আশ-শাবাবের মোগাদিশু অবরোধ: পতনের দ্বারপ্রান্ত সোমালিয়ার সরকার
মূল: রায়ান হাইট
অনুবাদ: মুনশি আব্দুর রহমান
অনুবাদ: মুনশি আব্দুর রহমান

(আমেরিকান লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্লগার এবং ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা রায়ান জে. হাইট “দ্য সিজ অফ মোগাদিশু: আল-শাবাব, কল্যাপ্স, অ্যান্ড দ্য ফিউচার অফ সোমালিয়া” শিরোনামের প্রবন্ধটি ২০২৫ সালের ২৮ মে তারিখে তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। এই প্রবন্ধে তিনি আল-শাবাবের উত্থান, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর অবরোধ, এবং এর ফলে পূর্ব আফ্রিকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
যদিও লেখক একজন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী ও ইসলাম-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী, তবু তাঁর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা সোমালিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতা, মুসলিম প্রতিরোধের প্রেক্ষাপট, এবং ইসলাম ও মুসলিম-বিরোধী কাফির ও মুনাফিক চক্রগুলোর অপতৎপরতা সম্পর্কে কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি—ইনশা আল্লাহ।
আশা করি, এই প্রবন্ধটি পাঠকদেরকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আরও সচেতন ও সতর্ক করে তুলবে—ইনশা আল্লাহ। — অনুবাদক)
বিশ্বজুড়ে যখন সংকটের মেঘ ঘনিয়ে আসছে একের পর এক, তখনো এমন কিছু সংকট আছে—যেগুলো ভয়াবহ হলেও যেন অদৃশ্য, আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে। আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের দেশ সোমালিয়ার বর্তমান দুর্যোগ এমনই এক নিঃশব্দ অথচ বিপজ্জনক বাস্তবতা। বহুদিন ধরে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত এই দেশটি আজ আরেকবার পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে—এক ভয়াবহ গহ্বরের কিনারায়, এটি এমন এক অবস্থা যা ১৯৯০-এর দশকের বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের পর আর কখনো দেখা যায়নি।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে দৃশ্যপট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জিহাদি সংগঠন আশ-শাবাব কেবল ফিরে আসেনি—বরং তারা এখন বিজয়ের পথে।
গত কয়েক মাস ধরে আশ-শাবাব দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সুসমন্বিত সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে—রাজধানী মোগাদিশুকে ঘিরে ফেলা, অস্থির করে তোলা এবং এক পর্যায়ে দখল করে নেওয়া। যদি নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে তারা এই লক্ষ্য পূরণেও সফল হতে পারে।
স্বাগত জানাই মোগাদিশুর অবরোধে—এটি কেবল সোমালিয়ার জন্য একটি বাঁক মোড় নয়, বরং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়েও এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ।
দীর্ঘকালব্যাপী ভাঙনের ইতিহাস
আজকের ভয়াবহ বাস্তবতাকে বুঝতে হলে, প্রথমেই মেনে নিতে হবে একটি নির্মম সত্য—সোমালিয়া বহু দশক ধরে ভেঙে পড়া এক রাষ্ট্র। কেন্দ্রীয় সরকার নিজ ভূখণ্ডের সামান্য কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি অঞ্চলগুলো কার্যত চলে যায় স্বশাসিত এলাকাগুলোর অধীনে—যেমন সোমালিল্যান্ড ও পন্টল্যান্ড, কিংবা স্থানীয় গোত্র এবং সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত ও ভয়ঙ্কর শক্তি হলো আশ-শাবাব।
রাষ্ট্রীয় কাঠামো বলতে কিছু নেই বললেই চলে। ১৯৬০-এর দশকের পর দেশজুড়ে কখনোই পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে তারা অসাড়। বিচারব্যবস্থা অসহায়। দুর্নীতি এখানে শুধু ছড়িয়ে পড়েনি, বরং সমাজে স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৪ সালের দুর্নীতির সূচকে সোমালিয়ার অবস্থান ছিল বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়।
ফ্রিডম হাউস দেশের গণতন্ত্র সূচকে তাদের স্কোর দিয়েছে মাত্র ১০০-এর মধ্যে ৮!
দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই বহুস্তর বিশিষ্ট দারিদ্র্যের শিকার—যাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, বাসস্থান বা চিকিৎসাসেবা কোনো কিছুরই নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা নেই। আর রাষ্ট্রের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না থাকায়, প্রতিটি সংকটই সেখানে টিকে থাকার লড়াইয়ে রূপ নেয়।
আশ-শাবাবের উত্থান ও রূপান্তর
২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা আশ-শাবাবের প্রাথমিক পরিচয় ছিল একটি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন—যারা ইথিওপিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তারা রূপান্তরিত হয় এক সশস্ত্র জিহাদি আন্দোলনে, যারা আল-কায়েদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০১০-এর দশকের শুরুতে তারা দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়ার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো।
২০২২ সালের শেষ দিকে আফ্রিকান ইউনিয়নের সহায়তা ও মার্কিন ড্রোন হামলার পৃষ্ঠপোষকতায় সোমালি সরকার এক বড় ধরনের পাল্টা অভিযান শুরু করে। কৌশল ছিল দুইধরনের বাহিনীর সমন্বয়ে—প্রথমে প্রশিক্ষিত বিশেষ সেনারা অভিযান চালিয়ে এলাকা দখলে আনবে, এরপর সেই অঞ্চল ধরে রাখবে কম প্রশিক্ষিত, দুর্বল অস্ত্রধারী সরকারি সৈন্যরা।
এই অভিযানে কিছুটা সাফল্য মিলেছিল। মোগাদিশু হারানো ভূমি ফিরে পেতে শুরু করে।
কিন্তু এই পদ্ধতির একটি বড় দুর্বলতা ছিল—এর স্থায়িত্ব নির্ভর করছিল বাহ্যিক শক্তি এবং অব্যাহত সাফল্যের ধারাবাহিকতার ওপর। আর এই কাঠামোর ভেতরে ছিল না কোনো গভীর ভিত্তি।
২০২৫-এর পাল্টা আঘাত: আশ-শাবাবের প্রত্যাবর্তন
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভেঙে পড়ে সরকারের দুর্বল কৌশল। সেই মুহূর্তেই আশ-শাবাব চালিয়ে দেয় এক ঝড়ের গতির অভিযান—তারা টার্গেট করে গ্রামীণ চৌকি, আর সোমালি বাহিনীর দখলে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যবর্তী দুর্বল স্থানগুলোকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ করে আক্রমণ করা, গাড়িবোমা, অবরোধ—এই সব কিছুর সমন্বয়ে তারা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে সরকারি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুধু গ্রামের দখল নয়—তারা সামরিক ঘাঁটি দখল করে, মরিয়া করে তোলে সরকারি বিশেষ বাহিনীকে, আর দখল করে নেয় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে যখন দেখা যায়—সংখ্যায় কম হলেও আশ-শাবাবের ক্ষুদ্র ইউনিটগুলো পরাস্ত করছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি সেনাবাহিনীকে। মানসিক যুদ্ধ, পালিয়ে যাওয়া, মনোবলের পতন—এসব একত্রে সাময়িক বিপর্যয়কে পরিণত করে সম্পূর্ণ পরাজয়ে।
আদান ইয়াবালের পতন: এক মোড় ঘোরানো ঘটনা
এই পর্বের চূড়ান্ত মুহূর্ত আসে ১৬ এপ্রিল। সেদিন আশ-শাবাব কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আদান ইয়াবাল এবং তার আশপাশের ১০টি সামরিক ঘাঁটি দখল করে। সরকারি বাহিনী—যাদের সংখ্যা ছিল ২৫০০-এর বেশি—ধসে পড়ে মাত্র ১০০ জন মুজাহিদের আক্রমণের মুখে। ওই দিনই তারা কবজা করে আবুর নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রসদ কেন্দ্রে, যার ফলে মোগাদিশুর দুর্বল সংযোগব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ে।
এখন মোগাদিশু ঘিরে ফেলা হয়েছে চারদিক থেকে।
ভয়ের কৌশল: আশ-শাবাবের অবরোধনীতি
সরাসরি সর্বাত্মক হামলা না চালিয়ে, আল-শাবাব বেছে নিয়েছে ধীর ও গভীর কৌশল। তারা লাগাতার আতঙ্ক সৃষ্টি করছে—মর্টার হামলা, আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, নাশকতা—এইসব চালিয়ে রসদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করছে এবং ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
এটা কেবল শরীর ও অস্ত্রের যুদ্ধ নয়—এ এক স্নায়ুর লড়াই। আর এখানেই আশ-শাবাবের শক্তি। ত্রাস সৃষ্টি তাদের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। তারা শহরের বাইরের দেয়াল ভাঙার আগে ভেতরের ভিত নাড়িয়ে দিতে চায়।
মোগাদিশু ইতোমধ্যেই ভাঙতে শুরু করেছে। আত্মঘাতী বোমা হামলা লক্ষ্য করছে সেনা নিয়োগকেন্দ্র ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে। মর্টারের গোলা পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ পাড়াগুলোতে। রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর হামলার শিকার হয়েছে। এখন আর শুধু সাধারণ সেনাদের খোঁজে নয়—আশ-শাবাব নিশানা করেছে পুরো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতীকগুলোকে।
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একটি সরকার
সোমালির সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই দুর্নীতি ও অর্থাভাবের কারণে ভেঙে পড়ার মুখে। যেসব ঝটিকা বাহিনী শহর পুনর্দখল করে নিচ্ছে, তারাও জায়গা ধরে রাখতে পারছে না। নিয়মিত সৈন্যরা দলবেঁধে পলায়ন করছে। গোটা গোটা পুলিশ ইউনিট যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে—সম্ভবত তারা পক্ষত্যাগ করেছে। এমনকি পলায়নকারীদের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েও এই ঢেউ থামানো যাচ্ছে না।
এই অবরোধ মোগাদিশুর রক্ষীদের মনোবলে ভয়াবহ ধস নামিয়েছে। সহযোদ্ধারা পালিয়ে যাচ্ছে, সরকার হারাচ্ছে আত্মবিশ্বাস—এই বাস্তবতায় অনেক সৈন্য যুদ্ধ নয়, পলায়নের পথই বেছে নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা ও বিশৃঙ্খলা
বিশ্বশক্তিগুলো পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছে—কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়া অবিশ্বাস্য রকম দুর্বল। আফ্রিকান ইউনিয়নের ‘স্থিতিশীলতা অর্জনের মিশন’ অর্থের অভাবে স্থবির ও প্রশাসনিক জটিলতায় জর্জরিত। তুরস্ক তার সৈন্য সংখ্যা তিনগুণ করার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু তাতে সময় লাগবে। আমেরিকা আবার আকাশপথে হামলা শুরু করেছে, কিন্তু এই হামলা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া অগ্নিকাণ্ডের ওপর ক্ষুদ্র ফোঁটা জল মাত্র।
অন্যদিকে, যে দেশগুলো সহায়তা করতে পারত—যেমন কেনিয়া, ইথিওপিয়া, কিংবা আমিরাত—তারাও আল-শাবাবের আক্রমণের শিকার হয়েছে। কেউই আর একটি ‘কাবুল অধ্যায়’-এর মধ্যে পা রাখতে চায় না।
এবার কী হতে পারে: তিনটি সম্ভাব্য পথ
১. আশ-শাবাব মোগাদিশু দখল করে নেয়
সরাসরি আক্রমণ ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চিত। সোমালিয়ার এলিট বাহিনী ও বিদেশি বিমান সহায়তা এখনো প্রবল ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। শহুরে যুদ্ধ জটিল, নির্মম। তবে যদি মোগাদিশু ভেতর থেকেই ধসে পড়ে, তাহলে শেষ ধাক্কাটি যতটা কঠিন ভাবা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক সহজ হয়ে যেতে পারে।
২. অবরোধ দীর্ঘায়িত হয়
সবচেয়ে সম্ভাব্য পথ এটিই। ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে, লাগাতার সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে আশ-শাবাব শহরটিকে শাসন অযোগ্য করে তুলবে। সময়, চাপ, আর অব্যাহত দুর্বলতার মধ্যে দিয়ে শহরটি নিজেই একসময় ভেঙে পড়বে—ফলে আশ-শাবাবের প্রবেশের দরজা খুলে যাবে।
৩. শেষ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ
এর জন্য দরকার প্রচণ্ড রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিপুল মানবসম্পদ ও ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা। একটি আন্তর্জাতিক জোট অবরোধ ভেঙে রাজধানীকে স্থিতিশীল করে পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউই সেই নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত নয়। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
তবে কি একটি খেলাফত ঘনিয়ে আসছে?
আশ-শাবাব যে ধরণের খেলাফতের স্বপ্ন দেখছে, তা শুনলেই গা শিউরে ওঠে—একটি জিহাদভিত্তিক খেলাফত যা সোমালিয়া পেরিয়ে গোটা পূর্ব আফ্রিকায় বিস্তৃত হবে। মোগাদিশু যখন চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে, আর কেন্দ্র সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তখন সেই ভয়াবহ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনাটি আগের চেয়ে অনেক বেশি কাছাকাছি মনে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে আশ-শাবাব দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অবরোধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই তারা জনগণের চোখে বৈধতা পাচ্ছে এবং তাদের অভিযান আরও গতি পাচ্ছে। বিশ্বের নীরবতা শিগগিরই আশ-শাবাবের পক্ষে এক ধরনের সহযোগিতায় পরিণত হতে পারে।
চূড়ান্ত ভাবনা: ভাঙনের কিনারে এক রাষ্ট্র
আমরা যা দেখছি, তা একটি রাষ্ট্রের ধীর, ব্যথাতুর মৃত্যুপ্রক্রিয়া। রাজধানী শহর মোগাদিশু ঘেরাও হয়ে আছে। সরকারি বাহিনী পিছিয়ে পড়ছে। আর বৈশ্বিক জিহাদের শক্তিগুলো একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসই পূর্ব আফ্রিকার ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। যদি মোগাদিশুর পতন ঘটে, তাহলে আশ-শাবাব কার্যত পুরো সোমালিয়ার শাসক হয়ে উঠবে। আর যদি শহরটি টিকে থাকে, তাহলে সেটিই হতে পারে নতুন করে দেশ পুনর্গঠনের এক আন্তর্জাতিক ঐক্যপ্রয়াসের কেন্দ্রবিন্দু।
কিন্তু সময় সোমালিয়ার পক্ষে নয়। আর আল-শাবাব তা খুব ভালো করেই জানে।
মোগাদিশুর অবরোধ সম্পর্কে কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর-
এক. আশ-শাবাব কারা? তারা মোগাদিশুতে হামলা চালাচ্ছে কেন?
আশ-শাবাব একটি জিহাদি বিদ্রোহী সংগঠন, যারা আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত। তাদের লক্ষ্য হলো সোমালিয়ার বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে একটি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মোগাদিশুকে তারা বেছে নিয়েছে প্রতীকী ও কৌশলগত দিক থেকে, কারণ এটি সোমালিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক কেন্দ্রবিন্দু।
দুই. মোগাদিশু কেন এতটা অসহায়?
সোমালি সরকার একদিকে যেমন দুর্বল, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি, পালিয়ে যাওয়া সৈনিক এবং মনোবলের অভাব। বিপরীতে, আশ-শাবাব দখলকৃত অঞ্চল ও অস্ত্রের মাধ্যমে ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
তিন. মোগাদিশু কি শিগগিরই পতনের মুখে?
তা এখনো নয়। তবে শহরটি কার্যত অবরুদ্ধ। আশ-শাবাব সরাসরি আক্রমণের পথে না গিয়ে ধীরে ধীরে আতঙ্ক সৃষ্টি ও শক্তি ক্ষয়ের কৌশল অনুসরণ করছে—অন্তত এই মুহূর্তে।
চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী করছে?
সত্যি বলতে, খুব কম কিছু। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র কিছু সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং মাঝেমধ্যে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সম্মিলিত বা ব্যাপক আন্তর্জাতিক সহায়তা কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না।
পাঁচ. এটা কি পূর্ব আফ্রিকাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে?
নিঃসন্দেহে। যদি মোগাদিশু পতন ঘটে, তা হবে গোটা অঞ্চলে জিহাদি শক্তির পুনরুত্থানের সংকেত। এতে ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং আশেপাশের দেশগুলো হুমকির মুখে পড়বে।
*****
Comment