মালিতে মার্কিন হস্তক্ষেপ: কৌশল পরিবর্তন করে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিন

মার্কিন প্রশাসন মালিতে আল-কায়েদা শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিনের (জেএনআইএম) উত্থান মোকাবেলায় নতুন করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্য রাশিয়া-সমর্থিত জান্তার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তিনজন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে মার্কিন প্রশাসন মালির সেনাবাহিনীর সাথে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বৃদ্ধি করেছে। যার ধারাবাহিকতায় মালির সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি জান্তার সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টার অংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে কথা বলার সময় একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে: আমরা বিশ্বাস করি যে জান্তা কীভাবে ক্ষমতায় এসেছেন তা বিচার করার জায়গা আমাদের নয়। এখন মূল বিষয় হচ্ছে: যদি জান্তা ক্ষমতায় থাকে, তাহলে আমরাও, নয়তো উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।”
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) পশ্চিম আফ্রিকায় তার আধিপত্য বিস্তার করছে। দলটি মালির সরকারকে আলোচনায় বসতে চাপ দিচ্ছে এবং রাজধানীকে অবরোধ করতে দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কৌশল পরিবর্তন করে নতুন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে ‘জেএনআইএম’ রাজধানীর দিকে যাওয়া প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো অবরোধ করতে শুরু করেছে, যার ধারাবাহিকতায় রাজধানী বামাকোর পর দেশটির দ্বিতীয় অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত কায়েস অবরোধ করেছে। এমনিভাবে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে আসা সমস্ত সরবরাহ কনভয় আটকে দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে গিনি সীমান্ত ও মৌরিতানিয়া থেকে আসা সরবরাহ কনভয়গুলো ‘জেএনআইএম’ এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে হামলার শিকার হচ্ছে। ফলে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দুটি অঞ্চলে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদদের হামলার শিকার হয়েছে ৪টি সরবরাহ কনভয়, আর আদেশ অমান্য করায় ধ্বংস করা হয়েছে ৮০টিরও বেশি সরবরাহ যান।
মালিতে যখন একের পর এক শহর ও সামরিক ঘাঁটিগুলো মুজাহিদদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তখন ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ “সন্ত্রাসবিরোধী” সহযোগী রুডলফ এবং আফ্রিকান বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম গত জুলাই মাসে মালির রাজধানী বামাকোতে জান্তা কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে। রুডলফ জানিয়েছিল যে, মালি যদি অংশীদার হতে ইচ্ছুক হয়, তবে মার্কিন প্রশাসন “চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মালিকে সহায়তা করবে”।
রুডলফ বৈঠকে তার প্রতিপক্ষদের আরও বলেছিল যে, যদি মালির সরকার চায়, তবে “গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি থেকে শুরু করে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম এবং মালির বাহিনীর প্রশিক্ষণ পর্যন্ত সবকিছুই টেবিলে থাকবে।”
এই বৈঠকের পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে মালি সরকারের সাথে তথ্য ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে “আরও বেশি স্বাধীনতা” দেওয়া হয়েছে। মালির অন্তর্বর্তীকালীন জান্তা সরকারের সদস্য মুসা আগ আচারাতুমানে বলেছে যে “আমেরিকান কর্মকর্তারা মালির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে” এবং “রাশিয়ার সাথে দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।” এসময় জেএনআইএম’ এর কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করে যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে যে, আমাদের শত্রু একই।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং সাহেল অঞ্চলের জান্তার সামরিক জোটের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা স্বত্বেও সম্প্রতি মালিতে লড়াই তীব্রতর করেছে ‘জেএনআইএম’। মালির উত্তরাঞ্চল কার্যত জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে মনোনিবেশ করেছে আল-কায়েদা। আর তারই ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা রাজধানীকে অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল করার পাশাপাশি চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরার কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন।
তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/ysy7uy5z