Announcement

Collapse
No announcement yet.

রেড ফোর্ট হামলা : একটি ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রেড ফোর্ট হামলা : একটি ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ

    রেডফোর্টহামলা
    ...
    ...
    ২৫ সালের ১০ নভেম্বর, সোমবার, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ঐতিহাসিক লাল কেল্লার (Red Fort) সন্নিকটে একটি ভয়াবহ গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ০৬:৫২ ঘটিকায় লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেট নং ১ এর কাছে এই বিস্ফোরণটি সংঘটিত হয়। এটি প্রাথমিকভাবে একটি গাড়িবোমা (Car Bombing) হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়, যাতে হুন্ডাই আই২০ (Hyundai i20) মডেলের একটি গাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় এবং আশেপাশের বেশ কয়টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। [1]

    ​প্রাথমিক রিপোর্টগুলি অনুযায়ী, ঘটনাটিতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের সংখ্যায় তারতম্য দেখা যায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ৯ জন থেকে শুরু করে ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর দেয় এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে । ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দিল্লি পুলিশ অনতিবিলম্বে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act, 1967) এর অধীনে এফআইআর দায়ের করে।[2] পরবর্তীতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) ঘটনাটির তদন্তভার গ্রহণ করে [3] এবং ১২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে ভারত সরকার মন্ত্রিসভার রেজোলিউশনের মাধ্যমে এটিকে 'ঘৃণ্য সন্ত্রাসবাদী ঘটনা' ('Heinous Terror Incident') হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। [4]

    ​সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) দিল্লি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের সূত্র ধরে জানায় যে এই বিস্ফোরণটি একটি 'ফিদায়ীন' হামলা হতে পারে। ভারতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই ধারণা করেন যে সন্দেহভাজন হামলাকারী সম্ভবত ফরিদাবাদ মডিউলটি ফাঁস হওয়ার খবর জানতে পেরেই তড়িঘড়ি হামলাটি কার্যকর করার চেষ্টা করে। [5]

    ​ঘটনাটির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার পর, ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (FSL) দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে বিস্ফোরিত গাড়ির চালক ছিলেন ড. উমর উন নাবি (Dr. Umar Un Nabi), যিনি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা এবং ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। FSL ড. নাবির মায়ের ডিএনএ নমুনার সাথে গাড়ির ভেতরে প্রাপ্ত ডিএনএ মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। [6]

    ফরেনসিক পরীক্ষা এবং পুলিশি তদন্তের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, বিস্ফোরক উপাদান হিসেবে সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ভিত্তিক ফুয়েল অয়েল (ANFO) ব্যবহৃত হয়েছিল।[7] এই রাসায়নিক মিশ্রণটি অতীতে ভারতে বিভিন্ন হামলায়, বিশেষ করে ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত।[8]

    ভারতীয় ​নিরাপত্তা সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে এই হামলার প্রভাব মারাত্মকভাবে সীমিত ছিল কারণ বোমাটি ছিল "অপরিণত এবং সম্পূর্ণ বিকশিত নয়" ("Premature And Not Fully Developed")।[9] ফরেনসিক পর্যবেক্ষণ অনুসারে, বিস্ফোরণের স্থানে কোনো গর্ত তৈরি হয়নি বা ধাতব শার্পনেল বা প্রক্ষেপণ পাওয়া যায়নি।[10] একটি কার্যকর ভিবিআইইডি (VBIED) এর জন্য এই ধরনের বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকা অপারেশনাল ব্যর্থতাকেই ইঙ্গিত করে।

    ভারতের ​নিরাপত্তা সূত্রগুলি জোর দিয়ে বলেছে যে এই সীমিত বিস্ফোরণের কারণ ছিল—দিল্লি এনসিআর এবং পুলওয়ামায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সফল এবং সমন্বিত অভিযান, যার ফলে সন্দেহভাজন ব্যক্তি (ড. উমর) আতঙ্কিত হয়ে এবং তাড়াহুড়ো করে হামলাটি কার্যকর করতে বাধ্য হন। এই ঘটনাটিকে ভারতীয় সরকার এমনভাবে তুলে ধরেছে যে, গোয়েন্দা তথ্যের সাফল্য এবং ফরিদাবাদে মডিউলটি ভেঙে দেওয়ার ফলে বৃহত্তর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।[11] (ভারতের অভ্যন্তরে) এটি দুটি কৌশলগত উদ্দেশ্য পূরণ করে: প্রথমত, এটি লাল কেল্লার মতো উচ্চ মূল্যের লক্ষ্যবস্তুতে অনুভূত নিরাপত্তা দুর্বলতাকে হ্রাস করে এবং দ্বিতীয়ত, এটি এমন একটি চিত্র তুলে ধরে যে দ্রুত ও সক্রিয় তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপগুলি একটি বড় বিপর্যয়কে সফলভাবে এড়াতে সক্ষম হয়েছে।

    ​তবে, কিছু ভারতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সতর্কতার সাথে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। যেহেতু গাড়িটি ভিড়ের মধ্যে চালিত না হয়ে ট্র্যাফিকের মাঝে থেমেছিল, তাই বিস্ফোরকগুলি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যেতে পারে—এমন সম্ভাবনাও তদন্তের আওতায় ছিল।[12] ​

    ​ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া হামলাকারী, ড. উমর উন নাবি (ওরফে ড. উমর মোহাম্মদ) ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার একজন বাসিন্দা, যিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলি দাবি করে যে নাবি ও তার সহযোগীরা উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার ছিলেন, যার ফলে এটি একটি "ডাক্তার মডিউল" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই গোষ্ঠীটি কথিতভাবে দুটি টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে তথাকথিত চরমপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিল, যার মধ্যে একটি জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) হ্যান্ডলার 'উমর বিন খাত্তাব' পাকিস্তান থেকে পরিচালনা করত।[13]

    ​ড. উমর উন নাবি পুলওয়ামায় জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) কে সমর্থনকারী পোস্টার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিলেন। ১০ নভেম্বরের বিস্ফোরণের ঠিক আগে, ৯ ও ১০ নভেম্বর দিল্লি এনসিআর এবং পুলওয়ামায় ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তথাকথিত সফল অভিযানে এই মডিউলের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে ছিলেন ড. মুজাম্মিল আহমেদ গানাই, আদিল মাজিদ রাথার, এবং ড. শাহীন সাঈদ (নারী)।[14] পুলিশ পুলওয়ামার মুজাম্মিল আহমদ গনাই এবং কাজিগুন্ডের আদিল মাজিদ রাথারকে গ্রেপ্তার করার পর, তাদেরকে তথাকথিত সশস্ত্রগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের (AGuH) সঙ্গে যুক্ত একটি গোপন সেলের সদস্য বলে অভিযোগ করে।[15]

    ​এই অভিযানে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মোট ২,৯০০+ কেজি বিস্ফোরক সন্দেহজনক উপাদান উদ্ধার করে।[16] উদ্ধারকৃত এই বিশাল পরিমাণ বিস্ফোরক (যার মধ্যে প্রায় ৩৫০-৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল)[17] একটি বড় হামলার প্রস্তুতির প্রমাণ দেয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলি দাবি করে যে এই মডিউলটি মূলত মুম্বাই ২০০৮ এর মতো একটি "বিশাল" এবং সমন্বিত হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।

    ​এই পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয় তথাকথিত বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে ফরিদাবাদে এই বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক এবং মডিউলের সদস্যদের সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করার কারণে একটি বহু লক্ষ্যবস্তু হামলার ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। রেড ফোর্ট হামলাটি ছিল অবশিষ্ট হামলাকারী ড. নাবির দ্বারা আতঙ্কবশত পরিচালিত একটি ক্ষুদ্র ও ত্রুটিপূর্ণ প্রচেষ্টা, যা বৃহত্তর বিপর্যয় এড়াতে ভারতের গোয়েন্দা সক্ষমতার সাফল্যকেই তুলে ধরছে বলে ভারতীয় মিডিয়া চিত্রিত করছে।

    ​ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই হামলার ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) কে দায়ী করে। এই হামলাটি 'অপারেশন সিন্দুর' এর পরিপ্রেক্ষিতেও দেখা হচ্ছে, যা এপ্রিল ২০২৫ এর পাহালগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত কর্তৃক পাকিস্তান ভিত্তিক তথাকথিত সন্ত্রাসী অবকাঠামোর উপর চালানো লক্ষ্যবস্তু হামলা ছিল।

    ​তদন্তে মডিউলটির সাথে পাকিস্তান ভিত্তিক মূল জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) কাঠামোর সরাসরি যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এনআইএ সূত্রগুলি দাবি করেছে যে অভিযুক্ত ড. শাহীন সাঈদ (নারী) পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড (JeM কমান্ডার) উমর ফারুকের স্ত্রী আফিরা বিবির সাথে যোগাযোগ রাখতেন।[18] ৮ এবং ৯ অক্টোবর, ২০২৫—ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে একটা সংবাদ প্রকাশ করা হয় যার সারমর্ম হলো, "জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) তাদের প্রথম নারী ইউনিট ‘জামাত-উল-মুমিনাত’ (JuM) গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি JeM প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার এর নামে জারি করা একটি চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আরও বলা হয় JeM এর নারী শাখা JuM এর নেতৃত্ব দেবেন সাদিয়া আজহার, যিনি মাসুদ আজহার এর বোন।"[19]

    আফিরা বিবি হলেন জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এর কমান্ডার ও পুলওয়ামা হামলার (২০১৯) মূল পরিকল্পনাকারী উমর ফারুকের স্ত্রী। ওই হামলায় (পুলওয়ামা হামলায়) ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (CRPF) ৪০ জন সদস্য নিহত হয়। JeM প্রধান মাসুদ আজহারের ভাতিজা উমর ফারুক ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতীয় বাহিনীর এক অভিযানে নিহত হন।

    উমরের স্ত্রী আফিরা বিবি জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এর নবগঠিত নারী ইউনিট জামাত-উল-মুমিনাত (JuM) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ—এমনটাই দাবি করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। দিল্লিতে বিস্ফোরণের কয়েক সপ্তাহ আগে আফিরা বিবি জামাত-উল-মুমিনাত (JuM) এর উপদেষ্টা পরিষদ শুরাতে যোগ দেন বলেও দাবি করা হচ্ছে।[20]

    ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির ​তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল দিক হলো—হামলার ষড়যন্ত্রের উৎস তুরস্ক ভিত্তিক একজন হ্যান্ডলার 'উকাসা' এর (Ukasa) কাছে খুঁজে পাওয়া। ভারতের নিরাপত্তা সূত্রগুলির দাবি, উকাসা (Ukasa) জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এবং আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (AGuH) এর মতো সংগঠনগুলির সাথে যুক্ত ছিলেন। ভারতীয় তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেন, ড. উমর উন নাবি এবং তার তিন সহযোগী ২০২২ সালে তুরস্কে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে উকাসা (Ukasa) এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। [21] ভারতীয় তদন্তকারীদের বিশ্বাস—উকাসা (Ukasa) এই মডিউলের পরিকল্পনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

    ​যদিও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তুরস্ক ভিত্তিক হ্যান্ডলারের সংশ্লিষ্টতার দাবি করেছে, তবে আঙ্কারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিস্ফোরণে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের নীতিগত অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।[22] তুরস্কের ডিরেক্টরেট অফ কমিউনিকেশনস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতীয় মিডিয়ার রিপোর্টগুলিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছে, যেখানে তুরস্কের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লজিস্টিক্যাল, কূটনৈতিক বা আর্থিক সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তুরস্ক এটিকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য 'উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল তথ্য প্রচার' বলে অভিহিত করেছে।[23]

    ​বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পরেই ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) অত্যন্ত জোরালো বিবৃতি প্রদান করে। ভারতের রাষ্ট্রদূত পারভাথানেনি হারিশ বিশ্ব সংস্থাকে ক্রসবর্ডার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে "শূন্য সহনশীলতা" নীতি প্রয়োগ করতে এবং তথাকথিত চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির কাছে অস্ত্রের অবৈধ প্রবাহ বন্ধ করতে আহ্বান জানান।[24]

    এতদূর আসার পর এই ঘটনা আবার অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করে ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার—এনডিটিভিকে তদন্ত ঘনিষ্ঠ সূত্ররা জানান, এই গাড়িগুলি—যার মধ্যে সোমবার রাতে বিস্ফোরিত হওয়া হুন্ডাই আই২০ ও রয়েছে সেগুলো ৬ ডিসেম্বর দিল্লির অন্তত ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ একাধিক এলাকায় ধারাবাহিক ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। উল্লেখ্য, ওই দিনই অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার ১৬শ শতকের বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার বর্ষপূর্তি।[25]

    এখন দিল্লির রেড ফোর্ট হামলা সম্পর্কে আপনার কল্পনা জগতে যেই চিত্রটা ফুটে উঠছে, সেই চিত্রের নির্মাতা হলো হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার—এর মধ্যে কতটুকু সত্য এবং কতটুকু মিথ্যা সেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লায় ভালো জানেন।

    তবে বেশ কিছু বিষয় এমন রয়েছে যেগুলো সন্দেহজনক, উদাহরণস্বরূপ—এই পুরো ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৫—জইশ-ই-মহম্মদের (JeM) সমর্থনে কাশ্মীর শহর সংলগ্ন নওগাম এলাকায় একাধিক পোস্টার দেখা যায়। তারপর শুরু হয় তল্লাশি, তদন্ত।

    ১২ নভেম্বর, ২০২৫—ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম Firstpost একটা সংবাদ[26] প্রতিবেদন প্রকাশ করে যার শিরোনাম—How Maulvi Irfan, mastermind of Faridabad terror module, radicalised medical students—যেখানে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার এক মৌলভী, ইরফান আহমদ ওয়াগাহকে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর, ২০২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার এবং দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের ঘটনার পর শুরু হওয়া বৃহৎ তদন্তের ঠিক একদিন পর। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কাশ্মীর (CIK) ও শ্রীনগর পুলিশের যৌথ অভিযানে ওয়াগাহ ও তার স্ত্রী আটক হন।

    একই প্রতিবেদনের ভিতরে আরও বলা হচ্ছে—

    [

    How did they plan the Delhi car blast?

    The trail leading to Maulvi Irfan Ahmad Wagah began when posters bearing the name of Jaish-e-Mohammed (JeM) appeared on walls in Bunpora, Nowgam, on October 19. Intelligence agencies quickly launched an investigation, picking up three overground workers known for their history of stone-pelting.

    During interrogation, the trio revealed their connection to Maulvi Irfan, placing him squarely under the radar of security agencies. His disclosures eventually led to the arrests of Dr Adeel Ahmad Rather and Zameer Ahangar, both believed to be close associates of the cleric.

    অর্থাৎ—

    মাওলানা ইরফান আহমদ ওয়াগাহ এর দিকে তদন্তের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯ অক্টোবর, যখন বুনপোরা, নওগামের দেওয়ালে জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) নামাঙ্কিত পোস্টার দেখা যায়। গোয়েন্দা সংস্থা দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং অতীতে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য পরিচিত তিনজন ওভারগ্রাউন্ড কর্মীকে তুলে আনে।

    জিজ্ঞাসাবাদের সময়, ঐ তিনজন কর্মী মৌলভী ইরফানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ করে, যা তাকে সরাসরি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির নজরদারির আওতায় নিয়ে আসে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত ড. আদিল আহমদ রাথার এবং জমির আহাঙ্গারকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের উভয়কেই ওই মৌলভীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে মনে করা হয়।

    ]

    প্রথমত, মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখেই ইরফান আহমদ ওয়াগাহ সম্পর্কে জানতে পারে এবং ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ইরফান আহমদ ওয়াগাহ ও তার স্ত্রীকে তাদের বাসা থেকেই আটক করার কথা জানায়, অর্থাৎ তারা আত্মগোপনে ছিল এমন কোনো বিষয়ের ইঙ্গিত ভারতীয় মিডিয়া থেকে পাওয়া যায় না।

    দ্বিতীয়ত, (His disclosures eventually led to the arrests of Dr Adeel Ahmad Rather...) এখানে His ব্যাবহার করা হয়েছে Their ব্যাবহার করা হয়নি। অর্থাৎ ইরফান আহমদ ওয়াগাহ এর তথ্যের ভিত্তিতেই ড. আদিল আহমদ রাথারকে ৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে গ্রেফতার করা হয়।[27]

    তাহলে এখানে প্রাথমিকভাবে স্পষ্টতই দুইটা গড়মিল দেখা যাচ্ছে—

    ১) ২০১৯ সালে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়, কাশ্মীরকে পৃথিবীর অন্যতম সামরিকায়িত অঞ্চল বলা হয়, এরকম একটা জায়গায় সিসিটিভির আওতাধীন এলাকায় চেহারা খোলা রাখা অবস্থায় মানুষ জিহাদী সংগঠনের সমর্থনে পোস্টার লাগাবে, ইট'স কোয়াইট হার্ড টু বিলিভ।

    ২) ড. আদিল আহমদ রাথার কে আটক করা হয় ৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারেখে, মৌলভী ইরফান আহমদ ওয়াগাহ এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। আর মৌলভী ইরফান আহমদ ওয়াগাহ ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয় ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে। এটাকে এক শব্দে প্রকাশ করা যায়, যেই শব্দের সাথে আমরা সকলেই খুব পরিচিত—গুম—পুরো সিনারিওটা সামনে রাখলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মৌলভী ইরফান আহমদ ওয়াগাহ এবং তার স্ত্রীকে পূর্বেই গুম করা হয়েছিলো, সেটা ১৯ অক্টোবর এর পরে নাকি আগে সেটাই মূলত অস্পষ্ট।

    সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু আমাদের দেশে হয়না, মূলত সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া এদেশের বাহিনীকে যারা শিখিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ভারত। ভারতের অভ্যন্তরেই সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে, সেখানে উন্মুক্ত কারাগার কাশ্মীরের কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিকট ভবিষ্যতেই এই ঘটনার বাস্তবতা স্পষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

    এই হামলায় টোটাল তিনটা জিহাদী সংগঠনকে যুক্ত করা হয়েছে, ১) জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) ২) জামাত-উল-মুমিনাত (JuM) ৩) আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ (AGuH)। কিন্তু এই তিন সংগঠনের কেউই রেড ফোর্ট হামলার দায় স্বীকার করেনি। জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) কোথায় নিজেদের প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে আমার জানা নেই, তাই জামাত-উল-মুমিনাত (JuM) এর অস্তিত্ব সত্যিই আছে কিনা সেটা চেক করা সম্ভব হয়নি, আপনাদের কারো জানা থাকলে, জানানোর অনুরোধ রইল।

    আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ (AGuH)—বুরহান ওয়ানী রহ. এবং কমান্ডার জাকির মুসা রহ. এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কাশ্মীর ভিত্তিক একটা স্বাধীন ইসলামি প্রতিরোধ (জিহাদি) বাহিনী, যারা আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত। আল কায়েদা এর সামরিক কৌশল এর সাথে রেড ফোর্ট হামলা যায় না।

    পহেলগাঁও হামলার পর দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামের সম্মানিত মডারেটর মুনশি আবদুর রহমান হাফি. একটা পোস্ট দিয়েছিলেন, যার শিরোনাম ছিলো, পহেলগাঁও অ্যাটাক: ভারতে আল কায়েদার সামরিক কৌশল সম্পর্কে কিছু কথা। সেখানে তিনি বলেছিলেন—

    "যদিও আল কায়েদার ইতিহাসে অমুসলিম নাগরিকদের উপর হামলা এবং তাদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনা রয়েছে এবং এই ধরণের অপারেশন শরীয়তের উসুলের আলোকে বৈধ। তবে আল-কায়েদা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক স্থাপনা এবং শত্রু সরকারের সম্পদকে অগ্রগণ্য লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে, বেসামরিক নাগরিকদের নয়। AQS ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তবে, তাদের হামলার লক্ষ্য সাধারণত নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক স্থাপনা এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা বরাবরই সাধারণ হিন্দুদের উপর আক্রমণ থেকে বিরত থেকেছে। অন্যদেরকেও ভারতের কোথায় টার্গেট করতে হবে, সেটি জানিয়ে দিয়েছে।"

    তাই বলা যায়, আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের (AGuH) এই হামলাতে জড়িত থাকার কোনই সম্ভবনা নেই।

    রেড ফোর্ট হামলার পর, ভারতের মুসলিমরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে, যদিও পূর্বেও আতঙ্ক ছিলো তবে বর্তমানে সেই আতঙ্কের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এই হামলাকে কেন্দ্র করে, ভারতের অভ্যন্তরে অসংখ্য মুসলিমকে (নারী-পুরুষ) তুলে নিয়ে গেছে, আটক করেছে ভারতীয় তদন্তকারী বাহিনীসমূহ। পুরুষদের জন্য বর্বর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ-গণধর্ষণ, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ-গণধর্ষণ, এছাড়া অজানা কত নির্যাতনের সম্মুখীন তাদের হতে হবে...। এমনকি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ফেইসবুক পোস্টে হাহা রিয়্যাক্ট দেওয়ার কারণে আসামে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।

    জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) যদি সত্যিই তাদের নারী ইউনিট খুলে থাকে এবং প্রকাশ্যে এটা জানিয়ে থাকে—তাহলে বলতে হয়, এটা খুবই বাজে একটা কাজ করেছে। আগে যদি কোনো মুসলিম নারীকে তুলে নিয়ে যেতে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাহিনীসমূহকে সামান্যতমও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো, তবে বর্তমানে জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এর নারী ইউনিটের রেফারেন্স টেনে মুসলিম নারীদের সেই সামান্যতমও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই তারা তুলে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখবে।

    দিনশেষে বাস্তবতা হলো, আমাদের শত্রুরা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাবে। আমাদেরকেও আমাদের সামর্থ্যের ভিতর থেকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল ধরনের চেষ্টা-প্রচাষ্টা চালাতে হবে। বিজয়ী কে? সেটা তো ঘোষণা হয়েই গেছে, বিজয়ীদের পরিচয় তো স্পষ্ট—শুধু যেটা অস্পষ্ট, সেটা হলো কোন প্রজন্ম অর্জন করবে সেই বিজয়ের স্বাদ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের প্রজন্মকেই কবুল করে নেন, আমাদেরই সেই বিজয়ের স্বাদ দান করেন। আর বিশেষ করে দোয়া করি, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুজাহিদ ও মুসলিমদের জন্য—ইয়া আল্লাহ, তাদের আপনি নিরাপত্তা দান করুন, তাদের পরিবারের সদস্যদের আপনি নিরাপত্তা দান করুন, আর কাফের ও ত্বাগুতদের হাতে বন্দী আমাদের সকল মুসলিম ভাইবোনদের আপনি ধৈর্য দান করুন এবং তাদের মুক্ত করার জন্য আমাদের সবটুকু বিলিয়ে দেওয়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।
    ...
    ———
    ...
    তথ্যসূত্র
    ———————

    [1]


    [2]


    [3]


    [4]


    [5]


    [6]


    [7]


    [8]


    [9]


    [10]


    [11]


    [12]


    [13]


    [14]


    [15]


    [16]


    [17]


    [18]


    [19]


    [20]


    [21]


    [22]


    [23]


    [24]


    [25]


    [26]


    [27]


    ...
    ———
    ।।। সমাপ্ত ।।।
Working...
X