Announcement

Collapse
No announcement yet.

তাওহীদের দ্বিতীয় রূকন "ঈমান বিল্লাহ" কি? (জান্নাত লাভের উপায় -০৫)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তাওহীদের দ্বিতীয় রূকন "ঈমান বিল্লাহ" কি? (জান্নাত লাভের উপায় -০৫)

    বিগত পর্বগুলোতে আমরা তাওহীদের প্রথম রূকন "লা ইলাহা" (আল কুফর বিত তাগুত) সম্পর্কে জেনেছি। আজকে আমরা আলোচনা করবো তাওহীদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রূকন "ইল্লাল্লাহ" তথা ঈমান বিল্লাহ।

    প্রশ্ন হল আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহীদের) উপর ঈমান আনা বলতে কী বুঝায়?

    আর কীভাবে আমরা ঈমান বিল্লাহ তথা এক আল্লাহর তাওহীদের প্রতি ঈমান আনবো??

    প্রথমত আল্লাহর একত্ববাদের উপর ঈমান আনা বলতে তাওহীদে রবুবিয়্যাত, তাওহীদে আসমা উস সিফাত, তাওহীদে হাকিমিয়্যাহ ও তাওহীদে উলুহিয়্যাত এর সমষ্টিকে বুঝায়।

    এগুলোর মাধ্যমেই আল্লাহর তাওহীদের উপর ঈমান আনা যায়।

    তাওহীদের এই প্রকারগুলোর ব্যাখ্যা কি??

    ১) তাওহীদে রবুবিয়্যাত : দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন এক ও একক। তিনিই সৃষ্টিককর্তা,রিযিকদাতা,আসমান-যমীনের পরিচালনাকারী। তিনিই প্রতিপালক বিশ্বজগতের, তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক, বিশ্বজাহানের পরিচালনাকারী একমাত্র তিনি।
    অর্থাৎ এক কথায় আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু কাজ বিশ্বজাহানে সংঘটিত হয় তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হল তাওহীদে রবুবিয়্যাত।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ‘তারা কি তাদের উপরে আসমানের দিকে তাকায় না, কিভাবে আমি তা বানিয়েছি এবং তা সুশোভিত করেছি? আর তাতে কোনো ফাটল নেই। আর আমি যমীনকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক প্রকারের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উদ্গত করেছি আল্লাহ অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য জ্ঞান ও উপদেশ হিসেবে’। (আ'রাফ ৭ : ৮৫)।

    ২) তাওহীদে আসমা উস সিফাত : আল্লাহ তা আলার গুণবাচক নামসমূহ জানা, বুঝা,বিশ্বাস স্থাপন, স্বীকার করা এবং এতে কাউকে শরীক না করাই হচ্ছে তাওহীদে আসমা উস সিফাত।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,

    “আল্লাহর আছে সুন্দর সুন্দর নাম, সেই নামের মাধ্যমে তোমরা তাঁকে ডাক। (সূরা আরাফ ৭ : ১৮০)।

    আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর ক্ষেত্রে নিম্নক্ত বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে :

    ক) তাহরীফ (বিকৃত,পরিবর্তন,পরিবর্ধন) না করা : আল্লাহর নামগুলির কোন রকমের বিকৃতি, পরিবর্তন করা যাবে না।

    খ) তাতীল (অস্বীকার করা যাবে না) : আল্লাহর আসমা উস সিফাত তথা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীকে অস্বীকার করা যাবে না।

    গ) তামফীল (সাদৃশ্য বর্ণনা করা যাবে না) : আল্লাহর সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্য স্থাপন করা যাবে না। আল্লাহর মত কিছুই নেই। তিনি সাদৃশ্যহীন।

    ঘ) তাকয়্যিফ (কাইফিয়ত বর্ণনা করা যাবে না) : যেমন : আল্লাহ আরশে সমুন্নত। এখানে প্রশ্ন করা যাবে না তিনি কীভাবে সমুন্নত হয়েছেন? এরূপ প্রশ্ন করা বিদআত। বরং এর উপর ঈমান আনা আবশ্যক।

    এছাড়াও আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জানতে নীচের লিংকে থাকা বইটি নামিয়ে নিতে পারেন।

    https://www.quraneralo.com/beautifull-names-of-allah/

    ৩) তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ : বিধান এবং সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা আলাকে এক ও একক হিসেবে মানা। আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র বিধান ও সংবিধান প্রণয়নকারী। তিনিই বিধান ও সংবিধান রচনাকারী এই বিশ্বাস স্থাপন করা। তার বিধানের বিপরীত সংবিধান প্রত্যাখ্যান করা।

    বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর। (ইউসুফ ১২ : ৪০)।

    আর আল্লাহ আদেশ করেন। তার আদেশ রদকারী কেউ নেই। (রাদ ১৩ : ৪১)।

    তিনি (আল্লাহ) কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (কাহফ : ২৬)।

    তারা কি জাহেলী যুগের বিধান কামনা করে? আর বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফয়সালাকারী কে? (মায়িদা : ৫০)।
    “অথবা তাদের কী আল্লাহর সাথে অংশীদার আছে যারা তাদের জন্য একটি দ্বীন নিয়ে এসেছে আল্লাহ যার অনুমতি দেন নি? ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। এবং নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য রয়েছে যান্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ (শূরা ৪২ : ২১)।

    “… এবং তারা (বিরোধের ক্ষেত্রে) ফায়সালার জন্য তগুতের কাছেই যাতে চায় যদিও তারা তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। কিন্তু শয়তান তাদের সুদূর বিপথে নিয়ে যেতে চায়।’’ (নিসা ৪ : ৬০)।

    ৪) তাওহীদে উলুহিয়্যাহ : ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক ও একক হিসেবে মানা, একনিষ্ঠ খালেসভাবে আল্লাহর জন্যই দ্বীনকে নির্ধারণ করা। মিথ্যা ইলাহ, শিরক এবং মুশরিকদের থেকে বারাআহ (সম্পর্ক ছিন্ন) করা।

    অর্থাৎ তাওহীদে উলুহিয়্যাত হল ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা আলাকে এক ও একক হিসেবে মানা, শুধুমাত্র আল্লাহরই দ্বীন মেনে চলা বাকী সব দ্বীন বাতিল করা,শুধুমাত্র তারই কাছে নিজের সমস্ত ইবাদাত বন্দেগী উৎসর্গ করা এবং এতে কাউকে শরীক না করা,এর কোন অংশই অন্য কাউকে প্রদান না করা। শিরক এবং মুশরিকদের থেকে (দ্বিনী,আকিদাহ,আউলিয়ার) সম্পর্ক ছিন্ন করা।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,

    অবশ্যই তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনছো। (মুমতাহিনা ৬০ : ০৪)।

    এছাড়াও উলুহিয়্যাতে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দেই যে, আমরা গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী,ইবাদাত করবো না ; দুআ,প্রার্থনা করবো না ; আশ্রয়,সাহায্য,উদ্ধার,মদদ চাইবো না, সিজদা করবো না ; জবাই করব না ; নযর/মান্নত করব না ; শিফা,আরোগ্যতা,সুস্থতা ও সফলতা চাইব না, কামনা করব না, এগুলোর মালিক মনে করব না।

    ক্ষতি অনিষ্টের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনিই বিপদ হতে আশ্রয়দানকারী,উদ্ধারকারী, সাহায্য ও মদদ দানকারী। সফলতা কল্যাণ-অকল্যাণ,ক্ষতি-অনিষ্টের একমাত্র মালিক তিনি। (দুআ,প্রার্থনা,আশ্রয়,সাহায্য,উদ্ধার,মদদ,সাজদা,জবাই ,নযর,মান্নত,শিফা,সফলতা,ক্ষতি-অনিষ্ট) এসব কিছুই আল্লাহর কাছে চাইব এবং তিনিই এগুলো দানকারী ও এর একমাত্র মালিক।

    এই তাওহীদে উলুহিয়্যাতের দ্বাওয়াত নিয়েই প্রত্যেক নাবী রাসূলগণ এসেছিলেন, প্রত্যেক নাবী রাসূলগণের দ্বাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু ছিলো তাওহীদে উলুহিয়্যাত। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুশরিকরা উলুহিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক করত, যা বর্জন করে এক আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাতেন নবী রাসূলগণ। অর্থাৎ ইবাদাত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য করা। ইয়া কানা বুদু ওয়া ইয়া কানাস্তাইন। এই তাওহীদের দিকে দ্বাওয়াত দেওয়াই হল প্রথম ফরজ।

    টীকা : তাওহীদের সংজ্ঞা হচ্ছে উলুহিয়্যাত,রবুবিয়্যাত ও আসমা উস সিফাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক ও একক হিসেবে মানা।
    বি.দ্র : আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নিকট দুআ,আবেদন করা,চাওয়া বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তিন শর্তসাপেক্ষে জায়েজ রয়েছে। যথা :

    ১) জীবিত ও উপস্থিত থাকা : যার কাছে চাওয়া হচ্ছে সে জীবিত পার্থিব দৃষ্টিতে উপস্থিত ব্যক্তি হতে হবে,

    ২) ক্ষমতা : যা চাওয়া হচ্ছে তা প্রদান করার ক্ষমতা ও শক্তি থাকতে হবে। যেমন : আল্লাহ ছাড়া কেউ সন্তান লাভ করতে পারে না। এক্ষেত্রে যদি কেউ মাজারে বা কোন মৃত বা জীবিত ব্যক্তির নিকট সন্তান

    ৩) আকিদাহ ও সুন্নাহ : সর্ব প্রথম আল্লাহর কাছেই নিজের সমস্ত কিছু চাইতে হবে। অত:পর পার্থিব এই বিষয়গুলির নিকট এই বিশ্বাসে দ্বারস্থ হওয়া,ব্যবহার করা যে, এইগুলোর নিজস্ব কোন ক্ষমতা,শক্তি নেই এবং এগুলো কোন ভাল-মন্দ সাধন করতে পারে না বরং সমস্ত কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার হুকুম ছাড়া কেউ কোন কল্যাণ-অকল্যাণের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা রাখে না, আমি এগুলোকে শুধুমাত্র এই নিয়তে ব্যবহার করছি যে, যেহেতু রাসূল (সা.) আসবাব হিসেবে এগুলো গ্রহণ করেছেন এবং করতে বলেছেন। তাই কেবলই সুন্নাহর অনুসরণস্বরূপ আমি এগুলো গ্রহণ ও ব্যবহার করছি। নতুবা কোন কিছুরই কোন ক্ষমতা নাই।

    ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

    চলবে.... ইনশা আল্লাহ...
Working...
X