরিবার যখন স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যায় তখন পুলিশ আট বছরের আসিফাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে হাসতে হাসতে বলে 'কোনও ছেলের সাথে পালিয়েছে'। আসিফার লাশ দাফন করতে গেলে 'মুসলিম লাশ দিয়ে মাটি দূষিত করা যাবে না বলে' স্থানীয় দোগরা হিন্দুরা আসিফার লাশটিও দাফন করতে বাঁধা দেয়। পুলিশ মামলার আলামত ধ্বংসে তৎপর হয়ে উঠে। মামলার আইও আনন্দ দত্ত আসিফার জামা ধুয়ে তাতে লেগে থাকা রক্ত , বীর্য এবং অন্যান্য ফরেনসিক প্রমাণ ধ্বংস করে।

    এই নৃশংসতার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সৃষ্ট চাপের মুখে যখন তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছিলো তখনও ক্ষমতাসীন বিজেপির বহু নেতাকর্মী বিভিন্ন স্থানে ধর্ষকদের পক্ষে মিছিল মিটিং, বিবৃতি ও তৎপরতা চালায়। এমনকি বিজেপির মন্ত্রী এমপিরাও এতে যোগ দেয়। জুম্মুর হিন্দু আইনজীবীরা আদালতের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে যাতে আসিফার ধর্ষকদের বিপক্ষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে না পারে।
    মামলা স্থানান্তর হয় পাঠানকোটে। একশোরও বেশি শুনানির পর রায় ঘোষণা হয়। আইনে মৃত্যদণ্ডের সুযোগ থাকলেও আদালত সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদান না করে তিনজনকে যাবজ্জীবন, অপর তিনজনকে মাত্র পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

    সাঞ্জি রামের ভাতিজার বয়স আঠারো পূর্ণ না হওয়ায় তাকে আলাদাভাবে জুবেনাইল কোর্টে বিচারের জন্য বলা হয়। তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী সাঞ্জি রামের পুত্র বিশালকে ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা সাক্ষ্য দিলেও, মীরাটে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সে বাসার মালিকের সাফাইসাক্ষীতে আদালত তাকে মুক্তি দেয়। পিতা-পুত্র মিলে এক মুসলিম শিশুকে ধর্ষণের ঘটনাকে স্বীকার করে নিলে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের যে চেহারা ডকুমেন্টেড হয়- সে লজ্জা থেকে মুক্তি দিতেই সেশন জাজ তেজিন্দার সিং তার জুডিশিয়াল ডিসক্রেশনের এই মিসইউজ করেন।

    আসিফার বাবা বলছিলেন, আমার মেয়েটার দুধদাঁতগুলোও পড়ে সারে নি। ৮ বছরের আসিফা সেদিন বেগুনি জামা পরে ঘর থেকে বেরিয়েছিল। গেরুয়া ভারতে আসিফার মত বেগুনি জামা পরা কোনও মুসলমানের স্থান কতখানি- সেটা গুজরাটের বিলকিস বানু আর কাশ্মীরের আসিফাদের ঘটনা অনেকখানি স্পষ্ট করে দেয়।

    সাঞ্জি রামেরা কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হয়েছিলেন। এতকিছুর পরও আসিফাকে যে সেখানে কবর দিতে দেওয়া হয় নি। শুধু তাই নয়, আসিফার পরিবারকে সে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল, আসিফার মত আরও অনেক মুসলিম পরিবারকেও। ধর্ষণ, ভারত, সংখ্যালঘু প্রতিটা শব্দেই আসিফা লেগে আছে, বিলকিস বানু লেগে আছে। সেটাও আমাদের স্মৃতিতে থাকুক। এই জানুয়ারিতে আসিফা বানুর মৃত্যুর ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। আসিফা বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ১৫ বছর।​

    সংগৃহীত

  • #2
    এ বিষয়টি সামনে আসলে হৃদয় বেদনায় নীল হয়ে যায়...তাও উম্মাহর সামনে আসা দরকার।
    আল্লাহ আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করে দিন। আমীন
    জাযাকাল্লাহ ভাই Sabbir Ahmed

    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X